সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত | |
---|---|
পেশা | অধ্যাপনা |
জাতীয়তা | বাঙালি |
নাগরিকত্ব | ভারত |
সময়কাল | ১৯৩০-১৯৬০ |
ধরন | কবি |
বিষয় | কবিতা |
সাহিত্য আন্দোলন | আধুনিক বাংলা কবিতা, কল্লোল যুগ |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | দশমী, প্রতিদিন, উত্তর ফাল্গুনী, সংবর্ত |
দাম্পত্যসঙ্গী | ছবি বসু (১৯২৪-১৯৬০) (বৈধভাবে বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়নি) রাজেশ্বরী বাসুদেব (১৯৪৩-১৯৬০) |
স্বাক্ষর |
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (৩০ অক্টোবর ১৯০১ - ২৫ জুন ১৯৬০) বাংলা ভাষার একজন প্রধান আধুনিক কবি। বিংশ শতকের ত্রিশ দশকের যে পাঁচ জন কবি বাংলা কবিতায় রবীন্দ্র প্রভাব কাটিয়ে আধুনিকতার সূচনা ঘটান তাদের মধ্যে সুধীন্দ্রনাথ অন্যতম। বুদ্ধদেব বসুর মতে, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন একাধারে কবি ও বিদ্বান, স্রষ্টা ও মনস্বী। সংস্কৃত ও বাংলা সাহিত্যে, এবং একই সঙ্গে আবহমান পাশ্চাত্য সাহিত্যে তার মতো বিস্তীর্ণ ও যত্নলব্ধ জ্ঞান ভারত ভূমিতে বিরল ও বিস্ময়কর। তিনি পরিচয় সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি জীবনের এক পর্যায়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন।[১]
জীবন বৃত্তান্ত
[সম্পাদনা]সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ১৯০১ সালের ৩০ অক্টোবর কলকাতা শহরের হাতিবাগানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, মায়ের নাম ইন্দুমতি বসুমল্লিক। সুধীন দত্তের বাল্যকাল কেটেছে কাশীতে। ১৯১৪ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত কাশীর থিয়সফিক্যাল হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন। পরে কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ১৯২২ সালে স্নাতক হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য ও আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯২৪ সাল পর্যন্ত যথারীতি পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও কোনো বিষয়েই পরীক্ষা দেন নি।[২]
১৯২৪ সালে ছবি বসুর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, কিন্তু এক বছরের ভিতরেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ১৯৪৩ সালের ২৯ মে প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী রাজেশ্বরী বাসুদেব সঙ্গে দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৬০ সালের ২৫ জুন কবি নিঃসন্তান অবস্থায় পরলোকগমন করেন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]পিতার আইন ফার্মে কিছুদিন শিক্ষানবিস হিসেবে থাকার পর সুধীন্দ্রনাথ দত্ত চাকরিজীবন শুরু করেন লাইট অব এশিয়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে। ১৯২৯ সালের ফেব্রুয়ারি-ডিসেম্বর মাসে রবীন্দ্রনাথের এবং সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন। ১৯৩১ সালে পরিচয় পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১২ বছর ধরে সম্পাদকের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। স্টেটসম্যান ও শরৎ বসুর লিটারারি কাগজে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৯ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।[২] শিল্পকলাবিৎ শাহেদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন তার বন্ধু।
১৯৫৬ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ার পর তিনি তুলনামূলক সাহিত্য বিভাবে অধ্যাপনা করেছেন।
সাহিত্য জীবন
[সম্পাদনা]জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত আধুনিক বাংলা কাব্যের সবচেয়ে বেশি নিরাশাকরোজ্জ্বল চেতনা। সর্বব্যাপী নাস্তিকতা, দার্শনিক চিন্তা, সামাজিক হতাশা এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধিবাদ তার কবিতার ভিত্তিভূমি।
তার কাব্যসংগ্রহের ভূমিকায় , বুদ্ধদেব বসু লিখেছেন :
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিশ শতকের একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি, তার মতো নানাগুণসমন্বিত পুরুষ রবীন্দ্রনাথের পরে আমি অন্য কাউকে দেখিনি। বহুকাল ধ'রে তাঁকে প্রত্যক্ষ দেখেছিলুম বলে, তার মৃত্যুর পর থেকে একটি প্রশ্ন মাঝে-মাঝে আমার মনে জাগছে : যাকে আমরা প্রতিভা বলি, সে-বস্তুটি কী? তা কি বুদ্ধিরই কোনো উচ্চতর স্তর, না কি বুদ্ধির সীমাতিক্রান্ত কোনো বিশেষ ক্ষমতা, যার প্রয়োগের ক্ষেত্র এক ও অনন্য। ইংরেজি 'genius' শব্দে অলৌকিকের যে আভাস আছে, সেটা স্বীকার্য হ'লে প্ৰতিভাকে এক ধরনের আবেশ বলতে হয়, আর সংস্কৃত 'প্রতিভা' শব্দের আক্ষরিক অর্থ অনুসারে তা হ'য়ে ওঠে বুদ্ধির দীপ্তি, মেধার নামান্তর। যদি প্রতিভাকে অলৌকিক ব'লে মানি, তাহ'লে বলতে হয় যে সহজাত বিশেষ একটি শক্তির প্রভাবেই উত্তম কবিতা রচনা সম্ভব, রচয়িতা অন্যান্য বিষয়ে হীনবুদ্ধি হ'তে পারেন এবং হ'লে কিছু এসে যায় না, উপরন্তু ঐ বিশেষ ক্ষমতাটি শুধু দৈবক্রমে সহজাতভাবেই প্রাপণীয়। পক্ষান্তরে, প্রতিভাকে উন্নত বুদ্ধি ব'লে ভাবলে কবি হ'য়ে ওঠেন এমন এক ব্যক্তি যাঁর ধীশক্তি কোনো-কোনো ব্যক্তিগত বা ঐতিহাসিক কারণে কাব্যরচনায় নিয়োজিত হয়েছিলো, কিন্তু সেই কারণসমূহ ভিন্ন হ'লে যিনি বণিক বা বিজ্ঞানী বা কূটনীতিজ্ঞরূপে বিখ্যাত হ'তে পারতেন। এই দুই বিকল্পের মধ্যে কোনটা গ্রহণীয়?
বলা বাহুল্য, এই প্রশ্ন আমরা শুধু উত্থাপন করতে পারি, এর উত্তর দেয়া সকলেরই সাধ্যাতীত। কেননা ইতিহাস থেকে দুই পক্ষেই বহু সাক্ষী দাঁড় করানো যায়, তারা অনেকে আবার স্ববিরোধে দোলায়মান। বহুমুখী গ্যেটে ও রবীন্দ্রনাথের 'বিরুদ্ধে' আছেন একান্ত হোন্ডার্লিন ও জীবনানন্দ, মনীষী শেলি ও কোলরিজের পাশে উন্মাদ ব্লেক ও অশিক্ষিত কীটস, উৎসাহী বোদলেয়ারের পরে শীতল ও নিরঞ্জন মালার্মে। জগতের কবিদের মধ্যে এত বিভিন্ন ও বিরোধী ধরনের চরিত্র দেখা যায়, এত বিচিত্র প্রকার কৌতূহলে বা অনীহায় তারা আক্রান্ত, এত বিভিন্নভাবে তারা কর্মিষ্ঠ ও নিষ্ক্রিয়, এবং উৎসুক ও উদাসীন ছিলেন, যে ঠিক কোন লক্ষণটির প্রভাবে তারা সকলেই অমোঘভাবে কবি হয়েছিলেন, তা আবিষ্কার করার আশা শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দিতে হয়। এবং কবিত্বের সেই সামান্য লক্ষণ—যদি বা কিছু থাকে—তা আমার বর্তমান নিবন্ধের বিষয়ও নয়; এখানে আমি বলতে চাচ্ছি যে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত এমন একজন কবি যাঁর প্রতিভার প্রাচুর্যের কথা ভাবলে প্রায় অবাকই লাগে যে কবিতা লেখার মতো একটি নিরীহ, আসীন, ও সামাজিক অর্থে নিষ্ফল কর্মে তিনি গভীরতম নিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন।
কেননা সুধীন্দ্রনাথ ছিলেন বহুভাষাবিদ্ পণ্ডিত ও মনস্বী, তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণী বুদ্ধির অধিকারী, তথ্যে ও তত্ত্বে আসক্ত, দর্শনে ও সংলগ্ন শাস্ত্রসমূহে বিদ্বান; তার পঠনের পরিধি ছিলো বিরাট, ও বোধের ক্ষিপ্রতা ছিলো অসামান্য। সেই সঙ্গে যাকে বলে কাণ্ডজ্ঞান, সাংসারিক ও সামাজিক সুবুদ্ধি, তাও পূর্ণমাত্রায় ছিলো তার, কোনো কর্তব্যে অবহেলা করতেন না, গার্হস্থ্য ধর্মপালনে অনিন্দনীয় ছিলেন, ছিলেন আলাপদক্ষ, রসিক, প্রখর ব্যক্তিত্বশালী, আচরণের পুঙ্খানুপুঙ্খে সচেতন, এবং সর্ববিষয়ে উৎসুক ও মনোযোগী। এই বর্ণনা থেকে বোঝা যাবে যে, একটু চেষ্টা করলেই, বাংলা সাহিত্যের চাইতে আপাতবৃহত্তর কোনো ব্যাপারে নায়ক হ'তে পারতেন তিনি; আমার এক তরুণ বন্ধুর সঙ্গে এ-বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ একমত যে সুধীন্দ্রনাথ রাজনৈতিক হ'লে অনিবার্যত নেতৃপদ পেতেন, বা আইনজীবী হ'লে সেই পেশার উচ্চতম শিখরে পৌঁছতে তার দেরি হতো না; তাঁকে অনায়াসে কল্পনা করা যেতো রাজমন্ত্রী বা রাষ্ট্রদূতরূপে, তত্ত্বচিন্তায় নিবিষ্ট হ'লে নতুন কোনো দর্শনের প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন না তাও নয়। অথচ এর কোনোটাই তিনি করলেন না, কবিতা লিখলেন। পিতার কাছে আইনশিক্ষা আরম্ভ ক'রে শেষ করলেন না; এম. এ. পড়া আরম্ভ ক'রেই ছেড়ে দিলেন; সুভাষচন্দ্র বসুর 'ফরওঅর্ড' পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হ'য়েও রাজনৈতিক কর্মের দিকে প্রবর্তনা পেলেন না; বীমাপ্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন আরম্ভ করেও লক্ষ্মীর বাসস্থানটিকে পরিহার করলেন। এ কি এক তরুণ ধনীপুত্রের খেয়ালমাত্র, না কি এর পিছনে কোনো প্রচ্ছন্ন উদ্যম কাজ ক'রে যাচ্ছে? কেউ-কেউ বলেছেন যে তিনি যেমন তার পিতার বৈদান্তিক আতিশয্যে উত্ত্যক্ত হ'য়ে 'অনেকান্ত জড়বাদে'র আশ্রয় নিয়েছিলেন, তেমনি তার দেশহিতৈষী কর্মবীর পিতাকে থিয়সফিতে আত্মবিলোপ করতে দেখে সমাজসেবায় তার আস্থা ভেঙে যায়। এই যুক্তিকে আর-একটু প্রসারিত ক'রে হয়তো বলা যায় যে দেশ, কাল ও পরিবারের আপতিক সন্নিপাতের ফলে জনকর্মে উৎসাহ হারিয়ে, তিনি বেছে নিলেন সেই একটি কাজ, যা শব্দময় হ'য়েও নীরব, এবং সর্বজনের প্রতি উদ্দিষ্ট হ'লেও নিতান্ত ব্যক্তিগত। কিন্তু সত্যি কি তা-ই? না কি তার নাড়িতেই কবিতা ছিলো, দেহের তন্তুতে ছিলো বাক্ ও ছন্দের প্রতি আকর্ষণ, তাই অন্য কোনো পথে যাবার তার উপায় ছিলো না, অন্যান্য এবং অধিকতর প্রভাবশালী বৃত্তির দিকে স্পষ্ট সম্ভাবনা নিয়েও তাই তাঁকে কবি হ'তে হ'লো? তিনি কি অন্যবিধ কীর্তির আহ্বান উপেক্ষা ক'রে কবিতা লিখতে বসেছিলেন, না কি মন্ত্রমুগ্ধ কান নিয়ে অন্য কোনো আহ্বান তিনি শুনতেই পাননি? মূল্যবান জেনেও কোনো-কিছু ত্যাগ করেছিলেন, না কি বর্জন করেছিলেন শুধু সেই সব, যা তার কাছে অকিঞ্চিৎকর, বরণ করেছিলেন শুধু তা-ই, যেখানে তার সার্থকতা নিহিত।
