সাধারণ আপেক্ষিকতার ভূমিকা
- এটি সকলের বোঝার জন্য সহজ করে লিখা। মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন - সাধারণ আপেক্ষিকতা
সাধারণ আপেক্ষিকতা |
---|
বিষয়ের উপর একটি ধারাবাহিকের অংশ |
|
সাধারণ আপেক্ষিকতা মহাকর্ষের একটি তত্ত্ব। ১৯০৭ থেকে ১৯১৫ সালের মধ্যে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এটি প্রবর্তন করেন। এই তত্ত্বে বলা হয়েছে, দুই বা ততোধিক ভরের মধ্যে পর্যবেক্ষণকৃত মহাকর্ষের কারণ হল, তারা নিজেদের ভরের মাধ্যমে আশেপাশের স্থান-কালকে বাঁকিয়ে দেয়। ব্যাপারটি অনেকটা টানটান করে বেঁধে রাখা একটি চাদরের মাঝখানে একটি বেশ ভারী পাথর রেখে দেয়ার মত। পাথর রাখার কারণে চাদরের কেন্দ্রভাগে একটি বক্রতার সৃষ্টি হয়। এখন চাদরের উপর অপেক্ষাকৃত কম ভরের আরেকটি পাথর রাখলে তা কেন্দ্রের দিকে ঝুঁকে পড়বে বা পড়ে যেতে চাইবে। দেখা যাচ্ছে বেশি ভরের পাথরের মাধ্যমে সৃষ্ট বক্রতার কারণে কম ভরের পাথরটি তার দিকে টান অনুভব করছে। মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে এই চাদরটিই হল স্থান-কালের জালিকা। একটি বস্তুর কারণে এই জালিকায় সৃষ্ট বক্রতাই মহাকর্ষের কারণ। আইজাক নিউটন মহাকর্ষ বলকে বস্তুসমূহের মধ্যে একটি আকর্ষণ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু আইনস্টাইনের এই বক্তব্য ছিল আরও সঠিক। তাছাড়া এটি মহাকর্ষীয় তরঙ্গের মত আকর্ষণীয় ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী করে।
সাধারণ আপেক্ষিকতা বেশ কিছু ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী যেগুলো নিউটনের সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়না। যেমন, বুধসহ অন্যান্য গ্রহের কক্ষপথের মিনিট ব্যত্যয়। তাছাড়া এটি আলো বাঁকিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া এবং সময় ধীরকরণসহ এ ধরনের অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হয়েছিল যা পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে। সাধারণ আপেক্ষিকতা মহাকর্ষের একমাত্র আপেক্ষিকতাভিত্তিক সূত্র না হলেও এটিই সরলতম এবং পর্যবেক্ষণের সাথে সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অবশ্য কয়েকটি প্রশ্ন থেকেই যায়। সবচেয়ে গুরুত্র প্রশ্নটি হচ্ছে, কীভাবে সাধারণ আপেক্ষিকতাকে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের সাথে একত্রিত করে কোয়ান্টাম মহাকর্ষের একটি সম্পূর্ণ স্বতঃপ্রবৃত্ত সূত্র নির্ণয় করা যায়?
