পদ্ম
পদ্ম | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ/রাজ্য: | প্লান্টি (Plante) |
গোষ্ঠী: | ট্র্যাকিওফাইট (Tracheophytes) |
ক্লেড: | সপুষ্পক উদ্ভিদ (অ্যাঞ্জিওস্পার্মস) |
ক্লেড: | ইউডিকটস |
বর্গ: | Proteales |
পরিবার: | Nelumbonaceae |
গণ: | Nelumbo গার্টনার |
প্রজাতি: | N. nucifera |
দ্বিপদী নাম | |
Nelumbo nucifera গার্টনার | |
প্রতিশব্দ | |
ভারতের জাতীয় ফুল পদ্ম। পদ্ম গাছ আংশিক জলনিমগ্ন উদ্ভিদ। শালুক (waterlily) দেখতে পদ্মফুলের মতো হলেও শালুক পরিবারের (Nympheaceae) সঙ্গে পদ্ম পরিবারের (Nelumbonaceae) খুব একটা নিকটত্ব নেই। এদের পাতা দেখলে সহজেই পৃথক করা যায়। বৈজ্ঞানিক নাম: Nelumbo nucifera
পদ্ম কন্দ জাতীয় ভূ-আশ্রয়ী বহু বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। এর বংশ বিস্তার ঘটে কন্দের মাধ্যমে। পাতা জলের ওপরে ভাসলেও এর কন্দ বা মূল জলের নিচে মাটিতে থাকে। জলের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে গাছ বৃদ্ধি পেতে থাকে। পাতা বেশ বড়, পুরু, গোলাকার ও রং সবুজ। পাতার বোটা বেশ লম্বা, ভেতর অংশ অনেকটাই ফাঁপা থাকে। ফুলের ডাটার ভিতর অংশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য ছিদ্র থাকে। ফুল আকারে বড় এবং অসংখ্য নরম কোমল পাপড়ির সমন্বয়ে সৃষ্টি পদ্ম ফুলের। ফুল ঊধ্বর্মুখী, মাঝে পরাগ অবস্থিত। ফুটন্ত তাজা ফুলে মিষ্টি সুগন্ধ থাকে। ফুল ফোটে রাত্রি বেলা এবং ভোর সকাল থেকে রৌদ্রের প্রখরতা বৃদ্ধির পূর্ব পযর্ন্ত প্রস্ফুটিত থাকে। রৌদ্রের প্রখরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফুল সংকুচিত হয়ে যায় ও পরবর্তীতে রৌদ্রের প্রখরতা কমে গেলে আবার প্রস্ফুটিত হয়। ফুটন্ত ফুল এভাবে বেশ অনেক দিন ধরে সৌন্দর্য বিলিয়ে যায়। পদ্ম ফুলের রং মূলত লাল সাদা ও গোলাপীর মিশ্রণ যুক্ত। তাছাড়া নানা প্রজাতির পদ্ম ফুল দেখা যায়। এর মাঝে রয়েছে লাল, সাদা ও নীল রঙের ফুল। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি প্রাকৃতিক জলাধার হাওর-বাঁওড়, খালে-বিলে ও ঝিলের জলে পদ্ম ফুল ফুটতে দেখা যায়। বর্ষা মৌসুমে ফুল ফোটা শুরু হয়। তবে শরতে অধিক পরিমাণে ফুল ফোটে এবং এর ব্যাপ্তি থাকে হেমন্তকাল অবধি। ফুটন্ত ফুলের বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। যে রূপের মায়ায় মুগ্ধ হয়ে শরৎ ঋতুর পদ্ম ফুলকে নিয়ে অনেক কবি তার কাব্যের উপমায় পদ্ম ফুলের রঙ রূপকে তুলে ধরেছেন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষজনের কাছে অতি প্রিয় ও পবিত্র ফুল পদ্ম। বিশেষ করে দুর্গা পূজাতে পদ্ম ফুলের রয়েছে বেশ চাহিদা ও কদর। ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে পদ্ম ফুল সংগ্রহ ও বিক্রয় অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। তাছাড়া পদ্ম ফুল ভেষজগুণ সমৃদ্ধ ফুল গাছ। এর ডাটা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। মানব দেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে অতুলনীয়। চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ে বেশ উপকারী।
বিভিন্ন নাম
[সম্পাদনা]পদ্মফুলের বহু নাম যেমন— পদ্ম, কমল, শতদল, সহস্রদল, উৎপল (পদ্ম বা শাপলা), মৃণাল, পঙ্কজ, অব্জ, অম্বুজ, নীরজ, সরোজ, সরসিজ, সররুহ, নলিনী, অরবিন্দ, রাজীব, ইন্দিরা, কুমুদ, তামরস প্রভৃতি।
- পুণ্ডরীক=শ্বেতপদ্ম
- কোকনদ=লাল পদ্ম
- ইন্দিবর= নীল পদ্ম
পদ্মের অভিযোজন
[সম্পাদনা]পদ্মগাছ জলে জন্মায়। পাতার ফলক ও ফুল ছাড়া গাছের সমস্ত অংশই জলের নীচে থাকে। পদ্ম তাই আংশিক জলনিমগ্ন উদ্ভিদ। পদ্মের অভিযোজনের বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:
