কৃপার শাস্ত্রের অর্থ ভেদ
কৃপার শাস্ত্রের অর্থ ভেদ (Crepar Xaxtrer Orth, Bhed) বাংলা ভাষার আদি গদ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে একটি। এই গ্রন্থের লেখক পাদ্রি মানোএল দা আস্সুম্পসাঁউ (পর্তুগিজ: Manoel da Assumpçam মানোয়েল্ দা আসুঁসাঁউ)। গ্রন্থটির নাম বাংলা অক্ষরে কখনো 'কৃপার' স্থলে 'ক্রেপার' লেখা হয়েছে। অধিকন্তু প্রায়শ: 'অর্থ ভেদ' দুই শব্দের পরিবর্তে 'অর্থভেদ' এক শব্দ ব্যবহৃত হয়। এটি বাংলা আদি গদ্যের নমুনা হলেও গ্রন্থটি রোমান হরফে মুদ্রিত হয়।
রচনা ও প্রকাশকাল
[সম্পাদনা]গ্রন্থটি ১৭৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার অদূরে বর্তমানে গাজীপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত, তৎকালীন ভাওয়াল পরগণার নাগরীতে লিখিত হয়েছিল মর্মে ভূমিকায় উল্লিখিত আছে। পর্তুগালের লিসবন শহরের একটি মুদ্রণালয়ে ১৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৯১। ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে চন্দননগরের ফরাসি পাদ্রী ফাদার গেরেঁ একটি পরিমার্জ্জিত সংস্করণ প্রকাশ করেন। এর তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের গোয়ার সন্নিহিত মারগাওঁ শহরের একটি মুদ্রণালয়ে।
সংরক্ষণ
[সম্পাদনা]এর একটি কপি ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্তুগালের এভোরার লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত ছিল। অত:পর এটি লিসবন শহরের জাতীয় গ্রন্থাগারে স্থানান্তরিত হয়। এ গ্রন্থাগারে ৩য় সংস্করণের একটি কপিও আছে। কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির গ্রন্থাগারে একটি খণ্ডিত কপি সংরক্ষিত আছে।
বিবরণ
[সম্পাদনা]কৃপার শাস্ত্রের অর্থ ভেদ গ্রন্থটি আদি বাংলা গদ্যের নিদর্শন হলেও এটি সম্পূর্ণ রোমান হরফে লিখিত ও মুদ্রিত। এটি একটি দ্বিভাষী গ্রন্থ যার ডান পৃষ্ঠায় পর্তুগিজ ভাষায় মূল পাঠ্য এবং বাম পৃষ্ঠায় এর বাংলা তর্জমা মুদ্রিত। মূল পর্তুগিজ এবং বাংলা ভাষ্যের মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। মানোয়েল্ দা আসুঁসাঁউ মূল পর্তুগিজ অংশের লেখক হলেও কে বা কারা বাংলা ভাষ্যের অনুবাদক তা নিশ্চিত জানা যায় নি। অনুমিত হয় কোন বাঙ্গালী ধর্মান্তরিত খৃস্টান, হতে পারে, ভাওয়ালের কোন ধর্মান্তরিত আদিবাসী, এ অনুবাদ কর্মটি সম্পাদন করেছিল। ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে চন্দননগরের ফরাসি পাদ্রী ফাদার গেরেঁ একটি পরিমার্জ্জিত সংস্করণ প্রকাশ করেন যার বাংলা অনুবাদ মূলানুগ।
বিষয়বস্তু
[সম্পাদনা]এটি খ্রিস্টান (ক্যাথলিক) ধর্মপ্রচার সংশ্লিষ্ট একটি গ্রন্থ। এর বিষয়বস্তু খ্রিস্টান গুরু-শিষ্যের কথোপকথন যার মধ্যে দিয়ে খ্রিস্ট ধর্মের মহিমা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কথোপকথন বিধায় এর ভাষা কথ্য স্থানীয়।
নমুনা
[সম্পাদনা]“ | গুরু। অপূর্ব্ব কথা কহিলা। কিন্তু কেহ কহিবে আমি মালা জপি না ; তথাচ আন ধরন ভজন করি ; জপি খিস্তর কাছে, আর আর সিদ্ধারে ভজনা করি, এহি ভজনার কারণ আশা রাখি স্বর্গের যাইবার, তাহান কৃপায়। তুমি কি বল।
শিষ্য। যে আমি কহি, তাহা তুমি শোন ; সকল যত ভজন ভালো, কিন্তু বিনে ঠাকুরাণী ভজনায় কিছু নাহি, এবং ঠাকুরাণী ভজনা বিনে আর যত ভজনায় বাছ মুক্তি পাইবার পাপ না করিলে। এবং ঠাকুরাণীর ধ্যান সকলের অতি উত্তম মালার ধ্যান। আশ্চর্য বুঝা্ শোন। (পৃষ্ঠা-৫৪) |
” |
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ইফ্ফাত আরা: জানার আছে অনেক কিছু, দেশ প্রকাশন, ১৯৯৯, শাহবাগ, ঢাকা।