পরিসংখ্যান
পরিসংখ্যান বা রাশিবিজ্ঞান (ইংরেজি ভাষায়: Statistics) এক ধরনের গাণিতিক বিজ্ঞান (Mathematical Science) যা মূলত উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা ও উপাত্ত সহজে পরিবেশন নিয়ে কাজ করে।[১] বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক এবং আরো নানা শাখায় পরিসংখ্যানের ব্যবহার রয়েছে। উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তা থেকে তথ্যসমৃদ্ধ সিদ্ধান্ত (informed decision) গ্রহণে পরিসংখ্যানের ভূমিকা অপরিহার্য। যে কোনো ধরনের গবেষণার জন্য পরিসংখ্যান এর মৌলিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তবে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে পরিসংখ্যানের অপব্যবহারও হয়ে থাকে।
কর্মপরিধি
[সম্পাদনা]যারা পরিসংখ্যানের চর্চা করেন তাদেরকে সাধারণভাবে পরিসংখ্যানবিদ বলা হয়। পরিসংখ্যানের সমস্যা গুলো সাধারণত কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা সমষ্টি নিয়ে আবর্তিত হয়। তথ্যের প্রাপ্যতা বা ব্যবস্থাপনা যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে সেই সমষ্টির প্রত্যেককে নিয়ে অথবা তার একটা অংশকে নিয়ে কোন চয়ন পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করা হয়।
উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
[সম্পাদনা]পরিসংখ্যানের ইংরেজি 'Statistics' শব্দটি খুব সম্ভবত ল্যাটিন শব্দ statisticum collegium, ইতালীয় শব্দ statista বা জার্মান শব্দ statistik হতে উৎপত্তি হয়েছে। 'Statuss' এবং 'Statistik' শব্দের অর্থ রাষ্ট্র আর 'Statista' শব্দের অর্থ রাষ্ট্রের কার্যাবলী । এ থেকে বুঝা যায় যে রাষ্ট্রের কাজ পরিচালনা থেকেই পরিসংখ্যানের উৎপত্তি হয়েছে । রাষ্ট্রের বিভিন্ন তথ্য যেমন - লোকসংখ্যা, রাজ্যবসের পরিমাণ, জন্মমৃত্যু প্রভৃতি হিসাবের জন্য এটি ব্যবহৃত হত।
বাংলায় ইংরেজি 'Statistics' শব্দের প্রধানত দুইটি পরিভাষা রয়েছে। ভারতে পরিসংখ্যানের জনক বলে খ্যাত প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশ ইংরেজি 'Statistics' এর বাংলা করেন ‘রাশিবিজ্ঞান’। অন্যদিকে বাংলাদেশে পরিসংখ্যানের জনক কাজী মোতাহার হোসেন ইংরেজি 'Statistics' এর পরিভাষা হিসেবে বাংলায় ‘পরিসংখ্যান’ নামে একটি নতুন শব্দ সৃষ্টি করেন। ২০১০ সালে প্রকাশিত তালিকায় আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান সংস্থা ‘পরিসংখ্যান’ শব্দটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। [২]
পরিসংখ্যানের শাখা
[সম্পাদনা]১-গড় ২-মধ্যক ৩-প্রচুরক ৪-আয়তলেখ ৫-অজিভরেখা ৬-গনসংখ্যা ৭-বহুভুজ
পরিসংখ্যানের বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]- পরিসংখ্যানে সংখ্যাসূচক প্রকাশ আবশ্যক।
- পরিসংখ্যানে হচ্ছে তথ্যের সমষ্টি।
- পরিসংখ্যানের অনুসন্ধান কোন একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত হতে হবে।
- পরিসংখ্যান তথ্য বহুবিধ কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়।
- পরিসংখ্যান তথ্য সু-শৃঙ্খলভাবে সংগ্রহ করতে হবে।
- পরিসংখ্যান তুলনাযোগ্য ও সমজাতীয় হতে হবে।
- পরিসংখ্যান প্রাক্কলনে যুক্তি-সঙ্গত ও পরিমাণে সঠিকতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
পরিসংখ্যানের গুরুত্ব