মহাকর্ষের মাধ্যমে আলোর বেঁকে যাওয়ার কারণে মহাকাশে একটি মজার ঘটনা পরিদৃষ্ট হয়, একটিমাত্র জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুর একাধিক বিম্ব। এই ঘটনাকে বলে মহাকর্ষীয় লেন্সিং যা জ্যোতির্বিজ্ঞানে গুরুত্বের সাথে পঠিত হয়। লিগো এবং জিও ৬০০ প্রকল্পের অনেক বিজ্ঞানীই মহাকর্ষীয় তরঙ্গের সরাসরি প্রমাণ পেয়েছেন। কৃষ্ণ বিবর থেকে নির্গত মহাকর্ষীয় তরঙ্গ অধ্যয়নের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আদি মহাবিশ্বের গঠন বিষয়ে সম্যক ধারণা অর্জন করতে পারেন। এছাড়া সাধারণ আপেক্ষিকতা ভৌত বিশ্বতত্ত্বের মহা বিস্ফোরণ তত্ত্বের মৌলিক ভিত্তি।
বিশেষ থেকে সাধারণ আপেক্ষিকতা
[সম্পাদনা]১৯০৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন তার বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রকাশ করেন যা নিউটনের গতি সূত্রের সাথে তড়িৎগতিবিজ্ঞানের (যা আহিত বস্তুনিচয়ের মধ্যকার আকর্ষণ নিয়ে কাজ করে) সমন্বয় সাধন করেছিল। এই তত্ত্ব স্থান এবং কাল বিষয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধারণার প্রবর্তনের মাধ্যমে পদার্থবিজ্ঞানের সকল শাখার জন্য একটি নব কাঠামো দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু, সে সময়ে নিশ্চিতরূপে সমর্থিত কিছু তত্ত্ব এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলনা। যেমন নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব, যা যেকোন বস্তুর মধ্যকার পারষ্পরিক আকর্ষণকে বর্ণনা করে।
তখন থেকে অনেক পদার্থবিজ্ঞানীই নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি আপেক্ষিকতাভিত্তিক তত্ত্ব আবিষ্কারের চেষ্টা করতে থাকেন যাদের মধ্য স্বয়ং আইনস্টাইনও ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আইনস্টাইনই সফলতা অর্জন করেন, তার তত্ত্বটিই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সত্য প্রমাণিত হয়। প্রতিষ্ঠা পায় সাধারণ আপেক্ষিকতা। এই তত্ত্বের মূল বুঝতে হলে ১৯০৭ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত আইনস্টাইনের চিন্তার স্রোতের সাথে পরিচিত হতে হবে। তিনি চিন্তা শুরু করেছিলেন মুক্তভাবে পতনশীল একজন পর্যবেক্ষক (সমতুল্যতা নীতি) নিয়ে, আর শেষ করলেন এসে মহাকর্ষের সম্পূর্ণ জ্যামিতিক তত্ত্বে।[১]
সমতুল্যতা নীতি
[সম্পাদনা]মুক্তভাবে পতনশীল এলিভেটরের ভিতরের কোন ব্যক্তি ওজনহীনতা অনুভব করবে। তার আশপাশের সব বস্তু হয় তার সাথে ভেসে থাকবে নয় ধ্রুব দ্রুতিতে পড়তে থাকবে। এলিভেটরের ভেতরের সবকিছু যেহেতু একসাথে পড়ছে সেহেতু কোন মহাকর্ষীয় ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা যাবেনা। দেখা যাচ্ছে, মুক্তভাবে পতনশীল পর্যবেক্ষকের অবস্থা গভীর মহাশূন্যে ভাসমান ব্যক্তির মতই যে মহাকর্ষের যেকোন উৎস থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেছে। এরাই হল আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতায় বর্ণীত সুবিধাভোগী (জড়ত্বীয়) পর্যবেক্ষক যাদের সাপেক্ষে আলো সমদ্রুতিতে সরলরেখায় ভ্রমণ করে। এ ধরনের পর্যবেক্ষকরা কোন ত্বরণ অনুভব করেনা বা পদার্থবিজ্ঞানীরা যাকে কল্পিত বল (যে বলের কারণে একটি ত্বরিত গাড়ির চালক পিছন দিকে হেলে পড়েন) বলেন, সে ধরনের কোন বলও অনুভব করেনা। কল্পিত বল এবং ত্বরণ অনুভব না করায় পর্যবেক্ষক তার আশেপাশে কি ঘটছে তা বুঝতে পারেনা।[২]