এ-কথার উত্তরে আমি বলতে বাধ্য যে জগতের অন্যান্য উত্তম কবিদের মতো সুধীন্দ্রনাথও ছিলেন—স্বভাবকবি নন, স্বাভাবিক কবি। তা যদি না-হ'তো, তাহলে তার মতো মেধাবী ব্যক্তি কবিতা-নামক বায়বীয় ব্যাপার নিয়ে প্রৌঢ়বয়স পর্যন্ত প্রাণপাত পরিশ্রম করতেন না। তার সামনে, রবীন্দ্রনাথের মতো, সুযোগ ছিলো অপর্যাপ্ত, ব্যক্তিত্বে ছিলো অন্য নানা গুণপনা; সে-সবের সদ্ব্যবহারও তিনি করেছিলেন। কিন্তু আমি যাঁদের স্বাভাবিক কবি বলছি-আর তারা ছাড়া সকলেই অকবি—তারা লোকমানসে নিতান্ত কবিরূপেই প্রতিভাত হ'য়ে থাকেন, তাঁদের ক্ষমতার অন্যান্য বিকিরণ শেষ পর্যন্ত সেই একই অগ্নিতে লীন হ'য়ে যায়। গ্যেটেকে জগতের লোক কবি ছাড়া অন্য কিছু ব'লে ভাবে কি? জমিদার, ধর্মগুরু, শিক্ষাব্রতী, দেশপ্রেমিক, গ্রামসেবক, বিশ্বপ্রেমিক—রবীন্দ্রনাথ তো কত কিছুই ছিলেন, কিন্তু তার একটিমাত্র মৌলিক পরিচয়ের মধ্যে অন্য সব গৃহীত হ'য়ে গেলো। তেমনি, সুধীন্দ্রনাথের অন্য যে সব চরিত্রলক্ষণ উল্লেখ করেছি, বা করিনি—তার অধীত জ্ঞান, মনীষিতা, আলাপ নৈপুণ্য, অসামান্য প্রফুল্লতা ও সামাজিক বৈদগ্ধ্য, সম্পাদক ও গোষ্ঠীনায়ক হিশেবে স্মরণীয় কৃতিত্ব তার—এই সবই তার কবিত্বের অনুষঙ্গ, তার কবিতার পক্ষে অনুকূল বা বিরোধী ধাতু হিশেবে প্রয়োজনীয়; যদি তিনি কবি না-হতেন, তাহলে তার জীবন ও ব্যক্তিত্ব এরকম হ'তো না, এবং যদি ভিন্ন ধরনের কবি হতেন তাহলে তার জীবন ও ব্যক্তিত্ব ভিন্ন ধরনের হ'তো।
শ্রীমতী রাজেশ্বরী দত্তের সৌজন্যক্রমে সুধীন্দ্রনাথের অনেকগুলি পাণ্ডুলিপিপুস্তক দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। ছাপার অক্ষরে তার যে-সব কবিতার সঙ্গে আমরা পরিচিত, সেগুলির আদি ও পরবর্তী লেখন সবই রক্ষিত আছে, তাছাড়া আছে দুটি প্রাথমিক খাতা, যাতে তার কাব্যরচনার সূত্রপাত হয়েছিলো। সর্বপ্রথম খাতাটির তারিখ বঙ্গাব্দ ১৩২৯, অর্থাৎ খৃষ্টাব্দ ১৯২২, সুধীন্দ্রনাথের বয়স তখন একুশ। নামপত্রে লেখা : 'শ্রীশ্রীদুর্গামাতা সহায়। শ্রীসুধীন্দ্র নাথ দত্ত। ১৩৯ কর্ণওয়ালিস স্ট্রীট, কলিকাতা।' (মূলের বানান উদ্ধৃত হ'লো।) ভিতরের পাতাগুলোতে আছে কম্প্র হাতে মেলানো পদ্য, ছয় বা আট পংক্তি থেকে দু-তিন পৃষ্ঠা পর্যন্ত ব্যাপ্তি তাদের, তাতে বানান অস্থির ও ছন্দ ভঙ্গুর; বাংলা ভাষা ও বাংলা ছন্দ—এই দুই অনমনীয় উপাদানের সঙ্গে সংগ্রামের চিহ্ন সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। হস্তলিপিও কাঁচা, এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের, অক্ষরগুলি কোণবহুল ও বিশ্লিষ্ট, তাতে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব একেবারেই নেই, এবং আমাদের পক্ষে তা সুধীন্দ্রনাথের ব'লে ধারণা করা সহজ নয়। এটা কেমন ক'রে সম্ভব হ'লো যে সুধীন্দ্রনাথ, একুশ বছর বয়সে, যখন রবীন্দ্রনাথের 'বলাকা' পর্যন্ত ও সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের প্রায় সমগ্র কাব্য বেরিয়ে গেছে, তখন ঐ রকম কাঁচা লেখা লিখেছিলেন?
এর উত্তরে আমি এই তথ্যটি উপস্থিত করবো যে সুধীন্দ্রনাথের প্রথম যৌবনে বাংলা ভাষা তার অন্তরঙ্গ ছিলো না। তার বাল্যশিক্ষা ঘটেছিলো কাশীতে; আনি বেসান্ট কর্তৃক স্থাপিত সেই বিদ্যালয়ে তিনি সংস্কৃত ও ইংরেজি ভালোভাবে শিখেছিলেন, কিন্তু বাংলা চর্চার তেমন সুযোগ পাননি। শুনেছি, কৈশোরে কলকাতায় ফিরে মাঝে-মাঝে মাতার সঙ্গে হিন্দিতে কথা বলতেন। মাতৃভাষাকে স্বাধিকারে আনতে তার যে কিছু বেশি সময় লেগেছিলো তাতে অবাক হবার কিছু নেই; যা লক্ষণীয়—এবং বর্তমান ও ভাবীকালের তরুণ লেখকদের পক্ষে শিক্ষণীয়—তা এই যে মাতৃভাষাকে স্ববশে আনবার জন্য, ও নিজের কবিত্বশক্তিকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য, দিনে-দিনে অনলসভাবে অনবরত তিনি 'উদ্যমের ব্যথা সহ্য করেছিলেন। তার খাতাগুলিতে দেখা যায়, বাংলা ভাষার কবিতার পংক্তিকে ইংরেজি ধরনে বিশ্লেষ ক'রে তিনি বাংলা ছন্দের প্রকৃতি বুঝে নিচ্ছেন, কোথাও দেখা দিচ্ছে পঠিতব্য পুস্তকের তালিকা, কোথাও পর-পর কতগুলো মিল লিখে রাখছেন। এরই পরিণতিস্বরূপ পরবর্তীকালে আমরা দেখতে পাই, 'পথ' নামক কবিতার আদি লেখনের প্রতিটি পংক্তি উচ্ছেদ ক'রে তারই ফাঁকে-ফাঁকে এক একটি নতুন পংক্তি রচনা করছেন; দেখতে পাই 'সংবর্তে'র ঈশিত্ব, 'যযাতি'র অতুলনীয় কলাকৌশল।