[সম্পাদনা]প্রাচীণ কালে পরিসংখ্যানের ব্যবহার কেবলমাত্র রাষ্ট্রীয় কার্যাদি পরিচালনার মধ্যে সীমিত থাকলেও বর্তমানে এর ব্যবহার মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিস্তৃত। মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি পরিসংখ্যানের বিভিন্ন কলা- কৌশলকে অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহারের দ্বার উন্মোচন করেছে। পরিসংখ্যান আধুনিক মানব সভ্যতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিরুপ ভূমিকা পালন করছে,তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
- মানব কল্যাণে পরিসংখ্যান
- প্রাতিষ্ঠানিক নীতি নির্ধারণে
- পূর্বাভাস প্রদানে
- জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ ও মূল্যায়নে
- রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রে
- সামাজিক গবেষণায়
- ব্যবসা-বাণিজ্যে
- অর্থনৈতিক গবেষণায়
- রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়নে
- বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায়
- বিভিন্ন চলকের মধ্যে কার্যকর সম্পর্ক নির্ণয়
- অতীত জ্ঞান অভিজ্ঞতা সংরক্ষণে।
- রাষ্ট্রের কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে।
একটি পরিসংখ্যান (একবচন) বা নমুনা পরিসংখ্যান হল একটি নমুনার মান থেকে গণনা করা যেকোন পরিমাণ যা পরিসংখ্যানগত উদ্দেশ্যে বিবেচনা করা হয়। পরিসংখ্যানগত উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে একটি জনসংখ্যার প্যারামিটার অনুমান করা, একটি নমুনা বর্ণনা করা, বা একটি অনুমান মূল্যায়ন করা। পরিসংখ্যান হচ্ছে নমুনা মানের গড় (বা গড়)। প্রদত্ত নমুনার ফাংশন এবং ফাংশন এর মান উভয়ের জন্যে পরিসংখ্যান শব্দটি ব্যাবহার করা হয়। যখন একটি পরিসংখ্যান একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, তখন এটি এমন একটি নাম দ্বারা নির্দেশ করা যেতে পারে যা তার উদ্দেশ্য নির্দেশ করে।
যখন একটি পরিসংখ্যান একটি জনসংখ্যার প্যারামিটার অনুমান করার জন্য ব্যবহার করা হয়, তখন পরিসংখ্যানটিকে একটি অনুমানকারী পরিসংখ্যান বলা হয়। একটি জনসংখ্যার প্যারামিটার হল অধ্যয়নের অধীনে জনসংখ্যার যে কোনও বৈশিষ্ট্য, কিন্তু যখন এটি সরাসরি জনসংখ্যার প্যারামিটারের মান পরিমাপ করা সম্ভব হয় না , তখন পরিসংখ্যানগত পদ্ধতিগুলি একটি নমুনা থেকে গণনা করা হয় যা একটি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে প্যারামিটারের সম্ভাব্য মান অনুমান করতে ব্যবহৃত হয় যা জনসংখ্যা থেকে নেওয়া। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় , নমুনা গড় হল জনসংখ্যা গড়ের একটি নিরপেক্ষ অনুমানকারী । এ থেকে বুঝা যায় নমুনার প্রত্যাশিত মান প্রকৃত জনসংখ্যা গড়ের সমান। [৩]
নমুনা ডেটা সংক্ষিপ্ত করতে একটি বর্ণনামূলক পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়। পরিসংখ্যানগত হাইপোথিসিস পরীক্ষাকরার ক্ষেত্রে একটি টেস্ট পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়। মনে রাখবেন যে একটি একক পরিসংখ্যান একাধিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে - উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নমুনা গড় জনসংখ্যার গড় অনুমান করতে, একটি নমুনা ডেটা সেট বর্ণনা করতে বা একটি অনুমান পরীক্ষা করতে পরিসংখ্যান ব্যবহার করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ https://www.britannica.com/science/statistics
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ Kokoska 2015।