বিষয়বস্তুতে চলুন

নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার একটি পুরনো সংস্করণ, যা 103.135.255.122 (আলোচনা) কর্তৃক ০৮:০৫, ২১ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক, যা বর্তমান সংস্করণ থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

নব্বই এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সূচনা হয় ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ যখন তৎকালীন সেনাপ্রধান লেঃ জেঃ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অবৈধভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন । সে সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিএনপি মনোনীত ও জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। সেনাপ্রধান লেঃ জেঃ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেই সামরিক আইন জারি করেন । সেই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ করে ছাত্ররা ।

নব্বই এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন
তারিখ১০ অক্টোবর – ৪ ডিসেম্বর ১৯৯০
অবস্থান
কারণস্বৈরাচারী শাসন
ফলাফলগণতন্ত্রবাদীদের বিজয়
পক্ষ

গণতন্ত্রবাদী

নেতৃত্ব দানকারী

১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গড়ে উঠা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিলে সেনাবাহিনীর হামলায় জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দীপালী সাহা সহ অনেক ছাত্র/ছাত্রী নিহত হয় । তখন থেকে জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে একটি লাগাতার ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর। ১৯৯০ সালের ১০ই অক্টোবর জেহাদ নামে একজন ছাত্র পুলিশ কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হলে সেই মৃত জেহাদের লাশকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে তৎকালীন ক্রিয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত হয় । ২৪টি ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে গড়ে উঠে "সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য" । উল্লেখ্য এই সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গড়ে উঠার আগে বৃহৎ দুই ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আলাদাভাবে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিল । সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠনের মাধ্যমে ছাত্র সংগঠনের সকল শক্তি একই জায়গায় মিলিত হয়েছিল । এছারাও আরও কিছু শক্তিশালী বামধারার ছাত্র সংগঠন যথেষ্ট পরিমাণে সাংগঠনিক শক্তির অধিকারী ছিল এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ , সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ইত্যাদি । সব কয়টি ছাত্র সংগঠনের মিলিত শক্তির আন্দোলনের কাছে সেনাবাহিনী সমর্থিত জেনারেল এরশাদ টিকতে পারে নাই । সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য এর আন্দোলনের সাথে দেশের জনগণ সম্পৃক্ত হলে তা গণ আন্দোলন থেকে গণ অভ্যুত্থানে রুপ নেয় । সেই গণ অভ্যুত্থানে জেনারেল এরশাদ ৪ঠা ডিসেম্বর পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং ৬ই ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন । দীর্ঘ ৯ বৎসর পরিচালিত আন্দোলন ১৯৯০ এ এসে গণ আন্দোলনের রুপ নেয় । সেই গণ আন্দোলনে এরশাদ পদত্যাগ করেছিল । ইতিহাসে তা ৯০'র আন্দোলন হিসেবে পরিচিত । ১৯৯০ এর আন্দোলনের সফল সমাপ্তি ঘটেছিল মূলত ছাত্রনেতাদের দৃঢ়তায় । তৎকালীন ছাত্র নেতারা নিজ নিজ রাজনৈতিক পিতৃ সংগঠনের নির্দেশ উপেক্ষা করে , সকল আপোষকামী প্রস্তাবের বিপক্ষে দৃঢ় থাকায় ৯০'র আন্দোলনের সফল সমাপ্তি ঘটেছিল ।

আন্দোলনে কবি ও কবিতা

অন্যদিকে এরশাদের রাজনৈতিক স্বৈরতন্ত্রের বিরোদ্ধে ও মানবিক অধিকারের প্রতিষ্ঠার দাবিতেও সোচ্চার ছিলেন শামসুর রাহমান, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, মোহাম্মদ রফিক, রফিক আজাদ, রুদ্র মোহাম্মদ শহিদুল্লাহদের মত কবিরা।

"খোলা কবিতা" নামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের শিক্ষক কবি মোহাম্মদ রফিক একটি নিষিদ্ধ কবিতা লিখেন। নিষিদ্ধ কবিতাটির কয়েকটি পঙ্‌ক্তি এরকম: "সব শালা কবি হবে, পিঁপড়ে গোঁ ধরেছে উড়বেই, দাঁতাল শুয়োর এসে রাজাসনে বসবেই।"

পুরো কবিতাটি ছিল অনেক দীর্ঘ, প্রায় ১৬ পৃষ্ঠা। এটি গোপনে ছাপানো হয় এক ছাপাখানায়। নিউজপ্রিন্টে এক ফর্মায় ছাপানো সেই কবিতা গোপনে বিলি করেন মোহাম্মদ রফিকের ছাত্র-ছাত্রীরা। হাতে হাতে সেই কবিতা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।[১]


তথ্যসূত্র

1.https://www.bbc.com/bengali/news-48847912