আমার বিশ্বাস, সুধীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ প'ড়ে আমি যা বুঝিনি, তার পাণ্ডুলিপিপুস্তকের সঙ্গে চাক্ষুষ পরিচয়ের ফলে তার সেই গোপন কথাটি আমি ধরতে পেরেছি। বুঝতে পেরেছি, কেন জীবনের শেষ পর্যায়ে তার একাত্মবোধ ঘটেছিলো—ধরা যাক তারই মতো বেদনাবর্ণিল পোল ভেরলেনের সঙ্গে নয়— স্বভাবে যিনি তার একেবারে বিপরীত, সেই নিরঞ্জন মালার্মের সঙ্গে। সুধীন্দ্রনাথ কবিতা লিখতে আরম্ভ করেছিলেন তার স্বভাবেরই প্রণোদনায়, কিন্তু তার সামনে একটি প্রাথমিক বিঘ্ন ছিলো ব'লে, এবং অন্য অনেক কবির তুলনায় যৌবনেই তার আত্মচেতনা অধিক জাগ্রত ছিলো ব'লে, তিনি প্রথম থেকেই বুঝেছিলেন—যা আমার উপলব্ধি করতে অন্তত কুড়ি বছরের সাহিত্যচর্চার প্রয়োজন হয়েছিলো—যে কবিতা লেখা ব্যাপারটা আসলে জড়ের সঙ্গে চৈতন্যের সংগ্রাম, ভাবনার সঙ্গে ভাষার, ও ভাষার সঙ্গে ছন্দ, মিল, ধ্বনিমাধুর্যের এক বিরামহীন মল্লযুদ্ধ। তার প্রবৃত্তি তাঁকে চালিত করলে কবিতার পথে— সে পর্যন্ত নিজের উপর তার হাত ছিলো না, কিন্তু তারপরেই বুদ্ধি বললে, 'পরিশ্রমী হও।' এবং বুদ্ধির আদেশ শিরোধার্য করে অতি ধীরে সাহিত্যের পথে তিনি অগ্রসর হলেন, আত সুচিন্তিতভাবে, গভীরতম শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সঙ্গে। তার প্রথম খাতায় অঙ্কিত সেই মর্মস্পশী 'শ্রীশ্রীদুর্গামাতা সহায়'—তার রক্ষণশীল হিন্দু বাঙালি পরিবারের সেই স্বাক্ষরটুকু এতেও বোঝা যায় কী-রকম নিষ্ঠা নিয়ে, আত্মসমর্পণের নম্রতা নিয়ে, তিনি কাব্যরচনা আরম্ভ করেছিলেন। এই পর্যায়ের রচনার মধ্যে অনেক ছোটোগল্প বা উপন্যাসেরও খশড়া পাওয়া যায়, তার কোনো-কোনোটি সমাপ্ত ও ঔৎসুক্যজনক। সাত বছরের অনুশীলনের ফলে পৌঁছলেন 'তন্বী' পর্যন্ত, যে-পুস্তক, তার বিবিধ আকর্ষণ সত্ত্বেও, তার পরবর্তী কবিতাসমূহের তুলনায় আজকের দিকে কৈশোরক রচনা ব'লে প্রতিভাত হয়।
১৯২৯-এ প্রথমবার তিনি দেশান্তরে গেলেন, প্রায় সংবৎসরকাল প্রবাসে কাটলো, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে জাপানে ও আমেরিকায়, তারপর একাকী য়োরোপে। এই সময়টি তার কবিজীবনের ক্রান্তিকাল; এই সময়েই তিনি যাকে অভিজ্ঞতা বলতেন, তা তার কবিতার মধ্যে প্রথম প্রবেশ করে। সঙ্গে খাতাপত্র নিয়েছিলেন, জাপানের জাহাজে আরম্ভ করলেন একটা ভ্রমণবৃত্তান্ত, পেনসিলে ও কালিতে বিবিধ গদ্য-পদ্য রচনা, দেখে মনে হয় রোজই কিছু-না-কিছু লিখছেন। আমরা সাগ্রহে লক্ষ করি, কেমন ক'রে, সেই প্রথম খাতার পর থেকে, ক্রমশ তার ভাষা বদলাচ্ছে, ভাব বদলাচ্ছে, দেখা দিচ্ছে ভাবুকতা ও সংহতি, সুন্দরভাবে রূপান্তরিত হচ্ছে হস্তাক্ষর। তারপর রোমাঞ্চিত হ'য়ে আবিষ্কার করি আমাদের বহুপরিচিত কতিপয় কবিতা—'অর্কেস্ট্রা'র পর্যায়ভুক্ত কোনোটির রচনাস্থল আমেরিকা থেকে য়োরোপগামী তরণী, কোনোটির বা রাইনের তীরবর্তী কোনো নগর। ইতিমধ্যে কিছু একটা ঘ'টে গেছে; ভূলোক হয়েছে আরো বাস্তব, দ্যুলোক উজ্জ্বলতর; জেমস জয়স যাকে 'এপিফ্যানি' বলেছিলেন আর রবীন্দ্রনাথ, ‘স্বপ্নভঙ্গ', তেমনি কোনো উন্মীলনের প্রসাদ তিনি লাভ করেছেন; প্রকৃতি ও সুধীন্দ্রনাথ দত্তের সহযোগে ও চক্রান্তে বাংলা ভাষায় আবির্ভূত হয়েছেন এক নতুন বাসিদ্ধ পুরুষ ।
