২০০০ সালের ভারত-বাংলাদেশ বন্যা
অবস্থান |
|
---|---|
নিহত | ১৫০ + |
ক্ষয়ক্ষতি |
২০০০ সালের বন্যা হল ২০০০ সালে ভারত-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ও বাংলাদেশ-এর খুলনা বিভাগের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ঘটে যাওয়া এক ভয়ঙ্কর বন্যা। [১] হঠাৎ ঘটে যাওয়া এই বন্যায় মানুষ বসত বাড়ি ছেড়ে ত্রান শিবিরে আশ্রয় নেয়।[২]
বন্যার কারণ
[সম্পাদনা]২০০০ সালের বর্ষার মরসুমে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ঘটে।এর ফলে গঙ্গার উপড় নির্মিত ফারাক্কা বাঁধ-এ অতিরিক্ত জল জমা হয়।এর ফলে আগস্ট মাসের শেষের দিকে বাঁধের লকগেট খুলে দিতে বাধ্য হয় বাঁধ কর্তৃপক্ষ। ফলে জমা জল পদ্মা নদী দিয়ে ছুটে আসে এবং পদ্মার শাখা নদী জলঙ্গী নদীতে সেই জল প্রবেশ করে ।এই কারণে জল জলঙ্গী দিয়ে বাহিত হয়ে নদীয়া জেলায় পৌচ্ছায়।এর পর নদীয়ায় জলঙ্গীর বাঁধ ভেঙ্গে ইছামতি নদী হয়ে জলভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা প্লাবিত করে ভয়ঙ্কর বন্যার সৃষ্টি করে। এছাড়া পদ্মা থেকে জল কপোতাক্ষ নদী হয়ে খুলনা বিভাগের বহু জেলা ও বরিশাল বিভাগের দুটি জেলায় বন্যার সৃষ্টি করে।এই এলাকার ইছামতি নদী,কপোতাক্ষ নদী,ভৈরব নদী ,রূপসা নদী,চৈতা নদী ও যমুনা নদী (পশ্চিমবঙ্গ) গুলিতে পলি জমে অগভীর হয়ে যাওয়ায় বন্যার আকার আরও ভয়ঙ্কর হয়।এই বন্যা প্রায় এক মাস স্থায়ী ছিল।
ত্রাণ শিবির
[সম্পাদনা]বন্যার ফলে মানুষ বাড়ি-জমি ফেলে নিকটবর্তী নিরাপদ স্থানে চলে আসতে থাকে ।সরকারি ভাবে বন্যাপীড়িত মানুষের জন্য ত্রাণশিবির খোলা হয়।ভারত ও বাংলাদেশে এই রকম ত্রাণশিবিরের সংখ্যা ছিল কয়েক হাজারের বেশি। ত্রাণশিবিরগুলি খোলা হয় সরকারি প্রতিষ্ঠান বা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে।সরকারি ভাবে বন্যাপীড়িত মানুষের জন্য খাবার ও পানীয় জল পৌছে দেওয়া হয় ত্রান শিবিরে। এছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যেমন,বিভিন্ন স্থানীয় ক্লাব গুলি বন্যাপীড়িত মানুষের কাছে ত্রাণ নিয়ে ছুটে যায়।
ক্ষয়ক্ষতি
[সম্পাদনা]২০০০ সালের বন্যায় ভারতের চার জেলা ও বাংলাদেশের ৯ জেলা ক্ষতিগস্ত হয়েছিল।এর মধ্যে ভারত-এর উত্তর চব্বিশ পরগনা ও বাংলাদেশ-এর সাতক্ষীরা জেলার ক্ষতির পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি।পশ্চিমবঙ্গে ইছামতি নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা গুরুত্ব পূর্ণ সীমান্ত শহর বনগাঁ সম্পূর্ণ ভাবে বন্যায় প্লাবিত হয়। এই বন্যায় ১৫০+ এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।এর মধ্যে সাপের কামড়ে বেশি মৃত্যু ঘটে।মাঠের ফসল সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়ে যায়।গবাদি পশুর মৃত্যু ঘটে।নলকূপ ও নদীর জল দূষিত হয়ে যায় ।ফলে পানীয় জলের অভাব ঘটে।যাতায়াতের সড়কপথ ও রেলপথগুলি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে।বহু সেতু বন্যার জলে স্রোতে ভেঙ্গে যায়।খাদ্যের অভাব দেখা দেয়।পরে বাংলাদেশ সরকারের এক সমীক্ষায় জানা যায়, ৮ লক্ষ মানুষ বন্যায় গৃহহীন হয় ও ৫৮ হাজার পরিবারের ৩১ লক্ষের বেশি মানুষ বন্যায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বন্যা পরবর্তী সময়
[সম্পাদনা]এই বন্যার পরবর্তী সময় ছিলও আরও ভয়ঙ্কর।বন্যাপীড়িত ৬০ হাজার পরিবারের ৯ লক্ষ মানুষ যখন বসত বাড়িতে ফিরে আসে তখন তারা বন্যার ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারে।কারণ বন্যার ফলে বাড়ি গুলি ভেঙ্গে পরেছে,পানীয় জলের উৎস নষ্ট হয়ে গেছে ,খাবারের যোগান নেই ,মাঠের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।অনেকে বন্যার জল চলে যাবার পড়ও ত্রাণ শিবিরে থেকে যায়।কারণ তাদের কাছে বসবাসের জন্য কোনো বাড়ি ও খাদ্যের যোগান ছিল না।বন্যার পর বিভিন্ন রোগ এর প্রাদুর্ভাব ঘটে যা মানুষের জীবনকে করে তুলেছিল বেদনা দায়ক।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ https://www.risingbd.com। "বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইতিহাস"। RisingBD Online Bangla News Portal (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৩।
- ↑ "এক পশলা বৃষ্টিতে হাবুডুবু কৃষ্ণনগর"। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬।