ব্যবহারকারী:Ven Bipassi Bhikkhu/খেলাঘর
পার্বত্য ভিক্ষুসংঘ বাংলাদেশ(পাভিসবা) একটি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক থেরবাদা বৌদ্ধ ভিক্ষু সংগঠন। ইংরেজীতে Parbatya Bhiikhu Sangha Bangladesh(PBSB)
ধরন | একটি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক থেরবাদা বৌদ্ধ ভিক্ষু সংগঠন |
---|---|
উদ্দেশ্য | আত্মমানবতার সেবাই নিয়োজিত থেকে ধর্ম উন্নয়ন ও পারমার্থিক মুক্তি সাধন করা |
সদরদপ্তর | মৈত্রী বিহার, রাঙ্গামাটি |
অবস্থান | |
দাপ্তরিক ভাষা | বাংলা |
ওয়েবসাইট | www |
প্রাক্তন নাম | পার্বত্য বৌদ্ধ সমিতি |
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাকাল
[সম্পাদনা]৬ষ্ঠ সংগীতিকারক, ১ম সংঘরাজ(পাভিসবা), চাকমা রাজগুরু সর্বজনপূজ্য ভদন্ত অগ্রবংশ মহাথেরো। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ তারিখে ভিক্ষু সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]</nowiki>]] গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে দক্ষিণে মায়ানমারের আকিয়াব পর্যন্ত যে পার্বত্য ভূমি রয়েছে তা পার্বত্য চট্টগ্রাম নামে পরিচিত। বহু শতাব্দী ধরে এ এলাকায় চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, খিয়াং, ম্রো, লুসাই, খুমি, পাংখোয়া,চাক প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠী পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থেকে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এদের মধ্যে চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, খিয়াং, ম্রো ও চাক্ জনগোষ্ঠী করুণাঘন বুদ্ধের ধর্ম-দর্শনের অনুসারী। পার্বত্য চট্টগ্রাম বৌদ্ধ ধর্ম জাগরনের পেছনে কিছু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আমাদের অবশ্যই আলোচনা করতে হয়। আদিবাসী বৌদ্ধ সম্প্রদায় পরম্পরায় বৌদ্ধ ধর্ম পালন করে আসছে। কালের পরিবর্তনে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার-নিপীড়ন এমনকি গণহত্যা, দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ প্রাকৃতিক বিরূপ পরিস্থিতিতে আজ অব্দি বৌদ্ধধর্ম পালন করে আসছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধরা।
সুশিক্ষার অভাবে পার্বত্য বৌদ্ধ সমাজ অবিদ্যা অন্ধকার নেমে আছে। এই নেমে আসার পেছনে ঐতিহাসিক কারণ ছিল। সেটা হলো রাজনৈতিক পরাধীনতা ও পরনির্ভরতা। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক কষাঘাতে পিষ্ট থেকে শিক্ষা বঞ্চিত ছিল এখানকার জনগণ। মিথ্যাদৃষ্টিতে আছন্ন ছিল বৌদ্ধ সমাজ। বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা অর্চনায় মত্ত ছিল সমাজের মানুষ। গাং পূজা, কালী পূজা, বিভিন্ন প্রকৃতির পূজা করেছিল। সমাজে যে ক’জন বৌদ্ধ পুরোহিত লুরি ছিল তাঁরা বৌদ্ধধর্ম নিয়ে শিক্ষার অভাবে অজ্ঞাত ছিল। বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁরা পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেছিল। কিন্তু শিক্ষার অভাবে দরুন ধর্ম বিনয় জানা না থাকা সত্ত্বেও তাঁরা বৌদ্ধধর্মকে ভুলে যেতে পারেন নি। আমাদের এটাও অকপটে স্বীকার করতে হবে যে পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধধর্মের সুস্থিতির জন্য তাঁদের অবদান কোনো অংশে কম নয়। রক্তে-রক্তে, শিরায়-উপশিরায় বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও বৌদ্ধধর্মের রীতি-নীতি মিশে রয়েছে। ভুলে যেতে পারেনি বৌদ্ধ আদর্শ চ্যুত হয়নি সদ্ধর্ম থেকে।
পূর্ব-বাংলার বৌদ্ধধর্ম পুনরুত্থান, সংরক্ষণ ও উন্নয়নের ব্যাপারে প্রাতঃস্বরণীয় পুণ্যশীলা চাকমা রাণী ১৮৪৪ খ্রি. রাজ্যশাসন তার আগ্রহ করেন। তিনি ছিলেন ধরমবক্স খাঁ প্রধান মহীয়সী। চাকমা রাণী কালিন্দী ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্না, ধর্মভীরু, পরধর্মসহিঞ্চু জাতি বর্ণ নির্বিশেষে প্রজা হিতৈষিণী। চাকমা রাণী কালিন্দী তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল প্রজার প্রতি সমান ব্যবহার করেন। হিন্দু মুসলিম প্রজাদের জন্য মন্দির ও মসজিদ নির্মাণ করে দিয়ে ছিলেন। তাঁর রাজ প্রাসাদের সন্নিকটের বিদ্যমান ছিল বৌদ্ধ বিহার। কোন এক বিশেষ উপলক্ষে পুণ্যশীলা রাণী কালিন্দীর সাথে সংঘ্রাজ সারমেধ মহাস্থবির ও হারবাং এর গুণমিজু ভিক্ষুর সাক্ষাত হয়। সেই দিন সারমেধ মহাস্থবির বুদ্ধের জীবন ও ধর্ম-দর্শনের উপর এক সারগর্ভ দেশনা করেন। এই দেশনা শুনে রাণি কালিন্দী মুগ্ধ হন। পরে তিনি সারমেধ মহাস্থবিরকে তাঁর রাজ প্রাসাদে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসেন। এবং সারমেধ মহাস্থবিরের নিকট তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্ম থেকে পরিবর্তিত হয়ে থেরবাদ বৌদ্ধ ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করেন। সংঘরাজ সারমেধ মহাস্থবির ধর্মচারন ও বিনীত ব্যবহারে চাকমা রাণী কালিন্দী এতই শ্রদ্ধাসম্পন্না হন যে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে রাজপুণ্যাহ উপলক্ষে মহাসমারোহে তাঁকে আরাকানি ভাষায় উপাধিযুক্ত সীল মোহর প্রদানের দ্বারা সম্মাননা জানান। তখন থেকে সারমেধ মহাস্থবিরর মহোদয় বাংলার বৌদ্ধদের কাছে সংঘরাজা হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
মহিয়সী চাকমা রাণী কালিন্দী রাজানগর রাজবিহারে সর্বপ্রথম ভিক্ষু সীমা প্রতিষ্ঠা করেন। সর্বজন শ্রদ্ধেয় অগ্রমহাপন্ডিত ভদন্ত সারমেধ মহাস্থবির মহোদয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ৯০% শতাংশ ভিক্ষু রাজানগর ভিক্ষু সীমায় বিনয়সম্মতভাবে ভিক্ষু ধর্মে দীক্ষা নিয়ে শাসন সদ্ধর্মের সুস্থিতি, শৃঙ্খলা ও থেরবাদ সম্মত মতাদর্শ প্রতিস্থাপন করার পরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন। এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় সংঘরাজ নিকায়। সমতল বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মাঝে সংঘরাজ নিকায় অদ্যাবধি স্বগৌরবে অধিষ্ঠিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত। ১৯৫৬ সালে মায়ানমারে রেঙ্গুন শহরে কাবায়ে মহাপাষান গুহায় ষষ্ঠ বৌদ্ধ মহাসংঘায়ন অনুষ্ঠিত হয়। এই সংগীতি শুধু ধর্ম বিনয় পরীক্ষা করা হয়নি, এখানে ত্রিপিটকের টীকা টিপ্পনীসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। ভদন্ত মহাকাশ্যাপ স্থবির থেকে শুরু করে বৌদ্ধ ধর্মের ধারক বাহক ভিক্ষুসংঘ ছয় ছয়বার বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে বৌদ্ধ মহাসংগীতি আয়োজন করেন। তাই বুদ্ধের ধর্ম-বিনয় আজ অব্দি অবিকৃতভাবে পরিশুদ্ধভাবে রয়েছে। এই ষষ্ঠ বৌদ্ধ সংগীতি তে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রতিনিধি হিসেবে ভিক্ষু অগ্রবংশ যোগদান করেন। ১৯৫৬ সালে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় বার্মায় বর্তমান মায়ানমারের রেঙ্গুনে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ বৌদ্ধ সংগীতি একজন নিমন্ত্রিত বিশিষ্ট অতিথি হিসাবে যোগদান করেন। সেখানে ভদন্ত অগ্রবংশ ভিক্ষুর সাথে তার পরিচয় হয়। তিনি তখন তঞ্চঙ্গ্যা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একজন উদীয়মান তরুণ ভিক্ষু হিসাবে স্বমহীমায় অধিষ্ঠিত। কালে বিবর্তনে চাকমা রাজার রাজবাড়ী, রাজার মন্ত্রণালয় ও চাকমা রাজার নিজস্ব রাজ বিহার রাজা নগর থেকে রাঙ্গামাটিতে স্থানান্তরিত করা হয় (বর্তমানে কাপ্তাই বাঁধের কারণে জলমগ্ন)। চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় মহোদয় তরুণ উদীয়মান ভিক্ষু ভদন্ত অগ্রবংশকে চাকমা রাজ বিহারে এসে রাজগুরু হিসাবে ব্রতী হওয়ার জন্য সাদর প্রার্থনা জানান। ভদন্ত অগ্রবংশ ভিক্ষু রাজার সাদর আমন্ত্রণে (ফাং) সাড়া দিয়ে ১৯৫৮ সালে রাঙ্গামাটি রাজ বিহারে চলে আসেন। চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় তাঁকে রাজগুরু পদে অভিষিক্ত করেন। রাজগুরু ভদন্ত অগ্রবংশ ভিক্ষুই ১৯৫৮ সালে সর্বপ্রথম পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিক্ষু সমিতি প্রতিষ্ঠা করে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থানরত ভিক্ষু সংঘের মধ্যে শাসন-সদ্ধর্মের শৃঙ্খলা, ঐক্যতা ও স্থিতিশীলতা আনায়নের লক্ষে সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দরুণ রাজগুরু অগ্রবংশ মহাথেরো বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হন। অতঃপর এ পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিক্ষু সমিতি র সভাপতি হিসাবে ব্রতী হন রাঙ্গামাটি মৈত্রী বিহার এর অধ্যক্ষ ভদন্ত বিমল বংশ মহাথেরো মহোদয়। ১৯৭৮ সালে ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু এম.এ ডিগ্রী অর্জন করার পর চট্টগ্রামের জোবরা সুগত বিহার থেকে রাঙ্গামাটি আনন্দ বিহারে উপাধ্যক্ষ হিসাবে আগমন করলে তাঁকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিক্ষু সমিতি সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। উল্লেখ্য ১৯৭৬ সালে রাজধানী ঢাকাস্থ আদিবাসী বৌদ্ধদের উদ্যোগে পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘের সাথে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ১৯৭৮ সালে সংঘ সম্মেলন ডেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিক্ষু সমিতি নাম বিলুপ্ত করে তদস্থলে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ নাম রাখা হয়। ইতিমধ্যে ১৯৮১ সালের দিকে অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা যথাক্রমে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান নামে তিনটি জেলায় বিভক্ত করা হয়। নাম রাখা হয়- খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা। এ তিনটি জেলায় বর্তমানে সহস্রাধিক বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হচ্ছে। এ সহস্রাধিক বৌদ্ধ বিহারে আনুমানিক ৩ (তিন) সহস্রাধিক ভিক্ষু থেরো- মহাথেরো করুণাঘন বুদ্ধের সদ্ধর্মের শাসন ব্রতী রয়েছেন। বস্তুত সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী বৌদ্ধ জনগণ ও ভিক্ষু সংঘের ধর্মীয় আচার ব্যবহার শাসন সদ্ধর্মের স্থিতি ও শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে মানব সম্পদ উন্নয়ন ও দুঃখ মুক্তির আত্যন্তিক এষণার এ সংঘের যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালিত ও বাস্তবায়িত হয়ে আসছে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে। এটি একটি অলাভজনক অরাজনৈতিক সংঘ সংগঠন। একমাত্র বৌদ্ধ ভিক্ষুরাই এ সংগঠনের সদস্য হওয়ার যোগ্যতার অধিকারী।
পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ এর উদ্দেশ্য লক্ষ্য হচ্ছে আত্মমানবতার সেবাই নিয়োজিত থেকে ধর্ম উন্নয়ন ও পারমার্থিক মুক্তি সাধন করা। সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখে মানুষের মানবিক মর্যাদাবোধ, মানুষের নৈতিকতাকের সর্বস্তরে স্থান দিয়ে মানসিক উৎকর্ষ সাধন করা। পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত নিষ্পেষিত, সুবিধাবঞ্চিত আদিবাসী বৌদ্ধ-অবৌদ্ধদের সমাজ পরিবর্তনের বড় হাতিয়ার শিক্ষা বিস্তারে তথা সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ।
মিশন ও ভিশন
[সম্পাদনা]- ভিক্ষু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
- লাইব্রেরী কাম গবেষণা ইনস্টিটিউট
- বুড্ডিস্ট চ্যারিটেবল ফাণ্ড
- পালিটোল ও প্রকাশনা
- বু্ড্ডিস্ট মিউজিয়াম
- মিনি হাসপাতাল
- ধর্মশালা
- ফ্রাইডে মর্নিং স্কুল
- মানব সম্পদ উন্নয়নে অনাথাশ্রম
- শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য ধর্মপ্রচার