গৌরী ভঞ্জ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গৌরী ভঞ্জ
জন্ম
গৌরী বসু

(১৯০৭-০১-২০)২০ জানুয়ারি ১৯০৭
মৃত্যু৬ নভেম্বর ১৯৯৮(1998-11-06) (বয়স ৯১)
জাতীয়তাভারতীয়
শিক্ষাশান্তিনিকেতন
পরিচিতির কারণচিত্রাঙ্কন
দাম্পত্য সঙ্গীসন্তোষ ভঞ্জ (বি.১৯২৭)
সন্তানবাণী প্যাটেল (কন্যা)

গৌরী ভঞ্জ বিবাহের পূর্বে নাম গৌরী বসু (২০ জানুয়ারি ১৯০৭ - ৬ নভেম্বর ১৯৯৮) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি মহিলা চিত্রশিল্পী।[১] যে পাঁচজন মহিলা চিত্রশিল্পী ভারতের সংবিধান অলঙ্করণে নন্দলাল বসুকে সহায়তা করেন তিনি তাদের অন্যতমা।[২]

জীবনী[সম্পাদনা]

গৌরী বসুর জন্ম ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পিতার আদি নিবাস অধুনা বিহার রাজ্যের মুঙ্গের জেলার হাবেলী খড়্গপুরে[৩] তিনি শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর ও সুধীরা দেবীর চার সন্তানের (দুই পুত্র ও দুই কন্যা) জ্যেষ্ঠা কন্যা ছিলেন। কনিষ্ঠা যমুনা।

পিতার ন্যায় গৌরীরও প্রথাগত শিক্ষায় তেমন আগ্রহ ছিল না। পিতার উৎসাহেই তার কাছে ও তার মাতুলালয়ের দাদুর এক ভ্রাতা সুরেন্দ্রনাথ করের কাছে ছবি আঁকা শেখেন। বারো বৎসর বয়সে শান্তিনিকেতনের কলাভবনের ছাত্রী হন। রীতিমত ছবি আঁকা শুরু করেন এবং সব ছবিই প্রকাশ পায় প্রবাসী, মানসী, মর্মবাণী, জয়শ্রী, বঙ্গলক্ষ্মীসহ বেশ কিছু পত্রিকায়। কলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস এ প্রদর্শিত হয় এবং শিল্পী মহলে যথেষ্ট সমাদর লাভ করে। নাগপুরের এক প্রদর্শনীতে তার "কৃষ্ণলীলা"-র উপর কয়েকটি ছবির জন্য প্রথম পুরস্কার লাভ করেন।[১] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমন্ত্রণে শিল্প ইতিহাসবিদ স্টেলা ক্রামরিশ কলাভবনে শিল্প ইতিহাসে শিক্ষিকা নিযুক্ত হলে গৌরী ভারতীয় ক্লাসিক্যাল আইকনোগ্রাফির উপর স্টেলার গভীর জ্ঞানে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তবে গৌরী তার পিতার বিষয়ভিত্তিক অঙ্কন শৈলী অনুসরণ করতেন। চীনা ভবনের ম্যুরাল আঁকায় তিনি তার পিতার সঙ্গে সহশিল্পী প্রভাস সেন ও সত্যজিৎ রায়কে সহায়তা করেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ভবনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন।

১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি পেশায় আইনজীবী সন্তোষ ভঞ্জকে বিবাহ করেন এবং মাদ্রাজ (বর্তমানে চেন্নাই) চলে যান। সেখানে মাদ্রাজ স্কুল অফ আর্টস্ অ্যান্ড ক্র্যাফ্টে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন।

ষাটের দশকে পিতার সৃজনশীল প্রতিভাকে সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাতে শান্তিনিকেতনে ফিরে এসে কলাভবনের কারুশিল্প বিভাগে যুক্ত হন। তার পরিকল্পনাপ্রসূত জাভানিজ বাটিক, রাজস্থানের বাঁধনি, সূচিকর্ম তথা এমব্রয়ডারি, চামড়ার এমবসিং, ঝালরের কাজ, মণিপুরের টেক্সটাইলের কাজ ইত্যাদিও কলাভবনে শিক্ষনীয় বিষয় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং শান্তিনিকেতনের নিজস্ব ধাঁচে বিকাশ ও প্রসার ঘটে।[২] সময়াভাবে নতুন ছবি আঁকার সংখ্যা কম হতেও থাকলেও শান্তিনিকেতনে উৎসব-সজ্জা, রূপসজ্জা ইত্যাদিতে সমানভাবে উৎসাহী ছিলেন তিনি। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হরিপুরায় কংগ্রেসের অধিবেশনে মঞ্চে আলপনা অলঙ্করণে, জব্বলপুরে "শহীদ স্মারক মন্দির"-এ ফ্রেসকো তৈরিতে, ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারির সাধারণতন্ত্র দিবসে প্যারেডে ট্যাবলোর ডিজাইনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।[২]

১৯৪৯-৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ভারতের সংবিধানের মূল পান্ডুলিপি নকশার দায়িত্ব কলাভবনের অধ্যক্ষ বিখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসুকে দিলে, গৌরী ও সহোদরা যমুনা (বিবাহের পর যমুনা সেন) সহ আরো তিন জন মহিলা চিত্রশিল্পী অলঙ্করণে নিজের নিজের অবদান রাখেন।[২]

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ৬ নভেম্বর তিনি শান্তিনিকেতনে প্রয়াত হন। তার কন্যা বাণী প্যাটেলও একজন চিত্রশিল্পী।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. জানকীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। চিত্রাঙ্কনে বাংলার মেয়ো। ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, কলকাতা। পৃষ্ঠা ২৮। 
  2. "5 Women Artists who illustrated the Constitution of India"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-০৫ 
  3. "Significant Indian Paintings"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-০৫