অপর্ণা পোপট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অপর্ণা পোপট
ক্যামেরার জন্যে পোপট
রাষ্ট্রপতি ডাঃ এ.পি.জে. আবদুল কালাম ব্যাডমিন্টনের জন্য শ্রীমতী অপর্ণা পোপাতকে অর্জুন পুরস্কার -২০০৫ উপস্থাপন করছেন
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম নামঅপর্ণা লালজী পোপট
দেশভারত
জন্ম (1978-01-18) ১৮ জানুয়ারি ১৯৭৮ (বয়স ৪৬)
মুম্বাই, মহারাষ্ট্র, ভারত
উচ্চতা১.৬৩ মি (৫ ফু ৪ ইঞ্চি)
খেলোয়াড়ী কার্যকাল১৯৮৯-২০০৬
যে হাতে খেলেনডানহাতি
মহিলাদের একক বিভাগ
মর্যাদাক্রমে সর্বোচ্চ স্থান১৬[১]
বিডব্লউএফ প্রোফাইল

অপর্ণা পোপট(গুজরাটি: અપર્ણા પોપટ; জন্ম: ১৮ জানুয়ারি, ১৯৭৮) একজন প্রাক্তন ভারতীয় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। তিনি ১৯৯৭ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে ৯ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন, যা ভারতীয় মহিলা ব্যাডমিন্টনের ইতিহাসে একটি রেকর্ড।[২]

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

অপর্ণা পোপট ১৯৭৮ সালের ১৮ই জানুয়ারি, মহারাষ্ট্রের মুম্বাইতে, একটি গুজরাটি পরিবারে, লালজি পোপট ও হিনা পোপটের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি মুম্বাই-এর জে বি পেটিট উচ্চ বিদ্যালয় এবং ব্যাঙ্গালোরের মাউন্ট কারমেল কলেজ-এ পড়াশোনা করেন। পরে মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক হন তিনি।

প্রশিক্ষণ জীবন[সম্পাদনা]

অপর্ণা, মুম্বাইয়ে, ১৯৮৬ সালে ব্যাডমিন্টন খেলতে শুরু করেছিলেন। ৮ বছর বয়সে তিনি যখন কোচিংয়ের জন্য অনিল প্রধানের কাছে আসেন, তখন তিনি মেয়েটির মধ্যে একটি চমক দেখেন এবং তার বাবাকে বলেন "আমাকে এই মেয়েটিকে দিন এবং আমি ওকে ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের মানচিত্রে রাখব"। নিজের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কারণে, তিনি খেলার অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়, প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিকাশে, সহায়তা করেছিলেন অপর্ণাকে। [৩]

১৯৯৪ সালে, তিনি ব্যাঙ্গালোরে প্রকাশ পাডুকোন ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমিতে যোগদান করেন, নিজের দক্ষতা আরো বাড়ানোর জন্যে। অল-ইংল্যান্ডের প্রাক্তন চ্যাম্পিয়ন কিংবদন্তি প্রকাশ পাডুকোনের অধীনে প্রশিক্ষণ নেওয়াকালীন, তিনি নিজের ফিটনেস আরও বাড়ান এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরো প্রতিযোগিতামূলক হওয়ার কৌশল অর্জন করেন।

প্রশিক্ষণের প্রসারণ করার জন্য, ২০০২ সালে, তিনি ব্যাঙ্গালোরের কঙ্গারিতে স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার ট্রেনিং সেন্টারে যোগদান করেন, যেখানে তিনি কোচ গাঙ্গুলি প্রসাদের অধীনে খেলাটির কৌশলের আরও ব্যাপ্তি শিখেছিলেন।[৪]

খেলোয়াড় জীবনের উজ্জ্বলতম সময়গুলি[সম্পাদনা]

অপর্ণা ১৯৯৭ সালে, হায়দ্রাবাদে, তার প্রথম সিনিয়র জাতীয় শিরোপা জিতেছিলেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি সিনিয়র ন্যাশনাল শিরোপা জেতেন এবং এইভাবে প্রকাশ পাডুকোনের ক্রমাগত নয়টি জাতীয় একক শিরোপা জেতার রেকর্ডের সমান রেকর্ড করেন।

২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে, ব্যাঙ্গালোরে, ১৫ বছর বয়সী সাইনা নেহওয়ালকে পরাজিত করে, ২৭ বছর বয়সে তিনি নয়টি সিনিয়র জাতীয় খেতাবের শেষটি অর্জন করেছিলেন।[৫]

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার কৃতিত্বগুলি হল, ১৯৯৬ সালের ওয়ার্ল্ড জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্য পদক এবং মোট ৩টি কমনওয়েলথ গেমস-এ ৪টি পদক জয়। এছাড়াও তিনি ২টি অলিম্পিক গেমস এবং ১টি এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণ করেন।

অবসর[সম্পাদনা]

পেশাদার ব্যাডমিন্টন জীবনে ১৭ বছর কাটানোর পরে, তিনি কব্জিতে আঘাত পেয়ে, ২০০৬ সালে খেলা থেকে অবসর নেন। তিনি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত থেকেই অবসর গ্রহণ করেছিলেন।

বর্তমানে তিনি ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন মুম্বাই-এ কাজ করেন।

কোচিং[সম্পাদনা]

ভারতীয় ব্যাডমিন্টন লীগ-এর প্রথম সংস্করণে মুম্বাই মাস্টার্স-এর জন্য অপর্ণা পোপট কোচের ভূমিকা পালন করেন[৬]

পুরস্কার এবং সাফল্য[সম্পাদনা]

২০০৫ সালে তিনি ভারতের খেলাধূলার সর্বোচ্চ সম্মানসূচক সম্মাননা অর্জুন পুরস্কার লাভ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট, হিলারি ক্লিনটন এবং ইএসপিএনডাব্লিউ দ্বারা প্রচারিত একটি উদ্যোগ- গ্লোবাল স্পোর্টস মেন্টরিং প্রোগ্রাম-এর জন্য বিশ্বব্যাপী নির্বাচিত ১৭ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে তিনি একমাত্র ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন। এই মর্যাদাপূর্ণ কর্মসূচিটির লক্ষ্য ছিল, খেলাধুলার মাধ্যমে নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন করার।

কালানুক্রমিকভাবে তার সাফল্য[সম্পাদনা]

১৯৮৯

ব্যাঙ্গালোরে জাতীয় শিরোপা জিতেছেন (অনূর্দ্ধ-১২)। জাতীয় পর্যায়ে এটি তার প্রথম টুর্নামেন্ট ছিল।

১৯৯০

জাতীয় পর্যায়ে, সাব-জুনিয়র বিভাগে ( ১৫ বছরের কম বয়সী) রানার্স হন। এই একমাত্র বছর যে বছরে, তিনি তার বয়সী গ্রুপে জাতীয় খেতাব জিতেননি।

১৯৯১

মেয়েদের জাতীয় উপ-জুনিয়র বিভাগে শিরোপা জিতেছেন (অনূর্দ্ধ -১৫)

১৯৯২

জাতীয় সাব জুনিয়র গার্লস শিরোপা (অনূর্দ্ধ -১৫) ধরে রাখেন এবং জুনিয়র বিভাগে (অনূর্দ্ধ -১৮) নিজের স্থান চূড়ান্ত করেন।

এছাড়াও, জাকার্তায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান তিনি। এটি তার প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ছিল।

১৯৯৩

পুণেতে জুনিয়র ন্যাশনাল শিরোপা জিতেছেন (অনূর্দ্ধ -১৮)।

১৯৯৪

জুনিয়র জাতীয় খেতাব বজায় রেখেছেন (অনূর্দ্ধ -১৮)।

কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত প্রতিনিধিত্ব করে।

কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন।

এই বছর তিনি প্রাগের উবার কাপের জন্য ভারতীয় স্কোয়াডের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সিনিয়র বিভাগে যোগ দেন।

১৯৯৫

জুনিয়র জাতীয় খেতাব বজায় রেখেছেন (অনূর্দ্ধ -১৮)। সিনিয়র বিভাগে স্থান চূড়ান্ত করেন ।

১৯৯৬

হংকংয়ের প্রিন্স এশীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন তিনি।

সেই বছর পরে তিনি ডেনমার্কের সিল্কবর্গে ওয়ার্ল্ড জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্য পদক জিতেছিলেন। এই ইভেন্টে এটি ভারতের সর্ববৃহৎ সাফল্য ছিল।

তিনি জুনিয়র ন্যাশনাল শিরোপা (অনূর্দ্ধ -১৯) বজায় রাখেন এবং পুনেতে অনুষ্ঠিত সিনিয়র ন্যাশনালেশনে চূড়ান্ত হন।

