পোড়াদহ মেলা
পোড়াদহ মেলা | |
---|---|
অবস্থা | প্রতিবছর একবার বসে |
অবস্থান (সমূহ) | পোড়াদহ,মহিষাবান, গাবতলী উপজেলা, বগুড়া জেলা |
দেশ | বাংলাদেশ |
প্রবর্তিত | ১৬শ শতাব্দীতে |
পোড়াদহ মেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি প্রাচীন লোকজ মেলা। বগুড়া জেলা শহর হতে ১১ কিলোমিটার পূর্বদিকে ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ নামক স্থানে প্রতি বছর যে মেলা বসে তাই পোড়াদহ মেলা নামে পরিচিত।[১] বাংলাদেশে গ্রামীণ মেলাসেমূহের মধ্যে বগুড়ার পোড়াদহ মেলা অন্যতম। মেলাটি প্রায় চার শত বছর পূর্বে শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়।
পটভূমি
[সম্পাদনা]পোড়াদহ মেলা, যাকে বলা হয় ঐতিহাসিক পোড়াদহ মেলা শুরুর সঠিক সাল জানা যায় না। তবে বলা হয় বর্তমান সময় থেকে প্রায় চারশত[১][২] বছর পূর্বে কোন এক সময়ে মেলা সংগঠনের স্থানে একটি বটবৃক্ষ ছিল। একদিন হঠাৎ করে সেখানে এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব হয়। তারপর সেখানে দলে দলে সন্ন্যাসীরা এসে একটি আশ্রম তৈরি করেন। এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়েরর কাছে সেটি একটি পূণ্য স্থানে পরিণত হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সেখানে প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ দিনের কাছের (শেষ দিনের পূর্বের অথবা শেষ দিনের পরের) বুধবার সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করে। দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা প্রতি বছর সেই দিনটিতে এসে সমাগত হতে থাকে। দিন গড়ানোর সাথে সাথে প্রতিবছর লোকসমাগম বাড়তে থাকে। আস্তে আস্তে পূজার দিনটিতে একটি গ্রাম্য মেলার গোড়াপত্তন হয়। এক সময় সন্ন্যাসীরা স্থানটি ত্যাগ করে চলে গেলেও সন্ন্যাসী পূজাটি অব্যাহত থাকে। ধীরে ধীরে মেলাটির পরিচিতি বাড়তে থাকে এবং দূরদূরান্ত থেকে মেলা দেখতে লোকজন আসে। পূজা-পার্বণ মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও মেলাটি ধর্মের গন্ডি পেরিয়ে সব ধর্মের মানুষকে উৎসবে একত্র করে এবং অদ্যাবধি কাল পর্যন্ত এটি সকল ধর্মের হাজার হাজার মানুষের এক বিশাল জনসমাগম। এখনও সন্ন্যাসী পূজাটি চালু রয়েছ।[৩]
নামকরণের ইতিহাস
[সম্পাদনা]সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে মেলাটি শুরু হয়েছিল তাই এর নাম প্রথম অবস্থায় ছিল সন্ন্যাসী মেলা। মেলাটি পোড়াদহ নামক স্থানে সংগঠিত হয় বলে লোক মুখে স্থানের নাম অনুসারে পোড়াদহর মেলা হিসাবে চলতে চলতে এক সময় এর নাম পোড়াদহ মেলা হিসাবে প্রচলিত হয়ে যায়। মেলা উপলক্ষে আশেপাশের গ্রামের যেসব মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে তারা জামাই নিয়ে বাপের বাড়িতে হাজির হয় বলে অনেকে একে জামাই মেলা হিসেবেও সম্বোধন করেন। আবার মেলায় বড় বড় হরেক প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় বলে একে মাছের মেলা বললেও অত্যুক্তি হবে না। বিভিন্ন জন বিভিন্ন নামে সম্বোধন করলেও এটি মূলত পোড়াদহ মেলা নামেই সবার কাছে পরিচিত।
মেলার সময়কাল
[সম্পাদনা]মেলা মূলত প্রতি বছর বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ তিন দিনের মধ্যে আগত বুধবারে আয়োজিত হয়।[৪] সেদিন দূরদূরান্তের মানুষ মেলায় আসে। তবে একদিনের মেলা হলেও স্থানীয়ভাবে সপ্তাহব্যাপী উৎসব লেগে থাকে। মেলা উপলক্ষে প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা এসে জড়ো হয়। চারিদিকে উৎসব মুখর অবস্থা বিরাজ করে। মূল মেলার পরদিন বৃহস্পতিবার একই স্থানে এবং আশেপাশের গ্রামে গ্রামে চলে ছোট আকারের বউ মেলা। মূল মেলাটি সরকারী তত্বাবধানে আয়োজন করা হলেও বউ মেলা স্থানীয় গ্রামবাসীর উদ্যোগে আয়োজন করা হয়। গ্রামের যেসব মহিলা কাজের চাপে অথবা সামাজিক রক্ষণশীলতার কারণে মূল মেলায় যেতে পারেন না তাদের জন্যই বিশেষ করে এই আয়োজন করা হয়। বউ মেলার একটি বিশেষত্ব হলো এখানে বিবাহিত (নিজ নিজ স্বামীর সঙ্গে) এবং অবিবাহিত নারীরা প্রবেশ করতে এবং কেনাকাটা করতে পারেন।[৪]
