বিষয়বস্তুতে চলুন

এরশাদ শিকদার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার একটি পুরনো সংস্করণ, যা InternetArchiveBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০১:৪৮, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল (0টি উৎস উদ্ধার করা হল ও 1টি অকার্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হল। #IABot (v2.0beta10ehf1))। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক, যা বর্তমান সংস্করণ থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

এরশাদ শিকদার
জন্মঅজানা
মৃত্যুমে ১০, ২০০৪
মৃত্যুর কারণফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
জাতীয়তাবাংলাদেশী
অন্যান্য নামরাঙ্গা চোরা
পেশাব্যবসা, রাজনীতি
পরিচিতির কারণচাঁদাবাজি, চোরাচালান, হত্যাকাণ্ড
সহযোগীনূরে আলম, পরবর্তীতে তার রাজসাক্ষী
গ্রেফতারআগস্ট ১১, ১৯৯৯[১]
ফৌজদারি দণ্ডমৃত্যুদণ্ড
হত্যাকাণ্ড
আক্রান্ত ব্যক্তিকমপক্ষে ৬০ জন

এরশাদ শিকদার (মৃত্যু মে ১০, ২০০৪) ছিলেন একজন কুখ্যাত অপরাধী ও সিরিয়াল কিলার। খুন, অত্যাচার, চুরি-ডাকাতি ও অন্যান্য নানা অপরাধের জন্য তিনি কুখ্যাত ছিলেন।[২][৩] হত্যার দায়ে তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়, যা ২০০৪ সালের মে মাসের ১০ তারিখে কার্যকর করা হয়। [৪]

আবদুস সাত্তার মোহন্ত রচিত আমি তো মরেই যাবো গানটি এরশাদ শিকদারের গান হিসেবে একসময় দেশ জুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে। [৫]

জীবনী

প্রারম্ভিক জীবন

এরশাদ শিকদারের জন্ম ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার মাদারঘোনা গ্রামে। তার পিতার নাম বন্দে আলী। ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি তার জন্মস্থান নলছিটি থেকে খুলনায় চলে আসেন।[৬] খুলনায় আসার পর এরশাদ সেখানে কিছুদিন রেলস্টেশনের কুলির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে রেললাইনের পাত চুরি করে বিক্রি করত এমন দলের সাথে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি তাদের নিয়ে নিজেই একটি দল গঠন করেন ও এলাকায় রাঙ্গা চোরা নামে পরিচিতি পান।

১৯৭৬-৭৭ সালে তিনি রামদা বাহিনী নামে একটি দল গঠন করেন যারা খুলনা রেল স্টেশন ও ঘাট এলাকায় চুরি-ডাকাতি ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকত। এই রামদা বাহিনী নিয়েই এরশাদ ১৯৮২ সালে ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট এলাকা দখল করেন ও এর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

রাজনীতিতে প্রবেশ

১৯৮২ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ ক্ষমতা দখল করার পর তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।[৭] সামরিক শাসক এরশাদের আমলে ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে তিনি তৎকালীন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের (বর্তমান ২১ নম্বর ওযার্ড) কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করার পর এরশাদ শিকদার বিএনপিতে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর এরশাদ আবারো দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন কিন্তু সমালোচনার মুখে কিছুদিন পরই আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। ১৯৯৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার সময়ও তিনি ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার ছিলেন।

অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও হত্যাকাণ্ড

রাজনীতিতে প্রবেশ করার পর এরশাদ আরো ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেন। তিনি ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি খুলনার রেলওয়ের সম্পত্তি দখল, জোড়পূর্বক ব্যক্তিগত সম্পত্তি দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। ১৯৯১ সালে তিনি ৪ নম্বর ঘাট এলাকা থেকে রফিক নামে একজন বরফকলের মালিককে ভয় দেখিয়ে বিতাড়িত করে, বরফকল দখল করেন এবং সকল ব্যবসায়ীদেরকে তার কল থেকে বরফ কিনতে বাধ্য করেন।

এছাড়াও জানা যায় তিনি বরফ কলটি তার নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। এরশাদের বিরুদ্ধে ৬০টির ও বেশি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনেন তার এক সময়ের সহযোগী ও পরবর্তীকালে রাজসাক্ষী নূরে আলম। নূরে আলম ২৪টি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন। নূরে আলম আরো স্বাক্ষ্য দেন, এরশাদের কাছে ৭০টিরও বেশি আগ্নেআস্ত্র রয়েছে যদিও তার স্বর্ণকমল নামে খ্যাত বাড়ি থেকে মাত্র একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল।

ব্যক্তিগত জীবন

বিভিন্ন মাধ্যমে এরশাদের ৬টি বিয়ের কথা জানা গিয়েছিল। তার প্রথম স্ত্রীর নাম খোদেজা বেগম; ১৯৭৩ সালে তিনি খোদেজার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সানজীদা আক্তার শোভা নামে তার আরেক স্ত্রীর কথাও জানা যায়, যাকে তিনি তার বিলাসবহুল বাড়ি স্বর্ণ কমলে এনেছিলেন। এছাড়াও রূপসার রাজাপুর গ্রামের তসলিমা, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফরিদা, সহযোগী বারেক কমান্ডারের স্ত্রী রামেছা এবং যাত্রাদলের নায়িকা পাইকগাছার দুর্গারানী কথা জানা যায়। এছাড়াও নূরে আলমের স্বাক্ষ্যমতে তার স্ত্রী হীরাকে এরশাদ নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এরশাদের প্রথম স্ত্রী খোদেজার গর্ভে এরশাদের চারটি সন্তান জন্ম নেয় যার মধ্যে তিনটি ছেলে ও একটি মেয়ে। এছাড়া গ্রেফতারের পর শোভার গর্ভে জান্নাতুল নওরীন এমিলি এষা নামে এক মেয়ের জন্ম হয়।

গ্রেফতার ও মৃত্যুদণ্ড

১৯৯৯ সালে এরশাদ শিকদার গ্রেফতার হন ও তার নামে তখন ৪৩টি মামলা হয়েছিল।[৮] নিম্ন আদালতের বিচারে সাতটি হত্যা মামলায় তার ফাঁসির দণ্ডাদেশ হয় ও চারটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়। তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন কিন্তু রাষ্ট্রপতি তার আবেদন নাকচ করে দেন এবং ২০০৪ সালের ১০ মে মধ্যরাতে খুলনা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।[৪][৯]

তথ্যসূত্র

  1. Juan Ignacio Blanco। "Ershad Sikder - Murderpedia, the encyclopedia of murderers"। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  2. http://www.humanrights-china.org/zt/international/200402004115162018.htm[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "Letter from America: Thoughts on Bangladesh – 6"। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  4. Ershad Shikdar to be hanged on May 10, ডেইলী স্টার, বাংলাদেশ, এপ্রিল ২১, ২০০৪।
  5. Orchestra presents Sritimoy, নিউ এইজ, বাংলাদেশ, জুন ২০, ২০০৫।
  6. http://www.bd-pratidin.com/2013/12/15/32247
  7. "BBC NEWS - South Asia - Bangladesh serial killer hanged"। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  8. S.M. Saidur Rahman। "Chancery Law Chronicles - Login"। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  9. "Bangladesh killer hanged"News24। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৫