সরোজ ঘোষ
সরোজ ঘোষ | |
---|---|
জন্ম | [১] | ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৫
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নিয়োগকারী | জাতীয় বিজ্ঞান সংগ্রহালয় পরিষদ |
পরিচিতির কারণ | বিজ্ঞানকে জনসাধারণ্যে জনপ্রিয় করণ, সংগ্রহালয় সংস্থাপক |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | সায়েন্স সিটি,কলকাতা . সংসদীয় সংগ্রহালয়,সংসদীয় সংগ্রহালয় নতুন দিল্লি[২] রাষ্ট্রপতি ভবন সংগ্রহালয় ,নতুন দিল্লি, ভারত |
উপাধি | পিএইচডি |
দাম্পত্য সঙ্গী | কৃষ্ণারতি ঘোষ |
পিতা-মাতা | সুশীলকুমার ঘোষ (পিতা) |
পুরস্কার | পদ্মশ্রী , পদ্মভূষণ |
ড. সরোজ ঘোষ (ইংরেজি: Dr.Saroj Ghose) (জন্ম:১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৫ - মৃত্যু: ১৭ মে ২০২৫) বিজ্ঞানকে জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয় করার অন্যতম ব্যক্তিত্ব ও সংগ্রহালয় সংস্থাপক। তিনি ভারতের সায়েন্স সেন্টার মুভমেন্ট এর পথিকৃৎ। [৩] তিনি বিড়লা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামের প্রাক্তন অধিকর্তা ও জাতীয় বিজ্ঞান সংগ্রহালয় পরিষদের প্রথম মহাঅধিকর্তা ছিলেন। বিজ্ঞানকে জনসাধারণের মধ্যে লোকায়িত তথা জনপ্রিয় করার অন্যতম ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৯২ -১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ সময়ে প্যারিসের আন্তর্জাতিক সংগ্রহালয় পরিষদের তথা 'ইন্টারনেশন্যাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামস'র সভাপতি ছিলেন। জনসাধারণের মধ্যে,বিশেষ করে ছোটদের মাঝে বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি বিষয় বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্য 'পদ্মশ্রী' ও 'পদ্মভূষণ' সম্মানে ভূষিত হন। [৪]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]ড. সরোজ ঘোষের জন্ম ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায়। পিতার নাম সুশীলকুমার ঘোষ। তিনি কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতক হন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। কল্যাণকামী বিজ্ঞানীরা সাধারণত মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন অজ্ঞতা দূর করে তাদের বিজ্ঞানমনস্ক হিসাবে গড়ে তুলতে চান। ড.ঘোষও সেইরূপ স্বপ্ন ফেরী করতেন ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ হতে নিজের শিক্ষালাভান্তে।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]তিনি ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বিড়লা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামে অধিকর্তার দায়িত্ব নেন। সেই বৎসরেরই তিনি নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ আশ্রম বিদ্যালয়ে ‘Mobile Science Museum’ বর্তমানে 'Mobile Science Exhibition' শুরু করেন। বর্তমানে এইরকম ৪৮ টি প্রদর্শনী সারা দেশে প্রদর্শিত হয়। লিমকা বুক অফ রেকর্ডস থেকে এই প্রদর্শনীতে ভারতের বৃহত্তম এবং দীর্ঘতম সময় ধরে চলা non-formal Science Education Programme হিসাবে অভিহিত করেছে। তিনি ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ন্যাশানাল কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজিয়াম তথা জাতীয় বিজ্ঞান সংগ্রহালয় পরিষদ প্রতিষ্ঠার পিছনে বৃহত্তর অবদান রেখেছিলেন। মূলত তারই উদ্যোগে ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ৫০ একর জায়গাজুড়ে কলকাতায় তৈরি হয় ভারতীয় উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ সায়েন্স সিটিবা "বিজ্ঞাননগরী"। [৩] বিজ্ঞাননগরী নামকরণে তার অভিমত ছিল -
"একটি শহরের যা যা থাকে ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, রেলগাড়ি, রেস্তরাঁ,অডিটোরিয়াম ইত্যাদি সবই থাকবে,কেবল থাকবে না মানুষের বসবাস। থাকবে বিজ্ঞানের নানা শাখার বিভিন্ন গ্যালারিসমন্বিত বিজ্ঞানের এক বিশাল জগৎ। সব কিছু মিলে দর্শকের মনে হবে সে যেন বিজ্ঞানশহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে"
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সাধারণ মানুষের কাছে বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা চির প্রশংসনীয়। পরবর্তীতে সারা দেশের বহু স্থানে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।
অবদান
[সম্পাদনা]কলকাতার বিজ্ঞাননগরী ছাড়াও যে যে উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞান কেন্দ্র ও সংগ্রহালয় ড.ঘোষের পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে গঠিত হয় সেগুলি হল -
- গুজরাত সায়েন্স সিটি,আহমেদাবাদ
- সংসদীয় সংগ্রহালয়,নতুন দিল্লি
- রাষ্ট্রপতি ভবন সংগ্রহালয়,নতুন দিল্লি
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ও সাহিত্যকর্মের উপর নির্মিত সর্বাধুনিক সংগ্রহালয়, বোলপুর।
সম্মাননা
[সম্পাদনা]ড.ঘোষ ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার অ্যাসোসিয়েশন অব সায়েন্স এণ্ড টেকনোলজি কেন্দ্রের ফেলো নির্বাচিত হন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অবদানের জন্য ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে কবিগুরুর জীবন ও সাহিত্যকর্মের উপর নির্মিত সর্বাধুনিক সংগ্রহালয়ের জন্য পদ্মভূষণ লাভ করেন।
জীবনাবসান
[সম্পাদনা]ভারতের বিজ্ঞান সংযোগ ক্ষেত্রের অন্যতম পুরোধা তথা বিজ্ঞান জাদুঘর আন্দোলনের বিশিষ্ট ব্যক্তি সরোজ ঘোষ প্রয়াত হয়েছেন। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। আমেরিকার সিয়্যাটলে ১৭ মে ২০২৫ তারিখে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সায়েন্স মিউজিয়মস (এনসিএসএম) সূত্রে এ খবর জানা গিয়েছে। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা যায়, সরোজের ইচ্ছানুসারে, তাঁর দেহ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান গবেষণার কাজে দেওয়া হয়েছে। সরোজ এনসিএসএম-এর প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক ছিলেন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন। ভারতের বিজ্ঞান কেন্দ্র ও জাদুঘরের বিস্তারেও তাঁর ভূমিকা স্মরণীয়। সরোজ ভারত জুড়ে বিজ্ঞান জাদুঘরের একটি বিকেন্দ্রীকৃত মডেলের বাস্তবায়ন ঘটান, যা বিজ্ঞানকে বহু জনের কাছে সহজে পৌঁছে দিয়েছিল। কলকাতার সায়েন্স সিটি, দিল্লির ন্যাশনাল সায়েন্স সেন্টার এবং মুম্বইয়ের নেহরু সায়েন্স সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানের রূপরেখা গড়ে তোলায় তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ‘পদ্মভূষণ’ সরোজ প্যারিসের ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়মস (আইসিওএম)-এরও সভাপতি ছিলেন। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী শিক্ষাবিদ। অবসরের পরেও দীর্ঘদিন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকে পরামর্শ দিয়েছেন জাদুঘর উন্নয়ন, ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং বিজ্ঞান সংযোগ কৌশল নিয়ে। এনসিএসএম থেকে অবসরের পরে কলকাতার টাউন হল মিউজিয়ম, দিল্লির পার্লামেন্ট মিউজিয়ম, রাষ্ট্রপতি ভবন মিউজিয়ম থেকে আমদাবাদের গুজরাত সায়েন্স সিটির বিকাশে সরোজের অবদান গুরুত্বপূর্ণ।[৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Padmabhusan Dr Saroj Ghose, Former President of ICOM Paris (1992-98)." Web. <http://www.inc-icom.org/saroj_ghose.html>.
- ↑ "সংসদীয় সংগ্রহালয়,নতুন দিল্লি,ভারত - Official Website - About Us." Parliament Museum. Web. 31 Oct. 2010. <http://www.parliamentmuseum.org/about_us.html>.
- ↑ ক খ ""বিজ্ঞানকে করতে চেয়েছেন জনপ্রিয়, আজ সায়েন্স সিটির প্রতিষ্ঠাতা ডঃ সরোজ ঘোষের জন্মদিন""। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৩।
- ↑ "National Awards for Popularisation of Science" Indian Science Communication Society (ISCOS). Retrieved 31 October 2010.
- ↑ "প্রয়াত সরোজ ঘোষ"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০২৫।