বিষয়বস্তুতে চলুন

ট্যাবলয়েড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মেট্রিক পেপার মাপের সাথে কিছু সংবাদপত্রের মাপের তুলনা। আনুমানিক নামমাত্র মাত্রা মিলিমিটারে দেওয়া হয়েছে

ট্যাবলয়েড (ইংরেজি: tabloid) এক ধরনের ছোট আকৃতির সংবাদপত্র প্রকাশের কাগজ বিশেষ। এটি সচরাচর দৈনিক সংবাদপত্রে ব্যবহৃত বৃহৎ আকৃতি ধরনের ব্রডশীটের তুলনায় ক্ষুদ্রতম হয়ে থাকে। সঠিক আকার-আকৃতির নির্দিষ্ট কোন মানদণ্ড ট্যাবলয়েডে পরিলক্ষিত হয় না।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

ট্যাবলয়েড শব্দটি লন্ডনভিত্তিক ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লিন (ব্যুরো ওয়েলকাম এন্ড কোং)-এর কাছ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ১৮৮০-এর দশকে তাদের প্রস্তুতকৃত ঔষধ হিসেবে সঙ্কুচিত ট্যাবলেটকে বাজারজাতকরণের সময় ট্যাবলয়েড বড়ি নামে আখ্যায়িত করা হতো।[] ঔষধ শিল্পে সঙ্কুচিত ট্যাবলেটের গুঁড়ো তারা পূর্ব সংরক্ষিত বড় ধরনের গুঁড়া থেকে সংগ্রহ করে। এরফলে ব্যুরো ওয়েলকাম এন্ড কোং শুধুমাত্র যে প্রযুক্তির সাহায্যে সঙ্কুচিত ট্যাবলেটে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছে তা নয়; ঔষধ বাজারজাতকরণেও তারা প্রচণ্ড সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। এরপর থেকেই ট্যাবলয়েড পারিভাষিক শব্দটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ট্যাবলয়েড খুব দ্রুত অন্যান্য সকল বিষয়েও বিস্তৃতি লাভ করে। বিমানের ক্ষেত্রে সোপউইদ ট্যাবলয়েড কিংবা সঙ্কুচিত সাংবাদিকতা হিসেবে ক্ষুদ্রাকৃতি ও সহজ ধরনের গল্পগুলো প্রবেশ করেছে। ১৯০১ সালে প্রচলিত ট্যাবলয়েড সাংবাদিকতা পরবর্তীকালে অর্থাৎ ১৯১৮ সালে প্রবর্তিত ক্ষুদ্রাকৃতির সংবাদপত্রের উত্তরাধিকারী হিসেবে পরিচিতি পায়।

পরিমাপ

[সম্পাদনা]

খসড়াভাবে একটি ট্যাবলয়েডের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ১৭ ইঞ্চি × ১১ ইঞ্চি (৪৩২ মি.মি × ২৭৯ মি.মি) হয়ে থাকে। সাধারণতঃ ব্রডশীটের অর্ধেক অংশ হিসেবে ট্যাবলয়েড চিহ্নিত হয়ে আছে। বিভ্রান্তি বৃদ্ধি পায় যখন অনেক ব্রডশীট আকৃতির সংবাদপত্রগুলোর খসড়া ২৯/ ইঞ্চি × ২৩/ ইঞ্চি (৭৪৯ মি.মি × ৫৯৭ মি.মি)। সুতরাং, খসড়াভাবে এ হিসেবে এর অর্ধেক দাঁড়ায় ১৫ ইঞ্চি × ১২ ইঞ্চি (৩৮১ মি.মি × ৩০৫ মি.মি) যা ১৭ ইঞ্চি × ১১ ইঞ্চি (৪৩২ মি.মি × ২৭৯ মি.মি) আকৃতির নয়।

সমালোচনা

[সম্পাদনা]

ট্যাবলয়েড সংবাদপত্রগুলো প্রায়শঃই স্পর্শকাতরতামূলক এবং সাংবাদিকতা-বিষয়ক স্বাধীনতার অভাবে সমালোচিত হয়। কিছু কিছু সমালোচনা ট্যাবলয়েড পাঠকদের বিরুদ্ধেও গিয়েছে।[]

২০১০ সালে জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাজ্যভিত্তিক ট্যাবলয়েডগুলোর ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। সেখানে তারা আক্রমণাত্মক ভঙ্গীতে ইংল্যান্ড বনাম জার্মানির মধ্যকার ফুটবল খেলায় বৃহৎ পরিসরে ২য় বিশ্বযুদ্ধের অবতারণা ঘটায় ও শীর্ষ খবর হিসেবে প্রকাশ করেছিল।[]

