ঈদ মোবারক
ঈদ মোবারক | |
![]() ঈদ মোবারক ক্যালিগ্রাফি | |
আরবি | عيد مبارك |
---|---|
আক্ষরিক অর্থ | আনন্দ উদযাপন কল্যাণময় হোক |
ঈদ মোবারক বা ঈদ মুবারক (আরবি: عيد مبارك) হলো মুসলিমদের একটি ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্য, যার অর্থ "আনন্দ উদযাপন কল্যাণময় হোক"। এটি ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহায় পরস্পরকে বলে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়ে থাকে।[১][২]
কিছু রাষ্ট্রে এই শুভেচ্ছা বিনিময় একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং কোনো ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার অংশ নয়। এই শুভেচ্ছা বাক্যটি শুধু এই দুই মুসলিম উৎসবের সময় ব্যবহৃত হয়।[৩][৪]
আঞ্চলিক বৈচিত্র্য
[সম্পাদনা]
মুসলিম বিশ্বে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য অন্যান্য অনেক শুভেচ্ছাবাক্য রয়েছে। ঈদুল ফিতরের সময় নবি মুহাম্মদ সাহাবিদের সাথে সাক্ষাতের সময় একে অপরকে বলতেন “তাকাব্বাললাল্লাহু মিন্না ওয়া মিন্কুম্”, অর্থ: "আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন"।[৫] মুসলিম বিশ্ব জুড়ে, ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে অনেক বৈচিত্র্য বিদ্যমান।
আরব বিশ্ব
[সম্পাদনা]আরব মুসলমানরা “ঈদ মোবারক” শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেন এবং দিনটির শুভেচ্ছা জানানোর জন্য তাদের আরো বিভিন্ন উপায় রয়েছে। কিছু আরব “কুল্'আম্ ওয়ান্তুম্ বিখাইর্” (كل عام و تمنتم بخير) বলেন, যার অর্থ “আপনার প্রতিটি অতিবাহিত বছর ভালো যাক”। উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোতে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য আরেকটি সাধারণ শব্দ রয়েছে যা হলো “মিনাল আইদিন্ ওয়াল্ ফাইজিন্” (من العايدين والفايزين), যার অর্থ “আমরা যেন [আরও একবার] পবিত্র হতে পারি এবং আমরা যেন [আমাদের রোজাতে] সফল হতে পারি”, এবং এটির উত্তর হিসেবে “মিনাল্ মাক্বুলিনা ওয়াল্ ঘানিমিন্” (من المقبولين والغانمين), যার অর্থ “[আমাদের সৎকর্ম আল্লহ দ্বারা] গৃহীত হোক এবং আমরা যেন [জান্নাত] লাভ করতে পারি”।
ইরান, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান
[সম্পাদনা]ফার্সি ভাষাভাষীরা (ইরানি, আফগান এবং তাজিক) শব্দগুচ্ছ "ঈদ-ই শোমা মোবারক" (عید شما مبارک) বা সংক্ষেপে "ঈদ মোবারক" (عید مبارک) ব্যবহার করেন।
ইউরোপ
[সম্পাদনা]বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
[সম্পাদনা]বসনিয়ার মুসলমানরা সাধারণত "বজরাম শেরিফ মুবারেক ওলসুন" বলে শুভেচ্ছা জানায়। উত্তরে বলা হয় "আল্লাহ রাজি অলসুন"। বসনিয়ান মুসলমানদের আরেকটি সাধারণ ঈদের শুভেচ্ছা হল "বজরাম বারেচুলা"।
সার্বিয়া
[সম্পাদনা]সার্বিয়ায় মুসলমানরা সাধারণত "বাজরাম শেরিফ মুবারেক ওলসুন" বলে শুভেচ্ছা জানায় এবং অন্যরা "আল্লাহ রাজি ওলসুন" বলে উত্তর দেয়।
তুরস্ক এবং আজারবাইজান
[সম্পাদনা]তুরস্ক এবং আজারবাইজানে, তুর্কিরা একে অপরকে তুর্কি বাক্যাংশ ব্যবহার করে ঈদের শুভেচ্ছা জানায় যার মধ্যে রয়েছে: "বায়রামিনিজ কুটলু ওলসুন" ("আপনার ঈদ শুভ হোক"), "ইয়ি বায়রামলার" ("শুভ ঈদের দিন"), এবং "বায়রামিজ মুবারেক ওলসুন" ( "আমাদের ঈদ শুভ হোক")। সাধারণত "ঈদ মোবারক" শব্দটি ব্যবহার করা হয়না।
আলবেনিয়া
[সম্পাদনা]আলবেনিয়া এবং কসোভোর মুসলমানরা ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে (উরিমে ই ফেস্তা ফিতর বা কুরবান বজ্রমিত) শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেন।
দক্ষিণ এশিয়া
[সম্পাদনা]ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে শুভেচ্ছা হিসেবে "ঈদ মুবারাক" বা "ঈদ মুবারক হো" বলা হয়। এছাড়া ঈদের নামাজ শেষে একে অপরকে জড়িয়ে কোলাকুলি করে থাকেন।
বাংলাদেশ
[সম্পাদনা]
বেশিরভাগ বাংলাদেশীরা "ঈদ মোবারক" বা "ঈদের শুভেচ্ছা" শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেন।
পাকিস্তান
[সম্পাদনা]উর্দুভাষীরা, ঐতিহ্যগতভাবে ঈদের নামাজের পরেই শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকে। যদিও নতুন প্রজন্ম সাধারণত ঈদের দিন মধ্যরাতে শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকে। তারা "ঈদ মুবারক" ( উর্দু : عید مبارک ) অভিবাদন ব্যবহার করে এবং ঐতিহ্যগতভাবে "খায়ের মুবারক" ( উর্দু : خیر مبارک ) দিয়ে উত্তর দেওয়া হয়। নতুন শহুরে প্রজন্মের মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান বিকল্পের মধ্যে "আপ কো বি ঈদ মোবারক" ( উর্দু : آپ کو بھی عید مبارک) (অর্থ:আপনাকেও ঈদ মোবারক') অন্যতম।
পশতু ভাষাভাষীরা (সাধারণত খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ এবং পূর্ব আফগানিস্তানের পশতুন) ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে "আপনার উৎসব বরকতময় হোক " ( পশতু : اختري مبارک شه) (আখতার দে মুবারক শা) ব্যবহার করেন।
বেলুচি ভাষাভাষীরা (সাধারণত বেলুচিস্তান প্রদেশ এবং ইরানের সিস্তান ও বেলুচেস্তান প্রদেশের বেলুচ জনগণ) ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে " আপনার ঈদ শুভ হোক " (বেলুচি: عید تر مبارک با) (আইয়েদ তারা মুবারক বা ) ব্যবহার করেন।
দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়া
[সম্পাদনা]ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই এবং সিঙ্গাপুরের মালয় ভাষা-ভাষী জনগোষ্ঠীর মতো দেশগুলোর মুসলমানরা ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে "সেলামাত হরি রায়" বা "সেলামাত ইদুল ফিত্রি" (ইন্দোনেশিয়া) বা "সালাম আইদিলফিত্রি" (মালয়) ব্যবহার করেন। পাশাপাশি জনপ্রিয় অভিব্যক্তি "মিনাল আইদিন ওয়াল ফাইজিন" ও ব্যবহৃত হয়। এটি একটি আরবি বাক্য যার অর্থ "আমরা যেন আরও একবার পবিত্র হতে পারি এবং আমাদের উপবাসে সফল হতে পারি"। এটি আল-আন্দালুসে মুসলমানদের শাসনের সময় শাফিউদ্দীন আল-হুলির লেখা একটি কবিতার উদ্ধৃতি।
ফিলিপাইন
[সম্পাদনা]ফিলিপাইনে ঈদ সরকারি ছুটির দিন হিসাবে স্বীকৃত। ঈদ মোবারক অভিবাদনটি ফিলিপাইনে সম্প্রতি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তবে ফিলিপাইনের মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী অভিবাদন প্রতিবেশী মালয়-ভাষীদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ঈদ-উল-ফিতরের জন্য এটি হলো "সালামত হারিরায়া পুওয়াসা" এবং ঈদুল আযহার জন্য "সালামত হারিরায়া হাজজি"
পশ্চিম আফ্রিকা
[সম্পাদনা]উত্তর নাইজেরিয়া এবং নাইজার থেকে উদ্ভূত হাউসা ভাষায় পশ্চিম আফ্রিকা জুড়ে মুসলমানদের ব্যাপকভাবে কথা বলতে দেখা যায়। হাউসায় তাদের ঈদের শুভেচ্ছা হলো "বারকা দা সাল্লাহ", যার অনুবাদ "ধন্য ঈদের নামাজ"।
মালিতে, বামবারা ভাষায় "সাম্বে-সাম্বে বলে শুভেচ্ছা জানানো হয় । যেসব দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মান্ডে ভাষী মানুষ তারা ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে এই অভিবাদনটি ব্যবহার করেন।
ঘানা
[সম্পাদনা]ঘানার দাগবানলি এবং কুসাসে ভাষা-ভাষীরা "নি তি ইউন' পল্লী" বলে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো হয়। এর অর্থ "শুভ নতুন ঈদ মৌসুম"। এছাড়াও হাউসা ভাষায় "বারকা দা সাল্লা" ব্যবহৃত হয়।
লাতিন আমেরিকা এবং স্পেন
[সম্পাদনা]লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মুসলমানরা "ফেলিজ ঈদ" (স্প্যানিশ) বলে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "What is celebrated on Eid al-Fitr?"। Le Monde.fr (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৪-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১১।
- ↑ Chughtai, Alia। "When is Eid al-Fitr 2024 and how is it celebrated?"। Al Jazeera (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১১।
- ↑ "What does Eid Mubarak mean? How to say it in Arabic and reply"। সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৬।
- ↑ "Exchange of greetings in Eid"
- ↑ "ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ২৫ জুন ২০১৭। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।