বৃহন্নলা (চলচ্চিত্র)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বৃহন্নলা
পরিচালকমুরাদ পারভেজ
প্রযোজকমুরাদ পারভেজ
মাহফুজুর রহমান
সোহানা সাবা (নির্বাহী প্রযোজক)
চিত্রনাট্যকারমুরাদ পারভেজ
কাহিনিকারমুরাদ পারভেজ
সোহানা সাবা
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারইমন সাহা
চিত্রগ্রাহকজেড এইচ মিন্টু
সম্পাদকরুদ্র বিপ্লব
পরিবেশকএটিএন বাংলা
মুক্তি১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
স্থিতিকাল১২৩ মিনিট
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা ভাষা

বৃহন্নলা ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশী বাংলা ভাষার নাট্য চলচ্চিত্র। ছায়াছবিটি পরিচালনা করেছেন মুরাদ পারভেজ[১] ফিল্ম হকার এবং এটিএন বাংলার প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়। ধর্মীয় গোঁড়ামি এই চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফেরদৌস আহমেদ, সোহানা সাবা, আজাদ আবুল কালাম, ইন্তেখাব দিনার প্রমুখ। চলচ্চিত্রটি ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের দর্পণ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়।[২][৩] ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ তারিখে চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশে মুক্তি পায়।[৪] ২০১৫ সালের জুন মাসে ইতালির অ্যা ফিল্ম ফর পিস উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগে প্রদর্শিত হয়।[৫] একই বছর ভারতের জয়পুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। এই অনুষ্ঠানে মুরাদ পারভেজ শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও সোহানা সাবা শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। ১৭তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ সমালোচকদের বিচারে এটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়া মোহাম্মদ ফারুক বিশেষ শাখায় শ্রেষ্ঠ মেকআপ ম্যানের পুরস্কার অর্জন করেন।[৬]

কাহিনী সংক্ষেপ[সম্পাদনা]

মোহনপুর আধুনিক সুযোগ সুবিধা বঞ্ছিত একটি ছোট গ্রাম। গ্রামের হোমিও ডাক্তার আরজ আলী তাদের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা। গ্রামের বিদ্যালয়ে অল্প সংখ্যক ছাত্রছাত্রী থাকলেও তাদের শিক্ষা বিদ্যালয়ের গণ্ডি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। গ্রামে পূর্বে হিন্দু সম্প্রদায়ের আধিক্য থাকলেও এখন হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায়ই বাস করে। হিন্দুদের ধর্ম পালনের জন্য একটি মন্দির এবং মুসলমানদের জন্য একটি মসজিদ থাকলেও উভয় সম্প্রদায় চায় গ্রামে আরেকটি মন্দির বা মসজিদ হোক। দুই সম্প্রদায়ই চায় সরকারী খাস জমিতে মন্দির বা মসজিদ হোক। গ্রামের হোমিও ডাক্তার আরজ আলী গ্রামে একজন ভালো চিকিৎসক পাঠানোর জন্য দীর্ঘদিন যাবত সরকারের কাছে চিঠি দিয়ে আসছে। যেদিন নতুন ডাক্তার গ্রামে আসবে সেদিন সরকারী খাস জমির পাশের বটগাছের নিচে গ্রামের কাঠমিস্ত্রী তুলসীর ছাগল মারা যায়। গ্রামের হিন্দু মুসলমান সবাই এতে আতংকিত হয়ে পড়ে এবং মন্দির কমিটির প্রধান গৌর বিশ্বাস কাউকে গাছের কাছে আসতে মানা করে দেন। কিন্তু কিছু দিন পর তুলসীর মা সেখানে পাতা কুড়াতে গিয়ে মারা যায়। তুলসীর স্ত্রী দুর্গারানী দাবি করে ঐ গাছই তার শাশুড়িকে হত্যা করেছে। ইতিমধ্যে শহর থেকে ডাক্তার আবির সেই গ্রামে আসে। তিনি এসে পরীক্ষা করে দেখেন যে আসলে মহিলাটি হৃদরোগে মারা গেছেন। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায় তা বিশ্বাস না করে গাছটিকে পূজা করতে শুরু করে। অন্যদিকে মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রধান হাজী সাহেব এবং ইমাম সাহেবও এই জমিতে ঈদগাহ দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকেন। এরই মধ্যে ঐ গাছের নিচে ঘটে যায় কিছু খুন। কারা এইসব খুন করছে কিংবা কেন করছে??

