নিত্যানন্দ
শ্রী নিত্যানন্দ প্রভু | |
---|---|
![]() নবদ্বীপের নিতাই বাড়ির কাষ্ঠনির্মিত নিত্যানন্দ প্রভুর বিগ্রহ | |
জন্ম | ১৪৭৪ রাঢ়দেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
মৃত্যু | ১৫৪০ |
গুরু | মাধবেন্দ্র পুরী (মন্ত্র গুরু) |
দর্শন | ভক্তিযোগ, বেদান্ত দর্শন |
নিত্যানন্দ প্রভু (নিতাই নামেও পরিচিত) হলেন গৌড়ীয় বৈষ্ণবভাষ্য অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণের অগ্রজ বলরামের অবতার। তিনি ছিলেন শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর প্রধান ও অন্তরঙ্গ পার্ষদ বা সঙ্গী। তাদের দুজনকে একত্রে গৌর-নিতাই বা নিমাই-নিতাই নামে অভিহিত করা হয়। নিত্যানন্দ বৈষ্ণবীয় পঞ্চতত্ত্বের একজন।[১]
জন্ম ও শৈশব[সম্পাদনা]
তিনি ১৪৭৪ সালের মাঘ মাসে শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে বীরভূম জেলার একচক্রা গ্রামে হাড়াই পণ্ডিত ও পদ্মাবতীর গৃহে জন্মগ্রহণ করেন। [২]তার পূর্বনাম ছিল কুবের। তাঁর কয়েকজন ভাই ছিল।বৈষ্ণব ভজন গাওয়ার জন্য তাঁর নিষ্ঠা এবং দুর্দান্ত প্রতিভা খুব ছোটবেলা থেকেই প্রকাশ পেয়েছিল। তিনি ছেলেবেলায় অন্যান্য ছেলেদের সাথে ভগবান রামের লীলার পুনর্নির্মাণে রামের ছোট ভাই লক্ষ্মণের ভূমিকা পালন করতেন।
খুব অল্প বয়সেই (১২ বছর) গৃহত্যাগ করে তিনি সন্ন্যাসী লক্ষ্মীপতি তীর্থের সঙ্গে বিভিন্ন তীর্থস্থান ভ্রমণে বের হন।নিতাইয়ের বাবা সন্ন্যাসীকে উপহার হিসাবে কিছু দিতে চাইলে লক্ষ্মীপতি তীর্থ জবাব দিয়েছিলেন যে তীর্থস্থানে যাতায়াত করতে তাঁকে সহায়তা করার জন্য কারও প্রয়োজন এবং নিতাই এই কাজের জন্য নিখুঁত হবেন। যখন তিনি এ কথা বলেছিলেন হাড়াই পণ্ডিত নিতাই থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার চিন্তায় দুঃখ বোধ করছিলেন। তবে তিনি রাজি হয়েছিলেন।কারণ একজন সাধু ব্যক্তির অনুরোধ সর্বদা অত্যন্ত মঙ্গলজনক । নিতাই তাঁর ভ্রমণে তাঁর সাথে যোগ দিয়েছিলেন। এভাবে নিতাইয়ের দীর্ঘ শারীরিক ও আধ্যাত্মিক যাত্রা শুরু হয়েছিল। যা তাকে বৈষ্ণব মতের গুরুদের সাথে পরিচিত করায়। তিনি অবধুত সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী হন।[৩] এছাড়া লক্ষ্মীপতি তীর্থের বিখ্যাত শিষ্য মাধবেন্দ্র পুরী, অদ্বৈত আচার্য এবং চৈতন্য মহাপ্রভুর আধ্যাত্মিক গুরু ঈশ্বর পুরীর সাথে তার পরিচয় হয়।
বিয়ে ও বংশধর[সম্পাদনা]
মহাপ্রভুর নির্দেশে সংসারে কৃষ্ণ নাম প্রচারের জন্য ১৫১৯ সালে বর্ধমান জেলার সূর্যদাস সরখেলের দুই কন্যা বসুধা ও জাহ্নবী দেবীর পাণিগ্রহণ করেন নিত্যানন্দ।[৪]তখন তার বয়স ছিল ছাপ্পান্ন বছর। তার পর কুঞ্জবাটীতেই(বর্তমান খড়দহ) সংসার। প্রথম পক্ষের বসুধার গর্ভে একটি কন্যা গঙ্গা ও একটি পুত্র সন্তান(অষ্টম) বীরভদ্র গোস্বামীর জন্ম হয়। গঙ্গা মাতার সন্তান প্রেমানন্দ গোস্বামীর বংশধরগণ বর্তমানে বর্ধমান, বীরভুম, মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন তন্মধ্যে কাটোয়া, খেঁড়ুয়া, পাতাইহাট, কালিকাপুর , চারকলগ্রাম, মাজিগ্রাম, ভাল্যগ্রাম, গাজীপুর, দাঁইহাট,করুই, আটঘরা,সোনারুন্দী ইত্যাদি স্থান উল্লেখযোগ্য। ইহারা গঙ্গা মাতার বংশ ধর। এনাদের সেবিত ভ্রাম্যমাণ বিগ্রহ রাধামাধব, রাধারানী জগন্নাথ দেব।[৫]পরে বীরভদ্রকে তাঁর সৎ মা জাহ্নবী দেবী বৈষ্ণব আচারে দীক্ষা দিয়েছিলেন।[৬]ঝামটপুরের যদুনন্দন আচার্যের কন্যা শ্রীমতী ও নারায়ণীর সাথে বীরভদ্রের বিয়ে হয়।তাদের ও জাহুবী দেবী দীক্ষা দেন। [৭] জাহুবী দেবীর কোনো সন্তান না হওয়ায় তিনি বংশীবদনের পুত্র দত্তক নেন ।যার নাম রামচন্দ্র গোস্বামী (রামাই)। [৮]এনার বংশধররা হল খড়দহের গোস্বামীরা ।[৯]
ধর্মীয় অবদান[সম্পাদনা]
