বিষয়বস্তুতে চলুন

আয়নিক বন্ধন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সোডিয়াম ও ফ্লুরিন জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে সোডিয়াম ফ্লুরাইড গঠন করছে। সুস্থির ইলেক্ট্রন বিন্যাস লাভের চেষ্টায় সোডিয়াম তার বহিস্থ ইলেক্ট্রন বর্জন করছে, আর তাপদায়ী প্রক্রিয়ায় ফ্লুরিন সেটা গ্রহণ করছে। ফলে বিপরীত আধানযুক্ত দুটি আয়ন পরস্পর আকর্ষিত হয়ে কঠিন যৌগ তৈরি করছে।

আয়নীয় বন্ধন (ইংরেজি: Ionic bonding) বা তড়িৎযোজী বন্ধন হলো এক প্রকার রাসায়নিক বন্ধন, যা বিপরীত আধানযুক্ত আয়নসমূহের মধ্যে স্থির-বৈদ্যুতিক আকর্ষণ সৃষ্টি করে। এছাড়া এই বন্ধন আয়নীয় যৌগে ক্রিয়াশীল একটি প্রাথমিক বল। আয়ন হলো সেসব পরমাণু, যাদের মধ্যে এক বা একাধিক ইলেকট্রন বেশি আছে (একে বলে অ্যানায়ন, যা ঋণাত্নক আধানবিশিষ্ট হয়) এবং এক বা একাধিক ইলেক্ট্রনের ঘাটতি আছে (একে বলে ক্যাটায়ন, যা ধনাত্মক

আধানবিশিষ্ট হয়)। ইলেক্ট্রনের এই গ্রহণ-বর্জন বা স্থানান্তরণকে বলে তড়িৎযোজ্যতা (অন্যটি হল সমযোজ্যতা)। সাধারণত ক্যাটায়নগুলি ধাতব এবং অ্যানায়নগুলি অধাতব পরমাণু হয়, কিন্তু জটিলতর আয়নেরও অস্তিত্ব আছে, যেমন, NH4+ ও SO42--এর মতো আণবিক আয়ন। এককথায়, পূর্ণ যোজ্যতা কক্ষ লাভের জন্য ধাতু থেকে অধাতুর দিকে ইলেক্ট্রনের সরণই হল আয়নীয় বন্ধন।

বিশুদ্ধ আয়নীয় বন্ধনকে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ ― এক্ষেত্রে একটি অণু বা আয়ন নিজের পুরোপুরি অন্যকে দান করে ― কিন্তু আয়নীয় যৌগগুলির কিছুটা সমযোজী চরিত্র দেখা যায়। সেহেতু "আয়নীয় বন্ধন" কথাটি তখনই প্রযোজ্য হবে, বন্ধনের আয়নীয় চরিত্র সমযোজী চরিত্রের চেয়ে বেশি হবে ― অর্থাৎ ওই বন্ধন গঠনকারী দুটি পরমাণুর মধ্যে তড়িৎঋণাত্মকতার পার্থক্য অনেক বেশি, ফলস্বরূপ, সমযোজী বন্ধনে ইলেক্ট্রনগুলি সমানভাবে বণ্টিত থাকে, কিন্তু আয়নীয় বন্ধন কিছুটা ধ্রুবীয় (polar) হয়। যে বন্ধনগুলির মধ্যে আংশিক আয়নীয় ও আংশিক সমযোজী চরিত্র থাকে, তাদের ধ্রুবীয় সমযোজী বন্ধন বলে।

বেশিরভাগ আয়নীয় যৌগই গলিত কিংবা দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে। উপস্থিত আয়নের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে আয়নীয় যৌগের গলনাঙ্ক উচ্চ হয়। আধান যত বেশি হয়, পারস্পরিক সংসক্তি টান তত বেশি আর গলনাঙ্কও তত বেশি হয়। এই যৌগগুলি জলে দ্রবণীয়। আবার দেখা যায়, সংসক্তি টান যত কম হয়, দ্রাব্যতা তত বেশি হতে থাকে।

প্রাকদর্শন

[সম্পাদনা]