তিনি কি বুঝেছিলেন যে তার সাতবৎসরব্যাপী পরিশ্রম এবারে পুরস্কৃত হয়েছে? বোঝেননি তা তো হতে পারে না, কেননা তার নিরন্তর সাধনা ছিলো আত্মোপলব্ধি। আর সেইজন্যেই, তৃপ্তির তিলতম অবকাশ নিজেকে না-দিয়ে তিনি আরো ব্যাপকভাবে প্রস্তুতির আয়োজন করলেন; প্রকাশ করলেন 'পরিচয়' পাঠ করলেন যা-কিছু পাঠযোগ্য, বৈঠক জমালেন শুক্রবারে, বন্ধু বেছে নিলেন সাহিত্যিক ও মনীষীদের মধ্যে, লিখলেন পুস্তক-সমালোচনা, প্রবন্ধ ও ছদ্মনামে ছোটোগল্প, তিনটি য়োরোপীয় ভাষা থেকে কবিতা ও গদ্য অনুবাদ করলেন। আর তার নিজের কবিতা? এই সবই তো তার কবিতারই ইন্ধন, এই সমস্ত কিছুর প্রভাব ও অভিঘাত, উদ্বৃত্ত ও অনুষঙ্গ, তাদের যোগ ও বিয়োগের অঙ্কে সর্বশেষ যে-ফলটুকু দাঁড়ায়, তার কবিতা তো তা-ই। তার 'পরিচয়' পত্রিকা তার কবিতার পাঠক সৃষ্টি করেছে, কবিতার শ্রীবৃদ্ধি করেছে তার উদ্ভাবিত শব্দসমূহ, দার্শনিক প্রবন্ধসমূহ স্থাপন করেছে সমকালীন জগতের সঙ্গে তার কবিতার সম্বন্ধ, সাহিত্যিক প্রবন্ধসমূহ বুঝিয়ে দিয়েছে তার কবিতার আদর্শ কী এবং সিদ্ধি কোনখানে, এবং অনুবাদগুচ্ছ বর্ধিত করেছে স্বাধীন রচনার উপর তার কর্তৃত্ব। সবই কবিতার জন্য। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্বন্ধে ন্যূনতম কথা এই বলা যায় যে তার মতো বিরাট প্রস্তুতি নিয়ে আর কেউ বাংলা ভাষায় কবিতা লিখতে অগ্রসর হননি; আর অন্য একটি কথা—উচ্চতম কিনা জানি না যা আমরা বলতে বাধ্য, তা এই যে এক অবোধ্য, নির্বোধ ও দুঃশাসন বিশ্বের বুকে মানুষের মন কেমন ক'রে অঙ্কিত ক'রে দেয় তার ইচ্ছাশক্তিকে, স্থাপন করে শব্দের প্রভাবে এমন এক শৃঙ্খলা ও সার্থকতা, যা একাধারে ক্ষণকালীন ও শাশ্বত—–এই লোমহর্ষক প্রক্রিয়াটিকে সুধীন্দ্রনাথের কবিজীবনে আমরা প্রত্যক্ষ করি। কোনো-কোনো কবি প্রক্রিয়াটিকে গোপনে রেখে যান, কিন্তু সুধীন্দ্রনাথ তার সংগ্রামের চিহ্ন বীরের মতো অঙ্গে ধারণ করেছেন। জয়ী হয়েও তিনি এ-কথা ভোলেননি যে শান্তি দেবতারই ভোগ্য, মানুষের জীবনকে অর্থ দেয় শুধু প্রচেষ্টা। আর এইজন্যেই প্রৌঢ়বয়সে তিনি বলেছিলেন যে মালার্মের কাব্যাদর্শ তার 'অন্বিষ্ট'; এইজন্যেই প্রেরণার বিরুদ্ধে তার অভিযান এমন পৌনঃপুনিক। তার কবিতা কোনো দিক থেকেই মালার্মের মতো নয়—তা নয় ব'লে আমি অন্তত খেদ করি না; ভুল হবে তাঁকে 'সিম্বলিস্ট' ব'লে ভাবলে; তার সঙ্গে মালার্মের একমাত্র সাদৃশ্য দৈববর্জনের সংকল্পে, স্বায়ত্তশাসনের উৎকাঙ্ক্ষায়। কিন্তু মানুষের পক্ষে দৈববর্জন কি সম্ভব? অন্ততপক্ষে সুধীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে আমি নিশ্চয়ই বলবো যে তার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ অধ্যবসায়ের শক্তিও দৈবের দান, সেই প্রথম কাঁচা হাতের খাতা থেকে 'সংবর্ত' ও 'দশমী'তে তার উত্তরণ পর্যন্ত যে-গতিবেগ কাজ ক'রে গেছে, তারই অন্য নাম 'প্রেরণা'। আত্মোপলব্ধির এক স্বচ্ছ মুহূর্তেই তিনি নিজের বিষয়ে লিখেছিলেন: 'আমি অন্ধকারে বদ্ধমূল, আলোর দিকে উঠছি।' বলা বাহুল্য, এই উক্তির প্রথমার্ধ সব কবির বিষয়েই প্রযোজ্য, কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধ সত্য শুধু তাঁদের বিষয়ে, যাঁদের মনের প্রয়াসপ্রসূত উদ্বর্তন তাঁদের আয়ুর সঙ্গেই পা মিলিয়ে চলতে থাকে। আমাদের এই দেশে ও কালে অনেক কবির মধ্যপথে অবরোধ ও অনেক প্রতিশ্রুতির তুচ্ছ পরিণাম দেখার পরে, সুধীন্দ্রনাথের এই বিরতিহীন পরিণতি আমাদের বিস্ময় ও শ্রদ্ধার বস্তু হ'য়ে রইলো।
য়োরোপ থেকে প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সুধীন্দ্রনাথের সবচেয়ে সৃষ্টিশীল পর্যায় আরম্ভ হ'লো, তার অপর সীমা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সূত্রপাত। ১৯৩০ থেকে ১৯৪০: এই দশ বৎসর তার অধিকাংশ প্রধান রচনার জন্মকাল : প্রায় সমগ্র 'অর্কেস্ট্রা', 'ক্রন্দসী' ও 'উত্তরফাল্গুনী', প্রায় সমগ্র 'সংবর্ত', সমগ্র কাব্য ও গদ্য অনুবাদ, 'স্বগত' ও 'কুলায় ও কালপুরুষে'র প্রবন্ধাবলি–সব এই একটিমাত্র দশকের মধ্যে তিনি সমাপ্ত করেন। 'পরিচয়ে'র সবচেয়ে প্রোজ্জ্বল পর্যায়, ১৯৩১-১৯৩৬–তাও এই অধ্যায়ের অন্তর্ভূত। এই পাঁচ বৎসরের মধ্যে এমনও দিন গেছে যখন তিনি একই দিনে সাতটি শেক্সপীয়র সনেট অনুবাদ করেছেন, একই দিনে রচনা করেছেন কবিতা ও গদ্য, কোনো লেখা শেষ করামাত্র আর-একটিতে হাত দিয়েছেন। এক প্রবল আবেগ তাঁকে অধিকার করেছিলো এই সময়ে, এক স্মৃতি তাঁকে আবিষ্ট ক'রে রেখেছিলো, কোনো-এক অপূরণীয় ক্ষতির পরিপূরণস্বরূপ অনবরত ভাষাশিল্প রচনা ক'রে যাচ্ছিলেন : জগতে ভগবান যদি না থাকেন, প্রেম ও ক্ষমা যদি অলীক হয়, তাহ'লেও মানুষ তার অমর আকাঙ্ক্ষার উচ্চারণ ক'রেই জগৎকে অর্থ দিতে পারে। এই আবেগের পরম ঘোষণা ১৯৪০-এ লেখা 'সংবর্ত" কবিতা; ঐ কবিতাটি রচনা করার পর তিনি যেন মুক্তিলাভ করলেন, কবিতার দ্বারা পীড়িত অবস্থা তার কেটে গেলো।
মুক্তি? না। মায়াবিনী কবিতার দেখা একবার যে পেয়েছে, সে কি আর মুক্ত হ'তে পারে। রচনার পরিমাণ হ্রাস পেলেও, আরাধ্যা সেই দেবীই থাকেন। জীবনের শেষ দুই দশকে সুধীন্দ্রনাথ কবিতা বেশি রচনা করেননি, কিন্তু অনবরত নতুন ক'রে রচনা করেছেন নিজেকে, এবং সেটিও কবিকৃত্যের একটি প্রধান অঙ্গ। পুরোনো রচনার তৃপ্তিহীন পরিবর্তন ও পরিমার্জনা তার—যা বন্ধু মহলে মাঝে-মাঝে সরোষ প্রতিবাদ জাগালেও অনেক স্মরণীয় পংক্তি প্রসব করেছে; তার নতুন সংস্করণের ভূমিকা; 'দশমী'র কবিতাগুচ্ছ; এবং তার আলাপ-আলোচনা : এই সব কিছুর মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে এমন একজন মানুষ, জগতের সঙ্গে যাঁর ব্যবহার বহুমুখী হ'লেও যাঁর ধ্যানের বিষয় বাণীমাধুরী। কবিতার প্রকরণগত আলোচনায় দেখেছি তার অফুরন্ত উৎসাহ; 'আজি' ও 'আজই' শব্দের উচ্চারণগত পার্থক্য তাঁকে ভাবিয়েছে; বানান ও ব্যাকরণ বিষয়ে তাঁকে আমরা অভিধানের মতো ব্যবহার করেছি—আমার সমবয়সী বাঙালি লেখকদের মধ্যে তিনিই একমাত্র, যিনি উত্তরজীবনে বাংলা ও বাংলায় ব্যবহারযোগ্য প্রতিটি সংস্কৃত শব্দের নির্ভুল বানান জানতেন, এবং শব্দতত্ত্ব ও ছন্দশাস্ত্র বিষয়ে যাঁর ধারণায় ছিলো জ্ঞানাশ্রিত স্পষ্টতা। এই শব্দের প্রেমিক শব্দকে প্রতিটি সম্ভবপর উপায়ে উপার্জন করেছিলেন; জীবনব্যাপী সেই সংসর্গ ও অনুচিন্তনের ফলেই সম্ভব হয়েছিলো 'দ্বিধা-মলিদা' বা 'গুরু-অগুরু'র মতো বিস্ময়কর অথচ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অন্ত্যানুপ্রাস। সাহিত্যের তত্ত্ব বিষয়ে অনেকেই কথা বলতে পারেন ও ব'লে থাকেন, কিন্তু কতগুলো অস্পষ্ট ও অনিচ্ছুক ভাবনা-বেদনাকে ছন্দ ও ভাষার নিগড়ে বাঁধতে হ'লে যে-সব সমস্যা প্রত্যক্ষ হ'য়ে ওঠে, তা নিয়ে আলোচনা হ'তে পারে শুধু এক কবির সঙ্গে অন্য কবির : এবং এই রকম আলোচনার পক্ষে সুধীন্দ্রনাথের শূন্য স্থান পূরণ করার কেউ নেই ব'লে, আজ আরো স্পষ্ট বুঝতে পারি যে 'কবি' শব্দের প্রতিটি অর্থ সুধীন্দ্রনাথের রচনা ও জীবনের মধ্যে মূর্ত হয়েছিলো।
তার বিষয়ে অনেকেই ব'লে থাকেন যে তিনি বাংলা কবিতায় 'ধ্রুপদী রীতির প্রবর্তক'। এই কথার প্রতিবাদ ক'রে আমি এই মুহূর্তেই বলতে চাই যে সুধীন্দ্রনাথ মর্মে মর্মে রোমান্টিক কবি, এবং একজন শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক। এর প্রমাণস্বরূপ আমি দুটিমাত্র বিষয় উল্লেখ করবো: প্রথমত, তার প্রেমের কবিতায় আবেগের তীব্রতা, বাসনা ও বেদনার অলজ্জিত ও ব্যক্তিগত চীৎকার—যার তুলনা আবহমান বাংলা সাহিত্যে আমরা খুঁজে পাবো না, না বৈষ্ণব কবিতায়, না রবীন্দ্রনাথে, না তার সমকালীন কোনো কবিতে। দ্বিতীয়ত, ভগবানের অভাবে তার যন্ত্রণাবোধ—এটিও একটি খাঁটি রোমাণ্টিক লক্ষণ। তিনি ভগবানের অভাব কবিতা দিয়ে মেটাতে চাননি, জনগণ বা ইতিহাস দিয়েও না : তাই, তিনি নিজেকে জড়বাদী ব'লে থাকলেও, তার কবিতা আমাদের ব'লে দেয় যে তার তৃষ্ণা ছিলো সেই সনাতন অমৃতেরই জন্য। তিনি ছিলেন না যাকে বলে 'মিনারবাসী', স্বকালের জগৎ ও জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে লিপ্ত হ'য়ে আছে তার কবিতা; কিন্তু যেহেতু তার স্বকালে ভগবান মৃত, তাই কোনো মিথ্যা দেবতাকেও তিনি গ্রহণ করেননি; যারা প্রফুল্ল মনে 'সমস্বর নামসংকীর্তনে' যোগ দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়, তাদের বীভৎসতার পাশে নিজের স্বর্গের কল্পনাটিও রেখে গেছেন। যা মর্ত্যভূমিতে সম্ভব নয় তা যাঁর গভীরতম আকৃতি, তাঁকে কী ক'রে জড়বাদী বলা যায়?
