বিষয়বস্তুতে চলুন

রুসি মোদি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রুসি মোদি
ক্রিকেট তথ্য
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম পেস
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক২২ জুন ১৯৪৬ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট১৩ নভেম্বর ১৯৫২ বনাম পাকিস্তান
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১০ ১০৫
রানের সংখ্যা ৭৩৬ ৭,৫২৯
ব্যাটিং গড় ৪৬.০০ ৫৩.০২
১০০/৫০ ১/৬ ২০/৩৯
সর্বোচ্চ রান ১১২ ২৪৫*
বল করেছে ৩০ ২,৪২৩
উইকেট ৩২
বোলিং গড় ৩৮.৩১
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৫/২১
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২৯
উৎস: ক্রিকইনফো, ২৩ আগস্ট ২০১৮

রুস্তমজী শেরিয়ার রুসি মোদি (উচ্চারণ; গুজরাটি: રૂસી મોદી; জন্ম: ১১ নভেম্বর, ১৯২৪ - মৃত্যু: ১৭ মে, ১৯৯৬) বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫২ সময়কালে ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মুম্বইয়ের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম পেস বোলিং করতে পারতেন রুসি মোদি

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

১৭ বছর বয়সে বোম্বে পঞ্চদলীয় প্রতিযোগিতার খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন। তন্মধ্যে, অভিষেক খেলাতেই সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেছেন। ১৯৪৩-৪৪ মৌসুম থেকে ১৯৪৪-৪৫ মৌসুমে রঞ্জী ট্রফিতে বোম্বের পক্ষে সাত খেলায় ধারাবাহিকভাবে পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছিলেন। ১৯৪৩-৪৪ মৌসুমে মহারাষ্ট্রের বিপক্ষে ১৬৮ এবং পশ্চিম ভারতের বিপক্ষে ১২৮; ১৯৪৪-৪৫ মৌসুমে সিন্ধুর বিপক্ষে ১৬০, পশ্চিম ভারতের বিপক্ষে ২১০ এবং হোলকারের বিপক্ষে ৯৮ ও ১৫১ রান তুলেন। তন্মধ্যে, ১৯৪৪-৪৫ মৌসুমে মাত্র পাঁচটি রঞ্জী ট্রফির খেলায় ১০০৮ রান নতুন রেকর্ডের সৃষ্টি করে ও চল্লিশ বছরের অধিক টিকেছিল। পরবর্তীতে ৪৪ বছর পর ডব্লিউ.ভি. রমন ১০১৮ রান তুলেছিলেন। সবমিলিয়ে প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয় ১৩৭৫ রান করেন। এ সময় তার বয়স মাত্র ২০ বছর ছিল।

রঞ্জী ট্রফিতে দুইটি দ্বিশতকের পাশাপাশি ১৯৪৪-৪৫ মৌসুমে পার্সির পক্ষে ২১৫ রান তুলেন। এরপর অস্ট্রেলিয়ান সার্ভিসেস একাদশের বিপক্ষে ২০৩ রান তুলেন।[] এটিই ভারতের পক্ষে প্রতিনিধিত্বকারী প্রথম দ্বি-শতকের ইনিংস ছিল। পরবর্তীকালে এ ইনিংসটিকে মোদি তার সেরা ইনিংসরূপে চিত্রিত করেছিলেন। রঞ্জী ট্রফিতে বোম্বের পক্ষে খেলেন। সেখানেও তিনি সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ৮১.৬৯ গড়ে ২১৯৬ রান তুলেছিলেন তিনি।

টেস্ট ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রভূতঃ সফলতার প্রেক্ষিতে জাতীয় দলে খেলার জন্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সালে ভারত দল ইংল্যান্ড সফরে যায়। ঐ সফরে লর্ডসের প্রথম টেস্টে খেলার সুযোগ পান তিনি। ২২ জুন, ১৯৪৬ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিজয় হাজারেবিনু মানকড়ের সাথে একযোগে টেস্ট অভিষেক ঘটে রুসি মোদির। ২২ থেকে ২৫ জুন, ১৯৪৬ তারিখে অনুষ্ঠিত তিনদিনের ঐ টেস্টটি বেশ সুখকর ছিল। তবে প্রতিপক্ষীয় অ্যালেক বেডসারের অভিষেক টেস্টে এগারো উইকেট লাভের জন্য পরিচিত হয়ে আছে ঐ টেস্টটি। খেলা শুরু হলে ভারতের সংগ্রহ এক পর্যায়ে ৪৪/৩ হয়। মাঠে নামার পর লেগ স্পিনার ডগ রাইটের বলে ওয়ালি হ্যামন্ডের হাত থেকে ফস্কে গেলে তিনি বেঁচে যান ও অপরাজিত ৫৭ রান তুলেন। এ প্রসঙ্গে বিজয় হাজারে তার ‘এ লং ইনিংস’ শীর্ষক পুস্তকে উল্লেখ করেন যে, তালুবন্দী হাতছাড়া হবার পর তিনি ভারতীয় শিবিরে বৃদ্ধাঙ্গুলী উঁচিয়েছিলেন ও এরপর বেশকিছু দর্শনীয় স্ট্রোক খেলেছিলেন।[]

