তহা হুসাইন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তহা হুসাইন
তহা হুসাইন ( ১৯৭০)।
তহা হুসাইন ( ১৯৭০)।
স্থানীয় নাম
طه حسين
পেশাশিক্ষামন্ত্রী
ভাষাআরবি
জাতীয়তামিশরীয়
নাগরিকত্বমিশরীয়
ধরনসাহিত্য সমালোচনা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছোট গল্প
বিষয়কবিতা, ইতিহাস, দর্শন
সাহিত্য আন্দোলনবাস্তববাদী সাহিত্য
দাম্পত্যসঙ্গীসুজান ব্রিসট (১৯১৭- মৃত্যু পর্যন্ত)
সন্তানআমিনা ও মুনিস।

তহা হুসাইন আলি বিন সালামা ( ১৩০৬ হি. / ১৫ নভেম্বর,১৮৮৯–১৩৯৩ হি./ ২৮ অক্টোবর, ১৯৭৩ খ্রি.) ছিলেন একজন মিশরীয় লেখক, সাহিত্য সমালোচক, প্রাবন্ধিক। তিনি আরবি সাহিত্যের ডিন নামে পরিচিত ছিলেন। তাকে আধুনিক আরবি সাহিত্য আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। [১] তবে তহা হুসাইনের ধারণা এবং অবস্থান বর্তমানও বিতর্কের জন্ম দেয়।[২] তাঁর বিতর্কিত চিন্তা ও দর্শনের খণ্ডনে মিশরে একাধিক বই রচিত হয়েছে।

তিনি আল-আজহারে অধ্যয়ন করেন; তারপর ১৯০৮ সালে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন।[৩] তিনি ইতিহাসের অধ্যাপক, আরবিভাষার অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।[৪] এছাড়া তিনি কলা অনুষদের ডিন, আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক [৫] এবং তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেন। [৬] তার বিখ্যাত বইগুলির মধ্যে রয়েছে: প্রাক-ইসলামি কবিতা (১৯২৬) ও মিশরের সংস্কৃতির ভবিষ্যত (১৯৩৮)।

জীবনী[সম্পাদনা]

জন্ম ও লালন পালন[সম্পাদনা]

তহা হুসাইন আলী বিন সালামা[৭] ১৮৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর শুক্রবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার পিতা হুসাইনের তেরো সন্তানের মধ্যে তিনি সপ্তম এবং তার এগারো ভাইয়ের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন।[৮] ৪ বছর বয়সে তার চোখ কনজেক্টিভাইটিসে আক্রান্ত হয়। তার বাবা হুসাইন আলী ছিলেন একজন ছোটো দরিদ্র কর্মচারী, যিনি একটি চিনি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। তার বাবা তাকে আরবি, পাটিগণিত ও পবিত্র কোরআনের তেলাওয়াত শেখা ও মুখস্থ করার জন্যে শেখ মুহাম্মদ জাদুর রবের কাছে পাঠান।

শিক্ষা[সম্পাদনা]

১৯০২ সালে ইসলাম অধ্যয়ন করতে ও আরবি ভাষা সম্পর্কে আরও শিখতে তহা আল-আজহারে প্রবেশ করেন। কিন্তু তিনি সেখানে বেশিদিন টিকতে পারেননি এবং বিরক্ত হয়ে যান। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে যখন মিশরীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা খুলে যায়, তখন তহা হুসাইন এতে যোগদান করেন। তখম তিনি আধুনিক বিজ্ঞান, ইসলামী সভ্যতা, ইতিহাস, ভূগোল ও ইথিওপীয়, হিব্রুসিরীয়াসহ বেশ কয়টি প্রাচ্য ভাষা অধ্যয়ন করেন। তবে তিনি আল-আজহারের পাঠ অব্যাহত রাখেন ও এর ভাষাগত, ধর্মীয় ও ইসলামি সেমিনারে যোগদান করেন। ১৯১৪ সাল পর্যন্ত তিনি এ কাজ চালিয়ে যান এবং সেই বছরেই তিনি তার ডক্টরেট অর্জন করেন। থিসিসের বিষয় ছিল: "আবুল-আলার স্মৃতি", যা ধর্মীয় চেনাশোনা ও মিশরীয় সংসদের একটি সিম্পোজিয়ামে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, যখন একজন সংসদ সদস্য তার বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতা ও ধর্মীয়নীতি থেকে বিচ্যুতির অভিযোগ তোলেন। [৯]

