বিষয়বস্তুতে চলুন

যোজনী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মিথেন অণুর জন্য ভ্যালেন্স বন্ড থিওরি অরবিটাল ডায়াগ্রাম

রসায়নে একটি মৌলের যোজ্যতা বা যোজনী হল রাসায়নিক যৌগ বা অণু তৈরি করার সময় অন্যান্য পরমাণুর সাথে এর সমন্বয়ে ধারণক্ষমতার পরিমাপ। অণু গঠনকালে কোনো মৌলের একটি পরমাণুর সাথে অপর একটি মৌলের কোনো পরমাণু  যুক্ত হবার সামর্থ্যকেই যোজনী বলে। আবার অন্যভাবে বলা যায়, কোন মৌলের একটি পরমাণু যতগুলো হাইড্রোজেন (H) অথবা তার সমতুল্য (যেমন: ক্লোরিন (Cl), সোডিয়াম (Na) ইত্যাদি) অন্য মৌলের যত সংখ্যক পরমাণুর সাথে সংযুক্ত হতে পারে তাকে যোজনী বলে।

নোট:- হাইড্রোজেনের যোজনী সবসময় ১ ধরা হয়। অন্যদিকে ক্লোরিনের একটি পরমাণু হাইড্রোজেনের একটি পরমাণুর সাথে মিলে HCl গঠন করে বলে ক্লোরিনের যোজনীও ১, কেননা এটি কেবল একটি হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত হয়েছে।

আবার একটি সোডিয়াম (Na) পরমাণু একটি এবং কেবল একটি ক্লোরিন (Cl) পরমাণুর সাথে মিলে NaCl (সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাদ্য লবণ) গঠন করে বলে সোডিয়ামের যোজনীও ১।

মিথেন (CH4) এ কার্বনের (C) যোজনী ৪। কেননা কার্বন (C) ৪টি হাইড্রোজেন (H) পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়েছে।

তেমনিভাবে পানিতে/জলে (H2O) অক্সিজেনের যোজনী ২। কারণ এখানে অক্সিজেন দুটো হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত।

আবার, SO3 (সালফার ট্রাই অক্সাইড) যৌগে সালফারের যোজনী ৬, কেননা এখানে একটি সালফার তিনটি অক্সিজেনের সাথে যুক্ত। আমরা জানি, অক্সিজেনের যোজনী ২ এবং তিনটি অক্সিজেন মোট (৩×২)=৬ টি হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত হতে পারে। অর্থাৎ, আপাতদৃষ্টিতে একটি সালফার ৬ টি হাইড্রোজের সাথে যুক্ত হতে পারবে বিধায় এর যোজনী ৬।

ইলেকট্রনীয় ধারণায় যোজনী: যৌগ গঠন কালে কোন একটি পরমানু বা মূলক অপর একটি পরমানু বা মূলক হতে যে কয়টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে বা প্রদান করে তাই তার যোজ্যতা বা যোজনী। যেমন বলা যায়, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (CaCl2) লবণ গঠন কালে ক্যালসিয়াম(Ca) তার শেষোক্ত ২ টি ইলেকট্রন দান করে তাই ক্যালসিয়ামের যোজনী ২ অন্যদিকে এই দানকৃত ২ টি ইলেকট্রন ২ টি ক্লোরিন গ্রহণ করে তাই ক্লোরিন এর যোজনী এক।

বিঃ দ্রঃ শুধুমাত্র যে গ্রহণ বা বর্জন ই ঘটবে এমন না শেয়ার ও হতে পারে। (সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ যৌগের ক্ষেত্র)

যোজনীর আরো এক প্রকার ধারণা আছে। এই ধারণাটি কোয়ান্টাম সংখ্যা সম্পর্কিত। পাশাপাশি ইলেকট্রন বিন্যাস (হুন্ডের নীতি) জানতে হবে। এছারা মৌলের সংকরায়ণও যোজনীর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধারণাটি হল কোন মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ কক্ষপথে যত সংখ্যক বিজোড় ইলেকট্রন থাকে তাকে ঐ মৌলের যোজনী বা যোজ্যতা বলে। উদাহরণস্বরূপ, সোডিয়াম(Na) পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস 1s22s22p63s1, এটার শেষ কক্ষপথে একটি ইলেকট্রন আছে এবং এটা বিজোড়। ক্যালসিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাস 1s22s22p63s23p64s2 । এটার শেষ কক্ষপথে ২ টি ইলেকট্রন। এটি একটি জোড় সংখ্যা এবং 4s2 তে ইলেকট্রন জোড়ায় আছে। তাহলে যোজনী ২ হয় কি করে। বলে রাখি s অরবিটালের জন্য হুন্ডের নীতি প্রয়োগ হয় না। এখন আমরা কার্বন এর ইলেকট্রন বিন্যাস দেখি 1s2, 2s2, 2p2. শেষ অরবিটালে ইলেকট্রন ২ টি। এখানেই হুন্ডের নীতি প্রয়োগ করলে দেখব 2px1, 2py1. ২ টি ইলেকট্রন ই বিজোড় আছে। তাই কার্বনের যোজনী ২। কিন্তু বিশেষ অবস্থায় 2s2 এর ১ টি ইলেকট্রন ও 2pz1 এসে পরে। এবং সব গুলি ইলেকট্রন বিজোড় হয় ও যোজনী ৪ হয়।

যোজনী সবসময় পূর্ণ সংখ্যা হয়। কখনও ভগ্নাংশ হয় না যোজনীর মান সর্বদাই ধনাত্মক হয়। যোজনী পরিবর্তনশীল হতে পারে। একই মৌলের যোজনী একাধিক হতে পারে। যেমন তামা (+১, +২)।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]