শালবন বৌদ্ধ বিহার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
Silentforever (আলোচনা | অবদান) অসম্পাদনা সারাংশ নেই |
|||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[চিত্র:শালবন বিহার.png|right|thumb|শালবন বিহার, কুমিল্লা]] |
[[চিত্র:শালবন বিহার.png|right|thumb|শালবন বিহার, কুমিল্লা]] |
||
[[চিত্র:Shalbon budha bihar.jpg|right|thumb|শালবন বৌদ্ধ বিহার, কুমিল্লা]] |
[[চিত্র:Shalbon budha bihar.jpg|right|thumb|শালবন বৌদ্ধ বিহার, কুমিল্লা]] |
||
'''শালবন বৌদ্ধ বিহার''' [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। [[কুমিল্লা জেলা|কুমিল্লা জেলার]] [[লালমাই]]-[[ময়নামতি]] প্রত্নস্থলের অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনাগুলোর একটি এই [[বৌদ্ধ বিহার]] । এটি ১২শ |
'''শালবন বৌদ্ধ বিহার''' [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। [[কুমিল্লা জেলা|কুমিল্লা জেলার]] [[লালমাই]]-[[ময়নামতি]] প্রত্নস্থলের অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনাগুলোর একটি এই [[বৌদ্ধ বিহার]] । এটি ১২শ প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। |
||
== অবস্থান == |
== অবস্থান == |
||
কুমিল্লার ময়নামতিতে খননকৃত সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে শালবন বিহার অন্যতম প্রধান। কোটবাড়িতে [[বার্ড|বার্ডের]]কাছে [[লালমাই পাহাড়|লালমাই পাহাড়ের]] মাঝামাঝি এলাকায় এ বিহারটির অবস্থান। বিহারটির আশপাশে এক সময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল বলে এ বিহারটির নামকরণ হয়েছিল শালবন বিহার। এর সন্নিহিত গ্রামটির নাম শালবনপুর। এখনো ছোট একটি বন আছে সেখানে। এ বিহারটি [[পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার|পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের]] মতো হলেও আকারে ছোট। |
কুমিল্লার ময়নামতিতে খননকৃত সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে শালবন বিহার অন্যতম প্রধান। কোটবাড়িতে [[বার্ড|বার্ডের]] কাছে [[লালমাই পাহাড়|লালমাই পাহাড়ের]] মাঝামাঝি এলাকায় এ বিহারটির অবস্থান। বিহারটির আশপাশে এক সময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল বলে এ বিহারটির নামকরণ হয়েছিল শালবন বিহার। এর সন্নিহিত গ্রামটির নাম শালবনপুর। এখনো ছোট একটি বন আছে সেখানে। এ বিহারটি [[পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার|পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের]] মতো হলেও আকারে ছোট। |
||
== নির্মাণ == |
== নির্মাণ == |
||
ধারণা করা হয় যে |
ধারণা করা হয় যে খৃস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন। শালবন বিহারের ছয়টি নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ পর্বের কথা জানা যায়। খৃস্টীয় অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় মন্দিরটি নির্মাণ করা হয় ও বিহারটির সার্বিক সংস্কার হয় বলে অনুমান করা হয়। চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের নির্মাণকাজ ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয় নবম-দশম শতাব্দীতে। |
||
== বর্ণনা == |
== বর্ণনা == |
||
আকারে এটি চৌকো। শালবন বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারের চার দিকের দেয়াল পাঁচ মিটার পুরু। কক্ষগুলো বিহারের চার দিকের বেষ্টনী দেয়াল পিঠ করে নির্মিত। বিহারে ঢোকা বা বের হওয়ার মাত্র একটাই পথ ছিল। এ পথ বা দরজাটি উত্তর ব্লকের ঠিক মাঝামাঝি |
আকারে এটি চৌকো। শালবন বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারের চার দিকের দেয়াল পাঁচ মিটার পুরু। কক্ষগুলো বিহারের চার দিকের বেষ্টনী দেয়াল পিঠ করে নির্মিত। বিহারে ঢোকা বা বের হওয়ার মাত্র একটাই পথ ছিল। এ পথ বা দরজাটি উত্তর ব্লকের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের মাঝে ১.৫ মিটার চওড়া দেয়াল রয়েছে। বিহার অঙ্গনের ঠিক মাঝে ছিল কেন্দ্রীয় মন্দির। |
||
[[চিত্র:Shalbon budha bihar2.jpg|right|thumb|শালবন বৌদ্ধ বিহার]] |
[[চিত্র:Shalbon budha bihar2.jpg|right|thumb|শালবন বৌদ্ধ বিহার]] |
||
== কক্ষ == |
== কক্ষ == |
||
বিহারে সর্বমোট ১৫৫টি কক্ষ আছে। কক্ষের সামনে ৮.৫ ফুট চওড়া টানা বারান্দা ও তার শেষ প্রান্তে অনুচ্চ দেয়াল। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে তিনটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে। কুলুঙ্গিতে |
বিহারে সর্বমোট ১৫৫টি কক্ষ আছে। কক্ষের সামনে ৮.৫ ফুট চওড়া টানা বারান্দা ও তার শেষ প্রান্তে অনুচ্চ দেয়াল। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে তিনটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে। কুলুঙ্গিতে দেবদেবীর মূর্তি, তেলের প্রদীপ ইত্যাদি রাখা হতো। এই কক্ষগুলোতে [[বৌদ্ধ ভিক্ষু|বৌদ্ধ ভিক্ষুরা]] থাকতেন। সেখানে বিদ্যাশিক্ষা ও ধর্মচর্চা করতেন। |
||
== হলঘর == |
== হলঘর == |
||
বিহারের বাইরে |
বিহারের বাইরে প্রবেশদ্বারের পাশে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি হলঘর রয়েছে। চার দিকের দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত সে হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবার ঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হলঘরের মাপ ১০ মিটার গুণন ২০ মিটার। হলঘরের চার দিকে ইটের চওড়া রাস্তা রয়েছে। |
||
== প্রত্নতাত্ত্বিক খনন == |
== প্রত্নতাত্ত্বিক খনন == |
||
প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, |
প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে। এগুলো বাংলাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করছে। |
||
== গ্রন্থপঞ্জী == |
== গ্রন্থপঞ্জী == |
১৫:৩৭, ১৭ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
শালবন বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। কুমিল্লা জেলার লালমাই-ময়নামতি প্রত্নস্থলের অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনাগুলোর একটি এই বৌদ্ধ বিহার । এটি ১২শ প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।
অবস্থান
কুমিল্লার ময়নামতিতে খননকৃত সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে শালবন বিহার অন্যতম প্রধান। কোটবাড়িতে বার্ডের কাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এ বিহারটির অবস্থান। বিহারটির আশপাশে এক সময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল বলে এ বিহারটির নামকরণ হয়েছিল শালবন বিহার। এর সন্নিহিত গ্রামটির নাম শালবনপুর। এখনো ছোট একটি বন আছে সেখানে। এ বিহারটি পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মতো হলেও আকারে ছোট।
নির্মাণ
ধারণা করা হয় যে খৃস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন। শালবন বিহারের ছয়টি নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ পর্বের কথা জানা যায়। খৃস্টীয় অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় মন্দিরটি নির্মাণ করা হয় ও বিহারটির সার্বিক সংস্কার হয় বলে অনুমান করা হয়। চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের নির্মাণকাজ ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয় নবম-দশম শতাব্দীতে।
বর্ণনা
আকারে এটি চৌকো। শালবন বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারের চার দিকের দেয়াল পাঁচ মিটার পুরু। কক্ষগুলো বিহারের চার দিকের বেষ্টনী দেয়াল পিঠ করে নির্মিত। বিহারে ঢোকা বা বের হওয়ার মাত্র একটাই পথ ছিল। এ পথ বা দরজাটি উত্তর ব্লকের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের মাঝে ১.৫ মিটার চওড়া দেয়াল রয়েছে। বিহার অঙ্গনের ঠিক মাঝে ছিল কেন্দ্রীয় মন্দির।
কক্ষ
বিহারে সর্বমোট ১৫৫টি কক্ষ আছে। কক্ষের সামনে ৮.৫ ফুট চওড়া টানা বারান্দা ও তার শেষ প্রান্তে অনুচ্চ দেয়াল। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে তিনটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে। কুলুঙ্গিতে দেবদেবীর মূর্তি, তেলের প্রদীপ ইত্যাদি রাখা হতো। এই কক্ষগুলোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাকতেন। সেখানে বিদ্যাশিক্ষা ও ধর্মচর্চা করতেন।
হলঘর
বিহারের বাইরে প্রবেশদ্বারের পাশে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি হলঘর রয়েছে। চার দিকের দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত সে হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবার ঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হলঘরের মাপ ১০ মিটার গুণন ২০ মিটার। হলঘরের চার দিকে ইটের চওড়া রাস্তা রয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিক খনন
প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে। এগুলো বাংলাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করছে।
গ্রন্থপঞ্জী
- ইফফাত আরা, জানার আছে অনেক কিছু, ১৯৯৯, দেশ প্রকাশন, ঢাকা।
- এ, কে, এম, শামসুল আলম, ময়নামতি, ১৯৭৬, ডিপার্টমেন্ট অফ আর্কিওলজি এন্ড মিউজিয়াম, ঢাকা।
- মোঃ শফিকুল আলম, এক্সভেশান এট রুপবনমুরা, ২০০০, ডিপার্টমেন্ট অফ আর্কিওলজি এন্ড মিউজিয়াম, ঢাকা।
তথ্যসূত্র