বিষয়বস্তুতে চলুন

ব্রাহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ব্রাহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত (ব্রহ্মার সংশোধিত নীতিমালা বা সিদ্ধান্ত[]) ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মগুপ্তের লেখা এবং বিশেষত সেই সময়ের তুলনায় একটি বিশাল আকৃতির বই যা তার সেরা কাজ হিসেবে স্বীকৃত।[] গাণিতিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর লিখিত এই পুস্তকটি গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাদের মধ্যে রয়েছে শূন্য নিয়ে কার্যক্রমের তথা শূন্যের ভূমিকার একটি উত্তম ধারণা, ধনাত্মক বা ঋণাত্মক যেকোন সংখ্যা প্রয়োগের কিছু নিয়ম, বর্গমূল নির্ণয়ের একটি নিয়ম, রৈখিকদ্বিঘাত সমীকরণ সমাধান এবং ধারার সমষ্টি নির্ণয়ের পদ্ধতি উপরন্তু ব্রহ্মগুপ্তের অভেদব্রহ্মগুপ্তের উপপাদ্য

বইটির পুরোটাই পদ্যে রচিত হয়েছে যেখানে কোন গাণিতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়নি। শুধু তাই নয়, এই বইতেই দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধান দ্বিঘাত সূত্রের প্রথম সুস্পষ্ট বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।[][]

সংখ্যার জন্য ব্রাহ্মস্ফুটসিদ্ধান্তের নিয়মসমূহ

[সম্পাদনা]

ধনাত্মক সংখ্যা, ঋণাত্মক সংখ্যা এবং শূন্যের বাস্তবিক বা গাঠনিক ধারণার উল্লেখ যেসব বইয়ে প্রথম পাওয়া যায় ব্রাহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত সেগুলোর একটি। এই বইয়ে ব্রহ্মগুপ্ত সংখ্যা বিষয়ক তার নিম্নোক্ত নিয়মসমূহ প্রদান করেছেন:[]

  • দুটি ধনাত্মক রাশির যোগফল ধনাত্মক
  • দুটি ঋনাত্মক রাশির যোগফল ঋনাত্মক
  • শূন্য এবং ধনাত্মক সংখ্যার যোগফল ধণাত্মক
  • শূন্য এবং ঋণাত্মক সংখ্যার যোগফল ঋণাত্মক
  • শূন্যের সাথে শূন্যের যোগফল শূন্য
  • কোন ধনাত্মক সংখ্যার সাথে ঋণাত্মক সংখ্যার যোগফল হবে ঐ সংখ্যাদুটির পার্থক্য নতুবা এরা সমান হলে যোগফলটি হবে শূন্য
  • ধনাত্মক থেকে ধনাত্মক সংখ্যার বিয়োগের ক্ষেত্রে বড়টি থেকে ছোটটি বিয়োগ করতে হবে
  • ঋনাত্মক থেকে ঋনাত্মক সংখ্যার বিয়োগের ক্ষেত্রেও বড়টি থেকে ছোটটি বিয়োগ করতে হবে
  • যাই হোক না কেন ছোট সংখ্যাটি থেকে বড়টি বিয়োগ করলে বিয়োগফল বা পার্থক্য উল্টে যাবে
  • ঋণাত্মক থেকে ধনাত্মকের বিয়োগ এবং ধনাত্মক থেকে ঋণাত্মকের বিয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই এদেরকে অবশ্যই পরস্পরের সাথে যোগ করতে হবে
  • একটি ধনাত্মক ও একটি ঋণাত্মক সংখ্যার গুণফল ঋণাত্মক
  • দুটি ঋণাত্মক সংখ্যার গুণফল ধনাত্মক
  • দুটি ধণাত্মক সংখ্যার গুণফল ধনাত্মক
  • ধনাত্মককে ধনাত্মক দ্বারা অথবা ঋণাত্মককে ঋণাত্মক দ্বারা ভাগের ফল ধনাত্মক
  • ধনাত্মককে ঋণাত্মক দ্বারা অথবা ঋণাত্মককে ধনাত্মক দ্বারা ভাগের ফল ঋণাত্মক
  • শূন্যকে ধনাত্মক বা ঋণাত্মক যেকোন সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল হয় শূন্য হবে নতুবা শূন্য লব এবং সসীম সংখ্যার হরযুক্ত একটি ভগ্নাংশ হবে
  • একটি ধনাত্মক বা ঋণাত্মক সংখ্যাকে শূন্য দ্বারা ভাগ হল শূন্য হর বিশিষ্ট একটি ভগ্নাংশ
  • শূন্যকে শূন্য দ্বারা ভাগের ফল শূন্য

শেষ দুটি নিয়ম শূন্য দ্বারা ভাগকে সংজ্ঞায়িত করার প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে স্মরণীয় যদিও এগুলো আধুনিক সংখ্যাতত্ত্বের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় যখন আধুনিক মতবাদ অনুসারে কোন ক্ষেত্রের শূন্য দ্বারা ভাগের বিষয়টি অসংজ্ঞায়িত[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. এস জি দানি (মে, ২০১৮)। "প্রচীন ভারতীয় গণিতবিদ্যা"বিজ্ঞান পত্রিকা (একাদশ): ১২। সংগ্রহের তারিখ 2021-08-06  ভ্যানকুভার শৈলীতে ত্রুটি: punctuation (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. "Brahmagupta | Indian astronomer"Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। 
  3. Bradley, Michael. The Birth of Mathematics: Ancient Times to 1300, p. 86 (Infobase Publishing 2006).
  4. Mackenzie, Dana. The Universe in Zero Words: The Story of Mathematics as Told through Equations, p. 61 (Princeton University Press, 2012).
  5. Henry Thomas Colebrooke. Algebra, with Arithmetic and Mensuration, from the Sanscrit of Brahmegupta and Bháscara, London 1817, p. 339 (online)
  6. Kaplan, Robert (১৯৯৯)। The Nothing that is: A Natural History of Zeroবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 68–75আইএসবিএন 0-19-514237-3 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা