আজিজুর রহমান মল্লিক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আজিজুর রহমান মল্লিক
জন্ম৩১ ডিসেম্বর, ১৯১৮
ঢাকা জেলার ধামরাই থানার রাজাপুর গ্রামে
মৃত্যু৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭(1997-02-04) (বয়স ৭৮)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণপূর্ণ অধ্যাপক, শিক্ষা সচিব, রাষ্ট্রদূত, অর্থমন্ত্রী, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের নির্বাচিত চেয়ারম্যান

আজিজুর রহমান মল্লিক (৩১ ডিসেম্বর ১৯১৮ - ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ। তিনি আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান রিজিওনাল স্টাডিস বিভাগের প্রথম পূর্ণ অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য, বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা সচিব, ভারতে (একই সঙ্গে নেপালভুটান) বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত, দেশের প্রথম টেকনোক্র্যাট অর্থমন্ত্রী, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) নির্বাচিত চেয়ারম্যান।[১]

শৈশব[সম্পাদনা]

আজিজুর রহমান মল্লিকের জন্ম ১৯১৮ সালের ৩১শে ডিসেম্বর ঢাকা জেলার ধামরাই থানার রাজাপুর গ্রামে।[১]

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

বাড়িতেই গৃহ শিক্ষকের কাছে আরবি শিক্ষা ও পবিত্র কোরআন পাঠ শিখেছিলেন তিনি। প্রায় একই সঙ্গে তিনি বার্মার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে স্ট্যান্ডার্ড ফোর-এ ভর্তি হন। এই স্কুলে তিনি তিন বছর পড়েন। মানিকগঞ্জ মডেল হাই স্কুল থেকে ১৯৩৪ সালে লেটার সহ প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৩৬ সালে এখান থেকে প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ইতিহাস বিভাগে। ১৯৩৯ সালে তিনি অনার্স এবং ১৯৪০ সালে এম.এ পাশ করেন।[১]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ড. এ. আর. মল্লিক (প্রশাসনিক) ভবন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৪১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে মতের মিল না হওয়ায় তিনি চাকুরিতে ইস্তফা দিয়ে চলে যান রাজশাহী সরকারী কলেজে। সেখান থেকে ১৯৫১ সালে পিএইচডি ডিগ্রী করার জন্য বিলেত চলে যান। মাত্র ১ বছর ৮ মাসে তিনি পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ১৯৫৪ সালে দেশে ফিরে এসে যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেসময় পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনের কারণে অনেককেই 'দেশবিরোধী' ও 'সরকার বিরোধী' আখ্যা দিয়ে গ্রেফতার করা হতো। আর বরাবরই আজিজুর রহমান মল্লিককে কোর্টে গিয়ে ছাত্রদের জন্য জামিনদার হতে হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সহ অন্য অনেক শিক্ষক এ ব্যাপারে তাকে নিরুৎসাহিত করলেও তিনি একাজ করতেন নিজের তাগিদেই। ১৯৬৫ সালের শেষের দিকে আজিজুর রহমান মল্লিক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন। সেসময় তিনি সমস্ত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে দাঁড় করান। ১৯৭৬ সালের ১ জানুয়ারি তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে প্রফেসর এমিরিটাস হিসেবে নিয়োগ দান করে। ১৯৮৩-৮৫ এই দু'বছর তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বাঙালি মূলধনে গড়ে ওঠা প্রথম বাণিজ্যিক ব্যাংক 'ন্যাশনাল ব্যাংক'-এর অনারারি চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। [১]

মুক্তিযুদ্ধে অবদান[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ আজিজুর রহমান মল্লিকের সভাপতিত্বে চট্টগ্রামের প্যারেড গ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভাতেই তিনি জনতার ইচ্ছায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সভা থেকে এক বিরাট মিছিল চট্টলার রাজপথ অতিক্রম করে। সেই সভা চলাকালেই চট্টগ্রাম বন্দরে 'সোয়াত' জাহাজ থেকে অস্ত্র নামানোর সময় বাঙালি জনতার দ্বারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বাধা দেয়ার খবর আসে।

১৯৭১ এর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে রামগড় হয়ে আগরতলা চলে যান আজিজুর রহমান মল্লিক। সেখান থেকে তাজউদ্দিন আহমদের ডাকে কলকাতায় চলে যান তিনি। কলকাতায় তখন অনেক বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক এসে জড়ো হয়েছেন। তাদের নিয়েই গড়ে তোলা হয় 'লিবারেশন কাউন্সিল অব ইন্টিলিজেন্টসিয়া'। তার সভাপতির দায়িত্ব নেন প্রফেসর আজিজুর রহমান মল্লিক। এই সংগঠনের শিল্পীরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভারতের বিভিন্ন স্থানে গান গেয়ে জনমত গঠন করতেন। প্রবাসী সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের বাইরে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে প্রচার কাজ চালান সফলতার সাথে। মূলত আমেরিকাতেই তিনি এই প্রচার কাজ সবচেয়ে বেশি চালান। কারণ তিনি এক সময় আমেরিকাতেই শিক্ষকতা করতেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি মাত্র ৩৬ দিনে আমেরিকার হার্ভার্ড, ইয়াল, বস্টোন, পেনসিলভেনিয়া, স্ট্যানফোর্ড, নিউইয়র্ক, কলম্বিয়া, বার্কালি, লংবিচ, শিকাগো, বাফেলো, নর্থ ক্যারোলাইনা, টেক্সাস সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয়তা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি বক্তব্য রাখেন। এরমধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়, পাটনা, বোম্বে, দিল্লী, লক্ষ্ণৌ প্রভৃতি অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে দলটি জাতিসংঘে বাংলাদেশের সপক্ষে জনমত গঠন করার কাজে নিয়োজিত ছিল তার মধ্যে আজিজুর রহমান মল্লিক ছিলেন অন্যতম।[১]

কূটনৈতিক সাফল্য[সম্পাদনা]

আজিজুর রহমান ভারতে বাংলাদেশের প্রথম হাই কমিশনার। এই দায়িত্ব পালনকালে তিনি আফগানিস্তান ও আলজেরিয়াকেও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে সফল হন।[১]

মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মল্লিকের কবর

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]