আলাপ:মধুসূদন গুপ্ত

পাতাটির বিষয়বস্তু অন্যান্য ভাষায় নেই।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
উইকিপ্রকল্প ভারত (মূল্যায়ন - মান start, গুরুত্ব mid)
এই নিবন্ধটি উইকিপ্রকল্প ভারতের অংশ, যা উইকিপিডিয়ায় ভারত সম্পর্কিত বিষয়ের উন্নতির একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আপনি যদি প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে চান, তাহলে প্রকল্প পৃষ্ঠায় যান, যেখানে আপনি প্রকল্পের আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং করণীয় কাজসমূহের একটি তালিকা দেখতে পাবেন।
Start-Class article প্রাথমিক  এই নিবন্ধটি প্রকল্পের মানের মাপনী অনুযায়ী start-শ্রেণী হিসাবে মূল্যায়িত হয়েছে।
 মধ্যম  এই নিবন্ধটি গুরুত্বের মাপনী অনুযায়ী mid-গুরুত্ব হিসাবে মূল্যায়িত হয়েছে।
 

মধুসূদন গুপ্ত প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ কারী[সম্পাদনা]

১৮৩৬ সাল। গভীর আলোচনায় মগ্ন ডেভিড হেয়ার, কলকাতা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মিস্টার ব্রামলি এবং অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান মিস্টার গুডিভ। অনেকক্ষন পর হেয়ার সাহেব বললেন, মধুসূদনকে ডাকো। আমি বলবো তাকে। আবার ডাক পড়লো মধুর। এর আগে একবার মধুসূদনের শরণাপন্ন হয়েছিলেন তাঁরা। ভারতবন্ধু গভর্নর বেণ্টিঙ্ককে তাঁরা বুঝিয়েছিলেন এতো বড় ভারতবর্ষে চিকিৎসা হয় আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি পদ্ধতিতে। আধুনিক এলোপ্যাথি চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই এখানে। তাই এখানে একটি এলোপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তোলা দরকার। বড়োলাট জিজ্ঞাসা করলেন, প্রতিষ্ঠান গড়লেই তো হবেনা। পড়ানোর মতো অধ্যাপক কোথায় পাবেন। বিশেষ করে ভারতীয় ভাষায় পড়ানোর তো কেউ নেই। সেদিন প্রথম ডাক পরেছিল মধুসূদন গুপ্তর।

কে এই মধুসূদন? বারবার তাঁর ডাক পড়ে কেন? হুগলীর বৈদ্যবাটির গুপ্ত পরিবারের সন্তান তিনি। জন্ম আনুমানিক ১৮০০ সালে। তাঁরা বংশপরম্পরায় বৈদ্য পরিবার। তাঁর পিতামহ ছিলেন নবাব পরিবারের চিকিৎসক। সেই পরিবারের সন্তান চিকিৎসাবিদ্যায় আগ্রহী হবে এতে আর আশ্চর্য কি? ১৮২৬ সালে সংস্কৃত কলেজের আয়ুর্বেদ বিভাগে তিনি ভর্তি হন। প্রথম থেকেই আধুনিক চিকিৎসা ও শারীরবিদ্যায় ছিল তাঁর অসীম আগ্রহ। এইসময় তিনি কাঠ ও মোম দিয়ে বানানো মানুষের হাড়ের মডেল নিয়ে আগ্রহভরে দেখতেন তা। ইংরাজিতে লেখা আধুনিক চিকিৎসাগ্রন্থ শুধু পড়তেন না, সেগুলিকে আরবি ও সংস্কৃতে অনুবাদও করেছিলেন তিনি। পণ্ডিতেরা তাঁর মেধা ও অধ্যবসায় দেখে বিস্মিত হতেন। এইসময় আয়ুর্বেদ অধ্যাপক খুদিরাম বিশারদ অসুস্থ হয়ে পড়লে অধ্যক্ষ মধুসূদনকে সহ-অধ্যাপক হিসাবে ৩০টাকা বেতনে নিযুক্ত করেন। একজন ছাত্র কীভাবে অধ্যাপনা করবে তা নিয়ে অন্য ছাত্ররা সন্দিহান ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কিন্তু নিজ পাণ্ডিত্যে মধুসূদন সবার আস্থা অর্জন করলেন শুধু না, প্রিয় অধ্যাপক হয়ে উঠলেন। আর এরপর ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে গড়ে উঠলো কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। তার তখনই ভারতীয় অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেবার জন্য হেয়ার সাহেব, ব্রামলি সাহেব তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন। আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও দায়িত্ব নিতে পিছিয়ে যাননি তিনি।১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে একই সঙ্গে ছাত্র ও সহকারি অধ্যাপক হিসাবে মেডিকেল কলেজে যোগ দিলেন তিনি।

একবছরের মধ্যে আবার তাঁর ডাক পড়লো কেন? এবার সমস্যা গুরুতর। ডাক্তারি শিখতে গেলে অ্যানাটমি বা শব ব্যবচ্ছেদ জরুরী। কিন্তু ভারতীয় ছাত্রগন সংস্কারের কারনে এই কাজে রাজি নয়। তার সঙ্গে আছে রক্ষণশীল সমাজের হুমকি ও রক্তচক্ষু। কিছুতেই কলকাতার বুকে এই অনাচার তাঁরা হতে দেবেন না। এদিকে শব ব্যবচ্ছেদ ছাড়া শিক্ষাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এই সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেতে আবার ডাক পড়লো মধুসূদনের।

সব শুনলেন তিনি। তারপর বললেন আমি করবো শব ব্যবচ্ছেদ। অধ্যক্ষ বললেন রক্ষনশীল সমাজ যদি বাধা দেয়। মধু বললেন বুঝিয়ে দেবো তাদের যুক্তি দিয়ে। প্রত্যয়ী তিনি। নতুন কাজের দায়িত্ব পেয়ে উদ্দীপ্ত। মুখে মুখে ছড়িয়ে গেলো সেই খবর। কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গেলো রক্ষণশীল সমাজের কানে। বিক্ষোভে উত্তাল হোল অন্ধবিশ্বাসী সমাজ।

পরদিন তাঁর বাড়িতে দলবেঁধে এলো গোঁড়া পণ্ডিতদল। শব ব্যবচ্ছেদ না বন্ধ করলে সমাজচ্যুত করা হবে তাঁকে। তাঁর পিতা ডেকে পাঠালেন তাঁকে। তিনি ধীর অথচ আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গীতে বোঝাতে শুরু করলেন অ্যানাটমির প্রয়োজনীয়তা। সবের পরেও গোঁড়া পণ্ডিতেরা আবার ধর্মীয় যুক্তি দিলো। তিনি তখন তুলে ধরলেন প্রাচীন ভারতের চিকিৎসক সুশ্রুতের শব ব্যবচ্ছেদের উদাহরন। আর যুক্তি খুঁজে পেল না রক্ষণশীলরা। পিতা তাঁকে আশীর্বাদ করে বললেন, আমরা জাতে বৈদ্য। চিকিৎসা আমাদের ধর্ম। আশীর্বাদ করি চিকিৎসার নব দিগন্ত খুলে যাক তোমার হাতে।

নব দিগন্তেরই সূচনা করলেন তিনি। ১৮৩৬ এর ১০ই জানুয়ারি। সেদিন মেডিকেল কলেজের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে হামলার আশঙ্কায়। গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে রক্ষণশীল সমাজ। আবার মধুসূদনের সমর্থনে রাস্তায় বেরিয়েছেন নব্যবঙ্গের সমর্থকরা। কলকাতা জুড়ে চাঞ্চল্য। আর ভেতরে ডক্টর গুডিভের সঙ্গে অ্যানাটমি রুমে ঢুকলেন মধুসূদন। ছুরির টানে তৈরি হোল ইতিহাস। ভেঙে গেলো রক্ষণশীলতার দরজা। নব চেতনায় উদ্বুদ্ধ হোল ভারতের চিকিৎসাবিদ্যা। শুধু ভারত কেন, ইতিহাস বলছে তিনি হলেন প্রথম এশিয় ছাত্র যিনি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে শব ব্যবচ্ছেদ করেছিলেন। তাঁর কৃতিত্বকে সম্মান জানিয়ে ৫০ বার তোপধ্বনি করেছিলো কলকাতার ইংরেজ সরকার। তাঁর দেখানো পথে পরের বছরই ৬০ টি শব ব্যবচ্ছেদ করেছিলো ভারতীয় ছাত্ররা। রক্ষণশীল সমাজ ভেসে গিয়েছিলো সেই আধুনিকতার স্রোতে। আর সেই ধারার ভগীরথ ছিলেন মধুসূদন গুপ্ত।

চিকিৎসাবিদ্যা অন্তপ্রাণ এই মানুষটি ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন। মেডিকেল কলেজের হিন্দুস্থানি বিভাগের পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁর হাতে। তাঁর পরামর্শে ম্যালেরিয়া, কলেরা থেকে বাঁচার জন্য সরকার বিশুদ্ধ পানীয় জল, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ রাখার বিশেষ উদ্যোগ নেন। হিন্দু ধাত্রী সমিতি গঠন করে তিনি কলকাতার প্রসূতিদের মৃত্যু রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নেন। সেই যুগে দাঁড়িয়ে তাঁর অবদান ভোলার নয়। শব ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে জীবানু সংক্রমনে সেপ্টিসিমিয়াতে আক্রান্ত হয়ে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই নভেম্বর মৃত্যু হয় এই মহাপ্রাণের। সারা জীবন চিকিৎসাবিদ্যা চর্চা করে এই বিদ্যাচর্চাই প্রাণ নিলো তাঁর।

আমরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মনে রাখি,স্মরণ করি। কিন্তু মনে রাখিনা এইরকম দেশসেবকদের। যারা সমৃদ্ধ করেছেন দেশকে। এনেছেন আধুনিকতার আলো, কিন্তু নিজেরা চলে গেছেন বিস্মৃতির অন্ধকারে। প্রণাম জানাই ভারতীয় চিকিৎসাবিদ্যার এই কাণ্ডারি মধুসূদন গুপ্তকে। SK MD SANY AZAD (আলাপ) ১৩:৩৯, ৩০ মে ২০১৯ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]

হ্যাঁ, সঠিক তথ্য। সময় পেলে নির্ভরযোগ্য উৎস খুঁজে এখান থেকে কিছু তথ্য যথাযথভাবে নিবন্ধে যোগ করার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ আপনাকে। BiolysisBiologist (আলাপ) ০৫:৫০, ৮ জুলাই ২০২২ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]