ধলাগলা লেজনাচানি
ধলাগলা লেজনাচানি | |
---|---|
ধলাগলা লেজনাচানি | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Passeriformes |
পরিবার: | Rhipiduridae |
গণ: | Rhipidura |
প্রজাতি: | R. albicollis |
দ্বিপদী নাম | |
Rhipidura albicollis (Vieillot, 1818) | |
প্রতিশব্দ | |
Platyrhynchus albicollis |
ধলাগলা লেজনাচানি (বৈজ্ঞানিক নাম: Rhipidura albicollis) (ইংরেজি: White-throated Fantail), সাদাগলা লেজনাচানি, ধলাগলা ছাতিঘুরুনি বা চাক দোয়েল Rhipiduridae (রিপিডুরিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Rhipidura (রিপিডুরা) গণের এক প্রজাতির ছোট ছটফটে পাখি।[১][২] ধলাগলা লেজনাচানির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সাদাগলার পাখা-লেজ (গ্রিক rhipis = পাখা, oura = লেজ; ল্যাটিন albus = সাদা, collis = গলার)।[২] সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ৫৪ লাখ ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।[৩] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে, আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছে নি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[৪] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[২]
বিস্তৃতি
[সম্পাদনা]দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ জুড়ে ধলাগলা লেজনাচানির বিচরণ। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও চীন এই প্রজাতিটির মূল আবাসস্থল।[৪]
উপপ্রজাতি
[সম্পাদনা]ধলাগলা লেজনাচানির নয়টি উপপ্রজাতি এ পর্যন্ত শনাক্ত করা গেছে।[৫] উপপ্রজাতিগুলো হল:
- R. a. canescens ( Koelz, 1939) - হিমালয়ের পাদদেশ থেকে উত্তর-পূর্ব পাকিস্তান ও পূর্ব কাশ্মীর হয়ে পশ্চিম নেপাল পর্যন্ত এদের বিস্তৃতি।
- R. a. albicollis (Vieillot, 1818) - মধ্য হিমালয় পর্বতমালা (নেপাল ও সিকিম), বাংলাদেশের সমতল ভূমি, দক্ষিণ ও পূর্ব ভারত (পশ্চিমবঙ্গের নিম্নাঞ্চল)। নিম্নভূমিতে এরা প্রজনন করে না।
- R. a. orissae (Ripley, 1955) - পূর্ব-মধ্য ভারত (পূর্ব মধ্য প্রদেশ, দক্ষিণ বিহার ও উড়িষ্যা)।
- R. a. stanleyi (Stuart Baker, 1916) - পূর্ব হিমালয় (সিকিম), দক্ষিণ ও পূর্ব বাংলাদেশ হয়ে উত্তর-পূর্ব ও পূর্ব মায়ানমার জুড়ে এদের বিস্তৃতি।
- R. a. celsa (Riley, 1929) - দক্ষিণ-পূর্ব তিব্বত, মায়ানমার (পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল বাদে), দক্ষিণ চীন (দক্ষিণ সিচুয়ান প্রদেশ, ইউনান প্রদেশ, গুয়াংজি প্রদেশ, জিজ্যাং প্রদেশ ও হাইনান দ্বীপ), থাইল্যান্ড (দক্ষিণাঞ্চল বাদে) এবং উত্তর ইন্দোচীন জুড়ে এদের বিস্তৃতি।
- R. a.cinerascens (Delacour, 1927) - প্রধান আবাস দক্ষিণ ইন্দোচীন।
- R. a.atrata (Salvadori, 1879) - থাই উপদ্বীপের দক্ষিণাংশ, মালয় উপদ্বীপ ও সুমাত্রায় এদের দেখা যায়।
- R. a.kinabalu (Chasen, 1941) - উত্তর বোর্নিওর পাহাড়ি অঞ্চলে এদের বিস্তৃতি।
- R. a.sarawacensis (Chasen, 1941) - প্রধান আবাস পশ্চিম বোর্নিও।
বিবরণ
