ত্রিপুরা কৃষক সমিতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ত্রিপুরা কৃষক সমিতি বৃহত্তর কুমিল্লা তথা কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে গঠিত ত্রিপুরায় জেলায় বিশেষভাবে সংগঠিত কৃষক সংগঠন। ১৯১৯ সালে বেঙ্গল লেজিসলেটিভের কাউন্সিল সদস্য মৌলভী এমদাদুল হক এটি প্রতিষ্ঠা করেন।[১]

গঠন প্রক্রিয়া[সম্পাদনা]

কৃষক সমিতি শুরুতে গ্রামীণ সমবায়কে জোরদার করার সংগঠন হিসেবে গঠিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত এটি বাংলার প্রাদেশিক কংগ্রেসের স্থানীয় বামপন্থী রাজনীতিবদের দ্বারা পরিচালিত আমূল সংস্কারবাদী সংগঠনে হিসেবে রূপ নেয়। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৫ পর্যন্ত মহামন্দার সময়টা ছিল কৃষকদের জন্য খুবই দুর্দশার দিন। তখন ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের সদস্য মুখলেসুর রহমান, কামিনী কুমার দত্ত ও আবদুল মালেকের নেতৃত্বে এ সংগঠন পুনর্গঠন হয়।[১]

নামকরণ[সম্পাদনা]

কুমিল্লার উকিল সম্প্রদায়ের নামজাদা সদস্য ও বামপন্থি সংগঠনের নেতা কামিনীকুমার দত্ত ছিলেন সমিতির প্রধান সংগঠক ও অর্থের যোগানদাতা। তিনি সমিতিকে তাত্ত্বিক বিষয়ে বুদ্ধী পরামর্শ দিতেন। তখনকার রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক ভিত্তি প্রশস্ত করার উদ্দেশ্যে ১৯৩৬ সালে সমিতির পুনঃনামকরণ হয় কৃষক ও শ্রমিক সমিতি। তবে নামকরণের পরেও তার সমর্থকদের কাছে এটি ত্রিপুরা কৃষক সমিতি নামেই পরিচিত ছিল। [১]

রাজনীতি[সম্পাদনা]

ত্রিপুরা কৃষক সমিতির নামের এ পরিবর্তনে এটি আন্তঃজেলা দলে পরিণত না হয়ে দলটি এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল যে, ১৯৩৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে ত্রিপুরা জেলায় নির্ধারিত ৭টি আসনের সবকটিতেই সমিতি তার নিজস্ব প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এরমধ্যে ৫টি আসনে জয়লাভ করে। বিজয়ীরা কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও কৃষক প্রজা পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অভিজাত প্রার্থীদের বিপুল ভোটে পরাজিত করতে সক্ষম হয়।[১]

সমাজতান্ত্রিক প্রভাব[সম্পাদনা]

ওই সময়কার সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে সমিতিতে সমাজতান্ত্রিক প্রভাব ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে আসে। পর্যায়ক্রমে দলের অভ্যন্তরে কোন্দল সৃষ্টি হয়ে সংস্কারপন্থী ও মধ্যপন্থী দুটো গ্রুপে মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। সংস্কারবাদী অংশের নেতৃত্বে ছিলেন ইয়াকুব আলী এবং মধ্যপন্থী অংশের নেতৃত্ব ছিলেন আশরাফ উদ্দীন চৌধুরী। [১]

বিলুপ্ত[সম্পাদনা]

বিশ শতকের চল্লিশের দশকে মুসলিম জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটলে বামপন্থী সমর্থিত ত্রিপুরা কৃষক সমিতি ক্রমেই ছোট হয়ে আসে এবং অনেকটা বিলুপ্তির দিকে এগুতে থাকে। একসময় ত্রিপুরা অঞ্চলকে সমিতির দুর্গ বলে চিহ্নিত হওয়া সংগঠন এতোটা ছোট হয়ে যায় যে, মুসলিম লীগসহ সকল বৃহৎ দল এটিকে তাদের নিজেদের পক্ষে নিয়ে জোটে ভেড়ানোর চেষ্টা করে। ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রার্থীরা সেখানকার ত্রিপুরা অঞ্চলের সবকটি আসন দখল করে। অপরদিকে বাংলার উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকের জেলাগুলিতে ১৯৪৬ থেকে ৪৭ সালে হওয়া তেভাগা আন্দোলনে ত্রিপুরা কৃষক সমিতির কার্যত কোনো অংশগ্রহণ থেকে বাদ পড়ে যায়। [১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ত্রিপুরা কৃষক সমিতি - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-০৫