ফিরদৌসী কাদরী
ফিরদৌসী কাদরী | |
---|---|
জন্ম | ৩১ মার্চ ১৯৫১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | রোগ-প্রতিরোধ বিদ্যা টিকা |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | আইসিডিডিআর,বি |
ফিরদৌসী কাদরী (জন্ম ৩১ মার্চ ১৯৫১) বাংলাদেশী প্রতিষেধকবিদ্যা এবং সংক্রামক রোগ গবেষণাকারী বিজ্ঞানী। তিনি প্রায় ২৫ বছর কলেরার টিকা উন্নয়নে কাজ করেছেন।[১] এছাড়া তিনি ইটিইসি, টাইফয়েড, হেলিকোব্যাকটের পলরি, রোটা ভাইরাস ইত্যাদি অন্যান্য সংক্রামক রোগে বিশেষজ্ঞ। তিনি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চের (আইসিডিডিআর,বি) মিউকোসাল ইমিউনোলজি এবং ভ্যাকসিনোলজি ইউনিটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গবেষণা ও প্রশিক্ষণে অনন্য অবদানের জন্য ২০১৩ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
তার বৈজ্ঞানিক সাফল্য আন্ত্রিক ও ডায়রিয়াজনিত প্রতিষেধক এবং টিকাসহ ভাইব্রিও কলেরা এবং এন্টারোঅক্সিজেনিক এসছতোছিয়া কোলাই — যেগুলো ডায়রিয়াসহ আন্ত্রিক রোগের প্রধান কারণ। তার প্রধান অধ্যয়নের বিষয় ছিল বাংলাদেশে হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি এবং টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের প্রতিক্রিয়ার উপর গবেষণা ও প্রতিষেধক প্রস্তুত।[১]
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]ফিরদৌসী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও আণবিক জীববিদ্যা বিভাগ থেকে ১৯৭৫ সালে বি.এসসি ও ১৯৭৭ সালে এম.এস ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন/প্রতিষেধকবিদ্যা বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। আইসিডিডিআর,বি’র প্রতিষেধকবিদ্যা বিভাগ থেকে পোস্টডক্টোরাল গবেষণা শেষ করার পর, তিনি একই প্রতিষ্ঠানে ১৯৮৮ সালে সহযোগী বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি একই প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী এবং মিউকোসাল ইমিউনোলজি এবং ভ্যাকসিনোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান।
গবেষণায় অবদান
[সম্পাদনা]ফিরদৌসীর প্রধান গবেষণার বিষয় হলো অন্ত্রের রোগ। বিশেষ করে ইমিউনোলজি, জিনোমিক্স, প্রোটোমিক প্রযুক্তি এবং ডায়াগনস্টিকস এবং ভ্যাকসিনে উন্নতি সাধন। তিনি বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের জন্য নতুন ধরনের সস্তা কলেরা টীকা উন্নয়নে কাজ করেছেন। তিনি ব্যয়বহুল ‘ডকোরাল’ টীকার পরিবর্তে ‘শানকল’ নামক একটি টিকা ঢাকায় ব্যবহার করে সফলতা লাভ করেন।[২][৩] পরবর্তীতে টিকাটি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
সম্মান ও পুরস্কার
[সম্পাদনা]২০০৮ সালে ফিরদৌসী বাংলাদশ বিজ্ঞান একাডেমির গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত হন।[৪] তিনি ২০০২ সালে উন্নয়নশীল দেশে সংক্রামক আন্ত্রিক রোগ গবেষণার জন্য ক্রিস্টোফ মেরিএউক্স পুরস্কার পান।[৫][৬] ২০১৩ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমীর বার্ষিক সি. এন. রাও পুরস্কার পান, যেটা তাওস থেকে দেওয়া হয়।[৭] জাতিসংঘের প্রস্তাবিত একটি প্রযুক্তি ব্যাংক এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের সাপোর্টিং ব্যবস্থাসমূহ সাংগঠনিকভাবে আরো কর্মক্ষম করে তুলেতে ২০১৪ সালে তাকে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্যানেলের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।[৮]
উন্নয়নশীল দেশে শিশুদের সংক্রামক রোগ চিহ্নিতকরণ ও বিশ্বব্যাপী এর বিস্তার রোধে প্রাথমিক চিকিৎসা কার্যক্রম এবং টিকাদান কর্মসূচি জোরদারে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ২০২০ সালে তিনি ‘লরিয়েল-ইউনেস্কো উইমেন ইন সায়েন্স অ্যাওয়ার্ড’ (এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল) লাভ করেন।[৯] ২০১৩ সালে অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার পান। তিনি রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার এ ভূষিত হন ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে। এছাড়া ২০২১ সালে, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়ীকিতে এশিয়ার শ্রেষ্ঠ ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় তিনি অন্তর্ভুক্ত হন। তিন। ২০২৩ স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত[১০]
সদস্য
[সম্পাদনা]ফিরদৌসী বাংলাদেশ আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজির আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রদূত[১১] এবং বাংলাদেশের বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য।[১২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "Dr Firdausi Qadri"। World Health Organization (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ "স্বল্পমূল্যের ভ্যাকসিনে কলেরা প্রতিরোধ"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-২৪।
- ↑ "দেশে প্রথমবারের মতো কলেরার টিকা"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-২৪।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "ICDDR,B team to aid relief efforts following Cyclone Aila"। icddr,b (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ http://www.institut-de-france.fr/sites/institut-de-france.fr/files/prix_merieux_2013_appel_candidatures_ang.pdf
- ↑ "Firdausi Qadri"। Institut de France: Grands Prix des Fondations (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Bangladeshi immunologist wins the C.N.R. Rao Prize"। The World Academy of Sciences (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Bangladeshi scientist Qadri named member of high-level UN panel"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ নভেম্বর ২০১৪।
- ↑ "বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরি পেলেন 'লরিয়েল-ইউনেস্কো' পুরস্কার"। ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ "3 Bangladeshi researchers named in Asian Scientist 100 list"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৪-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-০১।
- ↑ "Contact The ASM International Ambassador in Your Country!"। American Society for Microbiology (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Dr. Firdausi Qadri"। Bangladesh Academy of Science (ইংরেজি ভাষায়)। ১০ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।