সোনোয়াল কাছাড়ি জনগোষ্ঠী
ভাষা | |
---|---|
অসমীয়া | |
ধর্ম | |
হিন্দু ধর্ম |
সোনোয়াল কাছাড়িরা উজনি আসাম-এর এক ভূমিপুত্র উপজাতি। সোনোয়াল কাছাড়িরা তিব্বত-বর্মী ভাষাভাষী বড়ো-কাছাড়ি মূলের একটি গোষ্ঠী এবং আসামের ধেমাজি, লক্ষীমপুর, তিনসুকিয়া এবং ডিব্রুগড় জেলায় বিস্তারিতভাবে বসবাস করেন। শিবসাগর, যোরহাট, গোলাঘাট, মাজুলী, শোণিতপুর এবং পূর্বভারতের নগাভূমি এবং অরুণাচল প্রদেশ-এর কিছু স্থানেো বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস করতে দেখা যায়।[১]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]আদিমকালে এইরা লোকেরা সোবণশিরি নদীর বালির থেকে সোনা বুটলা কাজ করার কারণেই এরা সোনোয়াল কাছাড়ি নাম পাওয়া বলে কয়েকজন মনে করেন [১]। সোনোয়ালদের মধ্যে মুখ বাগরি আসা এক লোককথার মতে, উজনি আসামে থাকা কয়েকঘর সোনোয়াল কাছাড়ি আউনিআটীয় গোঁসাঁই কেশব দেবগোস্বামীকে অলৌকিক গুণসম্পন্ন লোক জ্ঞান করে বাঁশের চোঙায় একচোঙা সোনা দক্ষিণা দিয়ে তাঁর কাছে শরণ নেওয়ার জন্য এরা কাছাড়ি সোনোয়াল কাছাড়ি হয় বলে কয়েকজন মনে করে। বর্তমান এদের জনসংখ্যা প্রায় আড়াই লাখের (২,৫০,০০০) কাছাকাছি।
বংশমূল
[সম্পাদনা]সোনোয়াল কাছাড়িরা নিজেদের মহাবীর বলীরাজা, প্রহ্লাদ, ভগদত্ত, বাণরাজা, নরকাসুর এবং ভাস্কর বর্মন ইত্যাদির উত্তর পুরুষ বলে ভাবেন।[১] বলীরাজা, বিষ্ণুপুরাণের মতে যাকে ভগবান বিষ্ণু পাতাল পুরীতে নির্বাসন দিয়েছিলেন, তাঁকেই সোনোয়াল কাছাড়িরা তাঁদের আদিরাজা বলে গন্য করেন। (সোনোয়াল কাছাড়িদের হাইদাং হুচরি গানে এই কথার উল্লেখ পাওয়া যায়)। চুতিয়াদের আগে শদিয়া অঞ্চলে যে কোনো এক সময় সোনোয়াল কাছাড়িদের রাজ্য ছিল সেই কথা তাম্রেশ্বরী মন্দির, কেঁচাইখাতী থান এবং নদ-নদীগুলির নামগুলি প্রমাণ করে। ডঃ লীলা গগৈর মতে ১১ এবং ১২ শতাব্দীর মধ্যে মানিক নামের সোনোয়াল কাছাড়িদের একজন রাজা শদিয়া রাজ্যে রাজত্ব করেছিলেন। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ বেণুধর শর্মার মতে শদিয়ার কৌণ্ডিল্য বা কুণ্ডিলকে সোনোয়াল কাছাড়িরা ‘হালালী’ করেছিল।
যদিও সমস্ত কাছাড়িদের মূল একটাই তবু কাছাড়ির কয়েকটি গোষ্ঠী হচ্ছে -
- বড়চা
- ধ্যান বা দেহান
- লাথচা
- থাওথেনচা
- হাফলংচা এবং
- হাম্মুচা।
সোনোয়াল কাছাড়িরা হাম্মুচা গোষ্ঠীর উত্তর পুরুষ।
সোনোয়াল কাছাড়িদের মধ্যে প্রচলিত লোককথায় এমনধরনের বিবরণ পাওয়া যায়ঃ