তিন খেলার ঐ সিরিজে মাঝারীমানের সফলতা পান। সর্বমোট ৫ ইনিংসে ৩৪.২৫ গড়ে ১৩৭ রান তুলেন তিনি। বিজয় হাজারে, জো হার্ডস্টাফ, ডেনিস কম্পটনসিরিল ওয়াশব্রুকের পর সমগ্র সিরিজে পঞ্চম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের মর্যাদা পান তিনি।[] তবে, সফরে ৩৭.৩৭ গড়ে ১১৯৬ রান তুলেছিলেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের আগমন

[সম্পাদনা]

১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভারত সফরে আসে। বেশ সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন রুসি মোদি। পাঁচ টেস্টে অংশ নিয়ে একটি শতক ও পাঁচটি অর্ধ-শতক সহযোগে ৫৬০ রান তুলেন। ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে ১১২ রানের ইনিংসটিই তার টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের একমাত্র সেঞ্চুরি ছিল। তার ইনিংসটি সিরিজে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি ছিল। এ সময়ে বিজয় হাজারের সাথে ১৩৯ রানের জুটি গড়ে ৩৬১ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় ধাবিত হয়েছিল তার দল।[] এছাড়াও, সিরিজে তিনবার ৯০ রানের কোটা স্পর্শ করেছিলেন। সমগ্র সিরিজে চারবার হাজারের সাথে শতরানের জুটি গড়েন।

এরপর ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তার খেলোয়াড়ী জীবনে বেশ প্রভাব পড়ে। ১৯৫৭-৫৮ মৌসুম পর্যন্ত বোম্বে দলের পক্ষে খেলেন। তন্মধ্যে, ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে মহারাষ্ট্রের বিপক্ষে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দশটি অনানুষ্ঠানিক টেস্টে অংশ নিয়ে ৩৫.৩১ গড়ে ৫৬৫ রান তুলেন।

খেলার ধরন

[সম্পাদনা]

রান সংগ্রহের ক্ষেত্রে বেশ বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। টেস্টে যেখানে তিনি ৪৬ গড়ে রান তুলেছেন, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তা ৫৩ গড়ের ছিল। এছাড়াও, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ২০টি শতরানের ইনিংস রয়েছে তার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। ইনিংসে পাঁচ উইকেটও পেয়েছেন তিনি যা সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে একমাত্র সাফল্য ছিল।

জন আরলটের ভাষায়, দীর্ঘদেহী, লিকলিকে গড়ন, ধূসর মুখমণ্ডলের অধিকারী রুসি মোদিকে খুব সহজেই চেনা যেতো। ছয় ফুট উচ্চতা ও অত্যন্ত হাল্কা-পাতলা গড়নের মোদি দ্রুততার সাথে পায়ের কারুকাজ করতেন ও কভার ড্রাইভে অংশ নিতেন।[১] পেস বোলিংয়ের তুলনায় স্পিনের দিকেই অধিক দক্ষতার পরিচয় দিতেন।

ব্যক্তিগত জীবন

[সম্পাদনা]

ক্রিকেটের পাশাপাশি টেবিল টেনিসেও বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন রুসি মোদি। টেবিল টেনিসে রাজ্যদলের খেলাগুলোয় মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি আন্তঃমহাবিদ্যালয়ের খেলায় টেনিস ও ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। ১৯৬৪ সালে ‘ক্রিকেট ফরএভার’ শিরোনামীয় পুস্তক রচনা করেন। এছাড়াও আরও কয়েকটি বই প্রকাশ করেছেন তিনি।

বোম্বের গভর্নর রাজা মহারাজা সিংয়ের অধীনে এডিসি’র দায়িত্ব পালন করে গেছেন। পরবর্তীকালে অ্যাসোসিয়েটেড সিমেন্ট কোম্পানীর নির্বাহীর ন্যায় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামের ইন্ডিয়া ক্রিকেট ক্লাব প্যাভিলিয়নে অবস্থানকালে হৃদযন্ত্র ক্রীয়ায় আক্রান্ত হন। ১৭ মে, ১৯৯৬ তারিখে ৭২ বছর বয়সে বোম্বেতে রুসি মোদি’র দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Rusi Modi"। www.espncricinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  2. "Rusi Modi: He adorned the Golden Age of batting"। www.espncricinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  3. "Records / India in England Test Series, 1946"। stats.espncricinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  4. "Scorecards"। Cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]