উবার কাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন।

১৯৯৭

গত দুই বছরে রানার্স আপ শেষ করার পর, তিনি সরাসরি মঞ্জুষা কানওয়ার-কে পরাজিত করে হায়দ্রাবাদে তার প্রথম সিনিয়র জাতীয় খেতাব জিতেছিলেন।

১৯৯৮

একজন খেলোয়াড় হিসাবে, এটি তার সবচেয়ে ফলপ্রসূ বছর ছিল। সিনিয়র ন্যাশনাল শিরোপা বজায় রাখার পাশাপাশি, তিনি কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসে একটি পৃথক রৌপ্য পদক এবং দলীয় ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলেন।

তিনি ব্যাংকক এবং উবার কাপে এশিয়ান গেমসে অংশ নেন।

এশিয়ান স্যাটেলাইট টুর্নামেন্টে তিনি স্বর্ণপদক জিতেছিলেন।

১৯৯৯

আগের বছরের ভাল ফর্মের উপর ভর করে তিনি সুইডিশ ওপেনের সেমি-ফাইনালে পৌঁছেছিলেন এবং ফ্রেঞ্চ ওপেন রানার-আপ হয়ে শেষ করেছিলেন।

মহিলাদের একক প্রতিযোগিতায় তার সিনিয়র জাতীয় শিরোনাম বজায় রাখেন এবং মহিলা যৌথ বিভাগে রানার আপে শেষ করেন।

এশিয়ান স্যাটেলাইট টুর্নামেন্টে স্বর্ণপদক জিতেছেন।

২০০০

তিনি ২০০০ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক এ ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন ভারতের একমাত্র মহিলা ব্যাডমিন্টন প্রতিনিধি হিসেবে।

উবার কাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন।

সিনিয়র জাতীয় খেতাব বজায় রাখেন।

২০০১

সিনিয়র জাতীয় খেতাব বজায় রাখেন।

এশিয়ান স্যাটেলাইট টুর্নামেন্টে স্বর্ণপদক জিতেছেন।

২০০২

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত, কমনওয়েলথ গেমসে, মহিলাদের একক বিভাগে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলেন। তিনি একমাত্র ভারতীয় পদকপজয়ী ছিলেন।

সিনিয়র জাতীয় খেতাব বজায় রাখেন।

উবার কাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন।

২০০৩

সিনিয়র জাতীয় খেতাব বজায় রাখেন।

এশিয়ান স্যাটেলাইট টুর্নামেন্টে স্বর্ণপদক জিতেছেন।

২০০৪

গ্রীসের এথেন্সে অনুষ্ঠিত, তার দ্বিতীয় অলিম্পিক গেমসে, অংশগ্রহণ করেন। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে, রৌপ্য পদক বিজয়ী মিয়া অডিনার কাছে ৩টি গেমে পরাজিত হন।

সিনিয়র জাতীয় খেতাব বজায় রাখেন।

২০০৫

সিনিয়র ন্যাশনাল শিরোনাম বজায় রেখেছেন। যাইহোক, এই বছর তার কব্জিতে একটি ব্যথা শুরু হয়।

২০০৬

এই সময় কব্জির চোটটি দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকে। তাও তিনি সিনিয়ন ন্যাশনাল খেতাব জয় করেন ও নবমবার খেতাব জয় করে প্রকাশ পাডুকোনের রেকর্ডের সাথে সমান করেন।

তিনি মেলবোর্নের অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেন তৃতীয়বারের জন্যে। এটিই ছিল তার শেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ। মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি কোয়ার্টার ফাইনালে পৌছেছিলেন এবং দলগত বিভাগে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলেন।

কব্জির চোট তাকে খেলা থেকে অবসর নিতে বাধ্য করে। দেশের শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড় হিসেবেই তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Previous stars – Aparna Popat"Tata Padukone Academy। ২১ মে ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১৩ 
  2. "Mumbai Masters – Aparna Popat"Badminton India। ১৪ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১৩ 
  3. "Aparna Popat's Profile"Studyrays। ৩১ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১৩ 
  4. "Aparna Popat to train with Ganguly Prasad"The Times of India। ১৯ আগস্ট ২০০১। ১৪ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১৩ 
  5. "No stopping Aparna"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  6. "IBL will benefit Indian players: Aparna Popat"ibnlive। ২৮ জুলাই ২০১৩। ২১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১৩ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]