নবদ্বীপে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার পর উভয়ে মিলে কৃৃষ্ণ নাম/হরিনাম প্রচার করেন। তাকে পরমেশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ করুণাময় অবতার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[১০]
নিত্যানন্দ বন্দনাগীতি
"নিতাই পদ কমল কোটি চন্দ্র সুশীতল
যে ছায়ায় জগত জুড়াই
হেন নিতাই বিনে ভাই
রাধাকৃষ্ণ পাইতে নাই
দৃঢ় করি ধর নিতাই পাই।"
আজকের প্রচলিত গৌড়ীয় বৈষ্ণব মত মূলত তারই প্রচারিত। তিনি সমাজের সব শ্রেণীর লোকের কাছে বৈষ্ণব মতকে জনপ্রিয় করে তোলেন।তিনি ও তার সহচর দ্বাদশ গোপাল কৃষ্ণ নামে সবাইকে মাতোয়ারা করে তোলেন। নিজের শিষ্য বৃন্দাবনদাসকে তিনি চৈতন্যভাগবত রচনা করতে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন।[১১]
নিত্যানন্দ প্রভু খড়দহে দুর্গাপূজা শুরু করেন।তিনি কাত্যায়নী রূপে মা দুর্গার আরাধনা করেন।তার অনেক বংশধরের বাড়িতে আগে এই পূজা হত।এখন ও বড়বাড়ি এবং মেজোবাড়িতে এই পূজা হয়। এই পূজা শুরু হয় উলটো রথের দিন। এখানে মা দুর্গার দু পাশে জয়া,বিজয়া থাকে ।দেবীর বাহন সিংহের মুখ ঘোড়ার মত।এখানে চালকুমড়ো বলি দেয়া হয়। নিত্যানন্দ প্রভুর ১৪তম বংশধর সরোজেন্দ্রমোহন গোস্বামী আজও এই পূজা করে চলেছেন।[১২][১৩]
প্রয়াণ[সম্পাদনা]
১৫৪০ সালে তিনি পরলোক গমন করেন।[১৪]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ Sen, D. and Sen, D. C. (1917). "Chaitanya and His Companions". Being Lectures Delivered at the University of Calcutta as Ramtanu Lahiri Research Fellow for 1913-14. University of Calcutta.
- ↑ "Bartaman Patrika"। bartamanpatrika.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১৯।
- ↑ "Log into Facebook"। Facebook (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১৯।
- ↑ অনলাইন, খবর (২০২১-০২-২৩)। "নিত্যানন্দের আবির্ভাবতিথি উপলক্ষ্যে মহোৎসব খড়দহে, ৭ মার্চ ১০০ মহিলা খোলবাদক নিয়ে নগরপরিক্রমা"। KhaborOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১৯।
- ↑ "নবাব প্রাসাদের পাথর থেকে শ্রীশ্যামসুন্দর"।
- ↑ Sen, Sukumar (1991, reprint 2007). Bangala Sahityer Itihas, Vol.I, (বাংলা ভাষায়), Kolkata: Ananda Publishers, আইএসবিএন ৮১-৭০৬৬-৯৬৬-৯, pp.236, 321-2
- ↑ mysepik (২০২০-১২-১২)। "খড়দহে নিত্যানন্দ, জাহ্নবাদেবী ও বীরভদ্রের কথা"। mysepik.com – Bengali Online News Portal (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১৯।
- ↑ বৈষ্ণব আন্দোলনে জাহুবা দেবীর অবদান - মুগ্ধ মজুমদার
- ↑ "প্রভু নিত্যানন্দ । Lord Nityananda । নিত্যানন্দ । Nityananda"। Bengali Kirtan (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-১১-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১৯।
- ↑ Rosen, S.J. (2004). "Who Is Shri Chaitanya Mahaprabhu". The Hare Krishna Movement: the Postcharismatic Fate of a Religious Transplant. আইএসবিএন ৯৭৮-০-২৩১-১২২৫৬-৬.
- ↑ "বিকল্প বিশ্বম্ভর হয়ে ওঠেন নিত্যানন্দ"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১৯।
- ↑ "নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর হাত ধরে শুরু, পাঁচ শতকেও অমলিন খড়দহের মেজোবাটির পুজো"। Indian Express Bangla। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১৯।
- ↑ অনলাইন, খবর (২০২০-০৮-০১)। "সপ্তমীতে থানকাপড়ে সিঁদুর দিয়ে কলাবউকে সাজানো হয় খড়দহের নিত্যানন্দপ্রভুর প্রতিষ্ঠিত দুর্গাপুজোয়"। KhaborOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১৯।
- ↑ "Log into Facebook"। Facebook (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১৯।