শ্রেষ্ঠাংশে[সম্পাদনা]

  • ফেরদৌস আহমেদ - ডাক্তার আবির
  • সোহানা সাবা - দুর্গারানী
  • আজাদ আবুল কালাম - ডাক্তার আরজ আলী
  • ইন্তেখাব দিনার - তুলসীদাস
  • দিলারা জামান - তুলসীর মা
  • কে এস ফিরোজ - হাজী সাহেব
  • ঝুনা চৌধুরী - ইমাম সাহেব
  • এনামুল হক - রহিম মিয়া
  • মানস বন্দ্যোপাধ্যায় - শশীভূষণ মাস্টার
  • আবদুল্লাহ রানা - গৌর বিশ্বাস
  • কোহিনুর - প্রতুল নাগ, চৌকিদার
  • এস এম মহসীন - নকুল খুড়ো
  • খালেকুজ্জামান - মনসুর আলী
  • উত্তম গুহ - সুবোধ
  • আয়নুন নাহার পুতুল - শিখা
  • শামীম আল মামুন - পুলিশ ইন্সপেক্টর

সঙ্গীত[সম্পাদনা]

বৃহন্নলা ছায়াছবিটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ইমন সাহা। গীত রচনা করেছেন কবির বকুল। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন দিলশাদ নাহার কনা, ঋতুরাজ সেন ও দেবলিনা সুর[৭]। অগ্নিবীনা'র ব্যানারে ২৩ আগস্ট, ২০১৪ তারিখে এই চলচ্চিত্রের গানের অডিও অ্যালবাম প্রকাশ করা হয়।[৩][৮]

গানের তালিকা[সম্পাদনা]

নং.শিরোনামগীতিকারসুরকারকণ্ঠশিল্পীদৈর্ঘ্য
১."মেঘ এসেছে রোদ হেসেছে"কবির বকুলইমন সাহাদিলশাদ নাহার কনা ও ঋতুরাজ সেন৪:৩৪
২."অন্তর আমার পুড়ে অঙ্গার"কবির বকুলইমন সাহাঋতুরাজ সেন৪:৩১
৩."প্রিয় আমার কিসের অভিমান"কবির বকুলইমন সাহাদেবলিনা সুর৩:২৪
৪."মেঘ এসেছে রোদ হেসেছে"কবির বকুলইমন সাহাঋতুরাজ সেন৪:৩২

নির্মাণ নেপথ্য[সম্পাদনা]

বৃহন্নলা চলচ্চিত্রটির জন্য পরিচালক মুরাদ পারভেজ বাংলাদেশ সরকার থেকে অনুদান পান। ছায়াছবিটির শ্যুটিং হয় রাজবাড়ির খামার বাড়িতে।[৯]

সমালোচনা[সম্পাদনা]

চলচ্চিত্রটি ৩৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা এই তিন শাখায় পুরস্কার লাভ করে। কিন্তু পুরস্কার ঘোষণার পর এই চলচ্চিত্রের নির্মাতার উপর গল্প চুরির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠে ছবিটি সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের গল্প 'গাছটি বলেছিল' অবলম্বনে নির্মাণ করা হয়েছে।[১০] পরবর্তীতে, অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তথ্য মন্ত্রণালয় চলচ্চিত্রের পরিচালক মুরাদ পারভেজকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।[১১] পরে তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদের সভায় চলচ্চিত্রটিকে দেয়া তিনটি শাখার সবকটি পুরস্কার বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।[১২]

পুরস্কার[সম্পাদনা]

মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার

  • বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (সমালোচক পুরস্কার) - মুরাদ পারভেজ (প্রযোজক)
  • বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান (বিশেষ পুরস্কার) - মোহাম্মদ ফারুক
  • মনোনীত: শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (দর্শক জরিপ) - ফেরদৌস আহমেদ

জয়পুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "'বৃহন্নলা' বিতর্ক: মুখ খুললেন নির্মাতা"বিডিনিউজ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। ১১ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১৬ 
  2. "দর্পণ চলচ্চিত্র উৎসবে মনোনীত 'বৃহন্নলা'"দৈনিক যায় যায় দিন। ঢাকা, বাংলাদেশ। আগস্ট ২৬, ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১৬ 
  3. "'বৃহন্নলা'র গান"banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৮ 
  4. "'বৃহন্নলা'র গান"সমকাল। ২০২২-০৩-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৮ 
  5. নাইস নূর (১৬ জুন ২০১৫)। "ইতালির চলচ্চিত্র উৎসবে যাচ্ছে 'বৃহন্নলা'"এনটিভি অনলাইন। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১৬ 
  6. "Meril Prothom Alo Awards Gala Night"দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা, বাংলাদেশ। মে ৯, ২০১৫। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১৬ 
  7. "'বৃহন্নলা'য় দেবলীনার গান"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৮ 
  8. "'বৃহন্নলা'র গান"সমকাল। ২০২২-০৩-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৮ 
  9. "শেষ হচ্ছে 'বৃহন্নলা'র শুটিং"দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২০১৩-১০-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-২৮ 
  10. "গল্প 'চুরি' বিতর্কে মুরাদ পারভেজ!"বাংলা ট্রিবিউন। ৩ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১৬ 
  11. "'বৃহন্নলা' বিতর্ক তদন্তে কমিটি"bdnews24.com। ৬ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১৬ 
  12. "'বৃহন্নলা' চলচ্চিত্রের ইতিহাসে লজ্জাজনক ঘটনা"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১৬ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]