মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ

মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার যেখানে গঠিত হয় সেখানে এই স্মৃতিসৌধটি গড়ে তোলা হয়েছে। [১] এর স্থপতি তানভীর করিম।[২][৩] মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ নির্মাণের মূল কাজ শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ স্বাধীনতার স্মৃতি ধরে রাখতে ২৩ স্তরের [৪] স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলেন। [৫] ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা মুজিবনগর কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। [৬]

স্থাপত্য তাৎপর্য[সম্পাদনা]

লাল মঞ্চ[সম্পাদনা]

লাল মঞ্চ

১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার যে স্থানে শপথ গ্রহণ করে ঠিক সেই স্থানে ২৪ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রশস্ত সিরামিকের ইট দিয়ে একটি আয়তকার লাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। যা মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের ভিতরে মাঝখানে।

২৩টি স্মৃতি স্তম্ভ[সম্পাদনা]

স্মৃতিসৌধটি ২৩ টি ত্রিভূজাকৃতি দেয়ালের সমন্বয়ে গঠিত। যা বৃত্তাকার উপায়ে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে। ২৩ টি দেয়াল (আগস্ট ১৯৪৭ থেকে মার্চ ১৯৭১)- এই ২৩ বছরের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম দেয়ালটির উচ্চতা ৯ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। পরবর্তী প্রতিটি দেয়ালকে ক্রমান্বয়ে দৈর্ঘ্য ১ ফুট ও উচ্চতা ৯ ইঞ্চি করে বাড়ানো হয়েছে। যা দ্বারা বুঝানো হয়েছে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার জন্য ৯ মাস ধরে যুদ্ধ করেছিল। শেষ দেয়ালের উচ্চতা ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ও দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট। প্রতিটি দেয়ালের ফাঁকে অসংখ্য ছিদ্র আছে যেগুলোকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর অত্যাচারের চিহ্ন হিসেবে প্রদর্শন করা হয়েছে।

এক লক্ষ বুদ্ধিজীবির খুলি[সম্পাদনা]

স্মৃতিসৌধটির ভূমি থেকে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি উঁচু বেদীতে অসংখ্য গোলাকার বৃত্ত রয়েছে যা দ্বারা ১ লক্ষ বুদ্ধিজীবির খুলিকে বোঝানো হয়েছে।

ত্রিশ লক্ষ শহীদ[সম্পাদনা]

স্মৃতিসৌধের ভূমি থেকে ৩ ফুট উচ্চতার বেদীতে অসংখ্য পাথর রয়েছে যা দ্বারা ৩০ লক্ষ শহীদ ও মা-বোনের সম্মানের প্রতি ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা ও স্মৃতিচারণা প্রকাশ করা হয়েছে। পাথরগুলো মাঝখানে ১৯টি রেখা দ্বারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের ১৯টি জেলাকে বুঝানো হয়েছে।

এগারোটি সিঁড়ি[সম্পাদনা]

স্মৃতিসৌধের বেদীতে আরোহণের জন্য ১১টি সিঁড়ি রয়েছে। যা দ্বারা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সমগ্র বাংলাদেশকে যে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়েছিল তা বুঝানো হয়েছে।

বঙ্গোপসাগর[সম্পাদনা]

স্মৃতিসৌধের উত্তর পাশের আম বাগান ঘেঁষা স্থানটিতে মোজাইক করা আছে তার দ্বারা বঙ্গোপসাগর বোঝানো হয়েছে। বঙ্গোপসাগর যদিও বাংলাদেশের দক্ষিণে, কিন্তু শপথ গ্রহণের মঞ্চটির সাথে স্মৃতিসৌধের সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য এখানে এটিকে উত্তর দিকে স্থান দেয়া হয়েছে।

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রতীক[সম্পাদনা]

স্মৃতিসৌধের মূল ফটকের রাস্তাটি মূল স্মৃতিসৌধের রক্তের সাগর নামক ঢালকে স্পর্শ করেছে। এখানে রাস্তাটি ভাষা আন্দোলনের প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

রক্তের সাগর[সম্পাদনা]

স্মৃতিসৌধের পশ্চিম পাশে প্রথম দেয়ালের পাশ দিয়ে শহীদের রক্তের প্রবাহ তৈরি করা হয়েছে যাকে রক্তের সাগর বলা হয়।

সাড়ে সাত কোটি ঐক্যবদ্ধ জনতা[সম্পাদনা]

লাল মঞ্চ থেকে যে ২৩টি দেয়াল তৈরি করা হয়েছে তার ফাঁকে অসংখ্য নুরি-পাথর দ্বারা মোজাইক করে লাগানো হয়েছে। যা দিয়ে ১৯৭১ সালের সাড়ে সাত কোটি ঐক্যবদ্ধ জনতাকে প্রতীক আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "মেহেরপুর জেলা"http (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৮-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৪ 
  2. "মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ"ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ 
  3. আহমেদ, ফারুখ; ডটকম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। "আম্রকানন, মুজিবনগর ও স্মৃতিকমপ্লেক্সের গল্প"bangla.bdnews24.com। ২০২২-০৫-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৪ 
  4. "মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৪ 
  5. "মুক্তিযুদ্ধের গল্প জানতে মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে | banglatribune.com"Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "মুজিবনগরে এক বেলা"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]