আর-একটি কথা বহু বছর ধ'রে শুনে আসছি : সুধীন্দ্রনাথের কবিতা দুর্বোধ্য। এ বিষয়ে একটি পুরোনো লেখায় যা বলেছি, এখানে তার পুনরুক্তি করা ভিন্ন উপায় দেখি না। সুধীন্দ্রনাথের কবিতা দুর্বোধ্য নয়, দুরূহ; এবং সেই দুরূহতা অতিক্রম করা অল্পমাত্র আয়াসসাপেক্ষ। অনেক নতুন শব্দ, বা বাংলায় অচলিত সংস্কৃত শব্দ তিনি ব্যবহার করেছেন : তার কবিতার অনুধাবনে এই হ'লো একমাত্র বিঘ্ন। বলা বাহুল্য, অভিধানের সাহায্য নিলে এই বিঘ্নের পরাভবে বিলম্ব হয় না। এবং অভিধান দেখার পরিশ্রমটুকু বহুগুণে পুরস্কৃত হয়, যখন আমরা পুলকিত হ'য়ে আবিষ্কার করি যে আমাদের অজানা শব্দসমূহের প্রয়োগ একেবারে নির্ভুল ও যথাযথ হয়েছে, পরিবর্তে অন্য কোনো শব্দ সেখানে ভাবাই যায় না। সুধীন্দ্রনাথের কবিতার গঠন এমন যুক্তিনিষ্ঠ, এমন সুমিত তার বাক্যবিন্যাস, পংক্তিসমূহের পারম্পট এমন নির্বিকার, এবং শব্দপ্ৰয়োগ এমন যথার্থ, যে মাঝে-মাঝে দুরূহ শব্দ ব্যবহার না করলে, তার কবিতা হ'তো না অমন সুমিত ও যুক্তিসহ, অমন ঘন ও সুশৃঙ্খল—অর্থাৎ, তার চরিত্রই প্রকাশ পেতো না। আর এই দুরূহতা নিয়ে আপত্তি—পঁচিশ বছর আগেকার তুলনায় তা এখন অনেক মৃদু হওয়া উচিত, কেননা ইতিমধ্যে তার প্রবর্তিত বহু শব্দ লেখক ও পাঠক-সমাজে প্রচলিত হ'য়ে গেছে; অল্পবয়সীরা হয়তো জানেনও না যে 'অন্বিষ্ট', 'অভিধা', 'ঐতিহ্য', 'প্রমা', 'প্রতিভাস', 'অবৈকল্য', 'ব্যক্তিস্বরূপ', 'বহিরাশ্রয়', 'কলাকৈবল্য' প্রভৃতি শব্দ ও শব্দবন্ধ— যা তারা হয়তো কিছুটা যথেচ্ছভাবেই ব্যবহার করছেন—এগুলোর প্রথম ব্যবহার হয় সুধীন্দ্রনাথের কবিতায় ও প্রবন্ধে, এমনকি 'ক্লাসিকাল' অর্থে 'ধ্রুপদী' শব্দটিও তারই উদ্ভাবনা। এই ধরনের শব্দ-সমবায়ের সাহায্যে তিনি যুগল সিদ্ধিলাভ করেছেন : একটিও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার না ক'রে, বা অগত্যা চিন্তাকে তরল না ক'রে, লিখতে পেরেছেন জটিল ও তাত্ত্বিক বিষয়ে প্রবন্ধ, এবং তার কবিতাকে দিয়েছেন এমন এক শ্রবণসুভগ সংগতি ও গাম্ভীর্য, যাকে বাংলা ভাষায় অপূর্ব বললে বেশি বলা হয় না। এবং এই সব শব্দ-রচনার দ্বারা, বাংলা ভাষার সম্পদ ও সম্ভাবনাকে তিনি কতদূর বাড়িয়ে দিয়েছেন, তা হয়তো না বললেও চলে। আধুনিক বাংলার ও আধুনিক যুগের একজন শ্রেষ্ঠ কবির এই কাব্যসংগ্রহ যাঁরা প্রথমবার পড়বেন, তারা আমার ঈর্ষাভাজন, আর যাঁরা চেনা কবিতার সঙ্গে নিবিড়তর সম্বন্ধস্থাপনের জন্য এগিয়ে আসবেন, আমি নিজেকে তাঁদেরই সতীর্থ ব'লে মনে করি, কেননা আমি জানি যে আমার অবশিষ্ট আয়ুষ্কালে স্বল্প যে-ক'টি গ্রন্থ আমার নিত্যসঙ্গী হবে,তার কাব্যসংগ্রহ হবে তারই অন্যতম।
কবিজীবন
[সম্পাদনা]সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রথম প্রকাশিত কবিতা 'কুক্কুট' (১৯২৮) তন্ত্রী (১৯৩০), অর্কেস্ট্রা (১৯৩৫), ক্রন্দনী (১৯৩৭), উত্তর ফাল্গুনী (১৯৪০), সংবর্ত (১৯৫৩), প্রতিধ্বনি (১৯৫৪), দশমী (১৯৫৬) এবং বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যসংগ্রহ (১৯৬২)।
কবির প্রথম কাব্য ‘তন্ত্রী’তে প্রথম যৌবনের আবেগ প্রবণতা ও রূপানুরাগ অভিব্যক্ত এখানে ‘শ্রাবণ বন্যা’, ‘বর্ষার দিনে' প্রভৃতি কবিতায় আছে সম্ভোগময় প্রেমের অনুভূতি, বেদনাবিদ্ধ স্মৃতিচারণ, রহস্যময়ী প্রেমিকার প্রতি আকর্ষণ। এই কাব্যে রবীন্দ্র প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে নেই, কিন্তু অনুরূপ ভাবনা আছে। যেমন রবীন্দ্রনাথের মতোই মৃত্যুর পর লীলা সঙ্গিনীর সঙ্গে চির মিলনের প্রত্যাশা দেখা গেছে—“তোমার প্রমোদ কুঞ্জে কি বৈতরণী তীরে, হে মোর ক্রন্দসী।” এই প্রাথমিক রচনায় শব্দ নির্মাণের কুশলতা ও তেমনভাবে চোখে পড়ে না। কারণ সুধীন্দ্রনাথের যুক্তাক্ষর বহুল তৎসম শব্দের গাঢ় গাম্ভীর্য ও উদ্ধত মহিমা তখনও পর্যন্ত কবিতায় অনুপস্থিত।
‘অর্কেস্ট্রা’ কাব্য থেকে সুধীন্দ্রনাথের স্বকীয়তার প্রকাশ, এ কাব্যে আছে মোট বাইশটি কবিতা, প্রেক্ষাগারের বর্ণনামূলক কবিতা, সাতটি সঙ্গীতের বর্ণনামূলক কবিতা, আর সাতটি সঙ্গীত ধ্বনি নায়কের মনে যে স্মৃতি বা অনুষঙ্গ জাগিয়ে তুলেছে তার কথা।
‘ক্রন্দসী’ কাব্যের অনেক কবিতা অর্কেস্ট্রার সমকালে রচিত। কিন্তু পার্থক্যে দুই কাব্য প্রায় বিপরীত। অর্কেষ্ট্রায় আছে ক্ষণস্থায়ী প্রেমের চিরস্থায়ী আর্তি, ক্রন্দসীতে আছে রূঢ় নিষ্ঠুর। হিংস্র-উন্মত্ত জগতের প্রতি কবির দৃষ্টিপাত। এখানে দেখা গেছে কখনো অসহিষ্ণু প্রতিবাদ, কখনো মর্মান্তিক হতাশা, কখনো বা নিষ্ফল স্বপ্ন। এ কাব্যের অন্তর্ভূক্ত ‘সন্ধ্যায়’, প্রত্যাখ্যান, কাল, অকৃতজ্ঞ প্রভৃতি কবিতা গুলির মধ্যে ভাবের বৈচিত্র্য লক্ষিত হয়।
‘উত্তর ফাল্গুনী’ কাব্যটি মূলত প্রেমমূলক। এই প্রেম ভাবনার মধ্যে রোমান্টিক স্বপ্নচারিতা এবং আদর্শস্নাতি দৃষ্টি নিয়ে আমর অমৃত সন্ধানের প্রয়াস সুষ্পষ্ট। এই প্রেম যৌবনগত কবি চিত্তের আর্তি। এখানে আছে যেমন অতীত মিলনের রসোল্লাস, তেমনি ভবিষ্যৎ বিচ্ছেদের আশঙ্কা। তাই কোমল চিত্রের করুণ ব্যাকুলতা, কম্পিত প্রত্যাশা ও সরোদন মিনতিতে পূর্ণ এর অনেক কবিতা।
‘সংবর্ত’ কাব্যটি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত। কবির ভাষায়—“অথচ উক্ত যুদ্ধ যে ব্যাপক মাৎস্য ন্যায়ের অবশ্যম্ভাবী পরিণাম, তার সঙ্গে পরবর্তী কবিতা সমূহের সম্পর্কে অকাট্য।” সুন্দরের প্রশস্তি রচনায় প্রস্তুত কবি। কিন্তু বিদেশী শত্রুর আক্রমণে মানবজাতীর আকুল আর্তনাদে বিচলিত ক্ষুব্ধ কবি ভগবানের অদৃশ্য নীরবতা দেখে প্রশ্ন করেছেন—
“অদৃশ্য অম্বরে তবুও অদৃশ্য তুমি?”
