পঞ্চতথাগত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(পাঁচ ধ্যানী বুদ্ধ থেকে পুনর্নির্দেশিত)
পশ্চাতে পঞ্চতথাগতের অসংখ্য চিত্র ও সামনে ধ্যানী বুদ্ধ অক্ষোভ্য, তিব্বতী থাংকা, ত্রয়োদশ শতাব্দী
চীনের দতোং, শানশিতে শানহুয়া মন্দিরে জিন রাজবংশীয় পঞ্চতথাগাথের মূর্তি। বাম থেকে ডানে: অমোঘসিদ্ধি, অমিতাভ, বৈরোচন, রত্নসম্ভব, অক্ষোভ্য।

পঞ্চতথাগত (সংস্কৃত: पञ्चतथागत) বা পঞ্চধ্যানীবুদ্ধ বা পঞ্চপ্রজ্ঞাবুদ্ধ বজ্রযান বৌদ্ধধর্ম অনুসারে গৌতম বুদ্ধের পাঁচ রকম গুণের প্রকাশিত রূপ। রূপগুলো হলো: অক্ষোভ্যরত্নসম্ভববৈরোচনঅমিতাভ এবং  অমোঘসিদ্ধি[১] এগুলি কখনও কখনও আদিবুদ্ধের পাঁচ গুণের উদ্ভব ও উপস্থাপনা হিসাবে বিবেচিত হয়, যা ধর্মকায়ের সাথে যুক্ত।[১] কিছু সূত্রে আদিবুদ্ধকে পাঁচটি সহ ষষ্ঠ বুদ্ধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[১]

পঞ্চতথাগতে বজ্রযান মণ্ডলগুলির সাধারণ বিষয় এবং বিভিন্ন বৌদ্ধতন্ত্রে এগুলি বিশিষ্টভাবে দেখা যায়। পঞ্চতথাগত হলো শিঙ্গন বৌদ্ধধর্মের উপলব্ধি ও ধ্যানের আদি উদ্দেশ্য। চীনা বৌদ্ধধর্মে, পঞ্চতথাগতের পূজা চীনা গুহ্য বৌদ্ধধর্ম থেকে চ্যানতিয়ানতাইয়ের মতো অন্যান্য চীনা বৌদ্ধ ঐতিহ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এগুলি নিয়মিতভাবে অনেক চীনা বৌদ্ধ মন্দিরে স্থাপন করা হয় এবং নিয়মিত আচার-অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়, যেমন জল ও ভূমির মুক্তির অনুষ্ঠান এবং যোগ ফ্লেমিং মাউথ অনুষ্ঠান, সেইসাথে প্রার্থনা ও মন্ত্র।[২][৩]

উৎপত্তি[সম্পাদনা]

গর্ভধাতু মণ্ডল আদিবুদ্ধ বৈরোচনকে চিত্রিত করে,
চারটি বুদ্ধ (সোনার) এবং চারটি বোধিসত্ত্ব (সাদা)
দ্বারা বেষ্টিত; উপরে থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে:
রত্নকেতু, সামন্তভদ্র, সম্কুসুমিতারাজ, মঞ্জুশ্রী,
অমিতাভ, অবলোকিতেশ্বর, দিব্যদুন্ধুভিমেঘনির্ঘোস,
মৈত্রেয়।

পঞ্চ প্রজ্ঞাবুদ্ধ হলো মূলত বৌদ্ধতন্ত্রের বিকাশ, এবং পরবর্তীতে বুদ্ধত্বের ত্রিকায় তত্ত্বের সাথে যুক্ত হয়। তত্ত্বসংগ্রহ তন্ত্রে, শুধুমাত্র চারটি বুদ্ধ পরিবার রয়েছে, পাঁচটি বুদ্ধের সাথে পূর্ণ হীরক রাজ্য মণ্ডল প্রথম  বজ্রশেখর সূত্রে দেখা যায়।[১]

পঞ্চ ধানীবুদ্ধের উপস্থাপনা, যারা বুদ্ধ বা দেবতার পরিবর্তে বুদ্ধত্বের বিমূর্ত দিক, তাদের মধ্যে বিস্তৃত পার্থক্য রয়েছে।[৪] প্রতিটিকে অবশ্যই ভিন্ন দিকে (উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম বা কেন্দ্রে) মুখোমুখি হতে হবে এবং, যখন আঁকা হয়, প্রতিটি ভিন্ন রঙ (নীল, হলুদ, লাল, সবুজ বা সাদা)। প্রতিটির আলাদা মুদ্রা এবং প্রতীক আছে; ভিন্ন দিক, মন্দের ধরন এবং মহাজাগতিক উপাদানকে মূর্ত করে; ভিন্ন সঙ্গী এবং আধ্যাত্মিক পুত্র, সেইসাথে বিভিন্ন পশু যান (হাতি, সিংহ, ময়ূর, হারপিস বা গরুড়, বা ড্রাগন) আছে।[৫]