একই বছরে মিশরীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাকে জ্ঞান এবং আধুনিক বিজ্ঞানের শাখায় বিশেষীকরণ করার জন্য ফ্রান্সের মন্টপেলিয়ারে পাঠায়। তিনি ফরাসি সাহিত্য, মনোবিজ্ঞান ও আধুনিক ইতিহাস অধ্যয়ন করেন এবং ১৯১৫ সাল পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। ফিরে আসার বছর সেখানে তিনি প্রায় তিন মাস ছিলেন। এই সময়ে তিনি অসংখ্য তর্ক এবং বিবাদের জন্ম দিয়েছিলেন, যার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল আল-আজহারে শিক্ষকতা ও পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্যে পার্থক্য নিয়ে। তখন কর্মকর্তারা তাকে বিদেশে পড়াশুনার খরচ মেটানোর জন্য তাকে দেওয়া বৃত্তি থেকে বঞ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেন; কিন্তু সুলতান হুসাইন কামাল হস্তক্ষেপ করে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা দেন। তাই তিনি একাডেমিক পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আবার ফ্রান্সে ফিরে আসেন। তখন প্যারিসে তিনি সমাজবিজ্ঞান, গ্রীক ও রোমান ইতিহাস এবং আধুনিক ইতিহাসের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রবণতা অধ্যয়ন করেন। এই সময়ে তিনি তার দ্বিতীয় ডক্টরেট থিসিস তৈরি করেন; শিরোনাম ছিল: "ইবনে খালদুনের মতে সামাজিক দর্শন"।

এই বছরে তিনি সুজান ব্রিসটকে বিয়ে করেন, যিনি একজন ফরাসি-সুইস নাগরিক ছিলেন। তিনি তাকে ফরাসি ও লাতির ভাষার সাথে আরো পরিচিত হতে সাহায্য করেন এবং এর ফলে তিনি পশ্চিমা সংস্কৃতি অনেকাংশে আয়ত্ত করেন।

এই মহিলা তার জীবনে অনেক প্রভাব ফেলেছে। তিনি তহার জন্যে একজন পাঠকের ভূমিকা পালন করেন; তার অনেক রেফারেন্স পড়েন এবং তাকে পড়তে সাহায্য করার জন্য ব্রেইলে লেখা বই সরবরাহ করেন। তিনি ছিলেন স্ত্রী ও বন্ধু, যিনি তাকে সবসময় এগিয়ে নিয়ে যেতেন। তহা তাকে খুব ভালোবাসতেন। তহা হোসেনের দুটি সন্তান ছিল: আমিনা ও মুনিস।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

তহা হুসেন ৮৪ বছর বয়সে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে অক্টোবর রবিবারে মারা যান।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. طه حسين، مؤلف مصر. (الموسوعة البريطانية) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৭-০৩-১২ তারিখে
  2. طه حسين بين التحرير والتغريب: دراسة نقدية لكتاب مستقبل الثقافة في مصر. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৭-০৭-০২ তারিখে
  3. الأدب العربى المعاصر في مصردار المعارف। 1961। 28 مارس 2018 তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. طه حسين والشعر الجاهلي: بين نفحات المستشرقين وظلال العرب। المنهل। 28 مارس 2018 তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  5. سارق النار। المؤسسة العربية للدراسات والنشر। 28 مارس 2018 তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  6. رؤساء جامعة الإسكندرية في 75 عاما.. أولهم طه حسين وبينهم سيدة واحدة ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৮-০৩-২৮ তারিখে
  7. اتهامات مغرضة طاولت عميد الأدب العربي… أسقطها التاريخ وثائق مجهولة تكشف خفايا من حياة طه حسين ومسيرته الفكرية - علي عطا - الخميس 20 يونيو 2019 اندبندينت عربية
  8. كتاب الأيام، مطابع أكتوبر، ص22
  9. ""أيّام" طه حسين.. من الجامع إلى الجامعة!"। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-১৮