[সম্পাদনা]প্রজাতিটির ইংরেজি ও বাংলা নাম থেকেই এর শারীরিক গঠন ও স্বভাব-চরিত্র সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। ধলাগলা লেজনাচানি ছড়ানো লেজ ও ঝোলানো ডানার ছটফটে ছোট পতঙ্গ-শিকারী পাখি। এদের দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৭ সেন্টিমিটার, ডানা ৮ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ১.৫ সেন্টিমিটার, পা ২ সেন্টিমিটার ও লেজ ১০ সেন্টিমিটার। ওজন মাত্র ১১ গ্রাম।[২] স্ত্রী ও পুরুষ পাখির আকার ও চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির থুতনি ও গলা সাদা। এছাড়া দেহের সর্বত্রই স্লেট ধূসর রঙের। ডানা, মাথার চাঁদি, ঘাড়ের পিছনের অংশ ও কাঁধ ঢাকনি স্লেট ধূসর। লেজ কালচে-স্লেট রঙের। লেজ ছড়ালে এর কেন্দ্রের পালক জোড়া ছাড়া আগা স্পষ্ট সাদা দেখায়। মুখে সাদা পট্টি ও কান-ঢাকনির ওপর সরু সাদা ভ্রু-রেখা দৃশ্যমান। চোখ বাদামি। ঠোঁট কিছুটা বাদামি-কালো। পা, পায়ের পাতা ও নখর শিঙ-বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ অপেক্ষাকৃত বাদামি। আর ডানার গোড়ার পালকের আগা ও ডানার পালক-ঢাকনি লালচে।[২] উপপ্রজাতিভেদে আকার ও রঙে ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
স্বভাব
[সম্পাদনা]ধলাগলা লেজনাচানি সাধারণত হালকা বন, ছায়াঘেরা ঝোপ-ঝাড়, বাঁশবন ও বাগানে বিচরণ করে। সচরাচর একা কিংবা জোড়ায়-জোড়ায় থাকে। গাছের এক ডাল থেকে আরেক ডালে ডাইভ দিয়ে পোকা শিকার করে। উড়ন্ত অবস্থায় এক স্থানে স্থির ভাবে অনেক্ষণ থাকতে পারে। গাছে গাছে বিরামহীন ভাবে উড়ে উড়ে শিকার খোঁজে। এরা পুরোপুরু পতঙ্গভূক। খাদ্যতালিকায় রয়েছে নানা জাতের ডানাওয়ালা পতঙ্গ। খাবার খোঁজার সময় এরা অবিরাম দেহ ঘোরায়, লেজ মেলে ধরে ও ডানা নামায়। কর্কশ কণ্ঠে বার বার ডাকে: চিক...চিক...।[২] তবে কোন কোন উপপ্রজাতির ডাক বেশ সুরেলা ও ছন্দযুক্ত।
প্রজনন
[সম্পাদনা]আগস্ট মাস এদের প্রধান প্রজনন মৌসুম। এ সময় এরা একাধিক বার বাসা করে। পূর্বরাগে এরা নিচু সরে ডাকে: ট্রি-রিরি-রিরি.....। উঁচু কঞ্চি বা গাছের চেরা ডালে বাসা করে। বাসা পেয়ালাকৃতির। ভূমি থেকে বাসার উচ্চতা ২ থেকে ৩ মিটার উঁচুতে হয়। বাসার ভিত্তি হল পত্রগুচ্ছ। বাসার অন্যান্য উপকরণ হল ঘাস, আঁশ ও শুকনো তৃণ। এছাড়া বাসায় মাকড়সার জালের আস্তর থাকে। কেবল স্ত্রী লেজনাচানি বাসা বানায়। বাসা বানানো হলে ৩টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা রঙের। ডিমের মাঝখানে বাদামি ছিটের বলয় থাকে। ডিমের মাপ ১.৭ × ১.৩ সেন্টিমিটার। ১২-২৪ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। বাবা-মা উভয়ে ছানাদের খাওয়ানোর ভার নেয়। ১৩-১৫ দিনে ছানারা বাসা ছাড়ে।[২]
-
ধলাগলা লেজনাচানির বাসা
-
বাসা
-
তা দিচ্ছে লেজনাচানি
-
ডিম
-
ছানাসহ বাসা
-
কুমায়ুনের সাততালে ধলাগলা লেজনাচানি
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ রেজা খান, বাংলাদেশের পাখি (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৮), পৃ. ৮৫।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ৩৪২।
- ↑ Rhipidura albicollis ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে, BirdLife International এ ধলাগলা লেজনাচানি বিষয়ক পাতা।
- ↑ ক খ Rhipidura albicollis[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], The IUCN Red List of Threatened Species এ ধলাগলা লেজনাচানি বিষয়ক পাতা।
- ↑ White-throated Fantail, The Internet Bird Collection এ ধলাগলা লেজনাচানি বিষয়ক পাতা।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ধলাগলা লেজনাচানি বিষয়ক আরও তথ্য, Encyclopedia of Life.
- আইইউসিএন লাল তালিকার ন্যূনতম উদ্বেগজনক প্রজাতি
- এশিয়ার পাখি
- ভারতের পাখি
- বাংলাদেশের পাখি
- পাকিস্তানের পাখি
- নেপালের পাখি
- ভুটানের পাখি
- মিয়ানমারের পাখি
- থাইল্যান্ডের পাখি
- মালয়েশিয়ার পাখি
- ইন্দোনেশিয়ার পাখি
- কম্বোডিয়ার পাখি
- লাওসের পাখি
- ভিয়েতনামের পাখি
- চীনের পাখি
- ১৮১৮-এ বর্ণিত পাখি
- হিমালয়ের পাখি
- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাখি