ধলাটুপি পায়রা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ধলাটুপি পায়রা
Columba punicea
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Columbiformes
পরিবার: Columbidae
গণ: Columba
প্রজাতি: C. punicea
দ্বিপদী নাম
Columba punicea
(Tickell in Blyth, 1842)[১]
প্রতিশব্দ

Alsocomus puniceus

ধলাটুপি পায়রা (বৈজ্ঞানিক নাম: Columba punicea) (ইংরেজি: Pale-capped Pigeon) বা গোলাপি কবুতর Columbidae (কলাম্বিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Columba (কলাম্বা) গণের এক প্রজাতির বুনো পায়রা।[২][৩] ধলাটুপি পায়রার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বেগুনি পায়রা (ল্যাটিন: columba = পায়রা, puniceus = বেগুনি)।[৩] সারা পৃথিবীতে প্রায় ২ লাখ ৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এদের আবাস।[৪] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে ক্রমেই কমে যাচ্ছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে সংকটাপন্ন বলে ঘোষণা করেছে।[৫] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩] পৃথিবীতে আনুমানিক ৩৫০০-১৫,০০০টি ধলাটুপি পায়রা রয়েছে। এদের মধ্যে আনুমানিক ২৫০০-১০,০০০টি পূর্ণবয়স্ক পায়রা।[৪] ধলাটুপি পায়রা একপ্রজাতিক, অর্থাৎ এদের কোন উপপ্রজাতি নেই।

বিস্তৃতি[সম্পাদনা]

ধলাটুপি পায়রার মূল আবাস দক্ষিণদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। একসময় বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনামকম্বোডিয়ার ঘন বনাঞ্চলসমূহে এরা সন্তোষজনক পর্যায়ে থাকলেও বর্তমানে এসব দেশে এরা খুব কম সংখ্যায় অবশিষ্ট রয়েছে। চীনের হাইনান দ্বীপ ও দক্ষিণ-পূর্ব তিব্বতে একসময় এদের দেখা গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে এদের দেখতে পাওয়ার কোন রেকর্ড নেই; দেশটিতে সম্ভবত প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়েছে। মালয় উপদ্বীপে পাখিটি অনিয়মিত। ভারতের উড়িষ্যা ও তৎসংলগ্ন এলাকা এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে এদের খুব কম সংখ্যায় দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রধানত সিলেটের চিরসবুজ বনে এদের দেখা মেলে।[৪][৫]

বিবরণ[সম্পাদনা]

ধলাটুপি পায়রা সাদা মাথাওয়ালা বাদামি বৃক্ষচারী পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৩৬ সেন্টিমিটার, ডানা ২২ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ১.৬ সেন্টিমিটার, পা ২.৪ সেন্টিমিটার ও লেজ ১৬.৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৪৪০ গ্রাম।[৩] পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখির চেয়ে দেখতে একটু আলাদা। পুরুষ পায়রার মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পেছনটা ধূসরাভ-সাদা। ঘাড়ের দিকে আঁশের মত সাজানো একগুচ্ছ পালক থাকে। কাঁধ-ঢাকনি ও ডানার পালক-ঢাকনি মেরুন-বাদামি রঙের, তার উপর সবজে-বেগুনি উজ্জ্বল আভা থাকে। ডানার প্রান্তের পালকগুলো ও কোমর কালচে স্লেট-রঙা। লেজ কালচে বাদামি। গলা, ঘাড়ের উপরিভাগ ও দেহতলের অবশেষ আঙুর ও তামাটে রঙের মেশানো। লেজতল-ঢাকনি কালচে স্লেট-ধূসর। স্ত্রী পায়রা কিছুটা ছোট ও অনুজ্জ্বল। মাথা চকচকে ফিকে পাটল-বেগুনির মিশ্রণসহ বাদামি-ধূসর। পুরুষ পাখি স্ত্রী উভয় পাখিরই চোখ হালকা পীত-হলুদ। চক্ষুগোলকের চামড়া নীল ও লালে মেশানো। চোখের কিনারা অত্যধিক উজ্জ্বল। ঠোঁট ও নখর ফিকে শিঙ-রঙের। ঠোঁটের গোড়া গোলাপি ও অন্যসব কবুতরের মত মাংসল পিণ্ডযুক্ত। পা ও পায়ের পাতা গাঢ় লাল। অপ্রাপ্তবয়স্ক ধলাটুপি পায়রার কপাল হালকা ধূসর রঙের। মাথার টুপি তামাটে বাদামি। পিঠ বাদামি ও ডানার প্রান্ত তামাটে রঙের। দেহতল ধূসর ও লালচে রঙে মেশানো।[২][৩]

স্বভাব[সম্পাদনা]

বিচরণস্থল[সম্পাদনা]

ধলাটুপি পায়রা প্রধানত চিরসবুজ বনের পাখি। সমতলভূমি, পাহাড়ের পাদদেশ ও উঁচু পাহাড় চূড়া, সবখানেই এদের অবাধ বিচরণ। এছাড়া বনসংলগ্ন ঘাসবন, প্রান্তর, ফসলি জমি, নদীতীর ও সাগর-সৈকতেও এদের ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। ঘন বাঁশবন এদের আরেকটি প্রিয় আবাস।[৪] প্যারাবনেও সচরাচর এদের দেখা মেলে। সাধারণত সমূদ্রসমতল থেকে প্রায় ১৬০০ মিটার পর্যন্ত এদের বিচরণ সীমাবদ্ধ।[৬] এরা ধীর তালে শক্তিশালী ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে চলে। নরম স্বরে বিড়ালেরমত ডাকে।[৩]

খাদ্যাভ্যাস[সম্পাদনা]

ধলাটুপি পায়রা ফলভোজী। গভীর বনের পড়ে থাকা পাকা ফল খেয়েই এরা জীবনধারণ করে। তবে যে কোন ধরনের শস্যও এরা খেতে পারে। এছাড়া খাদ্যতালিকায় রয়েছে বীজ, কচি গুল্মে র ডগা, ধান, বাজরা, বাঁশবীজ, ডুমুর, জাম ইত্যাদি।[৩] অন্যসব কবুতর জাতীয় পাখির মত এরাও পানি শুষে পান করে, মুরগির মত পানি মুখে নিয়ে মাথা উঁচু করে গলাধকরণ করে না।[৬]

প্রজনন[সম্পাদনা]

সাধারণত মে থেকে আগস্ট মাস এদের প্রজনন ঋতু। স্থানভেদে প্রজনন মৌসুমে বিভিন্নতা দেখা যায়। এরা মূলত মাটি থেকে ২ মিটারের মধ্যে এলোমেলো বাসা করে। তবে উঁচু গাছ বা বাঁশঝাড়েও বাসা করতে পারে। সবসময় ঘন জঙ্গলে বাসা করে। বাসার মূল উপকরণ হল পাতা, তৃণ, কঞ্চি ও খড়। বাসার গড় পরিধি ২০-২৩ সেন্টিমিটার ও গভীরতা ৫-১০ সেন্টিমিটার হয়।[৬] বাসা বানানো হয়ে গেলে ১-২টি সাদা রঙের প্রায় গোলাকৃতির ডিম পাড়ে। ডিমের মাপ ৩.৭ × ২.৯ সেন্টিমিটার।[৩] পুরুষ ধলাটুপি পায়রাই ডিমে বেশি তা দেয়।

পরিযায়ন[সম্পাদনা]

কোন কোন জায়গায় এরা স্থানিক হলেও বাংলাদেশ, মায়ানমার ও থাইল্যান্ডে এরা পরিযায়ন করে বলে জানা গেছে। সে হিসাবে ধলাটুপি পায়রা স্বল্পদৈর্ঘ্যের পরিযায়ী।[৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Blyth,E (১৮৪২)। "Report of the Curator of the Museum of the Asiatic Society of Bengal"J. Asiatic Soc. Bengal11: 444–470। 
  2. রেজা খান, বাংলাদেশের পাখি (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৮), পৃ. ২৪১।
  3. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ৪২৯।
  4. Columba punicea ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে, BirdLife International এ ধলাটুপি পায়রা বিষয়ক পাতা।
  5. Columba punicea[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], The IUCN Red List of Threatened Species এ ধলাটুপি পায়রা বিষয়ক পাতা।
  6. Columba punicea, ধলাটুপি পায়রা সম্পর্কিত তথ্যাবলী।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]