ভূতাবুড়ি (লোকদেবী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভূতাবুড়ির থান
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাবর্ধমান জেলা
অবস্থান
অবস্থানআসানসোল
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
দেশভারত

ভূতাবুড়ি বাংলার একটি আঞ্চলিক দেবী। বর্ধমান জেলার আসানসোল অঞ্চলে এই আঞ্চলিক দেবীর পূজা হয়। এছাড়া বাঁকুড়া জেলাতেও এই দেবীর পূজার প্রচলন আছে। এই দেবী সাধারণত স্থানীয় বাউরি জাতির আরাধ্যা। তবে বাকি সবাই পূজায় যোগদান করেন।

প্রাচীন কালে অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টি উভয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছ থেকে নিস্তার পেতে গাছ পাথর ইত্যাদি পূজা করা হতো। কখনো কখনো ছোটো মূর্তি গড়ে পূজা করা হতো। সেই রকমই একটি দেবী ভূতাবুড়ি।

অবস্থান[সম্পাদনা]

পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলাবার্ণপুর কাছে শ্যামডিহিগ্রামে দামোদর নদের ধারে ভূতাবুড়ির থান। এখানে কোন মন্দির নেই। পাথর বাঁধানো চাতালের উঁচু বেদীর উপর ভূতাবুড়ির থান। দক্ষিণে বাংলার দুঃখ দামোদর নদ। আরও দক্ষিণে বাঁকুড়ার সর্বোচ্চ পাহাড় বিহারীনাথ । দামোদর পেরোলে দক্ষিণে বাঁকুড়া জেলা

পূজার্চনা[সম্পাদনা]

ভূতাবুড়ি
মন্ত্রকোনো নির্দিষ্ট মন্ত্র নেই, জোরে জোরে ডাকা হয়
প্রতীকসমূহমূর্তি নেই, কিছু পোড়ামাটির ঘোড়া ও একটি শিবলিঙ্গ
উৎসবপয়লা মাঘ

ভূতা শব্দের অর্থ প্রেত। ভূতের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ। কিছু হিন্দু বাঙালির কাছে ভূতাবুড়ি অপদেবী রূপে পরিচিত। সাধারণ নিয়মে প্রতিদিন পুজো হয়। শনিবারে বিশেষ পুজো হয়ে থাকে। বার্ষিক পুজো হয় পয়লা মাঘ । তবে আষাঢ় সংক্র্Iন্তিতে বেশ আড়ম্বর করে পুজো হয়। এই ভূতাবুড়ির সেবাইত রায় পদবীধারী বাউরি জনগোষ্ঠী। বর্তমানে প্রধান দেয়াসী গোবিন্দ রায় । পুজোতে কোন বলিদান হয়না । কথিত আছে– আগে হাঁস,মুরগী প্রচুর বলি হতো। কিন্তু বর্তমানে দেবীর আদেশে বলিদান সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়েছে । থানে বেদীতে কোন মূর্তি নেই। শুধু বিশাল আকৃতির সুদৃশ্য বেশ কিছু পাথরের ও পোড়ামাটির ঘোড়া আছে। তাদের মাঝে একটি ছোটো শিবলিঙ্গ আছে। কথিত আছে– এই ভূতাবুড়িরা সাত বোন ও এক ভাই । সাত বোন হচ্ছে - ঘাঘরবুড়ি, নুনীবুড়ি, ঘোষবুড়ি, ধেনুয়াবুড়ি, কেন্দুয়াবুড়ি, পিয়ালশালবুড়ি ও ভূতাবুড়ি ।আর একমাত্র ভাই শান্তিনাথ

মন্ত্র[সম্পাদনা]

এই পুজোয় কোনো মন্ত্র উচ্চারণ হয় না। শুধু জোরে জোরে ভূতা বুড়ির নাম ডেকে ভোগ নিবেদন করা হয় আর ডাকা হয় সাত বোনের নাম ও ভাইয়ের নাম। পুজোর মধ্যে পূজারীর ভর হয়। তিনি জোরে জোরে কাঁপতে থাকেন।অনেক ভক্তরা পূজারীর কাছে তাদের সমস্যার কথা জানান। সমাধানও তিনি যথা রীতি বলে দেন। বেদীর পিছনের দিকের একটি বাঁধানো ছোট্ট বেদীর উপর একটি পাথরকে বাঘরায় হিসাবে পুজো করা হয়। এই বাঘরায় পুজোর সাথে সাথে পূজারীর ভর আসে। শেষে কাঁচা দুধ খেয়ে পূজারীর ভর ভঙ্গ হয়।

ভোগ প্রসাদ[সম্পাদনা]

পূজোতে বিভিন্ন ফল, মিষ্টি, দুধ, বাতাসা, চিঁড়ে, গুড় দেওয়া হয়। এছাড়া ভূতাবুড়ির প্রিয় খাবার কলাই কড়কড়ে দেওয়া হয়।