রয় ট্যাটারসল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রয় ট্যাটারসল
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামরয় ট্যাটারসল
জন্ম(১৯২২-০৮-১৭)১৭ আগস্ট ১৯২২
বোল্টন, ল্যাঙ্কাশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু৯ ডিসেম্বর ২০১১(2011-12-09) (বয়স ৮৯)
কিডারমিনস্টার, ওরচেস্টারশায়ার, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি অফ ব্রেক
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৩৫৫)
২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫১ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট১৫ জুন ১৯৫৪ বনাম পাকিস্তান
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১৬ ৩২৮
রানের সংখ্যা ৫০ ২,০৪০
ব্যাটিং গড় ৫.০০ ৯.৩৫
১০০/৫০ –/– –/১
সর্বোচ্চ রান ১০* ৫৮
বল করেছে ৪,২২৮ ৭১,১৩৩
উইকেট ৫৮ ১,৩৬৯
বোলিং গড় ২৬.০৮ ১৮.০৩
ইনিংসে ৫ উইকেট ৯৯
ম্যাচে ১০ উইকেট ১৮
সেরা বোলিং ৭/৫২ ৯/৪০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৮/– ১৪৬/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৪ নভেম্বর ২০১৮

রয় ট্যাটারসল (ইংরেজি: Roy Tattersall; জন্ম: ১৭ আগস্ট, ১৯২২ - মৃত্যু: ৯ ডিসেম্বর, ২০১১) ল্যাঙ্কাশায়ারের বোল্টনে জন্মগ্রহণকারী ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন।[১][২] ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৫১ থেকে ১৯৫৪ সময়কালে ইংল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ল্যাঙ্কাশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ অফস্পিনে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ ডানহাতি বোলার হিসেবে খেলতেন তিনি। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিং করতেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

বেশ দেরীতে ১৯৪৮ সালে রয় ট্যাটারসলের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে ইংরেজ বোলিং আক্রমণভাগ বেশ বিপর্যস্ত ছিল। ১৯৪৮ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে মিডিয়াম ফাস্ট বোলার হিসেবে প্রথম খেলতে নামেন। দ্বিতীয় একাদশের পক্ষে তিনি ৬৬ উইকেট দখল করেছিলেন। ১৯৫০ সালে রবার্টস, প্রাইস ও নাটার চলে যাবার পরই কেবল দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। এ সময় তিনি বোলিংয়ের ধারা পরিবর্তন করে অফব্রেকে নিয়ে যান। মাইনর কাউন্টি ক্রিকেটে এর কিছুটা সুফল ভোগ করতে থাকেন। ঐ বছরে ওল্ড ট্রাফোর্ডের মাঠকর্মীরা পিচে জল না ছিটানোর সিদ্ধান্ত নিলে তার বোলিংয়ে বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ১৪ রানেরও কম গড়ে ১৯৩টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট সংগ্রহ করে শীর্ষস্থানীয় বোলারে পরিণত হন। ফলশ্রুতিতে, ক্রিকেট রাইটার্স ক্লাব প্রবর্তিত উদ্বোধনী বছরের বর্ষসেরা তরুণ ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভে স্বীয় সক্ষমতা দেখান। তাসত্ত্বেও শক্তিধর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটিংয়ের কারণে টেস্ট দলে তাকে রাখা হয়নি।

১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে চমৎকারভাবে বোলিংশৈলী উপস্থাপন করেছেন। ১৯৫৬ সাল বাদে প্রতি বছরই শতাধিক উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেনে তিনি। অসংযত অবস্থায় মৌসুম শুরু করেন ও স্থিরতা হারান। ১৯৫৮ সালের গ্রীষ্মে প্রথমবারের মতো শত উইকেট লাভ করা থেকে বঞ্চিত হন যা ১৯৪৯ সালের পর প্রথম ঘটনা ছিল তার জন্যে।

বিশিষ্ট ল্যাঙ্কাশায়ার ক্রিকেট লেখক জন কে ট্যাটারসলকে ওল্ড ট্রাফোর্ডের অস্থিতিশীল নীতি-নির্ধারণের শিকার হিসেবে উল্লেখ করেন।[৩] ১৯৫৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি দলের বাইরে চলে যান। এরফলে কাউন্টি দলটিকে চ্যাম্পিয়নশীপে চড়া মাশুল গুণতে হয়েছিল।[৪] এছাড়াও, ১৯৫৯ সালের শুরুতে ট্যাটারসল ও ম্যালকম হিল্টনকে বাদ দেয়া হয় এবং লেগ স্পিনার টমি গ্রীনহফকে দলে নিয়ে আসা হয়। ১৯৬০ সালের শুরুরদিকে ট্যাটারসলকে ফিরিয়ে আনা হলেও তেমন ভালো খেলেননি ও মে মাসের পর স্থানচ্যূত হন।

তিনি ও হিল্টন ১৯৫০-এর দশকে কাউন্টি দলে অনবদ্য খেলা উপহার দানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে যৌথভাবে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের খেলার জন্য মনোনীত হন। ঐ খেলায় চুয়াত্তর হাজারের অধিক দর্শকের সমাগম ঘটে। ১৯৬১ সালে ট্যাটারসলকে কাউন্টিতে রাখা হয়নি। তবে, ল্যাঙ্কাশায়ারের শততম বার্ষিকীর খেলায় এমসিসির পক্ষে খেলেন। উইকেট অনুপযোগী পিচেও প্রথম ইনিংসে তিনি ৬/৬৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।

টেস্ট ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ষোলো টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন রয় ট্যাটারসল। ১৯৫০-৫১ মৌসুমের শীতকালে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ সিরিজের জন্য তাকে দলে রাখা হয়। অস্ট্রেলিয়ায় তিন মাঝারীমানের সফলতা পান। তবে, নিউজিল্যান্ডের পিচে বেশ সাফল্য লাভ করেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ পরবর্তী চৌদ্দ টেস্টে দলে নিয়মিতভাবে খেলার সুযোগ পান।

১৯৫১ সাল পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে নিজের স্থান ধরে রাখতে সমর্থ ছিলেন রয় ট্যাটারসল। ঐ বছর সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজ এলাকার মাঠে ১০১ রানের বিনিময়ে ১২ উইকেট পেয়েছিলেন। এছাড়াও, মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের সদস্যরূপে সফরকারীদের বিপক্ষে ৮/৫১ পেয়েছিলেন। ঐ মৌসুমের শীতকালে ভারত গমন করেন। কানপুরের ব্যাটিং উপযোগী ১২৫ রান খরচায় ৮ উইকেট দখল করেন তিনি। ফলশ্রুতিতে, ঐ সিরিজের একমাত্র জয়ের সন্ধান পায় ইংল্যান্ড দল। তবে, উপমহাদেশে তিনি বিকল্প বোলার হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছিলেন। আট ইনিংসে ২৪৬ ওভার বোলিং করেন। এরফলে তার ক্রীড়াশৈলী স্বাভাবিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি ও নিজেকে আর একইমানের বোলার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেননি।[২]

দেশে ফিরে তাকে জিম লেকার, জনি ওয়ারডলরলি জেনকিন্সের ন্যায় বোলারের মুখোমুখি হতে হয়। দল নির্বাচকমণ্ডলী তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তাসত্ত্বেও, ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই শতাধিক উইকেটের সন্ধান পেয়েছেন। এরপর তিনি আরও দুই টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। ১৯৫৩ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেন তিনি।

ব্যাটসম্যান হিসেবে তেমন সফলতা না পেলেও রেগ সিম্পসনের সাথে দশম উইকেটে মহামূল্যবান ৭৪ রানের জুটি গড়ে ১৯৩৮ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওভালে ইংল্যান্ড দলকে প্রথম জয় এনে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

অবসর[সম্পাদনা]

১৯৬১ সালে পেশাদার ক্রিকেটার রয় ট্যাটারসল বার্মিংহাম লীগে তেমন ভালো খেলতে পারেননি।[৫] ১৯৬২ সালে ওরচেস্টারশায়ারের পক্ষে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে তিনি তাদের দ্বিতীয় একাদশে মাঝারীমানের সফলতা পেয়েছিলেন।[৬] ১৯৬৩ সালে সর্বশেষ খেলায় অংশ নেন তিনি।

৯ ডিসেম্বর, ২০১১ তারিখে ৮৯ বছর বয়সে ওরচেস্টারশায়ারের কিডারমিনস্টার এলাকায় রয় ট্যাটারসলের দেহাবসান ঘটে।

খেলার ধরন[সম্পাদনা]

রয় ট্যাটারসল অস্বাভাবিক ভঙ্গীমায় অর্থোডক্স বোলার জিম লেকারের সাথে অল্প পার্থক্য নিয়ে বোলিংয়ে অগ্রসর হতেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনের অধিকাংশ সময়ে জিম লেকার খেলায় প্রভাববিস্তার করে ট্যাটারসলকে টেস্ট দলের বাইরে রাখেন। বলে সিম আনয়ণকল্পে তর্জনী ব্যবহার করতেন তিনি। ফলে ক্ষুরধার অফ-ব্রেক বোলিং সতর্কতা অবলম্বন করতেন। লেকারের তুলনায় তার বোলিং কিছুটা দ্রুততর হতো। নিজ কাউন্টির ভেজা পিচে এ ধরনের বোলিংয়ে বেশ সফলতা পান।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Roy Tattersall dies aged 89"। ESPNcricinfo। ৯ ডিসেম্বর ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১১ 
  2. Bateman, Colin (১৯৯৩)। If The Cap Fits। Tony Williams Publications। পৃষ্ঠা 166আইএসবিএন 1-869833-21-X 
  3. Cricketer Spring Annual 1959
  4. Cricketer Winter Annual 1956
  5. Cricketer 1961
  6. Preston, Norman (editor); Wisden, 1963; p. 776

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]