শাহ কুতুব উদ্দিন
শাহ কুতুব উদ্দিন | |
---|---|
জন্ম | ১৯৩৮ |
মৃত্যু | ২০ মে ২০২০ |
মৃত্যুর কারণ | করোনা ভাইরাস |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশী |
মাতৃশিক্ষায়তন | |
প্রতিষ্ঠান | শিক্ষক ও অধ্যক্ষ বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | গুলহায়ে আকিদত কাব্যগ্রন্থ |
পিতা-মাতা |
|
শাহ মাওলানা কুতুব উদ্দিন বাংলাদেশের একজন পীর, ইসলামি পন্ডিত ও মুহাদ্দিস এবং আরবি ভাষাবিদ ছিলেন।[১] তিনি নানা স্থানে ওয়াজ করার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।[২] তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি মাওলানা মীর মোহাম্মদ আখতার কর্তৃক বাহারুল উলুম উপাধি লাভ করেন।[৩] ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন।[৪]
জন্ম ও পরিচয়
[সম্পাদনা]কুতুব উদ্দিন চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের অন্তর্গত সুফি মিয়াজি পাড়ায় ১৯৩৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন, তিনি চুনতি হাকিমিয়া আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন এবং মাতার নাম রায়হানাহ বেগম।[৫]
শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]কুতুব উদ্দিন তার পিতা-মাতার নিকট প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে চুনতি হাকিমিয়া সিনিয়র মাদরাসায় ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে তিনি এই মাদ্রাসা থেকে দাখিল (তৎকালীন ডিগ্রি হাফতুম) পাশ ও ১৯৫৫ সালে আলিম পাশ (তৎকালীন ছুয়াম ডিগ্রি) করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি ফাজিল শ্রেণিতে (তৎকালীন উলা ডিগ্রি) ১ম বিভাগে ৫ম স্থান দখল করেন। এরপর তিনি চন্দনপুরার দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। ১৯৫৯ সালে কামিল শ্রেণিতে হাদিস বিভাগে ১ম স্থান অর্জন করে স্বর্ণপদক লাভ করেন। এরপর পূর্ব পাকিস্তান মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে গবেষণা বৃত্তি লাভ করে, তবে তিনি পারিবারিক কারণে সেটি গ্রহণ করতে পারেনি।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]কুতুব উদ্দিন ১৯৬০ সালে সাতকানিয়ার রসুলাবাদ সিনিয়র মাদরাসায় জুনিয়র শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন।[৬] তার কর্মদক্ষতার জন্য তিনি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিয়োজিত হন। ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে দায়িত্বরত ছিলেন। এরপরে ১৯৮৭ সাল থেকে দুই বছর বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে, ১৮৮৯ সালের ১ জুন তিনি এই মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ নিয়োজিত হন, ১৯৯৭ সালে তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[৭] ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন। ২০০৩ সালে অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পরেও অবৈতনিকভাবে মাদ্রাসায় বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ পাঠদান করতেন। এছাড়াও মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উবায়দুল হকের মৃত্যুর পরে ২০০৭ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের এবং ২০০৯ সাল থেকে আমৃত্যু ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শরিয়াহ সুপারভাইজরী কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে আমৃত্যু পর্যন্ত বায়তুশ শরফের পীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৮] এছাড়াও নানা শিক্ষা কার্যক্রম ও জনকল্যাণমূলক কাজের সাথে জড়িত ছিলেন।
লিখিত অবদান:
মাওলানা কুতুব উদ্দিন সাহেব একজন কবি ও আবৃত্তিকার ছিলেন। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সভা-সেমিনারে আরবি, উর্দু ও ফারসি ভাষায় স্বরচিত কবিতা পাঠ করেছেন। তার লেখালেখির মধ্যে থেকে ৮টি বই গ্রন্থাকারে প্রকাশ পেয়েছে। তার লিখিত গুলহায়ে আকিদত নামক কাব্যগ্রন্থে ৫০০টি দুর্লভ কবিতা সংগ্রহ করা হয়েছে।
তার সম্পর্কে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আহসান সাইয়েদ বলেন,
“ | আরবি ভাষায় তাঁর পাণ্ডিত্য সর্বজন প্রশংসিত। তিনি এমন সহজ সাবলিলভাবে অনর্গল আরবিতে কথা বলেন এবং লিখেন যা দেখলে মনে হয় আরবি যেন তাঁর মাতৃভাষা। একই সাথে উর্দু এবং ফারসি ভাষায়ও তিনি সমান পারদর্শী। তাফসির, হাদিস, ফিকহ ও বালাগাত বিষয়ে তাঁর রয়েছে গভীর জ্ঞান। | ” |
— “বাহরুল উলূম শাহসুফি হযরত মওলানা মুহাম্মদ কুতুব উদ্দিন (রহ.)” প্রবন্ধ, মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ |
মৃত্যু
[সম্পাদনা]কুতুব উদ্দিন ২০২০ সালের ২০ মে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।[৯] মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিলো ৮২ বছর, এবং তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও ছয় কন্যাকে রেখে মৃত্যুবরণ করেন।[১০]
পুরস্কার
[সম্পাদনা]তিনি তার সেবা জীবনে শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। এগুলো:
- ১৯৯৮ সালে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান’ (অধ্যক্ষ), জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ১৯৯৮ কর্তৃক
- ২০২০ সালে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান’ (অধ্যক্ষ), শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Azadi, Dainik (২০২২-০৫-২০)। "বায়তুশ শরফের পীর শাহ্ মাওলানা কুতুব উদ্দিন (রহ.)"। দৈনিক আজাদী (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমূক্ত উন্নত সমাজ গঠনে মাদরাসা শিক্ষার বিকল্প নেই -পীর সাহেব বায়তুশ শরফ আল্লামা কুতুব উদ্দিন"। DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২১।
- ↑ "বায়তুশ শরফের পীর শাহ মাওলানা মো:কুতুব উদ্দিনের ইন্তিকাল"। The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২১।
- ↑ https://www.risingbd.com। "চট্টগ্রামের পীর মাওলানা কুতুব উদ্দিন আর নেই"। Risingbd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২১।
- ↑ Das, Prianka (২০২১-০১-২০)। "গজ্জালী-এ জমান অধ্যক্ষ আল্লামা মুসলেহ উদ্দিন (রহ.)"। দৈনিক পূর্বদেশ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২১।
- ↑ "বায়তুশ শরফের পীর মাওলানা কুতুব উদ্দিন মারা গেছেন - একুশে পত্রিকা"। www.ekusheypatrika.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২১।
- ↑ "স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বায়তুশ শরফের পীর মাওলানা কুতুব উদ্দিনের জানাজা-দাফন"। ২০২০-০৫-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২১।
- ↑ খালিদ হোসেন, ড. আ ফ ম (১০ জুন ২০২০)। "আল্লামা শাহ কুতুব উদ্দিন রহ."। Daily Nayadiganta। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২১।
- ↑ ব্যুরো, চট্টগ্রাম। "করোনাভাইরাসে বায়তুশ শরফের পীরের মৃত্যু"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০২২-০৯-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২১।
- ↑ "বায়তুশ শরফ দরবারের পীর ও খতিব একই দিন চলে গেলেন"। Bd News 24 (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৯-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২১।