যে সব পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষ প্রায় পুরো ফাঁকা অথবা প্রায় পুরো ভর্তি থাকে, সেগুলি ভীষণ সক্রিয় হয়। অধিক তড়িৎঋণাত্মক পরমাণুগুলির (যেমন, হ্যালোজেন মৌল) যোজ্যতা কক্ষের মোটে একটি বা দুটি কক্ষক ফাঁকা থাকে, এরা অন্য অণু বা পরমাণুর সাথে বিক্রিয়া করে ইলেক্ট্রন গ্রহণ করে ও অ্যানায়নে রূপান্তরিত হয়। আবার দুর্বল তড়িৎঋণাত্মক পরমাণুর (যেমন, ক্ষার ধাতু) যোজ্যতা কক্ষে অল্পসংখ্যক ইলেক্ট্রন থাকে, এরা সহজেই বেশি তড়িৎঋণাত্মক পরমাণুতে ইলেক্ট্রন বর্জন করে। ফলে, দুর্বল তড়িৎঋণাত্মক পরমাণুর ইলেক্ট্রন-মেঘ সংকুচিত হয় ও ক্যাটায়ন গঠন করে।

বন্ধন সৃষ্টি

[সম্পাদনা]
সোডিয়াম ক্লোরাইডে আয়নীয় বন্ধন।

জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ায় সাধারণত আয়নীয় বন্ধন গঠিত হয়। এই সময় কোনো (ধাতব) মৌল, যার আয়নায়ন বিভব কম, তার পরমাণুগুলি সুস্থির ইলেক্ট্রন বিন্যাস লাভের চেষ্টায় ইলেক্ট্রন বর্জন করে। এতে ক্যাটায়ন সৃষ্টি হয়। অন্য একটি (অধাতব) মৌল, যার ইলেক্ট্রন আসক্তি ধনাত্মক, তার পরমাণু সুস্থির ইলেক্ট্রন বিন্যাস পেতে ওই বর্জিত ইলেক্ট্রন গ্রহণ করে, এবং অ্যানায়নে পরিণত হয়। সাধারণত s-ব্লক ও p-ব্লক মৌলগুলি কোনো নিষ্ক্রিয় গ্যাসের সুস্থিত ইলেক্ট্রন বিন্যাস গ্রহণ করে। d-ব্লক ও f-ব্লক মৌলগুলির জন্য বিশেষ ইলেক্ট্রন বিন্যাস থাকে। অ্যানায়ন ও ক্যাটায়নের মধ্যে স্থির-তড়িৎ আকর্ষণ বলই কেলাস জালক (lattice) গঠন করে কঠিন যৌগ সৃষ্টি করে। এই ল্যাটিস জালকের জন্যই আয়নীয় বন্ধনে কখনোই অণু গঠিত হয় না। যদিও, কিছু আয়নের গঠন অত্যন্ত জটিল হয় এবং আণবিক আয়ন গঠন করে, যেমন, অ্যাসিলেট অ্যানায়ন ও অ্যামোনিয়াম ক্যাটায়ন।

উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যেতে পারে সাধারণ খাদ্য লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড। সোডিয়াম (Na) ও ক্লোরিন (Cl) পরমাণু পরস্পরের সংস্পর্শে এলে, সোডিয়াম পরমাণু একটি ইলেক্ট্রন বর্জন করে ক্যাটায়নে (Na+) পরিণত হয়, আর ক্লোরিন পরমাণু ওই ইলেক্ট্রন গ্রহণ করে অ্যানায়নে (Cl) রূপান্তরিত হয়। এই অ্যানায়ন ১:১ অনুপাতে পরস্পর আকৃষ্ট হয়ে সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) গঠন করে।

Na + Cl → Na+ + Cl → NaCl

যৌগটিকে নিস্তড়িৎ রাখার জন্য দুটি আয়নের মধ্যে পরিমাণগত অনুপাত খুব সুসংহত হয়। আণবিক যৌগ না হওয়া সত্ত্বেও এই পরিমাণগত অনুপাত এরা মেনে চলে। কিন্তু যে সব যৌগ সংকর এবং বন্ধনে মিশ্র ধাতব ও আয়নীয় চরিত্র থাকে, তাদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। উদাহরণ হিসেবে, অনেক সালফাইড যৌগ পরিমাণগত যৌগ নয়।

আরহেনিয়াস ক্ষারক (যেমন, NaOH) ও আরহেনিয়াস অ্যাসিড (যেমন, HCl) প্রশমন বিক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট হয় বলে, অনেক আয়নীয় যৌগকে লবণ রূপে গণ্য করা হয়।

NaOH + HCl → NaCl + H2O

এই NaCl লবণটিতে অ্যাসিডের অংশ Cl ও ক্ষারের অংশ Na+ থাকে।

চিত্রে লিথিয়াম ও ফ্লুরিনের মধ্যে আয়নীয় বন্ধনের মাধ্যমে লিথিয়াম ফ্লুরাইড গঠন করছে। লিথিয়ামের আয়নায়ন বিভব কম, তাই তার নিঃসঙ্গ যোজ্যতা ইলেক্ট্রন ফ্লুরিন পরমাণুকে দিয়ে দেয়, ফ্লুরিনের ইলেক্ট্রন আসক্তি বেশি হওয়ায় সহজেই সেই বর্জিত ইলেক্ট্রন গ্রহণ করে। ফলে লিথিয়ামের ইলেক্ট্রন বিন্যাস নিষ্ক্রিয় হিলিয়ামের মতো আর ফ্লুরিনের ইলেক্ট্রন বিন্যাস নিয়নের সমতুল্য হয়। গঠিত দুই আয়নের মধ্যে স্থির-তড়িৎ আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। ফলে ল্যাটিস শক্তির দ্বারা পরস্পর কাছাকাছি এসে তারা আয়নীয় বন্ধন গঠন করে।

ক্যাটায়ন থেকে ইলেক্ট্রন বর্জন একটি তাপগ্রাহী প্রক্রিয়া, সংস্থার মোট শক্তি এতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। বন্ধন বিভাজন হলে কিংবা অ্যানায়ন গঠনের সময় একাধিক ইলেক্ট্রন প্রবেশ করলেও শক্তির পরিবর্তন হয়। কিন্তু অ্যানায়নে ক্যাটায়নের যোজ্যতা ইলেক্ট্রনটি প্রবেশ করায় এবং পারস্পরিক আকর্ষণজনিত ল্যাটিস শক্তির ক্রিয়ার দরুন সংস্থার মোট শক্তি আবার হ্রাস পায়।

আয়নীয় বন্ধন তখনই গঠিত হবে, যখন সার্বিক শক্তির পরিবর্তন সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। সাধারণত বিক্রিয়াগুলি তাপদায়ী হয়, কিন্তু মার্কিউরিক অক্সাইড (HgO) গঠনের বিক্রিয়াটি তাপগ্রাহী। আয়নগুলি কতটা পরিবর্তিত হয়েছে, তার উপর নির্ভর করে আয়নীয় বন্ধন কতটা দৃঢ়। কুলম্বের সূত্র অনুযায়ী, C2+A2− লবণের অন্তর্বর্তী স্থির-তড়িৎ আকর্ষণ বল C+A লবণের আকর্ষণ বলের চারগুণ। এখানে C ও A হল যথাক্রমে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন। অবশ্যই এক্ষেত্রে আয়নের আকার ও ল্যাটিসের দৃঢ়তাকে ধরা হয়নি।

কঠিন অবস্থায় আয়নীয় যৌগ ল্যাটিস গঠন সৃষ্টি করে। ল্যাটিস গঠন কীরূপ হবে, তা নির্ভর করে প্রধানত আয়নদ্বয়ের আধান ও তাদের আপেক্ষিক আকারের ওপর। কিছু বিশেষ একই প্রকার গঠন প্রচুর যৌগে দেখা যায়; যেমন সাধারণ লবণ সোডিয়াম ক্লোরাইডের গঠন দেখা যায় অনেক ক্ষারীয় হ্যালাইডে, আর MgO-এর গঠন দেখা যায় কিছু এক-অক্সাইড যৌগে। আয়নীয় কেলাসের গঠন প্রতিষ্ঠিত হয় পাউলির নীতির উপর ভিত্তি করে।

বন্ধন শক্তি

[সম্পাদনা]

কঠিন আয়নীয় যৌগের ঘনীভূত গ্যাসীয় আয়ন গঠনে এনথ্যালপির পরিবর্তনকে ল্যাটিস শক্তি বলে। বর্ন-হেবার চক্রের ল্যাটিস শক্তি নির্ণীত হয়। ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের পারস্পরিক আকর্ষণ ও সামান্য এক বিকর্ষণ বলের মানের যোগফল থেকে যে স্থির-তড়িৎ স্থিতিশক্তির মান পাওয়া যায় (বর্ন-ল্যান্ডে সমীকরণ), তা থেকেও ল্যাটিসের মান অনুমান করা যায়। স্থির-তড়িৎ স্থিতিশক্তিকে আন্তঃআয়নীয় বিচ্যুতি ও ম্যাডেলাং ধ্রুবকের সাপেক্ষে প্রকাশ করা হয়, এর থেকে কেলাসের জ্যামিতিক গঠন বোঝা যায়। ইলেক্ট্রন নিউক্লিয়াসের থেকে যত দূরে যায়, আকর্ষণ ততই কমে আসে। বর্ন-ল্যান্ডে সমীকরণ ব্যবহার করে ল্যাটিসের সঠিক মনে নির্ণয় করা যায়, যেমন, সোডিয়াম ক্লোরাইডের ক্ষেত্রে এর মান দাঁড়ায় −৭৫৬ KJ/mol। বর্ন-হেবার চক্র ব্যবহার করলে ওই মান হয় −৭৮৭ KJ/mol।[][]

ধ্রুবায়ন প্রভাব

[সম্পাদনা]

বিশুদ্ধ আয়নীয় যৌগে থাকা কেলাস জালকে আবদ্ধ আয়নসমূহ গোলাকার হয়; কিন্তু ধনাত্মক আয়নটি ক্ষুদ্র আকার কিংবা বেশি আধান হলে, এটি ঋণাত্মক আয়নের ইলেক্ট্রন-মেঘকে বিকৃত করে, ফাজানের সূত্রে এর বিস্তৃত ব্যাখ্যা আছে। এই ধ্রুবায়নের ফলে ঋণাত্মক আয়ন দুটি নিউক্লিয়াসের মাঝে একটি অতিরিক্ত ইলেক্ট্রন ঘনত্ব সৃষ্টি করে, অর্থাৎ আংশিক সমযোজ্যতার সৃষ্টি হয়। বৃহদাকার ঋণাত্মক আধান সহজেই ধ্রুবায়িত হয়, তবে সাধারণত যেসব ধনাত্মক আয়নের আধান 3+ (যেমন, Al3+), তাদের ক্ষেত্রেই প্রভাবটি কার্যকর হয়। যদিও, 2+ আয়ন (Be2+) এমনকি 1+ আয়নেরও (Li+) সামান্য ধ্রুবায়ন ক্ষমতা আছে, কারণ এদের আকার অত্যন্ত ক্ষুদ্র হয় (যেমন LiI আয়নীয় হলেও কিছু সমযোজী চরিত্র দেখা যায়)। উল্লেখ্য, তড়িৎক্ষেত্রের প্রভাবে ল্যাটিসে আয়নের সরণের জন্য আয়নীয় ধ্রুবায়ন দায়ী নয়।

সমযোজী বন্ধনের সাথে তুলনা

[সম্পাদনা]

আয়নীয় বন্ধনে বিপরীতধর্মী আয়নের আকর্ষণে পরমাণুগুলি আবদ্ধ হয়, যেখানে সমযোজী বন্ধনে সুস্থির ইলেক্ট্রন বিন্যাস লাভের জন্য পরমাণুগুলি ইলেক্ট্রন আদান-প্রদান করে আবদ্ধ হয়। সমযোজী বন্ধনে অণুর প্রত্যেকটি পরমাণুর পার্শ্ববর্তী জ্যামিতিক গঠন নির্ধারিত হয় যোজ্যতা কক্ষ ইলেক্ট্রন জোড় বিকর্ষণ বা VSEPR তত্ত্ব অনুযায়ী, কিন্তু আয়নীয় যৌগে সবর্গাঙ্ক দিয়ে জ্যামিতিক গঠন বোঝা যায়। বন্ধন কোণ বেশি হওয়ায় সমযোজী বন্ধনের অভিমুখ থাকে, কিন্তু আয়নীয় বন্ধনের তা থাকে না। ইলেক্ট্রন জোড় না থাকায়, পরস্পরকে প্রশমিত করতে পারে না, তাই যথাসম্ভব সুস্থিত আকার ধারণ করে আয়নীয় যৌগ। NaCl-এ প্রত্যেক আয়নের ৬টা করে বন্ধন থাকে, প্রত্যেকটি একে-অপরের সাথে ৯০° কোণে আনত থাকে। CsCl-এ সবর্গাঙ্ক (বন্ধনের সংখ্যা) হল ৮। তুলনায় কার্বনের সর্বোচ্চ ৪টি বন্ধন থাকে।

