রুহিয়া আজাদ মেলা

স্থানাঙ্ক: ২৬°১০′৪৪″ উত্তর ৮৮°২৪′০৫″ পূর্ব / ২৬.১৭৮৮৯° উত্তর ৮৮.৪০১৩৯° পূর্ব / 26.17889; 88.40139
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রুহিয়া আজাদ মেলা
অবস্থাপ্রতিবছর একবার এবং এক মাস ব্যাপী
ধরনবর্তমানে গ্রামীণ বা লোকজ হলেও দেশভাগের পূর্বে এর পরিসর আরও বিস্তৃত ছিল
অবস্থান (সমূহ)২৬°১০′৪৪″ উত্তর ৮৮°২৪′০৫″ পূর্ব / ২৬.১৭৮৮৯° উত্তর ৮৮.৪০১৩৯° পূর্ব / 26.17889; 88.40139 রামনাথ হাট সংলগ্ন এলাকা, রুহিয়া থানা, ঠাকুরগাঁও জেলা
দেশবাংলাদেশ
প্রবর্তিত১৯শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে
আয়োজনেস্থানীয় পরিচালনা কমিটি

রুহিয়া আজাদ মেলা উত্তর বঙ্গের উল্লেখযোগ্য মেলাগুলোর মধ্যে একটি। ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থানার অন্তর্গত রামনাথ হাট সংলগ্ন এলাকায় প্রতি বছর এক মাসের জন্য এই মেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে। আনুমানিক ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে আটোয়ারী উপজেলার বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃসীমান্ত নাগর নদীর তীরে (বর্তমানে বালিয়া বিওপির কয়েক কিলোমিটার উত্তরে) কার্তিক মাসের রাস উৎসব উপলক্ষে এ মেলার প্রচলন হয়। দেশ ভাগের পর সীমান্ত নিরাপত্তার অযুহাতে মেলাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ১৯৫৯ খ্রীস্টাব্দে নতুন উদ্যোগে রুহিয়া আজাদ মেলা নামে এটি চালু করা হয়।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া আজাদ মেলাটি আজো উত্তর জনপদের কালের সাক্ষী হয়ে আছে। ব্রিটিশ আমলে ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ১৫৩ নং লাট ঝারগাঁওয়ের জমিদার শ্রী তারিণী প্রসাদ রায়চৌধুরী তার জমিদার বাড়ীর দক্ষিণে বর্তমান বাংলাদেশ-ভারত উত্তর-পশ্চিম সীমান্তবর্তী নাগর নদীর কোল ঘেঁষে একটি রাস মন্দির স্থাপন করেন। রাশ পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর পূজার সময় যে লোক সমাগম হতো কালক্রমে তা একটি মেলায় রুপান্তরিত হয় এবং স্থানীয়ভাবে আলোয়াখোয়া মেলা নামে পরিচিতি পায়।

ঊনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে জমিদার তারিণী প্রসাদ রায়ের পুত্র শ্রী শ্যামা প্রসাদ রায়চৌধুরী যিনি বাচ্চা বাবু নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন, তারই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আলোয়াখোয়া মেলাটি বিস্তৃত পরিসরে আয়োজিত হতে থাকে এবং মেলার খ্যাতি দূর দূরান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। জনশ্রুতি আছে যে, এই মেলায় ভারত বর্ষের বিভিন্ন এলাকা যেমন, ভুটান, নেপাল, কাশ্মির, এমনকি সুদূর ইরান থেকেও লোকেরা বিভিন্ন প্রকার দ্রব্য সামগ্রী, হাতি, ঘোড়া, উট, দুম্বা, গরু, মহিষ ইত্যাদি কেনা-বেচার জন্য নিয়ে আসত।[১]

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভেঙ্গে ভারতপাকিস্তান দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হলে নাগর নদীটি দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমারেখায় পরিণত হয়, ফলে আলোয়াখোয়া মেলাটি নাগর নদীর পূর্ব প্রান্তে তৎকলীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। কয়েক বছর এভাবে চলার পর সীমানা নিরাপত্তার অজুহাতে তাও বন্ধ যায়।

এরপরে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ঠাকুরগাঁও মহকুমার রুহিয়া এলাকার ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে রুহিয়া আজাদ মেলা নামে মেলাটির পুনর্জন্ম ঘটে। তখন থেকে অদ্যাবধি কাল পর্যন্ত মেলাটি বর্তমান রুহিয়া থানার রামনাথ হাট সংলগ্ন এলাকায় প্রতি বছর আয়োজিত হয়ে আসছে।[২]

নামকরণের পটভূমি[সম্পাদনা]

উলু জাতীয় ছন ঘাসকে স্থানীয়ভাবে ইলুয়া বলা হয়। নাগর নদীর তীরবর্তী যে স্থানটিতে প্রথম মেলার আয়োজন করা হয় তা ছিল ইলুয়া-কাশিতে ভরপুর। ইলুয়া-কাশি কেটে মেলা বসানো হয়েছিল বলে এটি ইলুয়ার মোড়া এবং কালক্রমে আলোয়াখোয়া মেলা নামে পরিচিত হয়। আটোয়ারী উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের নামটি এই আলোয়াখোয়া মেলা থেকেই নেওয়া। আর দেশ ভাগের পটভূমিতে পরে এই মেলাই রুহিয়া আজাদ মেলাতে রূপান্তরিত হয়।

মেলার সময়কাল[সম্পাদনা]

মেলাটি প্রতি বছর কার্তিক মাসের রাস পূর্ণিমার দিন থেকে শুরু হয়ে প্রায় এক মাস যাবত চলতে থাকে। উত্তরবঙ্গের কান্তজী মন্দির মেলা ও আটোয়ারি আলোয়াখোয়া মেলাও একই দিন থেকে শুরু হয়ে এক মাস যাবত চলে। অবশ্য কখনো কখনো এক মাস পেরিয়ে যায়।

কেনাবেচা[সম্পাদনা]

অতীতে গরু-মহিষ কেনাবেচার জন্যই রুহিয়া আজাদ মেলার নামডাক ছিল। মেলা থেকে পছন্দের পশু ক্রয় করতে ভিড় করত দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ। কৃষি যন্ত্রপাতির বিবর্তনের ফলে এবং বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে গবাদিপশুর কেনাবেচায় একটা পরিবর্তন আসায় এখন মেলার প্রথম দু-এক দিনেই পশু বিক্রি শেষ হয়ে যায় এবং তা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।[৩] মেলার অন্যান্য জিনিসপত্রের মধ্যে বিভিন্ন গৃহস্থালী তৈজসপত্র, শিশুদের খেলনা, খাদ্য সামগ্রী প্রাধান্য পায়।

বিনোদন[সম্পাদনা]

বিনোদন রুহিয়া আজাদ মেলার প্রধান অনুষঙ্গ। অতীতে মেলায় চিত্তবিনোদনের প্রধান উৎস ছিল সার্কাস। তখন দেশের কয়েকটি বিখ্যাত সার্কাস গোষ্ঠী নিয়মিতভাবেই এ মেলাতে পারফর্ম করত। এর সঙ্গে রয়েছে মৃত্যুকূপ মটর সাইকেল ও কার খেলাও। বিনোদন হিসেবে যাত্রাপালার প্রতি ঝোঁক-প্রবণতা লক্ষণীয়। রাত্রিকালীন যাত্রাপালাগুলো বিগত কয়েক দশকে মেলাটির মূল আকর্ষণে রূপান্তরিত হয়েছে একথাটি কখনোই অত্যুক্তি নয়।[৪]

উত্তরসূরী[সম্পাদনা]

আটোয়ারী আলোয়াখোয়া মেলা[সম্পাদনা]

১৪০২ বঙ্গাব্দে আটোয়ারী মির্জা গোলাম হাফিজ ডিগ্রী কলেজ এর ম্যানেজিং কমিটি রুহিয়া আজাদ মেলার কমিটির কাছে মেলার আয়ের অংশ দাবী করলে উক্ত কমিটি তা অগ্রাহ্য করে। এর ফলে তৎকালীন আইনমন্ত্রী মির্জা গোলাম হাফিজ পৃথকভবে একটি মেলার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া শুরু করেন। তারই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আটোয়ারী আলোয়াখোয়া মেলা নাম দিয়ে রুহিয়া আজাদ মেলার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিবছর আটোয়ারী উপজেলার নিরাশী নামক স্থানে পৃথকভাবে এর আয়োজন করা হতে থাকে। এই উদ্যোগের ফলে পুরাতন আলোয়াখোয়া মেলাটি আরেকবার পুনরূজ্জীবন লাভ করেছে বলা যায়।

পুরাতন আলোয়াখোয়া মেলা[সম্পাদনা]

দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর ২০০৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে পুরাতন আলোয়াখোয়া মেলাটিকে আটোয়ারী বালিয়া সীমান্তে নাগর নদীর ধারে তার আগের স্থানে শুধু একবেলার জন্য আয়োজন করা হচ্ছে। একবেলার এ মেলাটি আগের মতই রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি বর্তমানে রুহিয়া আজাদ মেলা এবং আটোয়ারী আলোয়াখোয়া মেলাও সচল রয়েছে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]