নজির আহমেদ
নজির আহমেদ | |
---|---|
জন্ম | এপ্রিল ১৯১৮ |
মৃত্যু | ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩ |
মাতৃশিক্ষায়তন | ফেনী কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
নজির আহমেদ চল্লিশের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রনেতা ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার তিনি প্রথম শিকার। নজির আহমেদ ফেনী জেলার আলিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক পাস করার পর ১৯৩৯ সালে ফেনী কলেজ থেকে আই এ পাস করেন। আই এ পাসের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।[১]
জন্ম ও বংশ পরিচয়
[সম্পাদনা]শহীদ নজীর আহমদের জন্ম বাংলা ১৩২৪ সনের চৈত্র মাসে (১৯১৮ সনের এপ্রিল)। ফেনী জিলার দক্ষিণ আলিপুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান হইয়াও তিনি বাল্যকাল হইতেই নিষ্ঠা আর প্রতিভার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখেন। তাঁহার বংশপরিচয় যতদুর জানা যায় তাহাতে দেখা যায় – তাঁহার পিতৃকূল বিভিন্ন সদগুণাবলীর জন্য স্থানীয়ভাবে পরিচিত ছিলেন।
শিক্ষা
[সম্পাদনা]শহীদ নজীর আহমদের শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গৃহে। স্থানীয় প্রথামত তিনি প্রথমে আরবী ও কু’রআন শিক্ষা করেন। অতঃপর স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। দরিদ্রতার কারণে তাঁহার শিক্ষাজীবন শুরু হয় কষ্টের মধ্যে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি হাইস্কুলে ভর্তি হন। আর্থিক অনটন আর প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি হয়েও তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৩৭ সালে তিনি বৃত্তিসহ প্রবেশিকা পাস করেন। ১৯৩৯ সালে ফেনী কলেজ হতে আই.এ পাস করে তিনি ঢাকা আসেন। ঐ বৎসরই তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্র হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে সম্মান পরীক্ষার উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৩ সালে তাহর এম. এ পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু সাম্প্রদায়িক হিন্দু দাঙ্গাবাজদের হাতে নিহত হওয়ায় সেই পরীক্ষা আর দেয়া হয় নাই।[২][৩]
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা
[সম্পাদনা]১৯৪৩ সালের জানুয়ারির শেষদিকে ছাত্রীদের একটি অনুষ্ঠানে 'বন্দে মাতরম' গাওয়া এবং পূজার্চনা বিধিকে কেন্দ্র করে হিন্দু এবং মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু ও মুসলমান ছাত্ররা মোটাদাগে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
ফেব্রুয়ারির ২ তারিখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন—বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজের পুরাতন ভবনে—ক্লাস চলছিল। [৪]প্রায় দুই ঘন্টা দাংগা চলিতে লাগিল। আমি কিছুতেই ছাত্রদিগকে থামাইতে পারিতেছিলাম না।নজীর সেখানে উপস্থিত ছিল না। সন্ধ্যা বেলায় সে কোথা হইতে আসিয়া মুসলিম ছাত্রদের আপন আপন ছাত্রাবাসে ডাকিয়া লইয়া গেল। সাপুড়িয়ার মন্ত্রে যেন তাহারা উদ্যত ফনা নত করিয়া চলিয়া গেল।
পূর্বের ঘটনার জের ধরে ক্লাস চলাকালীন হিন্দু ও মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে শুরু হলো সহিংসতা। লাঠিসোটা নিয়ে একদল আরেক দলের ওপর হামলা করে। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দুই দল আবির্ভূত হয় সম্মুখ সমরে। দুই দলেরই বেশ কিছু ছাত্র আহত হয়। মুসলিম ছাত্রনেতা নজির আহমদ প্রতিপক্ষের হামলায়, ছুরিকাঘাতে আহত হন।[৫]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারির ২ তারিখ হিন্দু ও মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে সহিংসতা চলাকালীন সময়ে তিনি ছুরিকাঘাতে আহত হন। তার বন্ধুরা তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করে কিন্তু বিরতিহীন রক্তক্ষরণের ফলে মাগরিবের সময় তিনি ইন্তেকাল করেন। বাংলা বিভাগের শিক্ষক কবি জসীম উদ্দীন সারাদিন তার শয্যাপাশে ছিলেন।[৫] নজীর আহমেদের স্মরণে কবি জসীম উদ্দীন একটি কবিতাও রচনা করেছিলেন। যেটি ১৯৪৪ সালে সৈয়দ আলী আহসান সম্পাদিত পাকিস্তান পাবলিশিং হাউস(কলিকাতা) ছাপানো হয়। কবিতাটি একটি চরণে ছিলো;
“ | নজীরের বাপ ফিরিয়া যাইবে আবার আপন ঘরে নজীরের সেই শূন্য বিছানা বাক্স সঙ্গে ক'রে। |
” |
বন্ধু বিয়োগে
—জসীম উদ্দীন
কিংবদন্তি
[সম্পাদনা]ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্ররা ২ ফেব্রুয়ারি কে শহীদ নজির দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং ১৯৪৩ থেকে শহীদ নজির দিবস উদযাপন করা শুরু করে। এছাড়াও শহীদ নজিরের স্মৃতি রক্ষায় তার বন্ধুরা সিদ্দিকবাজারে 'শহীদ নজির লাইব্রেরি' নামে একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৯৪৪ সালে সৈয়দ আলী আহসানের সম্পাদনায় 'নজীর আহমদ' নামে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। উক্ত স্মারকগ্রন্থে আলী আহসানের তিনটি, সাজ্জাদ হোসায়েনের একটি, বেনজীর আহমদের একটি এবং অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের একটি প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত হয়। শহীদ নজিরের অন্তিমকালে তার শিয়রে থাকা কবি জসীম উদ্দীন একটি কবিতাও লিখেছিলেন।[৫]
সূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ রফিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশি বছর, পৃষ্ঠা: ১০৭,আইএসবিএন ৯৮৪-৭০১০৫০৪৮২-৮ {{আইএসবিএন}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: অবৈধ উপসর্গ
- ↑ ইসলামী বিশ্বকোষ। ১৩। ঢাকা: বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ডিসেম্বর ১৯৯২। পৃষ্ঠা ৬১৭–৬১৮।
- ↑ Ahmad, Kamruddin (১৯৭৫)। A Socio Political History of Bengal and the Birth of Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। Zahiruddin Mahmud Inside Library। পৃষ্ঠা ৫২–৫৩।
- ↑ কাউস, কায় (১৫ আগস্ট ২০২৪)। ইতিহাসের ছিন্নপত্র। বাংলাবাজার, সূত্রাপুর, ঢাকা,বাংলাদেশ: গার্ডিয়ান পাবলিকেশনস। পৃষ্ঠা ১৭৯। আইএসবিএন 9789848254790।
- ↑ ক খ গ "ছাত্ররাজনীতির প্রথম শহীদ নজির আহমদ"। দ্য ডেইলি স্টার। ৭ এপ্রিল ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০২৪।

এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |