অবজার্ভেটরি হিল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অবজার্ভেটরি হিলের পূর্ব প্রান্ত থেকে মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য।

অবজার্ভেটরি হিল হল পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং শহরের চৌরাস্তা স্কোয়ারের (যা দ্য ম্যাল নামে বেশি পরিচিত) কাছে একটি পাহাড়। মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা সহ অনেকগুলি তুষারাবৃত পর্বতশৃঙ্গের সুন্দর দৃশ্য অবজার্ভেটরি হিল থেকে দেখা যায়। ভুটিয়া বস্তি মঠ আগে এখানে অবস্থিত ছিল। এখন এই পাহাড়ে মহাকাল মন্দির অবস্থিত। নেহেরু রোড ও ভানুভক্ত রোড দার্জিলিং শহরের দুইটি প্রধান সড়ক। এই দুইটি রাস্তা চৌরাস্তায় এসে মিলিত হয়েছে।[১]

মঠ[সম্পাদনা]

ভুটিয়া বস্তি মঠ (দার্জিলিং-এর সবচেয়ে পুরনো মঠ) প্রথমে অবজার্ভেটরি হিলে অবস্থিত ছিল। ১৭৬৫ সালে লামা দোর্জে-রিনজিং এই মঠটি নির্মাণ করেছিলেন। লোকে মনে করে, সেই মঠের ভিক্ষুরা যখন এই অঞ্চলটিকে "দোর্জে-লিং" (কথাটির মানে, "বজ্রের দেশ") বলে উল্লেখ করতেন। সেই থেকেই "দার্জিলিং" নামটি এসেছে। কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন দোর্জে-রিনজিং-এর নামানুসারেই শহরের নামটি এসেছে। ১৮১৫ সালে দার্জিলিং-এ অনুপ্রবেশকারী একটি গোর্খা হানাদার বাহিনী মঠটিতে নির্মম লুটতরাজ চালিয়েছিল। ১৮৬১ সালে মঠটি আবার গঠিত হয়। ১৮৭৯ সালে মঠটি ভুটিয়া বস্তিতে সরে আসে। এখন এখানেই মঠটি অবস্থিত।[২] ১৯৩৪ সালে একটি ভূমিকম্পে মঠটি আবার ধ্বংস হয়ে যায়। পরে সিক্কিমের রাজা এটি আবার তৈরি করে দেন।[১]:৭৮

মহাকাল মন্দির[সম্পাদনা]

মহাকাল মন্দির, অবজার্ভেটরি হিল, দার্জিলিং

চৌরাস্তা থেকে সোজা উঠে গেলে অবজার্ভেটরি হিলের চূড়ায় পৌঁছানো যায়। এখানেই মহাকালের (শিবের একটি রূপ) মন্দিরটি অবস্থিত।[১] মন্দিরের মধ্যে একটি গুহা রয়েছে। যাঁরা পূজা দিতে আসেন, তারা এই গুহাটিকে পবিত্র মনে করেন। সংস্কৃতে"দুর্জয় লিঙ্গ" কথাটির মানে "অপরাজেয় শক্তিসম্পন্ন শিব (শিবলিঙ্গ), যিনি হিমালয় শাসন করেন"। এই নামটির মধ্যেও "দার্জিলিং" নামটির উৎপত্তির একটি আভাস রয়েছে।[৩] এখন যেখানে মহাকাল মন্দির অবস্থিত, আগে সেখানেই বৌদ্ধ মঠটি অবস্থিত ছিল। ভুটিয়াদের কাছে এটি এখানও অতি পবিত্র স্থান। মন্দিরে পতপত করে উড়তে থাকা পতাকাগুচ্ছের মধ্যে অনেক ঘণ্টা বাজে।[১] এগুলি দিয়ে পুণ্যার্থীরা মন্দিরে প্রার্থনা করেন। অবজার্ভেটরি হিলে অনেক বাঁদর আছে।[৪]

পর্যটন কেন্দ্র[সম্পাদনা]

বাচ্চারা চৌরাস্তায় টাট্টুঘোড়ায় চড়ার জন্য তৈরি হচ্ছে

অবর্জার্ভেটরি হিলের চারিধারে চৌরাস্তা ও দ্য ম্যাল দার্জিলিং শহরের পর্যটন আকর্ষণ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,১৩৪ মিটার (৭,০০০ ফুট) উচ্চতায় পাহাড়ের ধাপে এই জায়গাটি অবস্থিত। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে, এখান থেকে মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা ও ২০,০০০ ফুটের বেশি উচ্চতার বারোটি পর্বতশৃঙ্গ দেখা যায়।[১] অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে দৃশ্য পরিষ্কার থাকে। বছরের অন্যান্য সময়ে ভাগ্য ভাল থাকলে দেখা যায়। কারণ ওই সময় গোটা এলাকাটিকে মেঘ গ্রাস করে রাখে এবং কখনও সখনও পর্বতশৃঙ্গগুলির কিছু কিছু অংশ দেখতে পাওয়া যায়। সত্যজিৎ রায়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা চলচ্চিত্রটির চরিত্রগুলির মতো অনেক মানুষ বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি দেখার জন্য এখানে বহুক্ষণ বসে অপেক্ষা করেন।[৫]

অনেক পর্যটক আনাগোনা করলেও দ্য ম্যাল হল দার্জিলিং-এর সবচেয়ে পরিষ্কার এলাকা। পর্বতমালার দৃশ্য দেখা ছাড়াও অনেক মানুষ টাট্টুঘোড়ায় চড়তে (বিশেষত বাচ্চারা) ও স্মারকদ্রব্য সংগ্রহ করতে চৌরাস্তায় আসেন।[২]

পাহাড়ের আশেপাশে[সম্পাদনা]

উইন্ডামেয়ার হোটেল, দার্জিলিং

অবজার্ভেটরি হিলের পাশে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা রয়েছে। বার্চ হিল বা জওহর পর্বত হল দ্য ম্যালের একটি শাখা। এটি একটি আলাদা আবাসিক বিভাগ। এখানে দার্জিলিং-এর রাজভবন অবস্থিত।[৬] জওহর পর্বতের পশ্চিমে একটি অভিক্ষিপ্ত অংশে হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট অবস্থিত। এটির থেকে অবজার্ভেটরি হিলের দূরত্ব থেকে দেড় কিলোমিটার।[৭] উইন্ডামেয়ার হোটেল ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্যুরিস্ট লজ দ্য ম্যালের উপরে অবস্থিত। অবিবাহিত ইংরেজ ও স্কটিশ চা আবাদকারীদের জন্য একটি আরামদায়ক বোর্ডিং এলাকা হিসাবে উইন্ডামেয়ার চালু হয়। ১৯৩৯ সালে এটিকে একটি হোটেল হিসাবে গড়ে তোলা হয়।[৮] চৌরাস্তা ও দ্য ম্যালে এবং তার আশেপাশে অনেক হোটেল ও রেস্তোরাঁ আছে। দ্য ম্যাল থেকে একটি রাস্তা সোজা চলে গিয়েছে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী চিত্তরঞ্জন দাশের বাড়ি "স্টেপ অ্যাসাইড"-এর দিকে।[৯] ১৯২৫ সালের ১৬ই জুন দার্জিলিং-এই তার মৃত্যু ঘটেছিল।[১০]

যে পর্বতমালার উপর দার্জিলিং শহরটি অবস্থিত, সেটি ইংরেজি ওয়াই (Y) অক্ষরের আকৃতি বিশিষ্ট। এই পর্বতমালার পাদদেশে রয়েছে কাটাপাহাড়জলাপাহাড় এবং দুইটি বাহু অবজার্ভেটরি হিল থেকে দুই দিকে বিভক্ত হয়ে প্রসারিত হয়েছে। উত্তরপূর্ব বাহুটি হঠাৎ করে নিচে নেমে লেবং অভিক্ষিপ্তাংশে শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু উত্তরপশ্চিম বাহুটি নর্থ পয়েন্ট হয়ে এগিয়ে গিয়ে টাকবার চা বাগানের কাছে অবস্থিত একটি উপত্যকায় শেষ হয়েছে।[১১]

গ্যালারি[সম্পাদনা]

সূত্র[সম্পাদনা]

  1. Agarwala, A.P. (editor), Guide to Darjeeling Area, 27th edition, p. 68, আইএসবিএন ৮১-৮৭৫৯২-০০-১.
  2. Chattopadhyay, Suhrid Sankar। "Return of the Queen"Focus on DarjeelingFrontline, 1-14 Jan 2005। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০০৭ 
  3. "Darjeeling"Hill Stations। webindia123। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০০৭ 
  4. "Observatory Hill in Darjeeling"Sight seeing in Darjeeling। asiarooms.com। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০০৭ 
  5. "Kanchenjungha"Life and filmmaking of Satyajit Ray। satyajitray.org। ১৬ জুন ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০০৭ 
  6. A Road Guide to Darjiling, p. 9, TTK Healthcare Ltd, Publications Division, আইএসবিএন ৮১-৭০৫৩-১৭৩-X..
  7. "Himalayan Moutaineering Institute"। darjeelingnews.net। ৩ জুলাই ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০০৭ 
  8. "Hotel Windamere, Darjeeling"Heritage hotel in Darjeeling। himalayan-adventure.com। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০০৭ 
  9. "Darjeeling"Places to go – hillside। Swarnakshar Prakasani Pvt. Ltd 2004। ১১ জুন ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০০৭ 
  10. "Deshbandhu Chittaranjan Das (1870 - 1925)"political figures। Lokpriya। ১৪ জুন ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১০ 
  11. Khawas, Vimal (২০০৩)। "Urban Management in Darjeeling Himalaya: A Case Study of Darjeeling Municipality."। The Mountain Forum। ২০ অক্টোবর ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০০৭ Now available in the Internet Archive in this (accessed on 2 July 2007)