বিশ্ব মহাসাগর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিশ্বের মহাসাগরীয় জলরাশির একটি অ্যানিমেশন মানচিত্র। একটি অবিচ্ছিন্ন জলরাশি পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে। বিশ্ব মহাসাগর এই অবিচ্ছিন্ন জলরাশির মধ্যে একাধিক শাখায় বিভক্ত। এই শাখাগুলি আপেক্ষিকভাবে মুক্ত এবং এগুলির মধ্যে যোগাযোগও মোটামুটি অবিচ্ছিন্ন। বিশ্ব মহাসাগরকে সাধারণত পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়: প্রশান্ত, আটলান্টিক, ভারত, উত্তরদক্ষিণ; শেষ দুটিকে কোনো কোনো তালিকায় প্রথম তিনটি মহাসাগরের অন্তর্ভুক্ত শাখা হিসেবে দেখানো হয়েছে।

বিশ্ব মহাসাগর (ইংরেজি: World Ocean) হল পৃথিবীর মহাসাগরীয় জলরাশির একটি আন্তঃসংযুক্ত ব্যবস্থা। ভূতলস্থ ৭০% জল (১.৩৩২ বিলিয়ন কিউবিক কিলোমিটার) বিশ্ব মহাসাগরের অন্তর্গত।[১]

বিশ্ব মহাসাগরের একত্ব ও অবিচ্ছিন্নতা এবং এই মহাসাগরের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে এর মুক্ত আদানপ্রদান সমুদ্রবিদ্যার একটি মৌলিক গুরুত্বের বিষয়।[২] বিশ্ব মহাসাগর অনেকগুলি প্রধান মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিভক্ত। এই অঞ্চলগুলি মহাদেশসমূহ ও বিভিন্ন সামুদ্রিক বৈশিষ্ট্যের দ্বারা বিচ্ছিন্ন। এই বিভাগগুলি হল: আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তর মহাসাগর (কোনো কোনো মতে এটি আটলান্টিক মহাসাগরের একটি সমুদ্র), ভারত মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগরদক্ষিণ মহাসাগর (কোনো কোনো মতে এটি আটলান্টিক, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণাংশ)। অন্যদিকে মহাসাগরীয় জল ছড়িয়ে গিয়েছে বিভিন্ন ক্ষুদ্রতর সমুদ্র, প্রণালী ও উপসাগরের মধ্যে।

একটি বিশ্ব মহাসাগর সুদূর প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই পৃথিবীতে কোনো না কোনো আকারে বিরাজ করছে। এই ধারণাটিও ধ্রুপদি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে (ওশেনাসের আকারে)। সমসাময়িক বিশ্ব মহাসাগর ধারণাটি ২০শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে রাশিয়ান সমুদ্রবিজ্ঞানী ইউলি শোকালস্কি প্রচলন করেন। তিনি বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলব্যাপী একটিএকক ও অবিচ্ছিন্ন মহাসাগরকে বোঝাতে এই শব্দটি প্রয়োগ করেছিলেন।[৩]

পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু থেকে দেখলে আটলান্টিক, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর দক্ষিণ মহাসাগরের উত্তরে প্রসারিত। আরও উত্তরে আটলান্টিক মহাসাগর মিশেছে উত্তর মহাসাগরে। উত্তর মহাসাগর আবার বেরিং প্রণালীর মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত। এইভাবে বিশ্ব মহাসাগরে জলধারা অবিচ্ছিন্ন থেকেছে।

  • বিশ্বের বৃহত্তম মহাসাগর প্রশান্ত মহাসাগর দক্ষিণ মহাসাগর থেকে উত্তর মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, দুই আমেরিকাওশিয়ানিয়ার মধ্যবর্তী অংশে এই মহাসাগর প্রসারিত। দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণে কেপ হর্নের কাছে প্রশান্ত মহাসাগর আটলান্টিকে মিশেছে।
  • দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর আটলান্টিক মহাসাগর দক্ষিণ মহাসাগর থেকে উত্তর মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই মহাসাগরের একদিকে দুই আমেরিকা এবং অপর দিকে আফ্রিকাইউরোপ। আফ্রিকার দক্ষিণে কেপ আগুলহাসের কাছে আটলান্টিক ভারত মহাসাগরে মিশেছে।
  • ভারত মহাসাগর দক্ষিণ মহাসাগর থেকে উত্তরে ভারত পর্যন্ত প্রসারিত। এই মহাসাগর পশ্চিমে আফ্রিকা ও পূর্বে অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অবস্থিত। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারত মহাসাগর প্রশান্ত মহাসাগরে মিশেছে।
  • উত্তর মহাসাগর হল ক্ষুদ্রতম মহাসাগর। গ্রিনল্যান্ডআইসল্যান্ডের কাছে এটি আটলান্টিকে এবং বেরিং প্রণালীতে প্রশান্ত মহাসাগরে মিশেষে। উত্তর মেরু এই মহাসাগরের উপর অবস্থিত। এই মহাসাগর উত্তর আমেরিকায় পশ্চিম গোলার্ধ এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়াসাইবেরিয়ায় পূর্ব গোলার্ধকে স্পর্শ করেছে। উত্তর মহাসাগর আংশিকভাবে সামুদ্রিক বরফে আচ্ছন্ন। এই বরফের আয়তন ঋতু অনুসারে বিভিন্ন হয়।
  • দক্ষিণ মহাসাগর আন্টার্কটিকা মহাদেশকে ঘিরে থাকা একটি প্রস্তাবিত মহাসাগর। আন্টার্কটিক মেরুচক্রীয় স্রোত এই মহাসাগরের প্রধান স্রোত। সাধারণত এই মহাসাগর দক্ষিণ দ্রাঘিমার ৬০ ডিগ্রির নিচে অবস্থিত। দক্ষিণ মহাসাগরও আংশিকভাবে সামুদ্রিক বরফ দ্বারা আচ্ছাদিত। এই বরফের আয়তন ঋতু অনুসারে বিভিন্ন হয়। দক্ষিণ মহাসাগর বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মহাসাগর।

বিশ্ব মহাসাগরের মোটামুটি এক দেখানো হলেও আসলে তা এক নয়। মহাদেশীয় সরণের ফলে এর আকার পরিবর্তিত হয়।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "WHOI Calculates Volume and Depth of World’s Oceans" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ জুলাই ২০১২ তারিখে. Ocean Power Magazine. Retrieved February 28, 2012.
  2. Spilhaus, Athelstan F. 1942 (Jul.). "Maps of the whole world ocean." Geographical Review (American Geographical Society). Vol. 32 (3): pp. 431-5.
  3. Bruckner, Lynne and Dan Brayton (২০১১)। Ecocritical Shakespeare (Literary and Scientific Cultures of Early Modernity)। Ashgate Publishing, Ltd। আইএসবিএন 978-0754669197 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]