সুলতানা সারওয়াত আরা জামান
সুলতানা সারওয়াত আরা জামান | |
---|---|
জন্ম | ৯ জুন ১৯৩২ |
মৃত্যু | ২২ মার্চ ২০২০ ঢাকা, বাংলাদেশ | (বয়স ৮৭)
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
শিক্ষা | পিএইচডি |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমোরি বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | শিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী, লোকহিতৈষী |
দাম্পত্য সঙ্গী | কাজী নূরুজ্জামান |
আত্মীয় | জামাল নজরুল ইসলাম (ভাই) |
সুলতানা সারওয়াত আরা জামান (যিনি সুলতানা জামান নামেই অধিক পরিচিত; ৯ জুন ১৯৩২ - ২২ মার্চ ২০২০) হলেন একজন বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী ও লোকহিতৈষী। তিনি মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করে।[১]
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]সুলতানা জামান ১৯৩২ সালের ৯ জুন ঝিনাইদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার পিতার নাম খান বাহাদুর মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ও মাতার নাম রাহাত আরা বেগম। এই দম্পতির আট সন্তানের মধ্যে সুলতানা জামান চতুর্থ। ১৯৩৮ সালে কলকাতার ইংরেজি মাধ্যম ডাইওসেসন স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৯৪৩ সালে বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুলে ভর্তি হন। ভারত বিভাগের পর তাদের পরিবার চট্টগ্রামে চলে আসে।[১]
তিনি ১৯৪৮ সালে অপর্ণাচরণ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে হলিক্রস কলেজে ভর্তি হন ও সেখান থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন এবং সেখানে এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭৫ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।[১]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]সুলতানা জামান ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯২ সালের এপ্রিল থেকে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় মাসের খন্ডকালীন ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবেও শিক্ষকতা করেন।[২] ২০০০ সালে তিনি শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।[২] ২০০৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে তাকে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।[১]
সমাজসেবা
[সম্পাদনা]১৯৭২ সালে সুলতানা জামান ছিন্নমূল শিশু ও নারীদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে মালিবাগের গুলবাগে দীপশিক্ষা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, শিক্ষাদান এবং প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে তিনি সোসাইটি ফর দ্য কেয়ার অ্যান্ড এডুকেশন ফর মেন্টালি রিটার্ডেড চিলড্রেন নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীতে সুইড বাংলাদেশ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৮৪ সালে তিনি প্রতিবন্ধী বিশেষ করে প্রতিবন্ধী শিশু ও নারীদের নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।[১]
তার প্রচেষ্টায় ১৯৯৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে বিশেষ শিক্ষায় প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে স্পেশাল এডুকেশন বিভাগ চালু হয়।[৩] এ উদ্যোগটি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম।[২]
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন
[সম্পাদনা]ব্যক্তিগত জীবনে সুলতানা জামান ১৯৫০ সালে সেনা কর্মকর্তা কাজী নূরুজ্জামানের (বীর উত্তম) সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।[২] এই দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে ১৯৭৯ সালে একমাত্র ছেলে মৃত্যুবরণ করে। নূরুজ্জামান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭নং সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৪] সুলতানা জামানের ভাই জামাল নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও বিশ্বতত্ত্ববিদ ছিলেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]- আন্তর্জাতিক রোটারি পুরস্কার (১৯৮৩ ও ১৯৮৯)
- হেনরি কেসলার পুরস্কার (১৯৯৬)
- সাপ্তাহিক অনন্যা পুরস্কার (১৯৯৬)
- আনোয়ারা ট্রাষ্ট স্বর্ণপদক
- বেগম রোকেয়া পদক (২০০৮)
মৃত্যু
[সম্পাদনা]২২ মার্চ ২০২০ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।[৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "কীর্তিময়ী এক নারীর কথা"। প্রথম আলো। ২০১৮-১২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১৯।
- ↑ ক খ গ ঘ "A unique achievement"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ অক্টোবর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১৯।
- ↑ "সমাজের বোঝা নয় প্রতিবন্ধীরাও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে"। যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনে কাজী নুরুজ্জামানের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হচ্ছে"। বাংলানিউজ২৪.কম। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১৯।
- ↑ "Demise of an iconic scholar and activist"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৪-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১১।