. বুদ্ধের ত্রিকায়াযোগাচার তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে পাঁচ ধ্যানী বুদ্ধের উৎপত্তি হয়। প্রথমে শুধুমাত্র অক্ষোভ্যঅমিতাভ বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে। সুবর্ণপ্রভাসোত্তমসূত্রেন্দ্ররাজ নামক প্রাচীন মহাযান সূত্রে দুন্দুভীশ্বর ও রত্নকেতু নামক অপর দুই বুদ্ধের আবির্ভাব হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে তাদের নাম পালটে যথাক্রমে অমোঘসিদ্ধিরত্নসম্ভব হয়ে যায়। পাঁচ বুদ্ধের মধ্যে কেন্দ্রীয় বুদ্ধ হলেন বৈরোচন

বিভিন্ন ভাষায় নাম[সম্পাদনা]

নাম সংস্কৃত চীনা জাপানী তিব্বতী
বৈরোচন वैरोचन দারি রুলাই (大日如來)
পিলুঝ়েনা ফো (毘盧遮那佛)
দাইনিচি ন্যোরাই, (大日如来) র্নাম-পার-স্নাং-ম্দ্জাদ (তিব্বতি: རྣམ་པར་སྣང་མཛད།)
অক্ষোভ্য अक्षोभ्य আচু রুলাই (阿閦如來) আশুকু ন্যোরাই (阿閦如来) মি-ব্স্ক্যোদ-পা (তিব্বতি: མི་བསྐྱོད་པ་)
অমিতাভ अमिताभ এমিতুও ফো (阿彌陀佛) আমিদা ন্যোরাই (阿弥陀如来) ওদ-দ্পাগ-মেদ (তিব্বতি: འོད་དཔག་མེད་)
রত্নসম্ভব रत्नसंभव বাওশেং রুলাই (寳生如來) হোশো ন্যোরাই (宝生如来) রিন-ছেন-ব্জুং-গ্নাস (তিব্বতি: རིན་ཆེན་འབྱུང་གནས)
অমোঘসিদ্ধি अमोघसिद्धि চেংজিউ রুলাই (成就如來) ফুকোজোজু ন্যোরাই (不空成就如来) দোন-য়োদ-গ্রুব-পা (তিব্বতি: དོན་ཡོད་གྲུབ་པ)

স্থান[সম্পাদনা]

মন্ডলে এই পাঁচ বুদ্ধের স্থান সবসময় এক থাকে না। বৈরোচন এবং অক্ষোভ্যের মধ্যে স্থানের বদলাবদলি হয়ে থাকে। বৈরোচন মন্ডলে নিম্নে পাঁচ জ্ঞানী বুদ্ধের অবস্থান দেখানো হল।

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

বজ্রযান বৌদ্ধ ধর্মানুসারে পাঁচ ধ্যানী বুদ্ধকে পাঁচ বিদ্যারাজা রক্ষা করেন। পাঁচ ধ্যানী বুদ্ধ পাঁচটি বিশুদ্ধ ভূমিতে সঙ্গিনী নিয়ে অবস্থান করেন। এর মধ্যে সুখাবতীঅভিরতি নামক আধ্যাত্মিক স্থান দুটি বৌদ্ধদের আকর্ষণ করে এসেছে।

বুদ্ধ সঙ্গিনী ধ্যানী বোধিসত্ত্ব বিশুদ্ধ ভূমি বীজমন্ত্র রক্ষাকর্তা বিদ্যারাজা
বৈরোচন শ্বেত তারা সামন্তভদ্র অকনিষ্ঠ ঘনব্যূহ ওঁ অচল
অক্ষোভ্য লোচনা বজ্রপানি অভিরতি হুং ত্রৈলোক্যবিজয়
অমিতাভ পন্ডরা [৬] অবলোকিতেশ্বর সুখাবতী হ্রীঃ যমান্তক
রত্নসম্ভব মমাকী [৭] রত্নপানি শ্রীমৎ ত্রাঃ কুন্ডলী
অমোঘসিদ্ধি সবুজ তারা[৮][৯] বিশ্বপানি প্রাকুটা আঃ বজ্রযক্ষ

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Williams, Wynne, Tribe; Buddhist Thought: A Complete Introduction to the Indian Tradition, page 210.
  2. "香光莊嚴"www.gaya.org.tw। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-১২ 
  3. Hong, Tsai-Hsia (২০০৭)। The Water-Land Dharma Function Platform Ritual and the Great Compassion Repentance Ritual (গবেষণাপত্র)। ওসিএলসি 64281400প্রোকুয়েস্ট ৩০৪৭৬৪৭৫১ 
  4. Sakya, pp. 35, 76.
  5. Sakya, p. 76.
  6. "Pandara The Shakti of Amitabha"। Buddhanature.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৪ 
  7. "Mamaki The Shakti of Aksobhya"। Buddhanature.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৪ 
  8. "chart of the Five Buddhas and their associations"। Religionfacts.com। ২০১২-১২-২১। ২০১৩-০৭-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৪ 
  9. "Symbolism of the five Dhyani Buddhas"। ৮ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৩ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]