বিষয়বস্তুতে চলুন

উইকিপিডিয়া:ভিডিওউইকি/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ভূমিকা

[সম্পাদনা]

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। [][]




রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ২৫শে বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা ছিলেন ব্রাহ্মধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতা ছিলেন সারদাসুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পিতামাতার চতুর্দশ সন্তান এবং মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের মাতৃবিয়োগ ঘটে। [] []



শিক্ষা

[সম্পাদনা]

বিদ্যালয়-শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।[] ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুরপানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করতেন রবীন্দ্রনাথ।[][] শৈশবে রবীন্দ্রনাথ কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন করে পড়াশোনা করেছিলেন।[]

ভারত ভ্রমণ

[সম্পাদনা]

১৮৭৩ সালে এগারো বছর বয়সে তিনি কয়েক মাসের জন্য পিতার সঙ্গে দেশভ্রমণে বের হন।[] প্রথমে তারা আসেন শান্তিনিকেতনে[১০] এরপর পাঞ্জাবের অমৃতসরে কিছুকাল কাটিয়ে, সেখানে শিখদের উপাসনা পদ্ধতি পরিদর্শন করেন।[১০] শেষে পুত্রকে নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ যান হিমাচল প্রদেশ ডালহৌসি শৈলশহরের নিকট বক্রোটায়।[১০] বক্রোটা বাংলোয় বসে রবীন্দ্রনাথ পিতার কাছ থেকে সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞানইতিহাসের নিয়মিত পাঠ নিতে শুরু করেন।[১০] দেবেন্দ্রনাথ তাকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গেরজীবনী, কালিদাস রচিত ধ্রুপদি সংস্কৃত কাব্য ও নাটক এবং উপনিষদ্‌ পাঠেও উৎসাহিত করতেন।[১১][১২]



যৌবন (১৮৭৮-১৯০১)

[সম্পাদনা]

১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে যান রবীন্দ্রনাথ।[১৩] ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু সাহিত্যচর্চার আকর্ষণে সেই পড়াশোনা তিনি সমাপ্ত করতে পারেননি।[১৩] অবশেষে ১৮৮০ সালে প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে কোনো ডিগ্রি না নিয়ে এবং ব্যারিস্টারি পড়া শুরু না করেই তিনি দেশে ফিরে আসেন।[১৩]



বিবাহ

[সম্পাদনা]

১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিবাহ সম্পন্ন হয়।[১৪] বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী ।[১৪]



পৈতৃক সম্পত্তি

[সম্পাদনা]

১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে তাদের জমিদারিগুলির তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ।[১৫] ১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথের অপর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ মানসী প্রকাশিত হয়।


১৮৯৫ সাল পর্যন্ত

[সম্পাদনা]

১৮৯১ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত নিজের সম্পাদিত সাধনা পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু উৎকৃষ্ট রচনা প্রকাশিত হয়। তার সাহিত্য জীবনের এই পর্যায়টি "সাধনা পর্যায়" নামে পরিচিত।[১৬] রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ গ্রন্থের প্রথম চুরাশিটি গল্পের অর্ধেকই এই পর্যায়ের রচনা।[১৭]



শান্তিনিকেতন ১৯০১–১৯৩২

[সম্পাদনা]

১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে চলে আসেন শান্তিনিকেতনে[১৮] এখানে আম্রকুঞ্জ উদ্যানে একটি গ্রন্থাগার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ চালু করলেন "ব্রহ্মবিদ্যালয়" বা "ব্রহ্মচর্যাশ্র" নামে একটি পরীক্ষামূলক স্কুল।[১৯] এখানেই কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী সহ কন্যা রেণুকা, কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়। [২০] [২১]



নোবেল পুরস্কার

[সম্পাদনা]

১৯১৩ সালে তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ [২২][২৩] গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য সুইডিশ অ্যাকাডেমি রবীন্দ্রনাথকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে।গ[›][২৪]




নাইটহুড

[সম্পাদনা]

১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইটহুড উপাধি দেয়। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন। [২৫]


পল্লীসংগঠন কেন্দ্র

[সম্পাদনা]

১৯২১ সালে সুরুল গ্রামে মার্কিন কৃষি-অর্থনীতিবিদ লেনার্ড নাইট এলমহার্স্ট, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শান্তিনিকেতনের আরও কয়েকজন শিক্ষকও ছাত্রের সহায়তায় রবীন্দ্রনাথ "পল্লীসংগঠন কেন্দ্র" নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।[২৬] এই সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল কৃষির উন্নতিসাধন, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগ নিবারণ, সমবায় প্রথায় ধর্মগোলা স্থাপন, চিকিৎসার সুব্যবস্থা এবং সাধারণ গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা।[২৬]



