সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনে হস্তক্ষেপ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

২০১৫ সালের ২৬ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী রাষ্ট্র সৌদি আরব পশ্চিম এশিয়াউত্তর আফ্রিকার নয়টি দেশের জোটের নেতৃত্বে ইয়েমেনের সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দে রাব্বুহ মনসুর আল হাদি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাকে সামরিক সমর্থনের লক্ষ্যে ইয়েমেনী গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ শুরু করে। সেই সময় জাতিসংঘের নেতৃত্বে ইয়েমেনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের অগ্রগতি সত্ত্বেও সাংবিধানিক খসড়া ও ক্ষমতা ভাগাভাগি ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাওয়ার পর সরকারী বাহিনী, হুথি বিদ্রোহী ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত হয়। যার ফলে ২০১৪ সালে গোটা দেশে সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর ও পরবর্তী মাসগুলিতে সশস্ত্রবাহিনী হুথি ও তাদের সহযোগী ইউনিটগুলি রাজধানী সানা ও দেশের অন্যান্য অংশের নিয়ন্ত্রণ দখল করে। এর ফলে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হাদি সৌদি আরবকে ইরান- সমর্থিত হুথিদের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ জানায়।

অপারেশন ডিসিসিভ স্টর্ম ( আরবি: عملية عاصفة الحزم ) কোড নামে প্রাথমিকভাবে হুথি বিদ্রোহীদের উপর বোমা হামলা শুরু হয়। পরে একটি নৌ অবরোধ এবং ইয়েমেনে একটি স্থলবাহিনী মোতায়েন করা হয়। [১] সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হুথি মিলিশিয়াদের অবস্থান ও দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি আলী আবদুল্লাহ সালেহের অনুগতদের অবস্থানে আক্রমণ শুরু করে, যারা ইরান সমর্থিত ছিল। মিসর, মরক্কো, জর্ডান, সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতারবাহরাইন থেকে যুদ্ধবিমান এবং স্থলবাহিনী এই অভিযানে অংশ নেয়। জিবুতি, ইরিত্রিয়াসোমালিয়া জোটের জন্য তাদের আকাশসীমা, আঞ্চলিক জল ও সামরিক ঘাঁটি উপলব্ধ করে দেয়।[২]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জোটকে গোয়েন্দা এবং লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করে, যার মধ্যে বিমানের জ্বালানি ও হারিয়ে যাওয়া কোয়ালিশন পাইলটদের অনুসন্ধান ও উদ্ধার করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। [৩] এটি জোট রাষ্ট্রগুলির কাছে আমেরিকার অস্ত্র বিক্রিকেও ত্বরান্বিত করে। [৪] ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, মার্কিন এবং ব্রিটিশ সামরিক কর্মকর্তারা ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন বিমান হামলার কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে ছিল এবং তাদের লক্ষ্যবস্তুর তালিকার অ্যাক্সেস ছিল কিন্তু লক্ষ্য নির্বাচনে তারা জড়িত ছিল না।[৫][৬][৭]

যুদ্ধটি ব্যাপক সমালোচনা লাভ করে এবং ইয়েমেনের মানবিক পরিস্থিতির উপর নাটকীয় খারাপ প্রভাব ফেলে, যা একটি "মানবিক বিপর্যয়" [৮] বা "মানবিক বিপর্যয়ের" পর্যায়ে পৌঁছয়।[৯] এই হামলা জাতিসংঘের সনদের অনুচ্ছেদ ২(৪) এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা সেই প্রশ্নটি একাডেমিক বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। [১০] [১১] [১২] [১৩] এরপর বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী সৌদি আরবকে ইয়েমেনে তার স্বার্থ পর্যালোচনা করার সুযোগ করে দিয়েছে বলে জানা যায়। [১৪]

২০২০ সালের গোড়ার দিকে বলা হয়েছিল যে, সৌদি আরব কোভিড ১৯ মহামারী ও সামরিক পরাজয়ের কারণে ইয়েমেন থেকে প্রস্থানের কৌশল খুঁজছে। [১৫] ২০২২ সালের ৯ মার্চ সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ঘোষণা করে যে, তারা রাজনৈতিক আলোচনা এবং শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টাকে সহজতর করার লক্ষ্যে ১০ মার্চ সকাল ৬ টা থেকে ইয়েমেনের সাথে জোটের সমস্ত শত্রুতা বন্ধ করবে। [১৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Gatten, Emma.
  2. "SOMALIA: Somalia finally pledges support to Saudi-led coalition in Yemen – Raxanreeb Online"। RBC Radio। ৭ এপ্রিল ২০১৫। ৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৫ 
  3. Akbar Shahid Ahmed (১০ আগস্ট ২০১৬)। "Obama Could End the Slaughter in Yemen Within Hours"HuffPost। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০১৬ 
  4. Rosen, James (৭ এপ্রিল ২০১৫)। "U.S. stepping up weapons shipments to aid Saudi air campaign over Yemen"McClatchy DC। ২০১৫-০৪-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৫ 
  5. Graham-Harrison, Emma (১৫ জানুয়ারি ২০১৬)। "British and US military 'in command room' for Saudi strikes on Yemen"The Guardian। ১৬ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  6. Hawkins, Vickie (১৯ জানুয়ারি ২০১৬)। "Bombing hospitals and schools cannot become the new normal"The Guardian। ২০ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. "House of Commons debate, Tuesday 12 January 2016"। publications.parliament.uk (Daily Hansard – Debate, Column 681)। ১২ জানুয়ারি ২০১৬। ২১ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  8. Borger, Julian (৫ জুন ২০১৫)। "Saudi-led naval blockade leaves 20 m Yemenis facing humanitarian disaster"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১৫ 
  9. "Durable ceasefire needed as 'humanitarian catastrophe' leaves millions suffering in Yemen – UN relief chief)"। UN News Centre। ২৮ জুলাই ২০১৫। ২৯ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  10. Nußberger, Benjamin (৫ জানুয়ারি ২০১৭)। "Military strikes in Yemen in 2015: intervention by invitation and self-defence in the course of Yemen's 'model transitional process'": 110–160। ডিওআই:10.1080/20531702.2017.1256565 
  11. "Is the Saudi war on Yemen legal?"IRIN। ৩ এপ্রিল ২০১৫। 
  12. Ferro, Luca; Ruys, Tom (২০১৬)। "Weathering the Storm: Legality and Legal Implications of the Saudi-Led Military Intervention in Yemen": 61–98। ডিওআই:10.1017/S0020589315000536 
  13. "Yemeni Separatists Relinquish Control of Buildings in Aden"The New York Times। Reuters। ১৭ আগস্ট ২০১৯। ২০১৯-০৮-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  14. Ben-Meir, Alon (১৮ এপ্রিল ২০২০)। "The Saudis' War in Yemen Is a Crime Against Humanity"The Globalist। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০২০ 
  15. "Saudi Arabia and the War in Yemen - Riyadh's Retreat"Zenith Magazine। ২১ এপ্রিল ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২০ 
  16. Gambrell, Jon (২৯ মার্চ ২০২২)। "Saudi-led coalition declares unilateral cease-fire in Yemen"Washington Post। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০২২The coalition said it would cease hostilities in the brutal war starting at 6 a.m. Wednesday seeking to create a fertile environment for political talks and to jumpstart peacemaking efforts during the holy Muslim month of Ramadan.