কেনাকাটা
[সম্পাদনা]মাছ
[সম্পাদনা]পোড়াদহ মেলার প্রধান আকর্ষণ মাছ। মেলায় পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ। মাছগুলো প্রথমে ভোর বেলায় মেলায় স্থাপিত অস্থায়ী আড়ৎগুলোতে এসে জমা হয়। সেখান থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা মাছগুলো কিনে মেলার নিজ নিজ দোকানে নিয়ে যায়। দোকানগুলোতে দিনভর কেনাকাটা চলতে থাকে। মেলায় আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াল, সিলভার কার্প, কালবাউশ, পাঙ্গাস মাছ ইত্যাদি। মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় 'বাঘা আইড়'[৫] মাছ স্থানীয় ভাবে যাকে 'বাগাইড়' মাছ বলা হয়। মেলায় দুই মণ থেকে আড়াই মণ ওজনের বাঘা আইড় পাওয়া যায়। তবে, সরকারী নিষেধাজ্ঞার কারণে 'মহাবিপন্ন' প্রজাতি হিসেবে ঘোষিত 'বাঘা আইড়' মাছের কেনাবেচা ২০২২ সাল থেকে মেলায় বন্ধ রয়েছে।[৬] এছাড়া পনের থেকে বিশ কেজি ওজনের রুই, কাৎলা, পাঙ্গাস মাছ পাওয়া যায়।
আসবাবপত্র
[সম্পাদনা]মেলায় কাঠের, স্টিল ও লোহার বিভিন্ন ডিজাইনের আসববাপত্র যেগুলো অনেক সূলভ মূল্যে পাওয়া যায়।
কসমেটিক ও গিফট সামগ্রী
[সম্পাদনা]মেলায় বিভন্ন জেলা হতে লোকজন উন্নতমানের কসমেটিক, খেলনা, গিফট সামগ্রী এর দোকান দেয়। সাধারণত শিশু এবং মহিলাদের ভিড় লেগে থাকে। আছে চুড়ি, কানের দুল, মালা, কাজল, মেকাপ বক্স সহ সকল সাজার জিনিস। খেলনার মধ্যে থাকে ব্যাট, বল ভিডিও গেমস ইত্যাদি।
মিষ্টি
[সম্পাদনা]পোড়াদহ মেলার অন্যতম আকর্ষণ মিষ্টি। রসগোল্লা, সন্দেশ, জিলাপী, নিমকি, তিলের নাড়ু, খই, শুকনা মিষ্টি। আরও আকর্ষণীয় হল বড় বড় আকারের মিষ্টি। একেকটি মিষ্টি দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের হয়ে থাকে।
খাবারের দোকান
[সম্পাদনা]মেলায় লোকজনের খাওয়া দাওয়ার জন্য বসানো হয় অস্থায়ী হোটেল, আছে ফুচকা চটপটি, ভাজা-পোড়া ও আইসক্রিমের দোকান।
বিবিধ
[সম্পাদনা]মেলা উপলক্ষে দৈনন্দিন জিনিসের বাজার বসে। মাংস, কাঁচাবাজার, মসলা, গৃহস্থালীর দৈনন্দিন জিনিস পত্র যেমন ছুরি, দা, বটি এগুলোও পাওয়া যায়।
বিনোদন
[সম্পাদনা]মেলায় কেনাকাটার পাশাপাশি বিনোদনের ব্যবস্থা থাকে। ছোটদের জন্য নাগড়দোলা, মিনি ট্রেন, ঘোড়ার গাড়ি, সার্কাস ইত্যাদি ও বড়দের জন্য রয়েছে মটর সাইকেল খেলা, যাত্রাপালা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]-
মেলায় মাছ কেনাকাটা হচ্ছে
-
মেলার মাছ
-
পোড়াদহ মেলার মাছ
-
বড় আকারের বাঘা আইড় মাছ
-
বাঘা আইড় মাছ
-
রুই মাছ
-
কার্প জাতীয় মাছ
-
মেলা থেকে কেনা মাছ কাটা হচ্ছে গ্রামের একটি বাড়িতে
-
একটি মাছ আকারের মিষ্টি
-
সুন্দর করে বড় আকারের মিষ্টি সাজিয়ে রাখা হয়েছে
-
মেলায় একটি মিষ্টির দোকান
-
মেলায় বিক্রয় হচ্ছে ছোটদের বেলুন
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "বগুড়ায় ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা"। প্রিমিয়ার নিউজ সিন্ডিকেট লিমিটেড। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১৫।
- ↑ "বগুড়ার গাবতলীতে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা আজ"। amardeshonline.com। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১৫।
- ↑ "দৈনিক ইনকিলাব - অনলাইন সংস্করণ"। dailyinqilab.com। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১৫।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ "ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা কাল॥ বউ মেলা বৃহস্পতিবার - daily nayadiganta"। The Daily Nayadiganta। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১৫।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "বগুড়ায় পোড়াদহ মেলায় ৯০ কেজির বাগাড়!"। প্রথম আলো। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১৫।
- ↑ "বগুড়ার পোড়াদহ মেলায় এবার নেই বাঘাইড়"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- বগুড়া জেলা, গাবতলী উপজেলা তথ্য বাতায়নে পোড়াদহ মেলা সংক্রান্ত তথ্য