বিশুদ্ধ আয়নীয় বন্ধনের কোনো অস্তিত্ব নেই, কারণ বন্ধনের ইলেক্ট্রন ঘনত্বের মধ্যে কিছু আদান-প্রদানও ঘটে। অর্থাৎ সমস্ত আয়নীয় বন্ধনের কিছুটা সমযোজী চরিত্র আছে। কোনো বন্ধনের আয়নীয় চরিত্র সমযোজী চরিত্রের চেয়ে বেশি হলে তাকে আয়নীয় বন্ধন বলা হয়। বন্ধনে অংশগ্রহণকারী পরমাণুগুলির তড়িৎঋণাত্মকতার পার্থক্য যত বেশি, বন্ধন তত বেশি আয়নীয় (বা ধ্রুবীয়)। আংশিক সমযোজী ও আংশিক আয়নীয় চরিত্রবিশিষ্ট বন্ধনকে ধ্রুবীয় সমযোজী বন্ধন বলে। যেমন, Na―Cl ও Mg―O-এর মোট আকর্ষণের সামান্য পরিমাণই সমযোজী, কিন্তু Si―O-এর বন্ধন ~৫০% আয়নীয় আর ~৫০% সমযোজী। পাউলির অনুসারে, পরমাণুদ্বয়ের তড়িৎঋণাত্মকতার ব্যবধান ১.৭ (পাউলিং স্কেলে) হলে, আয়নীয় ৫০% আয়নীয় চরিত্র থাকবেই, যাতে পার্থক্য ৫০%-এর বেশি হলে তার মধ্যে আয়নীয় চরিত্রের প্রাধান্য থাকে।[] যেসব সমযোজী যৌগের পরমাণুতে কোয়াড্রুপোলার নিউক্লিয়াস থাকে (2H, 14N, 81,79Br, 35,37Cl, 127I), তাদের আয়নীয় চরিত্র সহজেই নির্ণয় করা যায়। NQR (নিউক্লিয়ার কোয়াড্রুপোল রেজোনেন্স) ও NMR-এ (নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স) এর সম্বন্ধে অনেক জানা যায়। নিউক্লীয় কোয়াড্রুপোল ভ্রামক Q ও চুম্বকীয় ক্ষেত্র নতিমাত্রার (EFG) মধ্যে ক্রিয়াকে প্রকাশ করা হয় নিউক্লীয় কোয়াড্রুপোল জোড় ধ্রুবকের সাহায্যে, QCG = e2qzzQ/h, যেখানে, eqzz নির্দেশ করে EFG-এর সাধারণ উপাংশকে এবং e হল তড়িদাধান। চুম্বক ক্ষেত্র নতিমাত্রা অণুর বন্ধন প্রকৃতি নির্ধারণ করতে সাহায্য করে, যখন QCC-র মান NMR কিংবা NQR পদ্ধতিতে সঠিকভাবে অনুমান করা যায়।

সাধারণত, আয়নীয় যৌগ কঠিন (কিংবা তরল) হয়। কোনো দুটি পরমাণুর মাঝে একটিই "আয়নীয় বন্ধন" আছে, তা বলা ঠিক না, যে আকর্ষণ ল্যাটিসকে ধরে রাখে, তা সাধারণত সমষ্টিগত প্রকৃতির হয়। সমযোজী বন্ধনের সাথে আয়নীয় বন্ধনের পার্থক্য এখানেই। দুটি পরমাণুর মাঝে একটি সমযোজী বন্ধন আছে ― তা সহজেই বলা যায়। যদিও আয়নীয় বন্ধনে কিছুটা সমযোজী চরিত্র থাকে, তবুও বন্ধনের ইলেক্ট্রন স্থানান্তর নাও ঘটতে পারে। এই ক্ষেত্রে, বন্ধনটি সমগ্র কেলাস জুড়ে দৈত্যাকার অণুকে ঘিরে এক গঠন তৈরি করে। এই জন্যই আয়নীয় বন্ধন সমষ্টিগত চরিত্রের হয়ে থাকে। যখন তড়িৎঋণাত্মকতার পার্থক্য কমে আসে, তখন উৎপন্ন যৌগটি সাধারণত অর্ধ-পরিবাহী নয়তো ধাতুকল্প অথবা ধাতব বন্ধনযুক্ত ধাতব পরিবাহী হয়।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. David Arthur Johnson, Metals and Chemical Change, Open University, Royal Society of Chemistry, 2002, আইএসবিএন ০-৮৫৪০৪-৬৬৫-৮
  2. Linus Pauling, The Nature of the Chemical Bond and the Structure of Molecules and Crystals: An Introduction to Modern Structural Chemistry , Cornell University Press, 1960 আইএসবিএন ০-৮০১-৪০৩৩৩-২ ডিওআই:10.1021/ja01355a027
  3. L. Pauling The Nature of the Chemical Bond (3rd ed., Oxford University Press 1960) p.98-100.

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]