খিরসাপাত আম
![খিরসাপাত আম](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/1/1d/%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%97%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9C_%E0%A6%8F%E0%A6%B0_%E0%A6%96%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A4_%E0%A6%86%E0%A6%AE.jpg/220px-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%97%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9C_%E0%A6%8F%E0%A6%B0_%E0%A6%96%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A4_%E0%A6%86%E0%A6%AE.jpg)
খিরসাপাত/খিরশাপাত/ক্ষিরশাপাত/ক্ষীরশাপাত আম, উন্নতজাতের আমের মধ্যে অন্যতম। জুন মাসের শুরু থেকেই এই আম পাকতে শুরু করে। আমটি আকারে গোলাকার আকৃতিতে মাঝারি। আমটি লম্বায় প্রায় ৮ সে.মি., প্রস্থে প্রায় ৭ সে.মি. ওজনে প্রায় ২৬৪ গ্রাম মতো হয়। খিরসাপাত আমের বোঁটা বেশ মোটা এবং শক্ত। ত্বক মসৃণ, পাকলে বাইরের ঊর্ধ্বাংশ অর্থাৎ বোঁটার আশপাশে হলুদ রং ধারণ করে। আমের মধ্যাংশ থেকে নিম্নাংশ হালকা সবুজ। এর খাবার উপযোগী অংশ শতকরা ৬৭ দশমিক ২ ভাগ। আঁশবিহীন আমটির শাঁস হলুদাভ। ফলটি সুগন্ধযুক্ত, রসালো ও অত্যন্ত মিষ্টি স্বাদের। মিষ্টি সুগন্ধ ও স্বাদের জন্য জনপ্রিয়তার দিক থেকে এ আমের স্থান শীর্ষে।
ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য[সম্পাদনা]
চাঁপাইনবাবগঞ্জের "খিরসাপাত" আম বাংলাদেশের তৃতীয় ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। জিআই স্বীকৃতির মাধ্যমে আমটি বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে স্বীকৃত। শুরুটা প্রায় ২০০ বছর আগে। ময়মনসিংহের মহারাজা সুতাংশু কুমার আচার্য্য বাহাদুর চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গড়ে তোলেন একটি আমবাগান। সেই বাগানেই অন্যান্য উৎকৃষ্ট জাতের আমের সঙ্গে চাষ হতো খিরসাপাত আম। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে সুস্বাদু এই জাতটি। বর্তমানে বাংলাদেশের উৎপাদিত আমের ৩০ শতাংশই খিরসাপাত আম।
খিরসাপাত ও হিমসাগর[সম্পাদনা]
খিরসাপাত আমের সাথে আরেকটি উন্নত জাতের আম হিমসাগর কে অনেক সময় একই বলা হলেও দুইটি আম ভিন্ন। মূলত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ভারতের মালদহতে খিরসাপাত আম পাওয়া যায়। হিমসাগর পশ্চিমবঙ্গের একটি বিখ্যাত আম যা ভারতের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও নওগা জেলাতে হিমসাগর আমের চাষ হয়। পাকার পর খিরসাপাতি আমের ওপরের অংশ হলুদ রং ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে হিমসাগর আম পাকার পরেও সবুজাভ হালকা হলুদ রঙের হবে। খিরসাপাত আম আকারে একটু বড় আর বোটার দিকে চওড়া বেশি। খিরসাপাত এর আরেকটি ছোট জাত রয়েছে ক্ষুদিখিরসা নামের। ক্ষুদিখিরসার রং একটু কালচে সবুজ। উভয় জাতের মূল্য একই হলেও খিরসাপাত আম বেশি মিস্টি। ভৌগলিক ভাবে চাঁপাইনবাগঞ্জের গ্রীষ্মের তাপ ও আবহাওয়া খিরসাত আমের জন্য উপযোগী। খিরসাপাত আম বেশি মিষ্টি হওয়ায় এর চাহিদা বর্তমানে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও প্রচুর চাহিদা বাড়ছে। খিরসাপাত ও হিমসাগর দেখতে প্রায় একই, মুলত এজন্যই অনেকে এদুইটি আম কে চিনতে ভুল করে থাকেন [১]
সময় ও স্থান[সম্পাদনা]
জুন মাসের ৭ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত খিরসাপাত আমের আসল সময়। গাছ থেকে সংগ্রহের পর আমটি ছয় থেকে আট দিন পর্যন্ত ঘরে রাখা যায়। খিরসাপাত আমের ফলন খুব ভালো। চাহিদা থাকায় আমটি অত্যন্ত বাণিজ্যসফল ও । চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সর্বত্র, বিশেষ করে শিবগঞ্জ উপজেলায় সর্বাধিক খিরসাপাত আম বেশি হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে প্রতিবছর ৩৫ হাজার টন খিরসাপাত আম উৎপদন হয়। এখানকার বাগানে উৎপাদিত খিরসাপাত গুণে ও মানে সর্বোৎকৃষ্ট। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যতীত রাজশাহী, নাটোর, দিনাজপুর, বগুড়া ও নওগাঁ অঞ্চলে খিরসাপাত আমের আবাদ হয়ে থাকে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর পরেই খিরসাপাত উৎপাদনে রাজশাহীর স্থান অগ্রগণ্য।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাটি কৃষি পরিবেশিক অঞ্চল ১১ এর উঁচু গঙ্গা নদী প্লাবন ভূমির অন্তর্ভুক্ত। ভালোমানের খিরসাপাত আম উৎপাদনকারী এলাকার জন্য মাটির পিএইচ ৬.৫-৭.৫ প্রয়োজন, যা উক্ত এলাকায় রয়েছে। এছাড়াও এই অঞ্চলের আবহাওয়া আমের গুণগতমানকে প্রভাবিত করে। সাধারণত দেখা যায়, আমগাছে মুকুল আসার সময়ে আবহাওয়া শুষ্ক ও ঠাণ্ডা এবং আমের বৃদ্ধি ও পরিপক্বতার সময়ে শুষ্ক ও গরম (২৮-৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) থাকে ফলে আমের ফলন ও মান উভয়েই ভালো হয়। আমের মুকুল আসার সময় বা মুকুল বের হওয়ার পর বৃষ্টিপাত হলে বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে পারে এবং আমের বৃদ্ধি ও পরিপক্বতার সময়ে বেশি বৃষ্টি হলে আমের গুণগতমান খারাপ হয়। এদেশের অন্য জেলাগুলোতে আম উৎপাদন হলেও মাটি ও আবহাওয়ার বিশেষ পার্থক্যের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অধিক পরিমাণে খিরসাপাত আম উৎপাদন সম্ভব।[২]
উৎপাদন[সম্পাদনা]
খিরসাপাত আম বাগান তৈরির জন্য জমি প্রথমে চাষ দিয়ে ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হয়। পরে নকশা অনুযায়ী জনপ্রিয় বর্গাকার পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট জায়গায় আমের চারা রোপণ করা হয়। বর্ষার শুরুতে অর্থাৎ আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে আম গাছ রোপণের উপযুক্ত সময়। অতিরিক্ত বর্ষার সময় চারা রোপণ না করাই ভালো। গর্ত করার পর ১০-১৫ দিন গর্ত রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। গর্ত ভর্তি করার সময় ওপরের মাটির সাথে ১০ কেজি গোবর সার, ৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম ও ৫০ গ্রাম জিঙ্ক সালফেট ভালোভাবে মিশিয়ে, মিশ্রিত মাটি নিচে এবং নিচের মাটি ওপরে দিয়ে গর্ত ভর্তি করতে হবে। গর্ত ভর্তির ১০-১৫ দিন পর গর্তের মাঝখানে চারাটি সোজাভাবে লাগিয়ে চারিদিকে মাটি দিয়ে চাপ দিতে হবে। রোপণের পরে গাছে সেচ দিতে হবে এবং গাছটি একটি শক্ত খুঁটি দ্বারা বেঁধে দিতে হবে। চারাটির বয়স ২-৩ বছর হলে এবং চারার গোড়া থেকে নতুন ডালপালা গজালে তা কেটে ফেলতে হবে। গাছের দৈহিক বিকৃতি দেখা দিলে তা কেটে ফেলতে হবে। গাছটির বয়স ৪-৫ বছর হলে গাছে আম ধরাতে হবে। ফলন্ত গাছের পরগাছা, শুকনা ডাল, রোগাক্রান্ত ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে। বছরে দুইবার আম গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে। বর্ষার শুরুতে একবার এবং বর্ষার পরে আর একবার সার প্রয়োগের পরে প্রয়োজনীয় সেচ প্রদান করতে হবে। আম গাছে পুষ্পমঞ্জরি বের হয়েছে কিন্তু ফুল ফোটেনি এবং আম মটর দানার মতো হলে এই দুই অবস্থায় সেচ প্রদান করতে হবে। আম গাছে প্রধান পোকার মধ্যে আমের ফলছিদ্রকারী এবং মাছি পোকা অন্যতম। এগুলোকে অনুমোদিত মাত্রার কীটনাশক প্রয়োগ করে এবং ব্যাগিং পদ্ধতিতে দমন করা যায়। আমের রোগের মধ্যে অ্যানথ্রাকনোজ ও বোঁটা পচা রোগ অন্যতম। এ রোগগুলোকে অনুমোদিত মাত্রার ছত্রাকনাশক এবং আম সংগ্রহের পর গরম পানিতে আম শোধনের মাধ্যমে দমন করা যায়।[৩]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "মধুফল ক্ষীরশাপাতি ও হিমসাগর"। প্রথম আলো।
- ↑ "জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেলো খিরসাপাত আম"। ২০১৯-০১-২৭। ২০২১-০৬-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-৩১।
- ↑ "ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধন সনদ পেল চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম"। ais.gov.bd। কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস)।