বিখ্যাত ট্যাবলয়েডসমূহ

[সম্পাদনা]
একজন ফটোগ্রাফারের ফটোগ্রাফার শীর্ষক 'নিউইয়র্ক ডেইলী নিউজ' ট্যাবলয়েডের সম্মুখ পৃষ্ঠার পুরোটা জুড়ে আছেন ফার্স্ট লেডি ওয়ারেন জি. হার্ডিং
  • যুক্তরাজ্য — দ্য সান, দ্য ডেইলী স্টার, দ্য ডেইলী মিরর, দ্য ডেইলী স্পোর্ট, দ্য ডেইলী মেইল, দ্য ডেইলী এক্সপ্রেস, দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট, দ্য স্কটস্‌ম্যান, দ্য টাইমস্, দ্য মর্নিং স্টার
  • যুক্তরাষ্ট্র — দ্য ডেইলী রেকর্ড, দ্য মেট্রো, দ্য নিউইয়র্ক পোস্ট, দ্য ফিলাডেলফিয়া ডেইলী নিউজ, দ্য শিকাগো সান-টাইমস, দ্য বোস্টন হেরাল্ড, দ্য নিউইয়র্ক অবজার্ভার, নিউজডে, দ্য সান ফ্রান্সিস্কো একজামিনার, বাল্টিমোর একজামিনার
  • ইউরোপ — বিল্ড (জার্মানি তথা ইউরোপে প্রকাশনায় শীর্ষে); এনআরসি হ্যান্ডেল্সব্ল্যাড, মেট্রো, স্পিটস্, ডি পার্স, ড্যাগ, ডি টেলিগ্রাফ (নেদারল্যান্ড); ভার্ডেন্স গ্যাং (ভিজি), ড্যাগব্ল্যাডেট, আফ্টেনপোস্টেন (নরওয়ে); দ্য নাইস ম্যাটিন, লে নৌভিউ ডিটেকটিভ (ফ্রান্স); বি.টি, একস্ট্রা ব্ল্যাডেট, বার্লিংস্কে টিডেন্ডে (ডেনমার্ক); ফ্যাক্ট, সুপার এক্সপ্রেস (পোল্যান্ড)
  • দক্ষিণ এশিয়া — টাইমস্ অব ইন্ডিয়া, মুম্বাই মিরর, তেহেল্কা, মিড-ডে, মিন্ট (ভারত); খাবরেইন, নয়া আখবর (পাকিস্তান); মানবজমিন (বাংলাদেশ)
  • এশিয়া — চাইনীজ ট্যাবলয়েড (চীন); দি উইক (ওমান); দ্য ফিন্যান্সিয়াল (জর্জিয়া); কিয়েভ পোস্ট (রাশিয়াইউক্রেন); ক্ল্যারিন (আর্জেন্টিনা); দি ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়ান, দ্য মার্কারি, দ্য হ্যামিল্টন স্পেক্টেটর (অস্ট্রেলিয়া); ভোক্সব্ল্যাড, দ্য ডেইলী সান (দক্ষিণ আফ্রিকা); ল্যান্স!, ও দিয়া (ব্রাজিল)

বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

[সম্পাদনা]

ট্যাবলয়েড হিসেবে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকাটি বাংলাদেশে ১ম প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে এটি বাংলা ভাষায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশীসংখ্যক প্রকাশনা হিসেবে ১৯৯৮ সাল থেকে বিশ্বে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বিশ্বের শীর্ষ ১০টি বাংলা সংবাদের ওয়েবসাইটে মাহবুবা চৌধুরী প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করছেন। ফিফা, ইউয়েফা, ফুটবল সংস্থা, ওয়ার্নার ব্রাদার্স এবং সনি পিকচার্স এন্টারটেইনমেন্টের সাথে এটি চুক্তিবদ্ধ আছে। মতিউর রহমান চৌধুরী ট্যাবলয়েডটির প্রধান সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Henry Wellcome the Sailesman"। www.wellcome.ac.uk। ২০০৮-১১-১৮। ২০১৫-১২-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-০৩ 
  2. "The Online Society"। The Online Society। ২০১১-০৭-০১। ২০১১-০৯-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-০৩ 
  3. "German criticism for UK tabloids"। Themediablog.typepad.com। ২০১০-০৬-২৭। ২০১১-১১-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-০৩ 

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]