মুহাম্মদ ইউনুস খালিস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুহাম্মদ ইউনুস খালিস
محمد يونس خالص
মুজাহিদীন ঘনিষ্ঠদের সাথে ইউনুস খালিস (১৯৮৭)।
হিজবে ইসলামি খালিস এর আমির
কাজের মেয়াদ
১৯৭৯ – ২০০৬
পূর্বসূরীদল প্রতিষ্ঠা
উত্তরসূরীদীন মুহাম্মদ
,আনওয়ারুল হক মুজাহিদ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৯১৯
খগয়ানি জেলা, নানগারহর প্রদেশ, আফগানিস্তান
মৃত্যু১৯ জুলাই ২০০৬(2006-07-19) (বয়স ৮৬–৮৭)
সন্তানআনওয়ারুল হক মুজাহিদ
মুতিউল হক খালিস
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদারুল উলুম হাক্কানিয়া, খাইবার পাখতুনখোয়া, পাকিস্তান
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য হিজবে ইসলামি খালিস
যুদ্ধসোভিয়েত–আফগান যুদ্ধ

মোহাম্মদ ইউনুস খালিস ( পশতু: محمد يونس خالص ; ১৯১৯– জুলাই, ২০০৬ ) ছিলেন সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময় একজন আফগান মুজাহিদ কমান্ডার ও যোদ্ধা। তার দলের নাম হিজব-ই- ইসলামী বা ইসলামি পার্টি ছিল, যা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের দলের মতই একটি সশস্ত্র দল ছিল। তবে দুটিকে সাধারণত হিজব-ই-ইসলামি খালিস এবং হিজব-ই-ইসলামি গুলবুদ্দিন হিসাবে আলাদা করা হয়। খালিস বিভিন্ন অপারেশনে হাক্কানি নেটওয়ার্কের সাথেও জড়িত ছিলেন। হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা জালালুদ্দীন হাক্কানি ১৯৮০–এর দশকে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে ইউনুস খালিসের দলের পক্ষে হয়ে লড়াই করেছিলেন।

জীবনী[সম্পাদনা]

পশতুনদের খুগিয়ানি উপজাতির অন্তর্গত[১] মৌলভি মুহাম্মদ ইউনুস খালিস ১৯১৯ সালে আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশের খোগিয়ানি জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন এবং নিজের দেশের অশান্ত আধুনিক ইতিহাসে একজন শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। পাকিস্তানের দারুল উলূম হাক্কানিয়াতে ইসলামি আইন ও ধর্মতত্ত্বে শিক্ষিত,[২] খলিস ইসলামি সমাজে নিজের রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করেন। তাকে কখনও কখনও নানগারহারের ডন হিসাবেও উল্লেখ করা হয়। তিনি একজন বুদ্ধিমান রাজনীতিবিদও ছিলেন, যিনি তার দেশের ইতিহাসের সবচে' উত্তাল ও সহিংস সময়ে পর্দার আড়ালে যথেষ্ট শক্তি ব্যবহার করেছিলেন।

১৯৭৩ সালে দাউদ খান কর্তৃক জহির শাহকে উৎখাত করার পর খালিস দাউদ প্রশাসনের সমালোচনা করে একটি বই লিখেছিলেন বলে জানা গিয়েছিল, যা তাকে ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল[৩] এবং সেখানে তিনি হেকমতিয়ারের ইসলামি পার্টি বা হিযবে ইসলামিতে যোগদান করেন। আফগানিস্তানে সোভিয়েত আক্রমণের পরে খালিস হেকমতিয়ারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং তার নিজস্ব দল হিজব-ই ইসলামি খালিস প্রতিষ্ঠা করে। আফগান মুজাহিদিনের অন্যান্য নেতার থেকে ভিন্ন পন্থায় খালিস গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে তার জন্মভূমি নানগারহার প্রদেশে অনুসারীদের একত্রিত করার জন্য ধর্মের পরিবর্তে তার উপজাতি সমর্থনের উপর বেশি নির্ভর করতেন।[৪]

সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তাদের স্থানীয় মিত্রদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে খালিস বহু বার আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছেন বলে জানা গিয়েছিল। আব্দুল হক, আমিন ওয়ার্দাক ফয়সাল বাবাকারখাইল এবং জালালুদ্দিন হাক্কানিসহ অনেক বিশিষ্ট মুজাহিদ কমান্ডার হিযবে ইসলামী খালিসের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৭ সালে আফগানিস্তান থেকে সমস্ত বিদেশী সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভোটের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন খলিস প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের সাথে হোয়াইট হাউসে দেখা করেন। প্রেসিডেন্ট রিগান মুজাহিদিনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন এবং আফগানদের একটি "বীরদের জাতি" বলে অভিহিত করেন।[৫]

১৯৯২ সালে কমিউনিস্ট শাসনের পতনের পর, খালিস অন্তর্বর্তী ইসলামি সরকারে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি নেতৃত্ব পরিষদের (শুরা-ই কিয়াদি) সদস্য ছিলেন; কিন্তু অন্য কোনো সরকারি পদে ছিলেন না। কাবুলে স্থায়ী হওয়ার পরিবর্তে তিনি নানগার্হারে থাকতে বেছে নেন। রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশটির অংশ তার দল নিয়ন্ত্রণ করত। তালেবান ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে নানগারহরকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে এবং খালিস তালেবান আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন বিধায় এতে তার কোনো সমস্যা ছিল না। তালেবান কমান্ডারদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও ছিল।

খালিস ৯০ এর দশকের শেষের দিকে পাকিস্তানে বাস করতেন। তালেবানদের পতনের পরে, তার সমর্থকরা জালালাবাদে নিজেদের শক্ত ঘাঁটিটি পুনরুদ্ধার করে, যেখানে খালিস যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল, যদিও তিনি কোনো সরকারি পদে ছিলেন না। তার দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী হাজি আব্দুল কাদির ও হাজী দিন মোহাম্মদ কমিউনিস্ট শাসনের পতনের পর নানগার্হার প্রদেশের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৬]

তার ছেলে আনওয়ারুল হক মুজাহিদের ভাষ্যে, তিনি ২০০৬ সালের ১৯ জুন নিহত হন।[৭]

রচনাবলী[সম্পাদনা]

তিনি অনেক প্রবন্ধকবিতা সংকলনের লেখক;[৮] তার প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে:[৯]

পশতু[সম্পাদনা]

  • দিনি মালগালিরি : এটি কাবুলের দাওলাতি মাতবা ১৯৫৭ সালে প্রকাশ করে, যার পৃষ্ঠাসংখ্যা ১৪০; বিষয়বস্তু: ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলী।
  • দামুনআউ দানে: শিরি টোলগাহ, পেশোয়ার : ইহসান খপরান্দউইয়াহ তালানাহ, ২০০২, ১৪৪ পৃ. পশতু কবিতা ।
  • দা ইসলামি আলাম নান আউ পারুন: দা খালিস বাবা দা খাওরো ওয়ারো লিকনো তোলকাহ, পেশোয়ার : ইহসান খপর্ন্দউইয়াহ তালানাহ, ২০০২, ৯১ পৃ. আব্দুল হাদি মুলাখেল দ্বারা সাজানো নিবন্ধের সংগ্রহ।

দারি[সম্পাদনা]

  • ইসলাম ওয়া আদালাত-ই ইজতিমায়ী, কাবুল : আঞ্জুমান-ই তারবিয়াহ-ই আফকার, ১৯৫৮, ৩২৭ পৃ. সাইয়্যেদ কুতুবের ইসলামে সামাজিক ন্যায়বিচারের আরবি থেকে অনুবাদ।

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Abubakar Siddique, The Pashtun Question: The Unresolved Key to the Future of Pakistan and Afghanistan, Hurst, 2014, p. 154
  2. Ahmed Rashid, Taliban: The Power of Militant Islam in Afghanistan and Beyond, Bloomsbury Publishing, 2010, p. 90
  3. "Afghanistan: Lessons from the Last War" 
  4. "Afghanistan: Lessons from the Last War" 
  5. Reagan, Ronald। "Remarks Following a Meeting With Afghan Resistance Leaders and Members of Congress"Ronald Reagan Presidential Library and Museum। National Archives। ২৬ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০২৩ 
  6. Coll, Steve (২০০৪)। Ghost Wars: The Secret History of the CIA, Afghanistan, and Bin Laden, from the Soviet Invasion to September 10, 2001Penguin Group। পৃষ্ঠা 327আইএসবিএন 9781594200076 
  7. "Leader of Afghan mujahideen dies", BBC.co.uk, Monday, 24 July 2006.
  8. Masood Farivar, Confessions of a Mullah Warrior, Atlantic Books Ltd, 2009, chapter 10
  9. Profile on WorldCat