গোপাল ভট্ট গোস্বামী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

গোপাল ভট্ট গোস্বামী (১৫০৩-১৫৭৮ খৃষ্টাব্দ) হলেন বৈষ্ণব সাধক, চৈতন্য মহাপ্রভুর অন্যতম প্রধান শিষ্য এবং হিন্দুধর্মের গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের একজন নেতৃস্থানীয় ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বৃন্দাবনের ষড় গোস্বামী নামে পরিচিত বৈষ্ণব ভক্তদের দলের অংশ ছিলেন। ষড় গোস্বামীগণ বিধিবদ্ধ রচনা দ্বারা গৌড়ীয় ঐতিহ্যের দার্শনিক ভিত্তি স্থাপনে প্রভাবশালী ছিলেন।[১]

পটভূমি[সম্পাদনা]

গোপাল ভট্ট শ্রীরঙ্গমে তামিল আয়েঙ্গার বংশোদ্ভূত এক শ্রী বৈষ্ণব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বেঙ্কট্ট ভট্টের পুত্র। গোপাল ভট্ট গোস্বামী প্রথম জীবনে লক্ষ্মী-নারায়ণের একজন মহান ভক্ত হয়েছিলেন। ভক্তি রত্নাকরের মতো জীবনীগ্রন্থ অনুসারে, শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর সাথে গোপাল ভট্টের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল ১৫১০ সালে মহাপ্রভুর দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের সময়। যদিও অল্প বয়সে তাকে চৈতন্যের সাথে দেখা করা এবং কয়েক মাস তার সেবা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। মহাপ্রভুর প্রতি তাঁর এমন প্রেম ছিল যে, চৈতন্য মহাপ্রভু চলে যাওয়ার সময় গোপাল ভট্ট বিচলিত হয়ে পড়েন এবং গোপাল ভট্টের জন্য চৈতন্য তখন আরও কিছু দিন থাকতে রাজি হন।

গৌড়ীয় ঐতিহ্য অনুসারে, এই সময়েই গোপাল ভট্টের একটি আধ্যাত্মিক দৃষ্টি ছিল যেখানে চৈতন্য মহাপ্রভু নিজেকে পরম ঈশ্বর কৃষ্ণের অবতার হিসাবে প্রকাশ করেছিলেন। দিব্য দর্শনে কৃষ্ণ তখন তাকে বলেন, বৃন্দাবন ধামে তিনি রূপসগোস্বামী এবং সনাতন গোস্বামী নামক দুই ভক্তের সাথে দেখা করবেন যারা তাকে ভক্তি সেবার সূক্ষ্ম বিবরণ নির্দেশ দেবেন।

গোপাল ভট্ট যখন দিব্য দর্শন অভিজ্ঞতা থেকে জেগে উঠলেন, তখন তিনি বৃন্দাবনে চলে যেতে চাইলেন, তবে চৈতন্য মহাপ্রভু তাকে থাকতে এবং তার পিতামাতার সেবা করতে বলেন। চৈতন্যের প্রস্থানের পর, গোপাল ভট্ট তার কাকা প্রবোধানন্দ সরস্বতীর কাছ থেকে নির্দেশনা গ্রহণ করেন। গোপাল ভট্ট তার পিতা-মাতাকে তাদের বৃদ্ধ বয়সে দেখাশোনা করেন। তারপরে তারা মারা যাওয়ার পরে তিনি বৃন্দাবন ভ্রমণ করেন। সেখানে তিনি রূপ এবং সনাতনের সাথে দেখা করেন। রূপ এবং সনাতন তাকে ভাই হিসাবে গ্রহণ করেন। গোপাল ভট্ট পরবর্তীতে সনাতনকে হরি ভক্তি বিলাস বইটি সংকলনে সাহায্য করেন।

বৃন্দাবন[সম্পাদনা]

বৃন্দাবনের রাধারমণ মন্দির ১৫৪২ সালে গোপাল ভট্ট গোস্বামী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।

গোপাল ভট্ট তার কাকা প্রবোধানন্দ সরস্বতীর নিকট অলঙ্কারশাস্ত্র, কবিতা, বেদান্ত এবং সংস্কৃত ব্যাকরণ অধ্যয়ন করেন। পিতামাতার মৃত্যুর পর তিনি বৃন্দাবনে গমন করেন। বৃন্দাবনে তিনি রূপ এবং সনাতন গোস্বামীর সাথে দেখা করেন, যেমনটি ঐশ্বরিক দর্শনে তাঁর প্রতি নির্দেশিত হয়েছিল।

ভগবান শ্রীচৈতন্য যখন জানতে পারলেন, গোপাল ভট্ট বৃন্দাবনে আছেন, তখন তিনি অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন এবং তাঁর কিছু ব্যক্তিগত জিনিসপত্র গোপাল ভট্টের কাছে প্রেরণ করেন, গোপাল ভট্ট তা পূজা করেন। মহাপ্রভু রূপ ও সনাতনকে বৈষ্ণব সাহিত্য সংকলনে সাহায্য করার জন্য গোপাল ভট্টকে নির্দেশ দিয়ে একটি পত্রও পাঠিয়েছিলেন। গোপাল ভট্ট এই নির্দেশকে তাঁর জীবন ও আত্মা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি তাঁর শিষ্য শ্রীনিবাস আচার্যকে বাংলায় লেখাগুলি প্রচারের কাজে নিয়োজিত করেছিলেন। গোপাল ভট্ট ১৫৪২ সালে বৃন্দাবনে রাধারমণ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাঁর সমাধিও মন্দির কমপ্লেক্সেই রয়েছে।[২]

তিনি অনন্তকাল শ্রীমতি রাধারানীকে তাঁর অষ্ট মঞ্জরীদের অন্যতম গুণ-মঞ্জরী হিসাবে সেবা করেন। তাঁর সমাধি দেবতার আবির্ভাব স্থানের পিছনে রাধা রমণজীর মন্দির প্রাঙ্গণে রয়েছে। শ্রীগোপাল ভট্ট গোস্বামী গোপীনাথ (পূজারি গোস্বামী) নামক রাধারমণজীর এক আজীবন ব্রহ্মচারী সেবককে দীক্ষা দিয়েছিলেন।[১] গোপাল ভট্ট সৎ-ক্রিয়া-সার-দীপিকা নামে বৈষ্ণব গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Gopala Bhatta Goswami"Gaudiya History। ১৪ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১০-১২ 
  2. "Property Vrindavan - Radha Ramana Temple"। ২৮ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১১ 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • Bhakti Ratnakara (পিডিএফ) (English ভাষায়)। 
  • Shri Narahari Chakravarti (১৯১৩)। Shri Rasabihari Sankhya Tirtha, সম্পাদক। Bhakti Ratnakar (Bengali ভাষায়)। Shri Ramdev Mishra। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]