ভারত ভাগের বিরোধিতা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
খুদাই খিদমতগার নেতা আব্দুল গফফার খান এবং মহাত্মা গান্ধী, উভয়ই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্তর্গত, ভারত বিভক্তির তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন, এই সত্যটি উল্লেখ করে যে মুসলিম এবং হিন্দু উভয়ই কয়েক শতাব্দী ধরে শান্তিপূর্ণভাবে একসাথে বসবাস করেছে এবং দেশে একটি সাধারণ ইতিহাস ভাগ করেছে।

ভারত বিভাগের বিরোধিতা একবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ভারতে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছিল এবং বর্তমানেও এটি দক্ষিণ এশীয় রাজনীতিতে একটি চলমান বিষয় বেশিরভাগ শিখ ও হিন্দু ব্যক্তি ভারত বিভাগের বিপক্ষে ছিল যেমন ছিল ওই দেশে থাকা বহু মুসলিম। পশতু রাজনীতিবিদ খান আব্দুল গাফফার খান ভারত বিভাজনকে ভারতের শতাব্দী ধরে শাসন করা মুসলিমদের ইতিহাসের বিরোধী হিসেবে গণ্য করতেন। মহাত্মা গান্ধীর মতে হিন্দু ও মুসলমান একই ভারত মাটির সন্তান এবং ভারত কে স্বাধীন করার জন্য তাদেরকে একই সঙ্গে লড়াই করতে হবে। দেওবন্দী চিন্তার মুসলিম উলামারা আলাদা মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তানের ধারণাকে সমর্থন না করে শক্তিশালী ভারতের অভ্যুদয় কে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্র মনে করত এবং তারা ভারতীয় বিভাজনকে রোধ করার জন্য আজাদ মুসলিম কনফারেন্সের আয়োজন করেছিল। সেখানে তারা যুক্তি দেখিয়ে ছিল যে ভারত বিভাজিত হলে মুসলিমদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা আরও বলেছিল যে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ স্থানে মুসলিমরা সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে তাদের অর্থনৈতিক সাহায্যের ক্ষেত্রে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। দেওবন্দিরা এক্ষেত্রে মুসলিম ও কুরাইশদের মধ্যে হওয়া হুদায়বিয়ার সন্ধিকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে যেখানে মুসলিমদের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পর্ক উন্নত করার মাধ্যমে কুরাইশদের মাঝে ইসলাম ধর্ম প্রচার বিস্তৃত হয়েছিল। দেওবন্দী পণ্ডিত সৈয়দ আহমাদ মাদানী অবিভক্ত ভারতের পক্ষে তার বই "মুত্তাহিদা কেয়ামত" দেখেন এবং প্রচার করেন যে ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম ভিন্ন ভিন্ন জাতীয়তাকে বহন করে না ফলে ধর্মের ভিত্তিতেফলে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাজন যুক্তিযুক্ত নয় খাকসার আন্দোলনের নেতা আল্লামা মাশরিক ভারত বিভাগের বিরোধিতা করেছিলেন কারণ তিনি মনে করতেন যে যদি মুসলিমরা হিন্দুদের সঙ্গে শতাব্দী ধরে থাকতে পারে তবে অবিভক্ত ভারতীয় তারা একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারবে। যদি ভারত দুটি দেশে বিভক্ত হয় তবে তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত থাকবে, যাকে দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রধান সীমাবদ্ধতা তারা উল্লেখ করেছিল (এবং এটি বর্তমানে চলছে)। তিনি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন যে ধর্মের ভিত্তিতে দুটি দেশে বিভক্ত হলে উভয় দেশেই কুসংস্কার গোঁড়ামির ও উগ্রবাদ এর জন্ম নিবে। মাশ্রিক মনে করেছিলেন যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ স্থানগুলো ইতিমধ্যেই মুসলিম শাসনের অধীনে ছিল তাই কোনো মুসলিম যদি ওসব স্থানে যেতে চায় তবে দেশভাগ ছাড়াই যেতে পারবেন তিনি দেশ বিভাজনকে ক্ষমতালোভী এবং স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিদের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছিলেন। ডেকান হেরাল্ড দ্য ট্রাজেডি অফ পার্টিশন নামক একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে মুসলিম ও অমুসলিম রা কোনরূপ সংঘর্ষ ছাড়াই শতাব্দী ধরে একই মাটিতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে এটি স্পষ্ট যে যদি কোন মুসলিম রাষ্ট্র হয় তবে তা সম্পূর্ণভাবে কিংবা বেশিরভাগ মুসলিমকেই ধারণ করতে পারবে না এবং তাতে অবশ্যই অমুসলিম থেকে যাবে কোন প্রকার সামাজিক প্রকৌশলী ভারতে অমুসলিমদের থেকে মুসলিমদের কে আলাদা করতে পারবেন না। ভারতীয় মুসলিমদের সাধারণ কোন সংস্কৃতি বা প্রধান ভাষা ছিল না। যেমন একজন পাঞ্জাবি মুসলিমের সাথে একজন বাঙালি কিংবা মালাবার মুসলিমের ধর্ম ব্যতীত অন্য কোন দিক দিয়ে সাদৃশ্য নেই। এমনকি এমন কোনো সাধারণ ভাষা নেই যা ভারতের সকল মুসলিমরাই জানে। শতাব্দী ধরে মুসলিমরা অমুসলিমদের সঙ্গে তাদের আঞ্চলিক সংস্কৃতির অংশীদার। দ্বিতীয় যুক্তি হলো মুসলিমরা মৌলিকভাবে হিন্দুদের চেয়ে আলাদা একথাটিও ঠিক নয়। কেননা শতাব্দী ধরে ভারতীয় অমুসলিমরা মূলত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। সংস্কৃতি ধর্ম নয় বরং অঞ্চলের উপর অধিক নির্ভর করে। ফলে একজন বাঙালি মুসলিমের পাঞ্জাবি মুসলিমের চেয়েও বাঙালি হিন্দু সঙ্গে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ সংস্কৃতি দেখা যাবে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]