‘দশমী’ কাব্যে স্থান পেয়েছে দশটি কবিতা। কবি জীবনের উপাত্ত্য পর্বে পৌঁছে বিগত মদমত্ত যৌবনের কথা ভাবেননি, পরবর্তী জীবনের কোমল অনুভূতি-সজল মুহূর্তগুলি মনে করেছেন—প্রকৃতির সুধা পান করতে চেয়েছেন অথবা অনুভব করেছেন—“বিরূপ বিশ্বে মানুষ নিয়ত একাকী (প্রতীক্ষা)। পরবর্তী 'নৌকাডুবী' কবিতায় আছে এক উজ্জ্বল প্রাকৃতিক দৃশ্য : "খালি গোলা ঘরে সারা ভাঙা পুটি শুরু। পায়ে চলা পথে কে একাকী।" নৌকাডুবি প্রতীকে কবির বক্তব্য, জীবন মরণে পূর্ণ এবং মৃত্যু সামনে না আসা পর্যন্ত ব্যক্তি আপনার স্বরূপ চিনতে পারে না। ‘উপস্থাপনা' কবিতায় কবির তাই সশ্রদ্ধ স্বীকারোক্তি :
“আমি ক্ষণবাদী : অর্থাৎ আমার মনে হয়ে যায় নিমেষে তামাদী আমাদের ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষ, তথা তাতে যার জের, সে সংসারও।
গদ্য
[সম্পাদনা]প্রবন্ধ
সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রবন্ধগ্রন্থ মাত্র দুটি, 'স্বগত' ও 'কুলায় ও কালপুরুষ'। 'স্বগত বেরোয় ১৯৩৮-এ, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৫৭-তে; ‘কুলায় ও কালপুরুষ' বেরোয় ১৯৫৭-তে। উভয় গ্রন্থই বহুদিন অমুদ্রিত। অগ্রন্থিত ও অপ্রকাশিত আরো প্রবন্ধ ও প্রবন্ধপ্রতিম রচনা তার রয়েছে।
সুধীন্দ্রনাথের অধিকাংশ প্রবন্ধই 'পরিচয়'-এর জন্যে লেখা, অর্থাৎ তাদের রচনাকাল মোটামুটি তিরিশের দশক, যখন তিনি সবচেয়ে সৃষ্টিশীল। 'হুগত' প্রথম সংস্করণে প্রবন্ধসংখ্যা ছিলো ১+১৯, বিষয় বাংলা ও পাশ্চাত্য সাহিত্য। দ্বিতীয় সংস্করণে বাংলা সাহিত্যবিষয়ক প্রবন্ধপর্যায় সরিয়ে নিয়ে, পাশ্চাত্য সাহিত্যসম্বন্ধীয় পরবর্তী একটি প্রবন্ধ ও একটি ‘পুনশ্চ” যোগ ক’বে প্রবন্ধসংখ্যা দাঁড়ালো ১+১+১। সরিয়ে আনা প্রবন্ধপর্যায়ের সঙ্গে 'স্বগত'-র পরে লেখা বাংলা সাহিত্যবিষয়ক আরো দু-তিনটি প্রবন্ধ এবং 'স্বগত'-কালীন ও তৎপরবর্তী দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিবিধ বিষয়ের প্রবন্ধ যোগ ক'রে দাড়ালো 'কুলায় ও কালপুরুষ', ১+১৯। সুধীন্দ্রনাথের স্বভাব ছিলো পরিমার্জনাপ্রবণ। প্রথম প্রকাশের পর গ্রন্থভুক্ত হবার সময় এক তরফা, গ্রন্থের সংস্করণীকরণে আরেক তরফা পরিমার্জনা, এইই ছিলো তার রীতি। মৃত্যুর পূর্বে তার কবিতার কিছু-কিছু নতুন পরিমার্জনা তিনি শুরু করেছিলেন, কিন্তু প্রবন্ধের করেছিলেন ব'লে জানি না। 'স্বগত' দ্বিতীয় সংস্করণের ও 'কুলার ও কালপুরুষ'-এর প্রথম সংস্করণের পাঠই তাই প্রামাণ্য। বানানে গোড়ায় তিনি ছিলেন প্রাচীনপন্থী, রেফের পরে দ্বিত্ব ব্যবহার করতেন। পরে তা বর্জন করেন। কিন্তু সাধু ক্রিয়াপদ-সংবলিত গল্প যতদূর জানা যায় , কখনো লেখেননি।
পরিচয় পত্রিকা সম্পদনা
[সম্পাদনা]সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পেশায় অধ্যাপক হলেও আজীবন সাহিত্য সাধনায় নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। আর তারই ফলশ্রুতি হিসাবে ১৯৩১ সাল থেকে দীর্ঘ ১২ বছর তিনি পরিচয় সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় কাজ করেন। তিনি প্রমথ চৌধুরী এর সবুজপত্র সম্পাদনা করেছেন।
প্রকাশিত গ্রন্থাবলি
[সম্পাদনা]সুধীন্দ্রনাথের কাব্যগ্রন্থ ছয়টি:
- তন্বী (১৯৩০)
- অর্কেষ্ট্রা (১৯৩৫)
- ক্রন্দসী (১৯৩৭)
- উত্তর ফাল্গুনী (১৯৪০)
- সংবর্ত (১৯৫৩)
- দশমী (১৯৫৬)
এছাড়াও তার দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ আছে :
- স্বগত (১৯৩৮)
- কুলায় ও কালপুরুষ (১৯৫৭)
অনুবাদগ্রন্থ
- প্রতিধ্বনি (১৯৫৪)
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ “সঙ্গ, নিঃসঙ্গতা, রবীন্দ্রনাথ”, বুদ্ধদেব বসু, ১৯৬০, ৩য় মুদ্রণ, পৃ.৬৯।
- ↑ ক খ http://www.shokalerkhabor.com/online/details_news.php?id=8706&&%20page_id=%2011