শারদা মেহতা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শারদা মেহতা
শারদা মেহতা
জন্ম(১৮৮২-০৬-২৬)২৬ জুন ১৮৮২
মৃত্যু১৩ নভেম্বর ১৯৭০(1970-11-13) (বয়স ৮৮)
শিক্ষাকলা স্নাতক
মাতৃশিক্ষায়তনগুজরাট কলেজ
পেশাসমাজ সংস্কারক, শিক্ষাবিদ ও লেখক
দাম্পত্য সঙ্গীসুমন্ত মেহতা (বি. ১৮৯৮; মৃ. ১৯৬৮)
সন্তানপ্রেমলীলা মেহতা, সরলা মেহতা, রমেশ সুমন্ত মেহতা, অশোকা মেহতা, ইন্দিরা ভট্ট, সিদ্ধার্থ মেহতা
পিতা-মাতা
  • গোপিলাল মণিলাল ধ্রুব (পিতা)
  • বালাবেন (মাতা)
আত্মীয়বিদ্যাগৌরী নীলকান্ত (দিদি)

শারদা মেহতা (২৬শে জুন ১৮৮২ - ১৩ই নভেম্বর ১৯৭০) ছিলেন একজন ভারতীয় সমাজকর্মী, নারী শিক্ষার প্রবক্তা এবং একজন গুজরাটি লেখক। তিনি সমাজ সংস্কারকদের একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতের আধুনিক গুজরাট রাজ্যের প্রথম দুই নারী স্নাতকদের একজন।[১] তিনি নারী শিক্ষা ও নারী কল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন, বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ এবং একটি আত্মজীবনী লিখেছেন এবং কিছু লেখা অনুবাদ করেছেন।

প্রারম্ভিক জীবন এবং পরিবার[সম্পাদনা]

শারদা মেহতা (ডানে) মহাত্মা গান্ধী (বামে) এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (মাঝে) মহিলা বিদ্যালয়, আহমেদাবাদে, ১৯২০

শারদা মেহতা ১৮৮২ সালের ২৬শে জুন আহমেদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন।[২] তিনি একটি নগর ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা গোপিলাল মণিলাল ধ্রুব এবং মা বালাবেন।[২][৩][৪] শারদা ছিলেন সমাজ সংস্কারক ও কবি ভোলানাথ দিভেটিয়া-র প্রপৌত্রী।[১][২]

তিনি রায়বাহাদুর মগনভাই গার্লস হাই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পরে তিনি মহালক্ষ্মী টিচার্স ট্রেনিং কলেজে অ্যাংলো-ভার্নাকুলার (ইংরেজি এবং স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করে) ক্লাসে যোগ দেন এবং ১৯৮৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন করেন। তিনি গুজরাট কলেজ থেকে ১৯০১ সালে যুক্তিবিদ্যা এবং নৈতিক দর্শনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি এবং তাঁর বড় বোন বিদ্যাগৌরী নীলকান্ত ছিলেন গুজরাটের প্রথম দুই মহিলা স্নাতক।[১][২][৫]

তিনি ১৯৮৯ সালে সুমন্ত মেহতাকে বিয়ে করেন। সুমন্ত তখন একজন ডাক্তারি ছাত্র এবং শারদার চার বছরের উর্ধ্বতন ছিলেন।[১][৫] পরে তিনি বরোদা রাজ্যের গায়কোয়াদের ব্যক্তিগত ডাক্তার এবং একজন সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করেন।[৬]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

সামাজিক কাজ[সম্পাদনা]

শারদা মেহতা সামাজিক সংস্কারের জন্য কাজ করেছিলেন এবং শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, বর্ণ বিধিনিষেধের বিরোধিতা, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ এবং ভারতীয় স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি মহাত্মা গান্ধী দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। ১৯০৬ সাল থেকে, তিনি স্বদেশী (দেশীয়) পণ্য এবং খাদি কাপড়ের প্রচার করেন। তিনি ১৯১৭ সালে চুক্তিবদ্ধ দাসত্বের (গিরমিটিয়া) বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ সংগঠিত করেন।[২] তিনি ১৯১৯ সালে নবজীবন সম্পাদনায় ইন্দুলাল যাজ্ঞিককে সাহায্য করেছিলেন।[২][৩]

তিনি ১৯২৮ সালে আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত গুজরাট কিষাণ পরিষদে (গুজরাট কৃষক সম্মেলন) অংশগ্রহণ করেছিলেন।[২] বারদোলি সত্যাগ্রহের মীমাংসার জন্য ডেপুটেশনের সদস্য হিসাবে তিনি বোম্বের গভর্নরের সাথে দেখা করেছিলেন।[২][৭] ১৯২৯ সালে, তিনি আহমেদাবাদের টেক্সটাইল কলগুলিতে শ্রমের অবস্থা সম্পর্কে শ্রম সংক্রান্ত রাজকীয় কমিশনের সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনের সময় তিনি মদের দোকানের সামনে পিকেটিং করেছিলেন।[২][ক] ১৯৩১ সালে, তিনি একটি খাদির দোকান প্রতিষ্ঠা করেন এবং আহমেদাবাদের শেরথার কাছে তাঁর স্বামীর আশ্রমে কাজ করেন। ১৯৩৪ সালে, তিনি আপনা ঘর নি দুকান নামে একটি সমবায় দোকান প্রতিষ্ঠা করেন।[২]

শারদা মেহতা এই বছরগুলিতে আহমেদাবাদ, বরোদা এবং বোম্বেতে বেশ কয়েকটি শিক্ষাগত এবং মহিলা কল্যাণ প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন, পাশাপাশি তিনি বরোদা প্রজা মণ্ডলের (বরোদা পিপলস অ্যাসোসিয়েশন) সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৩১ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত আহমেদাবাদ পৌরসভার সদস্য ছিলেন। ১৯৩৪ সালে, তিনি মহিলাদের কল্যাণের জন্য জ্যোতি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন।[২]

তিনি নারী শিক্ষার প্রবক্তা ছিলেন।[১] তিনি আহমেদাবাদে বনিতা বিশ্রাম মহিলা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।[৩] তিনি এসএনডিটি (কারভে) মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অধিভুক্ত একটি কলেজও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[১]

সাহিত্যিক হিসেবে কর্মজীবন[সম্পাদনা]

শারদা মেহতা হিন্দু গ্রন্থ, সংস্কৃত সাহিত্য এবং অরবিন্দ, সুখলাল সাংভিসর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের রচনা অধ্যয়ন করেছিলেন এবং সেগুলি দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।[২]

তিনি একজন প্রাবন্ধিক, জীবনীকার এবং অনুবাদক ছিলেন।[৫][৯] তিনি দৈনিক এবং পত্রিকায় সামাজিক সমস্যাগুলির উপর প্রবন্ধ লিখেছেন।[২] পুরানোনি বলবোধক বার্তা (১৯০৬) শিশুদের গল্পের একটি সংকলন যা তাদের বিকাশের লক্ষ্যে লেখা।[২][৯] তিনি লিখেছেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল নু জীবনচরিত্র (১৯০৬), এটি ইংরেজ সমাজ সংস্কারক ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জীবনী।[৫][৯] তিনি গৃহব্যবস্থাশাস্ত্র (১৯২০)ও লিখেছেন। বালকোনু গৃহশিক্ষা (১৯২২) হলো শিশু শিক্ষার উপর তাঁর একটি কাজ।[২]

১৯৩৮ সালে, তিনি একটি আত্মজীবনী লিখেছিলেন, তাঁর জনজীবন এবং নারী শিক্ষার জন্য তার প্রচেষ্টা সম্পর্কে। এটির নাম জীবনসম্ভারে (রেমিনিসেনসেস: দ্য মেমোয়ার্স অফ শারদাবেন মেহতা)।[৫][৯][১০] এই কাজটি ১৮৮২ থেকে ১৯৩৭ সময়কালকে ধরে রেখেছে। এতে সামাজিক, ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নারী জাগরণ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।[৯][১১]

শারদা মেহতা তাঁর বোনের সাথে রমেশ চন্দ্র দত্তের বাংলা উপন্যাস সংসার ( দ্য লেক অফ পামস, ১৯০২) অনুবাদ ক'রে সুধাহাসিনী (১৯০৭) নাম দেন,[১২] এবং দ্য মহারানী অফ বরোদা (চিমনাবাই দ্বিতীয়) এর পজিশন অফ উইমেন ইন ইণ্ডিয়ান লাইফ (১৯১১) অনুবাদ করেন, এর নাম দেন হিন্দুস্তানমা স্ত্রীওনু সামাজিক স্থান বা হিন্দুস্তান সামাজিক জীবনমা স্ত্রীনু স্থান (১৯১৫)।[১][৫][১৩] তিনি সাঠে আন্নাভাউ-এর উপন্যাসকে বর্ণে কণ্ঠে নামে অনুবাদ করেন।[৯]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

তিনি ১৯৭০ সালের ১৩ই নভেম্বর তারিখে বল্লভ বিদ্যানগরে মারা যান।[১][২]

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

টীকা এবং তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. আইন অমান্য আন্দোলনের সময়, প্রতিবাদকারীরা মদ্যপানের অভ্যাসকে একটি সামাজিক ব্যধি হিসাবে বিরোধিতা করার পাশাপাশি পানীয়ের উপর আবগারি শুল্ক হিসাবে ব্রিটিশ সরকারের অর্জিত আয় হ্রাস করার লক্ষ্যে মদের দোকানের সামনে পিকেটিং করেছিল।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Sujata, Menon (২০১৩)। "An Historical Analysis of the Economic Impact on the Political Empowerment of Women In British India"। Universal-Publishers: 17–18। আইএসএসএন 0974-3537আইএসবিএন 978-1-61233-709-8 
  2. Rajgor, Shivprasad (জানুয়ারি ২০০২)। ગુજરાતી વિશ્વકોશ (গুজরাটি ভাষায়) (1st সংস্করণ)। Gujarat Vishvakosh Trust। পৃষ্ঠা 535–536। ওসিএলসি 248968453 
  3. Geraldine Hancock Forbes (২০০৫)। Women in Colonial India: Essays on Politics, Medicine, and Historiography। Orient Blackswan। পৃষ্ঠা 124–142, 173। আইএসবিএন 978-81-8028-017-7 
  4. Rameshwari Devi; Romila Pruthi (১৯৯৮)। Women and the Indian Freedom Struggle: Sarojini Naidu। Pointer Publishers। পৃষ্ঠা 249। আইএসবিএন 978-81-7132-164-3 
  5. "લેખિકા-પરિચય" [Introduction of Women Writers]। વીસમી સદીનું ગુજરાતી નારીલેખન (গুজরাটি ভাষায়) (1st সংস্করণ)। Sahitya Akademi। ২০০৫। পৃষ্ঠা 349। আইএসবিএন 8126020350ওসিএলসি 70200087 
  6. William T. Pink; George W. Noblit (৬ জানুয়ারি ২০১৭)। Second International Handbook of Urban Education। Springer। পৃষ্ঠা 390–391। আইএসবিএন 978-3-319-40317-5 
  7. Chatterjee, Ramananda (১৯৪২)। "The Modern Review"। Prabasi Press Private Limited: 118। 
  8. Vijailakshmi, Usha R. (২০১২)। "Gandhi's Leadership and Civil Disobedience Movement in Mumbai, 1930: Events and Inferences" (CD-ROM)Humanities and Social Sciences Review1 (2): 383–391। আইএসএসএন 2165-6258 
  9. Jani, Balvant (১৯৮৮)। Encyclopaedia of Indian Literature: K to NavalramSahitya Akademi। পৃষ্ঠা 2658–2659। আইএসবিএন 978-0-8364-2423-2 
  10. Gouri Srivastava (২০০০)। Women's Higher Education in the 19th Century। Concept Publishing Company। পৃষ্ঠা 157। আইএসবিএন 978-81-7022-823-3 
  11. Chavda, V. K. (১৯৮২)। Modern Gujarat। New Order Book Company। পৃষ্ঠা 52, 62। 
  12. Meenakshi Mukherjee (২০০৯)। An Indian for All Seasons: The Many Lives of R.C. Dutt। Penguin Books India। পৃষ্ঠা 275–276। আইএসবিএন 978-0-14-306789-4 
  13. Bhatt, Pushpa। "વિદ્યાગૌરી નીલકંઠ"gujaratisahityaparishad.com (গুজরাটি ভাষায়)। Gujarati Sahitya Parishad। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০১-২১