নড়াগাতী থানা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(নড়াগাতী থানা্‌ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

নড়াগাতী থানা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলাধীন একটি থানা। নড়াইল-১ (৯২ নং আসন) সংসদীয় আসনের আওতাভূক্ত। এই থানায় দুটি কলেজ (বড়দিয়া মুন্সী মনিক মিয়া ডিগ্রী কলেজ ও নড়াগাতী কলেজ) সহ বহুসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। নড়াগাতী থানার বিখ্যাত দুটি বাজার (হাট) হচ্ছে- মধুমতি নদীর তীরে যোগানিয়া বাজার ও মধুমতি ও নবগঙ্গা নদীর মোহনায় বড়দিয়া বাজার। এছাড়া মধুমতি ও নবগঙ্গা নদীর মোহনায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী মহাজন বাজার এই থানার অন্তর্ভুক্ত।

নামকরনের ইতিহাস[সম্পাদনা]

ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে আনুমানিক ১০ লক্ষ বৎসর পূর্বে গঙ্গা নদী প্রবাহিত পলিমাটি দ্বারা গাঙ্গেয় বদ্বীপ সৃষ্টি হয়। সমগ্র বঙ্গে নড়াইল জেলা ও দক্ষিণ বঙ্গের ব-দ্বীপের অন্তর্গত এক ভূখণ্ড।” নড়াইল নামের কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। কিংবদন্তি আছে যে হযরত খানজাহান আলী (রা:) দক্ষিণ বঙ্গে ইসলাম প্রচার করতে এসে খলিফাতাবাদ রাজ্য স্থাপন করেছিলেন এবং রাজধানী স্থাপন করেছিলেন বাগেরহাটে। বাগেরহাটে তাঁর মাজার আছে। খলীফাতাবাদ রাজ্যের সীমানা বা আয়তন কতটুকু ছিল তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। অনেকের মতে, খলিফাতাবাদ রাজ্যের উত্তর অংশের সীমান্ত ছিল আজকের নড়াইল এলাকা। এ রাজ্যের সীমান্ত প্রহরী ছিল। সীমান্ত রক্ষীরা যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী ছিল। তাই লোকে তাদেরকে “লড়ে” বলত। “লড়ে” একটি আঞ্চলিক শব্দ। “লড়ে” শব্দটিকে সাধারণ মানুষ বুঝতো - যারা লড়াই করে। আর নড়াইল এলাকা হযরত খানজাহান আলী (রা:) এর সময় খাল-বিল ও নদী নালায় ভরপুর ছিল। তাই লড়েরা উঁচু আইল তৈরী করে তার ওপর দিয়ে সীমান্ত পাহারা দিতো। লোকে এই আইলকে নাম দিয়েছিল “লড়ে আল”। পরবর্তী সময়ে ‘লড়ে আল’ থেকে নড়াইল নাম হয়েছে। আর লড়েরা সেখানে এক পর্যায়ে বসবাস শুরু করে এবং সেখানে গ্রাম গড়ে ওঠে। লোকে গ্রামের নাম দেয় ‘লড়ে গাতী’। গাতি শব্দের অর্থ গ্রাম। ‘লড়েগাতি’ পরবর্তী সময়ে ‘নড়াগাতী' হয়েছে।

অবস্থান[সম্পাদনা]

নড়াগাতি থানার পশ্চিম দিকে নড়াইল এর কালিয়া থানা, দক্ষিণ দিকে খুলনার তেরখাদাবাগেরহাট এর মোল্লাহাট থানা, পূর্ব-উত্তর দিকে গোপালগঞ্জ সদর থানা ও উত্তর দিকে নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানা অবস্থিত।

ইউনিয়নসমূহ[সম্পাদনা]

নড়াগাতী থানার ছয়টি ইউনিয়নঃ

সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন[সম্পাদনা]

১/নবীন মাঝি সংগঠন।

২/ আর.এল.টি (রামপুর লিটিল টাইগার)।ক্রিকেট,ফুটবল,ভলিবল,ব্যাডমিন্টন সহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার চর্চা

৩/ এনটিসি (নড়াগাতী টাউন ক্লাব)। ক্রিকেট,ফুটবল,ভলিবল,ব্যাডমিন্টন সহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার চর্চা এবং প্রশিক্ষন দেওয়া

৪/ ডিসিসি (ডুমারিয়া ক্রিকেট একাদশ)

৫/ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী। বাংলাদেশের সর্ববৃহত সাংস্কৃতিক সংগঠনের দুইটি শাখা রয়েছে। (নড়াগাতী এবং বড়দিয়া)।

৬/ সত্যেন সেন সঙ্গীত একাডেমী।

৭/ আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ:) স্মৃতী পাঠাগার।

৮/ রনেশ দাস স্মৃতি পাঠাগার।

৯/ ঐক্যতান থিয়েটার।

১০/ এল.জে সাইন্স হাউস।

১১/ শামসুল হক শেখ ফাউন্ডেশন

নদ-নদী[সম্পাদনা]

মধুমতি,নবগঙ্গা,চিত্রা এবং আঁঠারোবাকি।

নড়াগাতী থানার উত্তর পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে মধুমতি নদী (বড়দিয়া থেকে চাপাইল পর্যন্ত), থানার দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে নবগঙ্গা নদী যা বড়দিয়া বাজার থেকে কালিয়া হয়ে পশুর নদীতে সংযুক্ত হয়েছে,নবগঙ্গার একটি শাখা যা কলাবাড়িয়া ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়েছে চিত্রা নদী যা পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হওয়া আঁঠারোবাকি নদীর সাথে মিলিত হয়েছে (এই নদীর নাম পূর্বে ছিল আঠাঁরোবাকি যা বর্তমানে চিত্রা নদী হিসেবে নামকরন করা হয়েছে)।

নড়াগাতী থানার উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত নদী মধুমতি যা দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গার সাথে যুক্ত হয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের শাসন আমলে মধুমতি এবং নবগঙ্গা পাশাপাশি বয়ে চললেও এদের সংযুক্তি ছিলনা। খুলনা থেকে আসা নৌ-যান চলাচলের সুবিদার্থে ফোর্ট উইলিয়াম সাহেব নবগঙ্গা এবং মধুমতি নদীর মধ্যকার প্রায় আধা কিলোমিটার জায়গা খনন করে দুই নদী যুক্ত করে দেয়। কৃত্তিম ভাবে খনন করা অংশের নাম ছিল 'ফোর্ট উইলিয়াম ক্যানেল' যা বর্তমানে ত্রি-মোহনা হিসেবে চিহ্নিত। ত্রি-মোহনা থেকে পূর্বদিকের আধা কিলোমিটার নদীই মূলত 'ফোর্ট উইলিয়াম ক্যানেল' যা ওয়াপদার তৎকালীন কাগজপত্রে পাওয়া যায়।