সামাজিক কুফলগুলির বিরুদ্ধে সক্রিয়তা

[সম্পাদনা]

জীবনের এই পর্বে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্রতম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ বিহার প্রদেশে ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যুকে গান্ধীজি "ঈশ্বরের রোষ" বলে অভিহিত করলে, রবীন্দ্রনাথ গান্ধীজির এহেন বক্তব্যকে অবৈজ্ঞানিক বলে চিহ্নিত করেন এবং প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করেন।[২৭]



জীবনের শেষ দশকে ১৯৩২-১৯৪১

[সম্পাদনা]

জীবনের শেষ বছরগুলিতে বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় তার বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধসংকলন বিশ্বপরিচয়[২৮] এছাড়া পদার্থবিদ্যাজ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে তার অর্জিত জ্ঞানের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তার কাব্যেও।[২৯]



প্রাথমিক অসুস্থতা

[সম্পাদনা]

জীবনের শেষ চার বছর ছিল তার ধারাবাহিক শারীরিক অসুস্থতার সময়।[৩০] এই সময়ের মধ্যে দুইবার অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল তাকে।[৩০] একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থা হয়েছিল কবির।[৩০]



এই সময়ের কবিতা

[সম্পাদনা]

সেবার সেরে উঠলেও ১৯৪০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর আর তিনি সেরে উঠতে পারেননি।[৩০] এই সময়পর্বে রচিত রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলি ছিল মৃত্যু চেতনাকে কেন্দ্র করে সৃজিত কিছু অবিস্মরণীয় পংক্তিমালা।[৩০][৩১]



মৃত্যু

[সম্পাদনা]

মৃত্যুর সাত দিন আগে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন।[৩২] দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট, বাংলায় ২২শে শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।[৩৩][৩৪]


তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, অধ্যাপক শুভঙ্কর চক্রবর্তী সম্পাদিত, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, ১৪১২ ব., পৃ. ৭
  2. বঙ্গসাহিত্যাভিধান, তৃতীয় খণ্ড, হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য, ফার্মা কেএলএম প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৯৯২, পৃ. ৫০
  3. সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০০২, পৃ. ২১৯
  4. রবিজীবনী, প্রথম খণ্ড, প্রশান্তকুমার পাল, ভুর্জপত্র, কলকাতা, ১৩৮৯, পৃ. ২১ ও ২৫
  5. ভারতকোষ, পঞ্চম খণ্ড, পৃ. ৪০৫
  6. Thompson 1926, পৃ. 21–24
  7. Das, S (২০০৯), Tagore’s Garden of Eden, সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০০৯, [...] the garden in Panihati where the child Rabindranath along with his family had sought refuge for some time during a dengue epidemic. That was the first time that the 12-year-old poet had ever left his Chitpur home to come face-to-face with nature and greenery in a Bengal village.  অজানা প্যারামিটার |day= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  8. সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ৭
  9. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; rabindrajibankatha191 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  10. রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ১০-১১
  11. Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 55–56
  12. Stewart ও Twichell 2003, পৃ. 91
  13. রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ১৮-১৯
  14. "জীবনপঞ্জি: মৃণালিনী দেবী", চিঠিপত্র, প্রথম খণ্ড, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, ১৪০০ সং, পৃ. ১৭৯-৮১
  15. শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ, প্রমথনাথ বিশী, মিত্র ও ঘোষপাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৩৯৫ সংস্করণ, পৃ. ১৮
  16. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Thompson_1926_20 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  17. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Chakravarty_1961_45 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  18. রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ৫৬-৫৭
  19. Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 133
  20. রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ৫৯-৬০
  21. রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ১৯৩
  22. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; sarbajaner25 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  23. রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ২০২-০৪
  24. Hjärne, H (১৯১৩), The Nobel Prize in Literature 1913:Presentation Speech, The Nobel Foundation, সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০০৯, Tagore's Gitanjali: Song Offerings (1912), a collection of religious poems, was the one of his works that especially arrested the attention of the selecting critics.  অজানা প্যারামিটার |day= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  25. সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ১০
  26. শ্রীনিকেতনের গোড়ার কথা, সত্যদাস চক্রবর্তী, সুবর্ণরেখা, কলকাতা, ২০০১, পৃ. ২-১২
  27. Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 312–313
  28. বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস, চতুর্থখণ্ড, পৃ. ৪১৫
  29. রবীন্দ্রকল্পনায় বিজ্ঞানের অধিকার, ড. ক্ষুদিরাম দাস, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৮৪, পৃ. ৪-৫
  30. Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 338
  31. "Recitation of Tagore's poetry of death", Hindustan Times, Indo-Asian News Service, ২০০৫ 
  32. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; rabindrajibankatha185-86 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  33. Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 367
  34. Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 363