আবুল হোসেন মিয়া (সাহিত্যিক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কবি শেখর

আবুল হোসেন মিয়া
জন্ম(১৯২০-১০-০১)১ অক্টোবর ১৯২০
ফরিদপুরের মাদারীপুর, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা বাংলাদেশ)
মৃত্যু২ ফেব্রুয়ারি ২০০০(2000-02-02) (বয়স ৭৯) [১]
মাদারীপুর, বাংলাদেশ
পেশাশিক্ষক, কবি, শিশু সাহিত্যিক
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
শিক্ষাএমএ (বাংলা সাহিত্য)
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৫)
উল্লেখযোগ্য রচনা‘একটুখানি’; ‘তাল বেতালের ছড়া’

আবুল হোসেন মিয়া (১ অক্টোবর, ১৯২০ – ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৮ খ্র‌ি‌.) একজন প্রতিষ্ঠিত ছড়াকার এবং শিশু সাহিত্যিক, তিনি শিশুতোষ সাহিত্যে খ্যাতিমান ছিলেন। তিনি কর্মজীবনে মূলত ছিলেন শিক্ষক। ১৯৭৮ সালে তার সাহিত্য কর্মের জন্যে ‘কবি শেখর’ উপাধিতে ভুষিত হন।[২]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

কবি আবুল হোসেন মিয়া ১৯২০ সালে ১লা অক্টোবর মাদারীপুর জেলার রাজৈরের কুঠিবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম কবিরাজ সোনামুদ্দীন মিয়া এবং মায়ের নাম হাজেরা খাতুন।[১] শৈশব-কৈশরে তিনি রাজৈর ও মাদারীপুরে পড়ালেখা করেন। ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি বরিশাল বি.এম. কলেজ থেকে বি.এ. এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রী লাভ করেন।[২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

আবুল হোসেন মিয়া বি.এ. পাস করেই সরকারি স্কুলে শিক্ষকতার পেশায় যোগদান করেন। ১৯৫০ সালে বরিশাল জেলা স্কুল, গভ: ল্যাবরেটরি স্কুল ও পরবর্তীতে ঢাকা আরমানিটোলা গভর্ণমেন্ট হাই স্কুলে বদলি হয়ে আসেন। পরবর্তীতে এম.এ. পাস করে প্রথমে তেজগাঁও কলেজ, পরে ১৯৭২ সালে নটর ডেম কলেজে বাংলার অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন ।[২] অবসর গ্রহণ করে তিনি গ্রামে ফিরে যান নাই। শুধু লেখালেখি, ছাত্রদের পড়াশোনার কারণে খুব অল্প টাকায় একটি সিটভাড়া করে ঢাকায় থেকেছেন। কবি আবুল হোসেন মিয়া ছিলেন ছোটদের প্রিয় মানুষ। তিনি শিশু-কিশোরদের খুব ভালোবাসতেন,  কাছে ডেকে আদর করতেন। তিনি নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে ছোটদের পড়াতেন, বিনিময় কোনো টাকা-পয়সা গ্রহণ করতেন না। নির্লোভ এ মানুষটি সব সময় হৈ-হুল্লোড় এড়িয়ে চলতেন। সারা জীবনই ছাত্র-ছাত্রীদের সত্যিকার আদর্শবান মানুষ হওয়ার জন্য উপদেশ দিতেন। অহংকারীদের তিনি পছন্দ করতেন না। সহজ-সরল জীবন-যাপন করা তিনি খুব পছন্দ করতেন।

সাহিত্যকর্ম[সম্পাদনা]

কবি আবুল হোসেন মিয়া ছিলেন সাদাসিধে মানুষ। সারা জীবন তিনি শহরেরই কাটিয়েছেন,  কিন্তু তাঁর লেখা ও আচরণ থেকে গ্রামের সজীব স্পর্শ কখনো মুছে যায় নাই। শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন এবং পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা ছাপা হয়। তিনি যখন রাজৈর স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র তখন তাঁর প্রথম লেখা ‘ভরাভাদরে’ প্রকাশিত হয়। ১৯৩২ সালে কোলকাতার ‘শিশু সাথী’ পত্রিকার ভাদ্র সংখ্যায় ওই লেখাটি প্রকাশিত হলে রাজৈর সাব-রেজিস্টার অফিসে হই চই শুরু হয়ে যায়। ওই অফিসে তখন শিশু-সাথী  পত্রিকা রাখা হতো। ফরিদপুরের বিশিষ্ট কবি সুফী মোতাহার হোসেনের অনুপ্রেরণায় সনেট লেখা শুরু করেন এবং তার রচিত একটি সনেট কলেজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। এই সময় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, ডঃ হুমায়ুন কবির‌, কবি গোলাম মোস্তফা এবং কবি জসীম উদ্‌দীনের সাথে তার পরিচয় ঘটে। কবি আবুল হোসেন মিয়া’র অনেক কবিতা,  ছড়া ও গল্প বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সংগ্রহের অভাবে সে সব লেখা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কোন হৈ চৈ নয়,  নিভৃতে-নীরবে লেখাটি পৌঁছে দিতেন বিভাগীয় সম্পাদকের টেবিলে। ছাপা হলে খুব খুশি হতেন,  না ছাপা হলে কোন দুঃখ ছিলো না। এভাবেই লেখা প্রকাশিত হয়েছে দীর্ঘকাল। অবশেষে বাংলা বাজার থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার প্রথম ছড়ার বই ‘তালবেতালের ছড়া’। তৎকালিন  মাসিক কচি-কাঁচা,  টাপুর-টুপুর,  মাসিক মুকুল,  খেলাঘর,  সবুজ পাতা ছাড়াও সকল পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের জন্য তিনি নিয়মিত লিখেছেন। আবুল হোসেন মিয়ার যতো লেখা প্রকাশিত হয়েছে সে তুলনায় তাঁর বইয়ের সংখ্যা কম। সবুজ গাঁয়ে সবুজ ও তালবেতালের ছড়া এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ‘একটু খানি’ শিরোনামে একটি ছড়া-কবিতার বই প্রকাশ করে। ছোটদের জন্য লেখা এসব বই ছাড়াও স্কুল-কলেজের পাঠ্য বইয়ে কবি আবুল হোসেন মিয়া’র বেশ কয়টি লেখা তালিকাভুক্ত ছিলো।[১]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

  • অবনী স্মৃতি পদক, কোলকাতা (১৯৩৮);
  • শিশুসাথী পুরস্কার (১৯৪০);
  • যশোর সাহিত্য সংসদ কর্তৃক "কবি শেখর" উপাধি লাভ (১৯৫২);
  • গৌরবঙ্গ সাহিত্য পরিষদ, কোলকাতা কর্তৃক "কবি শেখর" উপাধি লাভ (১৯৫৪);
  • মরনোত্তর মাদারীপুর জেলা শিশু একাডেমি কর্তৃক সম্মাননা (২০১৬)।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

আবুল হোসেন মিয়া মৃত্যুর আগে ঢাকায় ভাড়া করা একটি কক্ষে থাকতেন। মৃত্যুর পূর্বে অসুস্থ হয়ে তিনি গ্রামের বাড়ি ফিরে যান এবং দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পরে ২রা ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ খ্রি. মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ বাংলাদেশ বেতার থেকে স্থানীয় সংবাদে প্রথম প্রচারিত হয়।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]