সোনোয়াল কাছাড়িদের আরাধ্য দেবতা খ্রীং রাজার আশীর্বাদে মানিকের স্ত্রীর গর্ভে একটি মেকুরীর জন্ম হয়। মেকুরীটি সরিয়হর দুলিতে রাখায় আচর্য্যকর ভাবেন এটি সোনালী রঙের হয়ে পড়ে। খ্রীং রাজার থেকে এমন স্বর্গীয় উপহার লাভ করে মানিক হালালীর রাজা হতে সক্ষম হয়। কালক্রমে রাজা মানিকের নাতি মুকুতা হালালী রাজ্যের রাজা হয়। এটি নিশ্চিত যে উত্তর এবং উত্তরপূর্ব দিকের থেকে অতি কমেও দুটি জনপ্রবাহ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাত প্রবেশ করেছিল। একটি জনপ্রবাহ তিস্তা, ধরলা এবং সোনকোষ নদীর উপত্যকা দিয়ে বেঙ্গল এবং আসামে প্রবেশ করেছিল এবং অন্যটি উজনী আসামের সোবণশিরি, দিবাং ও দিহং নদীর উপত্যকা দিয়ে আসামে উপত্যকায় প্রবেশ করেছিল এবং সোনোয়ালরা সম্ভবতঃ দ্বিতীয় জনপ্রবাহে আসামে প্রবেশ করেন।
বংশ বৃক্ষ
[সম্পাদনা]সোনোয়াল কাছাড়িদের হাইদাং হুচরীর মতে সোনোয়ালদের প্রধানভাবে সাত খেলীয়া চৌদ্দ বংশ এবং ছাপ্পান্নটা সঁচ বা পরিবার হতে হয়।
- উজনীকুচীয়া,
- নামনীকুচীয়া,
- অমরাবমীয়া,
- তিপমীয়া,
- ধুলীয়াল,
- চিরিপুরীয়া এবং
- বালেখায়িয়ারী।
এই সাত খেলের অন্তর্গত বংশগুলি হল –
- মদনীয়াল,
- মানিকীয়াল,
- হুগ্রাল,
- মুক্তাল,
- এজমাল,
- ফরমাল,
- ছোট-সাজোয়াল,
- বর-হাজোবাল,
- লথিয়াল,
- চতীয়াল,
- কুমরাল,
- বরমাল,
- দংরাল এবং
- ডিঙীয়াল।
মিরি, ডফলা, বড়ো, রাভা, ডিমাচা, নগা, শ্যাম, কোচ এবং আহোম ইত্যাদি মূলের থেকে সোনোয়াল কাছাড়িতে অন্তর্ভুক্তি হওয়া আরো নয়টা বংশ পাওয়া যায়। সেগুলি হল-
- মুখরাল
- হুকরাল
- ডেকরাল
- চুঙীয়াল
- চুনীয়াল
- ধনশিরীয়াল
- হাকোবাল
- ধাদুমীয়াল এবং
- দলঙ্গ্রীয়াল
উপর উল্লেখ করা বংশগুলি সর্বমোট ১০৮ টা সঁচ বা পরিবারে বিভক্ত হয়েছে। পরিবারগুলির নাম নিচে উল্লেখ করা হল।
|
|
|
|
|
বংশ এবং সঁচগুলির মধ্যে রক্তের সম্বন্ধ থাকা সোনোয়ালদের মধ্যে একই সঁচ এবং বংশের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। একবিবাহ প্রথা সোনোয়াল সমাজে প্রচলিত নিয়ম যদিও একাধিক বিবাহ নিষিদ্ধ হয় না। দুই পক্ষের সম্মতি মর্মে বিপত্নীক বা বিধবারা পুনর্বিবাহ করায় বাধা নেই। সোনোয়াল কাছাড়িরা তাঁদের নামের পর সঁচের নাম প্রতিসর্গ হিসাবে ব্যবহার করার ছাড়াও শইকীয়া, বরশইকীয়া, হাজারিকা, বড়া, বরুয়া, ডেকাবরুয়া, দাস ইত্যাদি উপাধিও ব্যবহার করেন। সোনোয়াল কাছাড়িদের বর্তমান নিজ ভাষা না থাকলেও তাঁদের মধ্যে কথিত উপভাষা প্রচলিত দেখা যায়। সোনোয়াল কাছাড়িরা প্রধানভাবে অসমীয়া ভাষা ব্যবহার করলেও তাঁরা ব্যবহার করা উপভাষার বহু শব্দ অভিধানে পাওয়া যায় না।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ সোনোয়াল কাছাড়িদের বিষয়ে শ্রীমন্ত ডট নেটর তথ্য ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ জুলাই ২০০৯ তারিখে আহরণ ৭ মার্চ, ২০১২