গ্রন্থিকাণ্ড
[সম্পাদনা]জলে জন্মানোর জন্য পদ্মের সুদৃঢ় কোন কাণ্ড থাকে না। জলের তলায় পাঁকে এদের কাণ্ড পরিবর্তিত হয়ে অবস্থান করে। কাণ্ড অনেক সময় শাখা-প্রশাখা যুক্ত হয়। এই রকম পরিবর্তিত কাণ্ডকে গ্রন্থিকাণ্ড বা রাইজোম বলে।
অস্থানিক মূল
[সম্পাদনা]পদ্ম গাছের প্রায় সারা দেহ দিয়েই জল শোষিত হয় বলে এদের প্রধান মূল থাকে না। গ্রন্থিকাণ্ড থেকে খুবই কম সংখ্যায় অস্থানিক মূল বেরিয়ে পাঁকে প্রবেশ করে।
পাতা
[সম্পাদনা]পদ্মপাতার গঠন জলে ভেসে থাকার উপযোগী। পাতার ফলক আয়তনে বড়, গোলাকৃতি এবং খুব পাতলা হয়। পত্রবৃন্ত খুব লম্বা হয়। পাঁকে অবস্থিত গ্রন্থিকান্ড থেকে জলের উপরতল পর্যন্ত পত্রবৃন্ত লম্বা হয়। বৃন্তের মধ্যে ছোট ছোট বায়ুগহ্বর থাকে। বায়ুগহ্বরে অবস্থিত বায়ু পত্রবৃন্ত ও পাতার ফলককে ভাসিয়ে রাখতে সাহায্য করে। উল্লেখ্য যে,পাতার ফলকের উপরের ত্বকে পত্ররন্ধ্র থাকে।
ফুল
[সম্পাদনা]পদ্মফুল ভারতের জাতীয় ফুল। ফুলের বৃন্ত বেশ লম্বা আকারের হয়। ফলে জলের উপরে ফুল অবস্থান করে। এই ফুলের পাপড়ি প্রচুর সংখ্যায় থাকে। ফুল সুগন্ধ-যুক্ত ও উজ্জ্বল রঙের হয়। কীট-পতঙ্গের মাধ্যমে ফুলে পরাগ- সংযোগ ঘটে।
পৃষ্টি
[সম্পাদনা]পদ্ম স্বভোজী উদ্ভিদ। দেহে ক্লোরোফিল থাকার জন্য সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপন্ন করতে পারে। পত্রফলকের সাহায্যে বাতাস থেকে এবং পত্রবৃন্ত মাধ্যমে জল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে পারে।
শ্বসন
[সম্পাদনা]জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কম। শ্বসনের সময় অক্সিজেনের অভাব যাতে না ঘটে সেজন্য পত্রবৃন্তের মধ্যে অবস্থিত বায়ুগহ্বর প্রয়োজনে অক্সিজেনের যোগান দেয়।
সংবহন
[সম্পাদনা]পদ্মগাছের সমগ্র অংশ দিয়েই জল শোষিত হয় বলে মূলে, গ্রন্থিকান্ডে, পত্রবৃন্তে ও পুষ্পবৃন্তে কম সংখ্যায় সংবহন কলা যথা, জাইলেম (Xylem) ও ফ্লোয়েম (Phloem) থাকে।
জনন
[সম্পাদনা]পদ্ম অযৌন ও যৌন উপায়ে বংশবিস্তার করে। তবে প্রধানত অযৌন উপায়ে গ্রন্থিকাণ্ডের অঙ্গজ বিস্তারের মাধ্যমে এদের বংশবিস্তার ঘটে। পরাগসংযোগের মাধ্যমে যৌন জননে ফুল থেকে ফল ও বীজ উৎপন্ন হয়। স্পঞ্জের মতো নরম পুষ্পাক্ষের মধ্যে পদ্মের বীজ থাকে। বীজসহ পুষ্পাক্ষ খসে জলে ভাসতে ভাসতে দূরে যায় ও বীজ খসে পাঁকে পড়ে, আর সেখানেই অঙ্কুরোদ্গম হয়। বীজের ত্বক খুব শক্ত হওয়ার ফলে প্রতিকূল অবস্থাতেও বীজ সহজে নষ্ট হয় না।[১]
সাংস্কৃতিক ও প্রতীকী গুরুত্ব
[সম্পাদনা]পদ্মফুল পবিত্র সৌন্দর্যের প্রতীক ( চরণকমল, পাদপদ্ম, করকমল, মুখপদ্ম, কমলনয়না ইত্যাদি ), যেমন: লাল গোলাপ ভালোবাসার ও চাঁপার কলি নমনীয় লালিত্যের (softness) প্রতীক
- পদ্মাসন : একটি যোগাসন
- পদ্ম, মহাপদ্ম প্রাচীন ভারতের সংখ্যাবাচক শব্দ
- সিপাহী বিদ্রোহের সময় পদ্ম উপহার সাংকেতিক ভাষা হিসাবে ব্যবহার হত।
- পদ্মকাঁটা : একপ্রকার চর্মরোগ
হিন্দু, বৌদ্ধ, বাহাই ধর্মীয় প্রতীক
[সম্পাদনা]- হিন্দু ধর্মের কাহিনি অনুসারে নারায়ণের নাভি থেকে নির্গত পদ্ম ব্রহ্মার আসন।
- শ্বেতপদ্ম বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আসন।
তথ্য সূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ বই উদ্ধৃতি=মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান লেখক= তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শিরোনাম=অভিযোজন প্রকাশক= শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা বছর=১৯৮৬ পাতা=১৩৩,১৩৪