আইনস্টাইন প্রকল্পায়িত করে বললেন, তার বিশেষ আপেক্ষিকতায় বর্ণীত জড়ত্বীয় পর্যবেক্ষক এলিভেটরের ওজনহীন পর্যবেক্ষকের সমতুল্য। এই প্রকল্পটিই সাধারণ আপেক্ষিকতার ভিত্তিপ্রস্তর। তিনি সমতুল্যতা নীতির মাধ্যমে এই প্রকল্পকে ব্যাখ্যা করেন। সোজা কথায়, এই নীতিটি হল, "মুক্তভাবে পতনশীল এলিভেটরের মধ্যকার কোন ব্যক্তি বলতে পারবে না যে সে মুক্তিভাবে পতিত হচ্ছে"। পর্যবেক্ষক মহাকর্ষের সকল উৎস থেকে অনেক দূরে স্থির বা সমদ্রুতিতে গতিশীল অবস্থায় থাকলে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো যে ফলাফল দিতো মুক্তভাবে পতনশীল এলিভেটরের পরিবেশেও সেই একই ফলাফল পাওয়া যাবে।[৩]
মহাকর্ষ ও ত্বরণ
[সম্পাদনা]মুক্তভাবে পতনশীল অবস্থায় মহাকর্ষের প্রভাবগুলোকে পর্যবেক্ষণ করলে সেগুলোকে বিলুপ্ত করে দেয়া যায়। ত্বরণ ঘটছে এমন কাঠামোতে পর্যবেক্ষণ করলে সেই প্রভাবগুলোকেই আবার উৎপাদিত করা সম্ভব। বদ্ধ কক্ষে অবস্থিত একজন পর্যবেক্ষক বলতে পারবে না নিচের কোনটি সত্য:
- বস্তুটি মেঝেতে পড়ছে কারণ, কক্ষটি পৃথিবী পৃষ্ঠের উপর স্থির হয়ে আছে এবং মহাকর্ষ তাকে টেনে নিচে নামাচ্ছে।
- বস্তুটি মেঝেতে পড়ছে কারণ, কক্ষটি অনেক দূরে মহাকাশে অবস্থিত একটি রকেটের মধ্যে আছে যে রকেটটি ৯.৮১ মিটার/বর্গসেকেন্ড ত্বরণে গতিশীল আছে। বস্তুটি সেই জড়ত্বীয় বলের কারণেই মেঝের দিকে আসছে যে কারণে ত্বরিত গাড়ির চালক সিটের দিকে হেলে পড়ে।
বিপরীতক্রমে, একটি ত্বরিত প্রসঙ্গ কাঠামোতে পর্যবেক্ষণকৃত ক্রিয়াকে একই শক্তির অন্য একটি মহাকর্ষীয় কাঠামোতেও পর্যবেক্ষণ করা যায়। একই ফলাফল পাওয়া যাবে। এই নীতি আইনস্টাইনকে ১৯০৭ সালে মহাকর্ষের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করতে সাহায্য করেছিল। পরবর্তী অনুচ্ছেদে সেগুলোর বর্ণনা দেয়া হবে।
আইনস্টাইন যে বিষয়টিকে কেন্দ্রে রেখে সব চিন্তা করেছিলেন সেটি হল, আমরা যে ধ্রুব মহাকর্ষীয় টানের কথা জানি তা ত্বরণশীল পর্যবেক্ষক কর্তৃক অনুভূত কল্পিত বলের মতই। দুয়ের মধ্যে মূলত কোন পার্থক্য নেই।[৪] কল্পিত বল যেহেতু বস্তুর ভরের সমানুপাতিক সেহেতু, মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে অবস্থিত একটি বস্তুর উপর প্রযুক্ত মহাকর্ষ বলও তার ভরের সমানুপাতিক হওয়া উচিত। নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রেও এমনটি আছে।
ভৌত ফলাফলসমূহ
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র ও পাদটীকা
[সম্পাদনা]- ↑ Renn 2005, p. 110ff. নামক বই, Pais 1982 বইয়ের ৯ থেকে ১৫তম অধ্যায় এবং Janssen 2005 গ্রন্থে এই বিষয়ের উল্রেখ আছে। নিউটনীয় মহকর্ষ নিয়ে সামান্য কথা পাওয়া যাবে Schutz 2003, chapters 2–4 নামক বইয়ে। ঠিক কখন নিউটনীয় মহাকর্ষের সমস্যা আইনস্টাইনের মাথায় এসেছিল তা বলা সম্ভব নয়। তবে তার নিজের ভাষ্যমতে ১৯০৭ সালেই তা ঘটেছিল।Pais 1982, p. 178.
- ↑ Wheeler 1990 - বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে বিস্তারিত বর্ণনা আছে
- ↑ সমতুল্যতা নীতি সাধারণ আপেক্ষিকতার আধুনিক রূপের অংশ হলেও আইনস্টাইনের মূল ধারণা থেকে বর্তমানের ধারণায় কিছু পার্থক্য রয়েছে - Norton 1985.
- ↑ E. g. Janssen 2005, p. 64f. আইনস্টাইন নিজেও তার নন-টেকনিক্যাল বইয়ের ২০তম অধ্যায়ে এমন বর্ণনা করেছেন। আর্নস্ট মাখকৃত পূর্বতন ধারণার অনুসরণ করে তিনিও কেন্দ্রমুখী বল এবং তাদের মহাকর্ষীয় অ্যানালগ নিয়ে ভেবেছিলেন।Stachel 1989.
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |