পূর্ব পাকিস্তানে মানবাধিকার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পূর্ব পাকিস্তানে মানবাধিকার হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের পূর্বে পাকিস্তানের পূর্ব অংশ পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মানবাধিকারের অবস্থা। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে তাদের ভাষায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনের নামে গণহত্যা, ধর্ষণ এবং জনগণের সহায়-সম্পত্তি লুণ্ঠন ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলো। পাকিস্তান গঠনের পর বাংলা ভাষা আন্দোলনে গুলি চালিয়ে চারজন আন্দোলনকারীকে হত্যা করেছিল। সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরও নির্যাতন চালাতো।[১]

ভাষা আন্দোলন[সম্পাদনা]

পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর ১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। যখন পূর্ব পাকিস্তানি জাতীয় নেতারা চেয়েছিলেন কেবল উর্দুকেই জাতীয় ভাষা করা হবে, তখন বাঙালিরা বাংলাকে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা করার দাবি করেছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানে পুলিশ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ভীড়ে গুলি চালায় এবং চার জন নিহত হয়। পরের দিন পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং পুলিশ আবারও বিক্ষোভ হামলা করে যার ফলে বেশ কয়েকজন মৃত্যুবরণ করেন ও আহত হয়।[২]

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের[সম্পাদনা]

পাকিস্তানের সরকার ও সামরিক অভিজাতরা পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু সংখ্যালঘুটিকে পঞ্চম কলাম হিসাবে দেখতেন। পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতার কারণ হিসেবে তারা হিন্দুদের দোষ দিতো। জয়েন্ট ইলেক্টরেট পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত ভোটে ১৯৭০ সালের নির্বাচনটিতেই কেবলমাত্র জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত সংখ্যালঘু সদস্য পেয়েছিল। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী হিন্দুদের নির্যাতন করতো এবং বিহারীরা সেনাবাহিনীকে সমর্থন করেছিল। হিন্দুদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও হিমায়িত করা হয়েছিল।[৩]

এলজিবিটি অধিকার[সম্পাদনা]

প্রাক্তন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আইনের অধীনে এলজিবিটি সম্পর্কগুলো অবৈধ ছিল যা "অস্বাভাবিক যৌনতা" হিসেবে নিষিদ্ধ করেছিল।[৪]

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ[সম্পাদনা]

গণহত্যা[সম্পাদনা]

গণহত্যার অর্থ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সুরক্ষা স্থাপনা দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানে নির্বাচনী গণহত্যা বোঝায়। ট্যাঙ্ক বহর নিয়ে আক্রমণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র এবং কর্মচারীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল। সংবাদপত্র অফিস এবং হিন্দু পাড়াগুলিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে মানুষ খুন করেছিলো।[৫]

বুদ্ধিজীবীদের হত্যা[সম্পাদনা]

পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে বিলুপ্ত করার চেষ্টা করেছিল। একারণে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দু'দিন আগে ২০০ জন বুদ্ধিজীবীকে তাঁদের বাসা থেকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিলো। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ডাক্তার, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, প্রকৌশলী সহ এক হাজারেরও বেশি বুদ্ধিজীবী নিহত হয়েছিল।[৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. jugantor.com। "পাকিস্তানের কাছে ক্ষতিপূরণ ও পাওনা দাবির কর্মপত্র কোথায়? | বাতায়ন | Jugantor"jugantor.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-১৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. বশীর আল হেলাল (২০১২)। "ভাষা আন্দোলন"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  3. Ispahani, Farahnaz (২০১৫-১২-১০)। Purifying the Land of the Pure: Pakistan's Religious Minorities (ইংরেজি ভাষায়)। HarperCollins Publishers India। আইএসবিএন 9789351775539 
  4. Azhar, Mobeen (২০১৩-০৮-২৭)। "Gay Pakistan: Where sex is available and relationships are difficult"BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-০৮ 
  5. ফজলুল কাদের কাদেরী (২০১২)। "গণহত্যা, ১৯৭১"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  6. মুয়াযযম হুসায়ন খান (২০১২)। "বুদ্ধিজীবী হত্যা"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743